শহীদ মিনার

শহীদ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভ বলতে এমন এক ধরনের কাঠামোকে বুঝানো হয়ে থাকে, যা শৈল্পিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক কারনে আত্নউৎসর্গকৃত ব্যক্তিদের স্মরনে নির্মাণ করা হয়েছে।[1] তবে উপমহাদেশের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে শহীদ মিনার বলতে যারা বাংলা ভাষা আন্দোলনে শহীদ (আত্নত্যাগ) হয়েছেন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে যা নির্মাণ করা হয়েছে সেই স্থাপনাগুলোকে বুঝায়।[2][3] ভাষা আন্দোলনের এই শহীদ মিনার মূলত ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কাঠামোতে নির্মাণ করা হয়।

কাঠামো

শহীদ মিনার পাঁচটি স্তম্ভ দ্বারা নির্মিত হবে, মাঝের স্তম্ভটি কিছুটা বড় হবে, এবং এই স্তম্ভটি সামনের দিকে হেলানো থাকবে, এবং স্তম্ভগুলোর মাঝ বরাবর একটি লাল রঙের কাপড় দিয়ে বৃত্ত তৈরি থাকবে, যা গোল আকৃতির লাল সূর্যকে নির্দেশ করে।[4][5] চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমানকে বর্তমান শহীদ মিনারের কাঠামোর প্রবর্তক বা স্থপতি বলা হয়। হামিদুর রহমানের নির্দেশনা অনুসারে নভেরা আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এটি বিনির্মাণ করা হয়েছে।[6]

ইতিহাস

প্রথম শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ রাজশাহী নামে খ্যাত স্তম্ভটি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেলের এফ ব্লকের সামনে ইট-কাদা দিয়ে নির্মান করা হয়। এই স্মৃতিস্তম্ভটি ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ প্রশাসন দ্বারা ভেঙে ফেলা হয়।[7][8] ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকাতে প্রথম বারের মত শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন। একটি কাগজের উপর ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ শব্দদুটি লিখে এতে গেঁথে দেওয়া হয়েছিলো।[9] আন্দোলনে নিহত শফিউর রহমানের পিতা এই শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। তবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী কতৃক এই শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজেও শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছিলো, সেটিও সরকারের আদেশে ফেঙ্গে ফেলা হয়।[10]

এরপরে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ১৯৫৭ সালে সরকারিভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহামুদ হোসেনের নেতৃত্বে এটির কাজ সম্পন্ন হয়।[11] এইসময় শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগমকে দিয়ে এই শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়।

উল্লেখযোগ্য শহীদ মিনার

বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস মনে রাখতে বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে:

তথ্যসূত্র

  1. Caves, R. W. (২০০৪)। Encyclopedia of the City। Routledge। পৃষ্ঠা 470। আইএসবিএন 978-0415252256।
  2. "শহীদ মিনার - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
  3. "শহীদ মিনার নির্মাণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা চাই"Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
  4. "শহীদ মিনারে লাল বৃত্তটা কেন সারা বছর থাকে না? | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। ২০২১-০২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
  5. "চেতনা-সাম্য, মাতৃভাষার প্রতীক শহীদ মিনার"banglanews24.com। ২০১৬-০২-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
  6. "নভেরা আহমেদঃ শহীদ মিনারের অদৃশ্য নকশাকার"ভিওএ। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
  7. ইশতিয়াক, আহমাদ (২০২২-০২-২১)। "'প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিল রাজশাহীতে'"The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
  8. "প্রথম শহীদ মিনার ঢাকায় নাকি রাজশাহীতে!"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
  9. "শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে যে বিধি নিষেধ মানতে হবে"SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
  10. "শহীদ মিনারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"banglanews24.com। ২০১৫-০২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
  11. "কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার: দর্শনীয় স্থান"www.dhaka.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৯
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.