ভারতের সংবিধান

ভারতের সংবিধান ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। এই সংবিধানে বহুকক্ষবিশিষ্ট সরকারব্যবস্থা গঠন, কার্যপদ্ধতি, আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ, গোত্রীয় স্বাতন্ত্র্যবাদ, ক্ষমতা ও কর্তব্য নির্ধারণ; মৌলিক অধিকার, নির্দেশমূলক নীতি, এবং নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শের রূপরেখাটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে ২৮৪ জনের সই করলে গৃহীত হয় এবং এই দিনটি জাতীয় আইন দিবস হিসেবে পরিচিত। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে এই সংবিধান জোরদারভাবে কার্যকরী হয়।[3]

ভারতের সংবিধান
সাধারণ
এখতিয়ার ভারত
অনুমোদন২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ (1949-11-26)
কার্যকরের তারিখ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ (1950-01-26)
পদ্ধতিযুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র
সরকারি কাঠামো
শাখাতিন (নির্বাহী, বিধানসভা ও বিচার বিভাগ)
কক্ষদুই (রাজ্যসভালোকসভা)
নির্বাহীসংসদের নিম্নকক্ষের নিকট দায়বদ্ধ প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা
বিচারব্যবস্থাসর্বোচ্চ আদালত, উচ্চ আদালতজেলা আদালত
মৈত্রীতন্ত্রযুক্তরাষ্ট্রীয়[1]
নির্বাচনী কলেজহ্যাঁ, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য
নিহিত ধারা
ইতিহাস
সংশোধনী১০৫
সর্বশেষ সংশোধনী১০ আগস্ট ২০২১ (১০৫তম)
উদ্ধৃতিConstitution of India (পিডিএফ), ২০২০-০৯-০৯, ২০২০-০৯-২৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা
অবস্থানসংসদ ভবন, নতুন দিল্লি, ভারত
লেখক
  • ভীমরাও রামজি আম্বেদকর
    (খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান)
  • বেনেগল নরসিংহ রাও
    (গণপরিষদের সাংবিধানিক উপদেষ্টা)
  • সুরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়
    (গণপরিষদের প্রধান পান্ডুলেখক)[2]
  • গণপরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ
স্বাক্ষরকারীগণপরিষদের ২৮৪ জন সদস্য
স্থানান্তরভারত শাসন আইন, ১৯৩৫
ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক স্বাধীনতা ঘোষণার স্মৃতিতে ২৬ জানুয়ারি তারিখটি সংবিধান পরিচালনার জন্য গৃহীত হয়েছিল। সংবিধানে ভারতীয় রাজ্যসংঘকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও আধা-ধর্মতান্ত্রিক গণপ্রজাতান্ত্রিক রূপে ঘোষণা করা হয়েছে; এই দেশের নাগরিকবৃন্দের জন্য ন্যায়বিচার, সাম্য ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হয়েছে এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক সংহতি সুরক্ষার জন্য নাগরিকদের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃভাব ও গোত্রপ্রীতি সুজাগরিত করে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করা হয়েছে। "সমাজতান্ত্রিক", "ধর্মনিরপেক্ষ-আধা-ধর্মতান্ত্রিক" ও "সংহতি" এবং সকল নাগরিকের মধ্যে "ভ্রাতৃভাব-গোত্রপ্রীতি",পূর্বপ্রচলিত আইন সমূহ"ভারত শাসন আইন,ভারত কাউন্সিল আইন,ভারত স্বাধীনতা আইন"– এই শব্দগুলি ১৯৭৬ সালে একটি সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ হয়।[4] সংবিধান প্রবর্তনের স্মৃতিতে ভারতীয়রা প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি তারিখটি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদ্‌যাপন করেন।[5] ভারতের সংবিধান বিশ্বের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহ মধ্যে বৃহত্তম[6] লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান। এই সংবিধানে মোট ২৫টি অংশে ৪৭০টি ধারা, ১২টি তফসিল এবং ১০৫টি সংশোধনী বিদ্যমান।[7] ভারতের সংবিধানের ইংরেজি সংস্করণে মোট শব্দসংখ্যা ১৯৫,০০০টি। এই সংবিধানের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্বপ্রচলিত ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের চিরতরে জন্য বহাল রাখা হয়। দেশের সর্বোচ্চ আইন হওয়ার দরুন, ভারত সরকার প্রবর্তিত প্রতিটি আইনকে সংবিধানানুসারী হতে হয়। সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ড. ভীমরাও রামজি আম্বেডকর ছিলেন ভারতীয় সংবিধানের প্রধান মহাস্থপতি।

পটভূমি

১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলই ছিল ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে। এই সময় দেশকে বিদেশি শাসকদের হাত থেকে চিরতরে জন্য মুক্ত করতে এক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত অধিরাজ্যপাকিস্তান অধিরাজ্যের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের সংবিধান গৃহীত হলে ভারতকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক রূপে ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পরে ভারত শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনের নীতি ও রূপরেখাগুলি এই সংবিধানে ঘোষিত হয়। সংবিধান কার্যকরী হওয়ার দিন থেকে ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির অধিরাজ্যের পরিবর্তে পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

সংবিধানের বিবর্তন

১৯৩৫ সালের পূর্ববর্তী ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইনসমূহ

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির হাত থেকে স্বহস্তে তুলে নেয়। এর ফলে ব্রিটিশ ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে। ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন বলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতে ব্রিটিশ সরকারের রূপরেখাটি চূড়ান্ত করে। ইংল্যান্ডে ভারত সচিব বা সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ইন্ডিয়া পদটি সৃষ্টি করা হয়। এঁর মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত শাসন করত। সেক্রেটারি অফ স্টেটকে সহায়তা করত ভারতীয় কাউন্সিল (কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া)। ভারতের গভর্নর-জেনারেলের পদটিও সৃষ্টি করা হয় এই সময়। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পদাধিকারীদের নিয়ে ভারতে একটি কার্যনির্বাহী পরিষদও (এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল) সৃষ্টি করা হয়। ১৮৬১ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন বলে কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও অ-পদাধিকারী সদস্যদের নিয়ে আইন পরিষদ বা লেজিসলেটিভ কাউন্সিল স্থাপিত হয়। ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন বলে দেশে প্রাদেশিক আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আইন পরিষদে ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। এই সকল আইন বলে সরকার ব্যবস্থায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও তাঁদের ক্ষমতা ছিল সীমিতই। ১৯০৯১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন দুটি সরকার ব্যবস্থায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণের সুযোগ আরও প্রসারিত করে।

ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের সম্পূর্ণ প্রয়োগ না ঘটলেও পরবর্তীকালে ভারতের সংবিধানে এই আইনের প্রভাব অপরিসীম। সংবিধানের বহু বিষয় সরাসরি এই আইন থেকে গৃহীত হয়। সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় গঠন, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিষদ ও রাজ্যসভা নিয়ে দ্বিকক্ষীয়/বহুকক্ষীয় আইনসভা, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলির মধ্যে আইনবিভাগীয় ক্ষমতাবণ্টনের মতো বিষয়গুলি উক্ত আইনের এমন কতকগুলি বিষয় যা বর্তমান সংবিধানেও গৃহীত হয়েছে।

ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা, ১৯৪৬

১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ভারতে একটি ক্যাবিনেট মিশন প্রেরণ করেন।এই মিশনের সদস্য ছিলেন এ,ভি,আলেকজান্ডার,প্যাথিক লরেনস,স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ রাজশক্তির হাত থেকে ভারতীয় নেতৃবর্গের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও চূড়ান্তকরণ এবং কমনওয়েলথ অফ নেশনসে একটি অধিরাজ্যের মর্যাদায় ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান।[8][9] এই মিশন সংবিধানের রূপরেখা নিয়েও আলোচনা করে এবং সংবিধান খসড়া কমিটি স্থাপনের জন্য প্রাথমিক কয়েকটি নির্দেশিকাও চূড়ান্তকরণ হয়। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশগুলির মোট ২৯৬টি আসনে নির্বাচন সমাপ্ত হয়। ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ভারতের গণপরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এই দিনই সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয়।[10]

ভারতীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭

১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা আইন কার্যকরী হয়। এই আইনবলে ব্রিটিশ ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি করা হয়। স্থির হয়, সংবিধান প্রবর্তন পর্যন্ত এই দুই রাষ্ট্র কমনওয়েলথ অফ নেশনসের দুটি অধিরাজ্যের মর্যাদা পাবে। এই আইনবলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে ভারত ও পাকিস্তান সংক্রান্ত বিষয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং উভয় রাষ্ট্রের উপর সংশ্লিষ্ট গণপরিষদের সার্বভৌমত্ব মেনে নেওয়া হয়। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সংবিধান প্রবর্তিত হলে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন প্রত্যাহৃত হয় এবং ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির অধিরাজ্যের বদলে সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক মর্যাদা অর্জন করে। ১৯৪৯ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের জাতীয় আইন দিবস হিসেবেও পরিচিত।

গণপরিষদ

প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত ভারতের গণপরিষদ সংবিধানের খসড়াটি রচনা করে।[10] জওহরলাল নেহরু, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়নলিনীরঞ্জন ঘোষ প্রমুখেরা ছিলেন এই গণপরিষদের প্রধান ব্যক্তিত্ব। তফসিলি শ্রেণীগুলি থেকে ৩০ জনেরও বেশি সদস্য ছিলেন। ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্টনি ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের, এবং এইচ. পি. মোদী ও আর. কে. সিধওয়া ছিলেন পারসি সম্প্রদায়ের সদস্য। সংখ্যালঘু কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায়; তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট খ্রিস্টান এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ব্যতীত অন্যান্য ভারতীয় খ্রিস্টানদের প্রতিনিধি। অরি বাহাদুর গুরুং ছিলেন গোর্খা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। বিশিষ্ট জুরি আল্লাদি কৃষ্ণস্বামী আইয়ার, বি. আর. আম্বেডকর, বেনেগাল নরসিং রাউ এবং কে. এম. মুন্সি, গণেশ মভলঙ্কার প্রমুখেরাও গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। বিশিষ্ট মহিলা সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সরোজিনী নাইডু, হংস মেহেতা, দুর্গাবাই দেশমুখরাজকুমারী অমৃত কৌরসচ্চিদানন্দ সিনহা ছিলেন গণপরিষদের প্রথম সভাপতি। পরে রাজেন্দ্র প্রসাদ এর নির্বাচিত সভাপতি হন।[10]

খসড়া রচনা

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পরিষদের অধিবেশনে একাধিক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই কমিটিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মৌলিক অধিকার কমিটি, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা কমিটি ও কেন্দ্রীয় সংবিধান কমিটি। ১৯৪৭ সালের ২৯ আগস্ট ড. বি. আর. আম্বেডকরের নেতৃত্বে খসড়া কমিটি গঠিত হয়। ড. আম্বেডকর ছাড়াও এই কমিটিতে আরও ছয় জন সদস্য ছিলেন। কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে সেটি ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বরের মধ্যে গণপরিষদে পেশ করেন।

গণপরিষদ সংবিধান রচনা করতে ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন সময় নিয়েছিল। এই সময়কালের মধ্যে ১৬৬ দিন গণপরিষদের অধিবেশন বসে।[5] একাধিকবার পর্যালোচনা ও সংশোধন করার পর ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি গণপরিষদের মোট ৩০৮ জন সদস্য সংবিধান নথির দুটি হস্তলিখিত কপিতে (একটি ইংরেজি ও একটি হিন্দি) সই করেন। দুই দিন বাদে এই নথিটি ভারতের সর্বোচ্চ আইন ঘোষিত হয়।

পরবর্তী ৭০ বছরে ভারতের সংবিধানে মোট ১০৫টি সংশোধনী আনা হয়েছে।

গঠন

বর্তমানে ভারতের সংবিধান একটি প্রস্তাবনা, ২৫টি অংশে বিভক্ত ৪৭০টি ধারা, ১২টি তফসিল, ৫টি পরিশিষ্ট[11] ও মোট ১০৫টি সংশোধনী (সর্বশেষ ২০২১) নিয়ে লিখিত।[12] সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংবিধান (১৪৫,০০০টি শব্দ)। তবে সক্রিয় সংবিধানের দিক থেকে বিশ্বে এই সংবিধানের অবস্থান ২য়। প্রথম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য অ্যালাবামার সংবিধান, যার শব্দসংখ্যা ৩১০,২৯৬ টি।

অংশ

সংবিধানের পৃথক পৃথক অধ্যায়গুলি অংশ নামে পরিচিত। প্রত্যেকটি অংশে আইনের এক একটি ক্ষেত্রে আলোচিত হয়। অংশের ধারাগুলির উপজীব্য হল নির্দিষ্ট বিষয়গুলি।

  • দ্বাদশ অংশ – অর্থ, সম্পত্তি, চুক্তি ও মামলা।
  • ত্রয়োদশ অংশ – অভ্যন্তরীণ ব্যবসা ও বাণিজ্য।
  • চতুর্দশ অংশ – কেন্দ্র, রাজ্য ও ট্রাইব্যুনালের অধীনস্থ কৃত্যক।
  • পঞ্চদশ অংশ - নির্বাচন
  • ষোড়শ অংশ – কিছু সামাজিক শ্রেণীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
  • সপ্তদশ অংশ – ভাষা।
  • অষ্টাদশ অংশ – জরুরি অবস্থা।
  • ঊনবিংশ অংশ – বিবিধ।
  • বিংশ অংশ – সংবিধান সংশোধন
  • একবিংশ অংশ – সাময়িক, পরিবর্তনশীল ও বিশেষ ব্যবস্থা
  • দ্বাবিংশ অংশ - ক্ষুদ্র শিরোনাম, শুরুর তারিখ, প্রামাণ্য হিন্দি সংস্করণ ও প্রত্যাহারসমূহ
  • ত্রয়োবিংশ অংশ - সাময়িক, পরিবর্তনশীল ও বিশেষ ব্যবস্থা
  • চতুর্বিংশ - সাময়িক, পরিবর্তনশীল ও বিশেষ ব্যবস্থা

তফসিল

সরকারের আমলাতান্ত্রিক কাজকর্ম ও নীতিগুলির বর্গবিভাজন ও সারণিকরণ করা হয়েছে তফসিলগুলিতে।

  • প্রথম তফসিল (ধারা ১ – ৪) — রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল   এখানে ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির তালিকা দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে কোনো পরিবর্তন বা যে আইনের দ্বারা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তারও তালিকা এখানে রয়েছে।
  • দ্বিতীয় তফসিল (ধারা ৫৯, ৬৫, ৭৫, ৯৭, ১২৫, ১৪৮, ১৫৮, ১৬৪, ১৮৬ ও ২২১) — উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বেতন   সরকারি কার্যালয়ের আধিকারিক, বিচারপতি ও ভারতের কন্ট্রোলার ও অডিটর-জেনারেলের বেতনের তালিকা এখানে রয়েছে।
  • তৃতীয় তফসিল (ধারা ৭৫, ৯৯, ১২৪, ১৪৮, ১৬৪, ১৮৮ ও ২১৯) — শপথ   নির্বাচিত আধিকারিক ও বিচারপতিদের শপথ।
  • চতুর্থ তফসিল (ধারা ৪ ও ৮০) — রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অনুসারে রাজ্যসভার আসন সংখ্যা।
  • পঞ্চম তফসিল (ধারা ২৪৪) — তফসিলি এলাকা[Note 1]তফসিলি উপজাতি [Note 2] প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ (প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য যেসকল এলাকা ও উপজাতির বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন, সেই সব ক্ষেত্রে)।
  • ষষ্ঠ তফসিল (ধারা ২৪৪ ও ২৭৫) —অসম, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের উপজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রশাসন।
  • সপ্তম তফসিল (ধারা ২৪৬) — কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও যুগ্ম দায়িত্ব তালিকা।
  • অষ্টম তফসিল (ধারা ৩৪৪ ও ৩৫১) — সরকারি ভাষাসমূহ।
  • নবম তফসিল (ধারা ৩১-খ) — ভূমি ও ভূম্যধিকারী সংস্কার; সিক্কিমের ভারতভুক্তি। এটি আদালত কর্তৃক পর্যালোচিত হতে পারে।[22]
  • দশম তফসিল (ধারা ১০২ ও ১৯১) — সাংসদ ও বিধায়কদের "দলত্যাগ-রোধ"ও"গোত্রবদ্ধ-গোত্রপ্রীতি" সংক্রান্ত বিধি।
  • একাদশ তফসিল (ধারা ২৪৩-ছ) — চৌকিদারি পঞ্চায়েত বা গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন।
  • দ্বাদশ তফসিল (ধারা ২৪৩-প) — পৌরসভা।

সরকার ব্যবস্থা

ড. ভীমরাও রামজি আম্বেডকর, সংবিধান খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান তথা ভারতীয় সংবিধানের প্রধান রূপকার

ড. আম্বেডকরের মতে, ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত কেন্দ্রীয় সরকারের মূল রূপটি নিম্নরূপ:

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো

ভারতের সংবিধানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য/প্রাদেশিক সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।

সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলির ক্ষমতাগুলিকে শ্রেণীবিভক্ত/বিকেন্দ্রীকরণ করে তিনটি তালিকাভুক্তি করা হয়েছে। এই তালিকাগুলি হল কেন্দ্রীয়/ইউনিয়ন তালিকা, রাজ্য/প্রাদেশিক তালিকা ও যুগ্ম/সমবর্তী তালিকা। জাতীয় প্রতিরক্ষা, বৈদেশিকনীতি, মুদ্রাব্যবস্থার মতো বিষয়গুলি কেন্দ্রীয়/ইউনিয়ন তালিকার অন্তর্গত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, স্থানীয় সরকার ও কয়েকটি করব্যবস্থা রাজ্য/প্রাদেশিক তালিকাভুক্ত। ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ব্যতিরেকে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য/প্রাদেশিক তালিকায় আইন প্রণয়ন করতে পারে না। আবার শিক্ষা, পরিবহন, অপরাধমূলক আইনের মতো কয়েকটি বিষয় যুগ্ম/সমবর্তী তালিকাভুক্ত। এই সব ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই আইন প্রণয়ন করতে পারেন। অবশিষ্ট ক্ষমতা ভারতের সংসদ/গভর্নর উপদেষ্টা বোর্ডের হাতে ন্যস্ত।

ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা, যা রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত, তাও ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রবণতার একটি নিদর্শন।

সংসদীয় গণতন্ত্র

ভারতের রাষ্ট্রপতি জনগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন না, তিনি সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। শাসনবিভাগের সকল কাজের সম্পাদনা ও সংসদের প্রত্যেক আইন পাস তাঁর নামে হয়ে থাকে। অবশ্য এই সকল ক্ষমতা নামসর্বস্ব। রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীমন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হয়।

ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ ততক্ষণই ক্ষমতাসীন থাকেন, যতক্ষণ তিনি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন লাভে সক্ষম হন। মন্ত্রীরা সংসদের উভয় কক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। তাছাড়া সংসদের কোনো একটি কক্ষের নির্বাচিত সদস্যরাই মন্ত্রিত্বের পদ গ্রহণ করতে পারেন। এইভাবে ভারতে আইনবিভাগ শাসনবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

রাজ্যের সংসদীয় কাঠামোটিও একই প্রকার। এখানে বিধানসভার সদস্য বা বিধায়কেরা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য মন্ত্রিসভার উপর বিধানসভার কর্তৃত্ব বজায় থাকে।

স্বাধীন বিচারব্যবস্থা

ভারতের বিচারব্যবস্থা শাসনবিভাগ বা সংসদের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। বিচারবিভাগ শুধুমাত্র সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তাই নয়, দুই বা ততোধিক রাজ্য অথবা কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করে থাকে। সংসদ বা বিধানসভা থেকে পাস হওয়া যে কোনো আইনের বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনা হয়ে থাকে। এমন কি বিচারবিভাগ যদি মনে করে যে, কোনো আইন সংবিধানের কোনো আদর্শের পরিপন্থী, তবে তারা সেই আইনকে অসাংবিধানিক বলেও ঘোষণা করতে পারে।

ভারতের সংবিধানে ঘোষিত কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার সরকার কর্তৃক লঙ্ঘিত হলে হাইকোর্টসুপ্রিম কোর্টে সাংবিধানিক প্রতিবিধান পাওয়া যায়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

টীকা

  1. Scheduled Areas are autonomous areas within a state, administered federally, usually populated by a predominant Scheduled Tribe.
  2. Scheduled Tribes are groups of indigenous people, identified in the Constitution, struggling socio-economically

উদ্ধৃতি

  1. Wangchuk, Rinchen Norbu (২২ জানুয়ারি ২০১৯)। "Two Civil Servants Who Built India's Democracy, But You've Heard of Them"। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৯
  2. "Introduction to Constitution of India"। Ministry of Law and Justice of India। ২৯ জুলাই ২০০৮। ২০১৪-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-১৪
  3. "Forty-Second Amendment to the Constitution"। Ministry of Law and Justice of fishys। ২৮ আগস্ট ১৯৭৬। ২০১৫-০৩-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-১৪
  4. Das, Hari (২০০২)। Political System of India। Anmol Publications। পৃষ্ঠা 120। আইএসবিএন 8174886907।
  5. Pylee, M.V. (১৯৯৭)। India's Constitution। S. Chand & Co.। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 812190403X।
  6. "Constitution of India"। Ministry of Law and Justice of India। July, 2008। ২০১৫-০২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2008-12-17 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  7. Mansergh, Nicholas (১৯৭৭)। The Transfer of Power 1942-7 .Vol VIIHer Majesty's Stationery Office, Londonআইএসবিএন 9780115800825। অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  8. "Parliamentary Archives: HL/PO/1/595/11"Parliament and India, 1858-1947। British Parliamentary Archives। ২০১২-১২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-১৫
  9. "The Constituent Assembly Debates (Proceedings):(9th December,1946 to 24 January 1950)"। The Parliament of India Archive। ২০০৭-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২২
  10. "CONSTITUTION OF INDIA"Ministry of Law and Justice, Govt. of India। ২৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১০
  11. "THE CONSTITUTION (AMENDMENT) ACTS"India Code Information System। Ministry of Law, Government of India। ২৭ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১০
  12. Part I
  13. Part II
  14. 'Part II
  15. Part IV
  16. Part V
  17. Part VI
  18. Part VII
  19. Part VIII
  20. Part IX
  21. http://in.rediff.com/news/2007/jan/11indira.htm
  22. Ahir, D.C. (১৯৯০)। The legacy of Dr Ambedkar (10th সংস্করণ)। South Asia Books। পৃষ্ঠা 75–76। আইএসবিএন 978-8170186038।

গ্রন্থপঞ্জি

  • Baruah, Aparajita (২০০৭)। Preamble of the Constitution of India : An Insight & Comparison। Eastern Book Co। আইএসবিএন 9788176299960 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)
  • Basu, Durga Das (১৯৬৫)। Commentary on the constitution of India : (being a comparative treatise on the universal principles of justice and constitutional government with special reference to the organic instrument of India)। 1 - 2। S. C. Sarkar & Sons (Private) Ltd।
  • Basu, Durga Das (১৯৮৪)। Introduction to the Constitution of India (10th সংস্করণ)। South Asia Books। আইএসবিএন 0836410971।
  • Basu, Durga Das (১৯৮১)। Shorter Constitution of India। Prentice-Hall of India। আইএসবিএন 9780876922002।
  • Das, Hari Hara (২০০২)। Political System of India। Anmol Publications। আইএসবিএন 8174886907।
  • Dash, Shreeram Chandra (১৯৬৮)। The Constitution of India; a Comparative Study। Chaitanya Pub. House।
  • Ghosh, Pratap Kumar (১৯৬৬)। The Constitution of India: How it Has Been Framed। World Press।
  • Jayapalan, N. (১৯৯৮)। Constitutional History of India। Atlantic Publishers & Distributors। আইএসবিএন 8171567614।
  • Khanna, Hans Raj (১৯৮১)। Making of India's Constitution। Eastern Book Co। আইএসবিএন 9788170121084।
  • Basu, Durga Das (১৯৮৪)। Introduction to the Constitution of India (10th সংস্করণ)। South Asia Books। আইএসবিএন 0836410971।
  • Pylee, M.V. (১৯৯৭)। India's Constitution। S. Chand & Co.। আইএসবিএন 812190403X।
  • Pylee, M.V. (২০০৪)। Constitutional Government in India। S. Chand & Co.। আইএসবিএন 8121922038।
  • Sen, Sarbani (২০০৭)। The Constitution of India: Popular Sovereignty and Democratic Transformations। Oxford University Press। আইএসবিএন 9780195686494।
  • Sharma, Dinesh (২০০২)। Indian Constitution at Work। Political Science, Class XI। NCERT অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  • "The Constituent Assembly Debates (Proceedings):(9th December,1946 to 24 January 1950)"। The Parliament of India Archive। ২০০৭-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২২

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.