হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী

হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী (১১ নভেম্বর ১৯২৮ - ১০ জুলাই ২০০১) বাংলাদেশের একজন কূটনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ১৯৯৬ - ২০০১ পর্যন্ত স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফরাসি এবং ইতালীয় ভাষায় কথা বলতে পারতেন। এছাড়াও আরবি, স্পেনীয়, পর্তুগিজ, জার্মান এবং ইন্দোনেশীয় ভাষায়ও তার সম্যক দখল ছিল। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়।[1][2]

হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী
জন্ম(১৯২৮-১১-১১)১১ নভেম্বর ১৯২৮
সিলেট, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যুজুলাই ১০, ২০০১(2001-07-10) (বয়স ৭২)
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
পেশাকূটনীতিবিদ, স্পিকার
পরিচিতির কারণজাতীয় সংসদের স্পিকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কূটনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ
দাম্পত্য সঙ্গীবেগম মহজবিন চৌধুরী
পিতা-মাতাআব্দুর রশীদ চৌধুরী (বাবা)
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী (মা)
আত্মীয়ফারূক রশীদ চৌধুরী (ভাই)
পুরস্কারমহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (১৯৮৪), উ-থান্ট শান্তি পুরস্কার (২০০০), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮)

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯২৮ সালে সিলেট শহরের দরগাহ গেইটের রশীদ মঞ্জিলে। তাঁর পৈতৃক নিবাস সুনামগঞ্জ জেলার দরগাপাশায়। হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর বাবা আব্দুর রশীদ চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত ভারতের কেন্দ্রীয় বিধানসভার সদস্য এবং মা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য।[3] ফারুক রশীদ চৌধুরী তাঁর হুরু ভাই।

শিক্ষা

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার হাই মাদ্রাসা সেকশনে প্রাথমিক শিক্ষা ও আসামে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৯৪৭ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী। তারপর ইংলিশ বারে অধ্যয়ন করেন ও লন্ডনের ইনার টেম্পলের একজন সদস্য হন। লন্ডনেরই 'আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান' থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও, ম্যাসাচুসেটসের ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। গ্রেট ব্রিটেন ও ইউরোপে পাকিস্তান ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন। সে সুবাদেই তিনি যুক্তরাজ্যে প্রথম এশিয়ান স্টুডেন্টস কনফারেন্স আয়োজনে সক্ষমতা দেখান।[3]

কর্মজীবন

হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ১৯৫৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগে যোগদান করেন। এর ফলে তিনি ঐ বিভাগের আওতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এছাড়াও, লন্ডনের ব্রিটিশ বৈদেশিক কার্যালয় এবং কমনওয়েলথ কার্যালয়েও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[3]

কূটনীতিবিদ হিসেবে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে অবস্থান করেছিলেন। তন্মধ্যে রোম, বাগদাদ, প্যারিস, লিসবন, জাকার্তা এবং নতুন দিল্লী অন্যতম। ১৯৭১- ৭২ সালে তিনি নতুন দিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ছিলেন। ঐ সময় বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য তিনি ৪০টিরও বেশি দেশে যোগাযোগ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৬ সালের পর সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ভ্যাটিকানেও একই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।[3]

এছাড়াও, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ এবং জাতিসংঘের শিল্পাঞ্চল উন্নয়ন সংস্থা বা ইউনিডো'র প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন তিনি।[4]

১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। [5]

স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ

হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি নতুন দিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ছিলেন। ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারতের সংসদ অধিবেশনে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে ৪০টিরও অধিক দেশের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। [3][6]

রাজনৈতিক জীবন

হুমায়ূন রশীদ চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যোগ দিয়ে উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সিলেট-১ (সদর-কোম্পানীগঞ্জ) ও সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসন থেকে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে প্রথম সদস্য সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পর ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে ও জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে সিলেট-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৪ জুলাই ১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু এ পদে বহাল ছিলেন।[7][8][9]

সম্মাননা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের কলেজ অব উইলিয়াম অ্যান্ড ম্যারি থেকে ১৯৮৪ সালে 'মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার' পান। বিশ্ব শান্তিকল্পে অনবদ্য কূটনৈতিক ভূমিকার জন্য তাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও তিনি 'উ থান্ট শান্তি পদক' লাভ করেছিলেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।[10] এছাড়াও তার সম্মানে ঢাকা থেকে সিলেট শহরের প্রবেশপথে একটি চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে 'হুমায়ূন রশীদ চত্বর'।[3][5]

মৃত্যু

হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ১০ জুলাই ২০০১ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। সিলেটের শাহজালালের মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাকে।[3][11][12]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "১৬ জন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৪
  2. "হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী"সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পোর্টাল। ১২ জুন ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯
  3. "চৌধুরী, হুমায়ুন রশিদ"বাংলাপিডিয়া। ২৭ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯
  4. "আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থায় হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী"। United Nation।
  5. "হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী : একজন অকুতোভয় দেশপ্রেমিক"দৈনিক জাগরণ। ১০ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯
  6. "হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী - মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের দিল্লী মিশন প্রধান"সংগ্রামের নোটবুক। ২০১৯-০৬-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৫
  7. "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
  8. "৪র্থ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৯
  9. "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
  10. "স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন ১৬ বিশিষ্ট ব্যক্তি"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২০১৮-১২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৪
  11. "স্পিকার হুমায়ুন রশীদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক র‌্যালি ও শ্রদ্ধা নিবেদন"দৈনিক মানবজমিন। ১১ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯
  12. "হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন"দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১০ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯
পূর্বসূরী
আমিনুর রহমান শামস্‌ উদ দোহা
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১৯৮৪-১৯৮৫
উত্তরসূরী
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
পূর্বসূরী:
শেখ রাজ্জাক আলী
জাতীয় সংসদের স্পিকার
১৪ জুলাই, ১৯৯৬ - ৮ অক্টোবর, ২০০১
উত্তরসূরী:
এডভোকেট আবদুল হামিদ
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.