বিংশ শতাব্দী

২০শ শতাব্দী গ্রেগরীয় পঞ্জিকা অনুসারে ১৯০১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়কাল। এটি গত ২য় সহস্রাব্দের দশম ও শেষ শতাব্দী। ১ জানুয়ারি ১৯০১ সালে এটি শুরু হয় এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০০০ সালে শেষ হয়।[1] ২০শ শতাব্দী ছিল একটি ঘটনাবহুল শতাব্দী যা আধুনিক যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছিল। ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি, স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী,প্রথম বিশ্বযুদ্ধ,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ,পারমাণবিক অস্ত্র, পারমাণবিক শক্তি,মহাকাশ অনুসন্ধান,জাতীয়তাবাদবিউপনিবেশায়ন, স্নায়ুযুদ্ধ ও স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সংঘাত এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি পৃথিবীর রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে পুনর্নির্মাণ করেছে।

অ্যাপোলো ১৭ থেকে দেখা পৃথিবীর চিত্র।বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে মানবজাতি সর্বপ্রথম মহাকাশ অনুসন্ধান করেছিল।
সহস্রাব্দ: ২য় সহস্রাব্দ
শতাব্দী:
সময়রেখা:
দশক:
  • ১৯০০-এর দশক
  • ১৯১০-এর দশক
  • ১৯২০-এর দশক
  • ১৯৬০-এর দশক
  • ১৯৭০-এর দশক
  • ১৯৮০-এর দশক
  • ১৯৯০-এর দশক
বিষয়শ্রেণীসমূহ: জন্মমৃত্যু
সংস্থাপনাবিলুপ্তি সংস্থাপনা

অন্যান্য বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সাংস্কৃতিক সমজাতীয়করণের মাধ্যমে উদীয়মান পরিবহন ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন; দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি , বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি,পরিবেশগত অবনতি সম্পর্কে সচেতনতা, পরিবেশগত বিলুপ্তি এবং তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সূচনা। এসময় অটোমোবাইল,বিমান এবং গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির ব্যবহার সাধারণ হয়ে ওঠে; একই সাথে ভিডিও এবং অডিও রেকর্ডিং। বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য প্রযুক্তিতে বিরাট অগ্রগতির ফলে বিশ্বব্যাপী তাৎক্ষণিক কম্পিউটার যোগাযোগ এবং জীবনের বংশানুগত পরিবর্তনসাধন সম্ভব হয়।

বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ ও বিশ্বায়নের ফলে এমন একটি বিশ্ব তৈরি হয়েছিল যেখানে মানুষ মানব ইতিহাসের অন্য যেকোনা সময়ের তুলনায় অধিক ঐক্যবদ্ধ ছিল। উদাহরণস্বরূপ এসময় আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ চালু এবং জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় দেশগুলোর বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং এসব দেশে সোভিয়েত কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোকে ১৩ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যা মার্শাল প্ল্যান নামে পরিচিত। ২০শ শতাব্দীর শেষার্ধ জুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র প্রক্সি আঞ্চলিক সংঘাতের সৃষ্টি হয়; পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের ফলে সর্বব্যাপী বিপদের উদ্ভব হয়। ১৯৯১ সালে ইউরোপীয় জোটের পতনের পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে পশ্চিমারা কমিউনিজমের সমাপ্তি হিসাবে ঘোষণা করেছিল। যদিও এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ পৃথিবীর প্রতি ছয়জন মানুষের মধ্যে একজন কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে বসবাস করত যাদের অধিকাংশই চীনের অধিবাসী । চীন অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক শক্তি হিসাবে দ্রুত ক্রমবর্ধমান ছিল।

১৮০৪ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০ কোটিতে পৌঁছাতে আধুনিক মানব ইতিহাসের হিসেবে ২ লক্ষ বছর‌ এবং মানব বিবর্তনের হিসেবে ৬০ লক্ষ বছর লেগেছিল। বিংশ শতাব্দীর ১৯২৭ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা আনুমানিক ২০০ কোটিতে পৌঁছায় । ২০০০ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা ৬০০ কোটিতে পৌঁছায়, যাদের অর্ধেকেরও বেশি ছিল পূর্ব, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিবাসী। বিশ্বব্যাপী সাক্ষরতার হার ৮০% এ পৌঁছায়।পেনিসিলিন ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির যুগান্তকারী অগ্রগতি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক টিকাদান কর্মসূচি যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী গুটিবসন্ত এবং অন্যান্য রোগ নির্মূল করতে সহায়তা করেছিল। গুটিবসন্ত এখন শুধুমাত্র গবেষণাগারে বিদ্যমান। উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে মেশিনের ব্যবহার শুরু হয় । বাণিজ্য উন্নয়নের ফলে কৃষি বিপ্লবের সময় থেকে প্রচলিত সীমিত আকারের খাদ্য-উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং খাদ্যের উৎপাদন ও বৈচিত্র্য বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষের পুষ্টিমানের উন্নয়ন ঘটে। ১৯ শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত মানুষের গড় আয়ু ছিল প্রায় ৩০ বছর। বিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক গড় আয়ু ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪০ বছর অতিক্রম করে । এসময় অর্ধেকের গড় আয়ু ছিল ৭০ বছর বা ততোধিক যা গত শতাব্দীর চেয়ে ৩০ বছর বেশি।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মানচিত্র (১৯১০ অনুযায়ী)। চূড়ান্ত পর্যায়ে , এটি ছিল ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্য ।

কালানুক্রমিক ইতিহাস

২০শ (বিংশ) শতাব্দীর সূচনা হয়েছিল ১ জানুয়ারী , ১৯০১ সালে ,[1] এবং শেষ হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর, ২০০০ সালে ৷[2] এটি দ্বিতীয় সহস্রাব্দের দশম এবং সর্বশেষ শতাব্দী ছিল। শতাব্দীর বছর হিসেবে ২০০০ সালটি একটি অধিবর্ষ ছিল। ১৬০০ সালের পরে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এটি ছিল দ্বিতীয় শতাব্দীর অধিবর্ষ । এই শতাব্দীতেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে মহাদেশমহাসাগর জুড়ে প্রথমবারের মতো সর্বাত্মক যুদ্ধ হয়েছিল।বিংশ শতাব্দীতে জাতীয়তাবাদ বিশ্বের একটি প্রধান রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়।

এই শতাব্দীতে রাজনীতি, ভাবাদর্শ, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং ঔষধের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক মানুষের জীবনযাত্রায় একটি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় । বিংশ শতাব্দীতে সভ্যতার সূচনাকাল থেকে অন্য সকল শতাব্দীর সম্মিলিত অগ্রগতির চেয়ে অধিক প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হয়েছিল। এসময় জাতীয়তাবাদ, বিশ্ববাদ, পরিবেশবাদ, ভাবাদর্শ,বিশ্বযুদ্ধ, গণহত্যা এবং পারমাণবিক যুদ্ধের মতো শব্দগুলো সাধারণভাবে ব্যবহার শুরু হয় । আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের মতো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ভৌত বিজ্ঞানের মূল মডেলগুলোকে গভীরভাবে পরিবর্তন করে। বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করতে বাধ্য হন যে মহাবিশ্ব আগের বিশ্বাসের চেয়ে আরও জটিল । ফলে উনিশ শতকের শেষের দিকে অবশিষ্ট বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের শেষ কয়েকটি বিবরণ পূরণ হতে চলেছে এমন আশা শেষ হয়ে যায়। এটি এমন একটি শতাব্দী ছিল যা ঘোড়া, সাধারণ অটোমোবাইল এবং মালবাহী জাহাজ দিয়ে শুরু হয়েছিল কিন্তু শেষ হয়েছিল উচ্চ-গতির রেল, প্রমোদতরী , বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক বিমান ভ্রমণ এবং স্পেস শাটল দিয়ে। হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিটি সমাজের ব্যক্তিগত পরিবহনের মৌলিক মাধ্যম ঘোড়া এবং অন্যান্য মালবাহী পশু কয়েক দশকের মধ্যে গাড়ি এবং বাস দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই উন্নয়নগুলো সম্ভব হয় , যা সহজে বহনযোগ্য আকারে শক্তি সরবরাহ করে। কিন্তু এটি দূষণ এবং পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। এ শতাব্দীতেই মানুষ প্রথমবারের মতো মহাকাশ অনুসন্ধান করে এবং চাঁদে পা রাখে।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে বিশ্ব শক্তি এবং সাম্রাজ্য সমূহ । (অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের পরিবর্তে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের পতাকা দেখানো উচিত)

গণমাধ্যম, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিশেষ করে কম্পিউটার, পেপারব্যাক বই, সার্বজনীন শিক্ষা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বজ্ঞানের আরও ব্যাপক প্রচলন সম্ভব হয় । জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ৩৫ বছর থেকে বেড়ে ৬৫ বছর হয়। তবে দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যুদ্ধকে ধ্বংসের অভূতপূর্ব স্তরে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই ৬ কোটির বেশি মানুষ নিহত হয়। এসময় পারমাণবিক অস্ত্র মানবজাতিকে অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে ধ্বংস করার সুযোগ তৈরি করে । যদিও এই একই যুদ্ধসমূহের কারণে সাম্রাজ্য ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাম্রাজ্য ও তাদের সম্প্রসারণের যুদ্ধ এবং উপনিবেশবাদের অবসান আন্তর্জাতিক বিষয়ের একটি অন্যতম উপাদান হয়ে ওঠে। ফলে অনেক বেশি বিশ্বায়িত এবং সহযোগিতামূলক বিশ্বের সৃষ্টি হয়।প্রধান শক্তিগুলো ১৯৪৫ সালে শেষবার প্রকাশ্য সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল এবং তারপর থেকে সহিংসতা নজিরবিহীনভাবে হ্রাস পেয়েছে। [3] পরিবহন ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জনপ্রিয় সঙ্গীত ও পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্যান্য প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে বিশ্ব সাংস্কৃতিকভাবে আগের চেয়ে আরও বেশি সমজাতীয় হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ একটি সত্যিকারের বিশ্ব অর্থনীতির বিকাশ ঘটে।

সারসংক্ষেপ

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জতি, [4] যা আগের শতাব্দীতেও বিশ্বের রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, যেমন: ট্যাঙ্ক, রাসায়নিক অস্ত্র এবং বিমানের মতো নতুন আবিষ্কার যুদ্ধকৌশলে পরিবর্তন এনেছিল । পশ্চিম ইউরোপে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান পরিখা যুদ্ধে ২ কোটি ২০ লক্ষাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর ফ্রান্স প্রজাতন্ত্র, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং রাশিয়ান সাম্রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিমৈত্রী জোট কেন্দ্রীয় শক্তির (জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, অটোমান সাম্রাজ্য এবং বুলগেরিয়া) বিরুদ্ধে জয়লাভ করে। ত্রিমৈত্রী জোট পরাজিত রাজ্যগুলির অনেক ঔপনিবেশিক সম্পত্তি দখল করার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ আদায় করে যা বিশেষ করে জার্মানিকে অর্থনৈতিক মন্দায় নিমজ্জিত করেছিল। এই যুদ্ধের শেষেই অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় এবং অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে যায়। রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় জার শাসনের অবসান হয়। শেষ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসের জারবাদী শাসনের পতন ঘটে এবং রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বিজয়ী বলশেভিকরা বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে।

অ্যানাক্রোনাস বিশ্ব মানচিত্রে লীগ অফ নেশন্সের ২৬ বছরের ইতিহাসে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দেখা যাচ্ছে। এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য তৈরি করা প্রথম বৈশ্বিক আন্তর্জাতিক সংস্থা।

যুদ্ধোত্তর ক্ষোভ থেকে ফ্যাসিবাদ নামক একটি আন্দোলনের উত্থান ঘটেছিল যা ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার সময় বৃদ্ধি পায়। ১৯৩০ এর দশকে ইতালি, জার্মানি এবং স্পেনে ফ্যাসিবাদ গতিলাভ করে। নাৎসি জার্মানির প্রতিবেশী দেশগুলো দখল করে নেয়ার প্রবণতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়। এদিকে,জাপান দ্রুত প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত শিল্পশক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং জার্মানি ও ইতালির সাথে অক্ষ শক্তি গঠন করে। পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানের সামরিক সম্প্রসারণবাদের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। পার্ল হারবার নামক একটি অপ্রত্যাশিত আক্রমণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

১৯৪১ সালের নাৎসি আক্রমণের প্রথম দিকে ইউক্রেনসোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষকে হারিয়েছিল,[5]যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সমস্ত প্রাণহানির প্রায় অর্ধেক।

কয়েক বছরের নাটকীয় সামরিক সাফল্যের পর ১৯৪৫ সালে জার্মানি পরাজিত হয়। পূর্ব দিক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পোল্যান্ড এবং পশ্চিম দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ফ্রান্স জার্মানিকে আক্রমণ করে। ইউরোপে মিত্রশক্তির বিজয়ের পর মাঞ্চুরিয়ায় সোভিয়েত আক্রমণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জাপানের উপর দুটো পারমাণবিক বোমা বর্ষণের মধ্য দিয়ে এশিয়ায় যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা প্রথম দেশ এবং যুদ্ধে ব্যবহার করা একমাত্র দেশ। সবমিলিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি মানুষ মারা যায়।

লিটল বয়ের বিস্ফোরণের তৈরি মাশরুম মেঘ। ৬ আগস্ট ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক হামলা চালানো হয় ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক ফোরাম হিসেবে লীগ অফ নেশন্সের উত্তরসূরী জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে বিশ্বের দেশগুলো বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করতে পারে। এটি যুদ্ধ পরিচালনা, পরিবেশগত সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক সার্বভৌমত্ব এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো সমাধানের প্রস্তাব প্রদান করে। বিভিন্ন দেশ, বহুজাতিক সংস্থা এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থার সৈন্যদের সমন্বয়ে গঠিত শান্তিরক্ষী বাহিনী দুর্ভিক্ষ, রোগ ও দারিদ্র্য এবং কিছু স্থানীয় সশস্ত্র সংঘাত দমনে সহায়তা করে। ইউরোপ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে একত্রিত হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠন করে, যা ২০ শতকের শেষের দিকে ১৫টি ইউরোপীয় দেশ নিয়ে গঠিত হয়।

যুদ্ধের পর পশ্চিমা শক্তিসমূহ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানি দখল ও ভাগ করে নেয়। পূর্ব জার্মানি এবং পূর্ব ইউরোপের বাকি অংশ কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে সোভিয়েত পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আমেরিকান মার্শাল প্ল্যানের সাহায্যে পশ্চিম ইউরোপ পুনর্নির্মিত হয়,যার ফলে যুদ্ধোত্তর অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ঘটে এবং অনেক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে ওঠে।

অক্ষশক্তির পরাজয় এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পুনর্গঠনের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের একমাত্র অবশিষ্ট পরাশক্তি ছিল। যুদ্ধকালীন মিত্ররা দ্রুতই একে অপরের শত্রু হয়ে ওঠে। কমিউনিজম এবং গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদের মতো প্রতিযোগিতার মতাদর্শ ইউরোপে ছড়িয়ে যায়। ইউরোপ আয়রন কার্টেন ও বার্লিন প্রাচীর দিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এসময় তারা সামরিক জোট ( ন্যাটো এবং ওয়ারশ চুক্তি ) গঠন করে যা স্নায়ুযুদ্ধ নামক দশক-দীর্ঘ একটি স্থবিরতার সাথে জড়িয়ে পড়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় দেশ হিসেবে পরমাণু অস্ত্র উৎপাদনকারী হয়ে ওঠার কারণে এসময় একটি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার শুরু হয় । ফলে দুটি দেশই এই গ্রহের বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পরমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে। অনেক ইতিহাসবিদ এই ধরনের বিনিময় প্রতিরোধ করার জন্য পারস্পরিক নিশ্চিত ধ্বংসযজ্ঞকে দায়ী করেন। যেখানে কোনো পক্ষ সমান ধ্বংসাত্মক প্রতিশোধমূলক হামলার স্বীকার না হলে নিজে প্রথমে আঘাত করতে পারে না। একে অপরের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে ব্যর্থ হওয়ায় এই সংঘাত সারা বিশ্বে- বিশেষত চীন, কোরিয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম এবং আফগানিস্তানে প্রক্সি যুদ্ধের একটি সিরিজে পরিণত হয়। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বে কমিউনিজমের বিস্তার চাইলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি দমনের চেষ্টা করে। দুই পক্ষের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার কারণে উভয় পক্ষই গবেষণা এবং উন্নয়নে যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছিল। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরেও মহাকাশ অনুসন্ধান এবং ইন্টারনেট উদ্ভাবিত হয়।

উপনিবেশবাদের সমাপ্তি ঘটায় এই শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরিমাণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় , বিশেষত আফ্রিকায়। সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশ অন্যান্য অনেক তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশের সাথে সংযুক্ত হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশেষত দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মনোযোগ আকর্ষণ করে। এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যা প্রায় ৭ বিলিয়নে পৌঁছায়।

এই শতাব্দীর শেষার্ধে আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশিরভাগ ইউরোপীয় উপনিবেশ বিউপনিবেশায়ন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা লাভ করে। ইতোমধ্যে বিশ্বায়ন বেশ কিছু দেশের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তারের পথ খুলে দেয়। বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি, হলিউড মোশন পিকচার শিল্প ও ব্রডওয়ে থিয়েটার, জ্যাজ, রক মিউজিকপপ মিউজিক, ফাস্ট ফুডহিপি, হিপ-হপ, হাউস মিউজিক, ডিস্কো এবং স্টিট স্টাইলের মাধ্যমে আমেরিকান সংস্কৃতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। এদের সবগুলোই জনপ্রিয় সংস্কৃতি এবং যুব সংস্কৃতির ধারণার সাথে সম্পর্কিত। [6] [7] [8] ১৯৯১ সালে অভ্যন্তরীণ চাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর চীন, উত্তর কোরিয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম এবং লাওসের মতো উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া এটি সারা বিশ্বে যে কমিউনিস্ট সরকারগুলোকে সমর্থন করেছিল তার বেশিরভাগ ভেঙ্গে যায়। ফলে বাজার অর্থনীতির বিশ্রী রূপান্তর ঘটে।

উদ্ভাবন এবং পরিবর্তনের প্রকৃতি

ক্রমাগত শিল্পায়ন এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের কারণে এই শতাব্দীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ছিল। ১৯ শতকের শেষের দিকে বৈদ্যুতিক বাতি, অটোমোবাইল এবং টেলিফোনের মতো উদ্ভাবন এবং এরই ধারাবাহিকতায় সুপারট্যাঙ্কার, বিমান, মোটরওয়ে, রেডিও, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, অ্যান্টিবায়োটিক, পারমাণবিক শক্তি, হিমায়িত খাদ্য, কম্পিউটারমাইক্রোকম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন উন্নত বিশ্বের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে। জনপ্রতি গড়ে ভোগ্য পণ্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। স্নায়ুযুদ্ধের অস্ত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রকৌশলের পেশাদারিকরণ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন নিয়ে আসে।

সামাজিক পরিবর্তন

মার্টিন লুথার কিং, জুনিয়র, একজন আফ্রিকান আমেরিকান নেতা ( ওয়াশিংটন, আগস্ট ১৯৬৩ )

এ শতাব্দীর শুরুতে বেশিরভাগ সমাজেই বর্ণ এবং লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে প্রকট বৈষম্য প্রচলিত ছিল। আটলান্টিকের দাস বাণিজ্য ১৯ শতকে শেষ হয়ে গেলেও উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত সমাজে অ-শ্বেতাঙ্গদের জন্য সমতার আন্দোলন চলমান ছিল। ২০ শতকের শেষ নাগাদ বিশ্বের অনেক স্থানেই নারীদের পুরুষদের মতো একই আইনি অধিকার ছিল। বর্ণবাদকে অগ্রহণযোগ্য মনে করা হতো এবং এই অনুভূতি প্রায়শই আইনের সমর্থন পেয়েছিল। [9] ভারত প্রজাতন্ত্র গঠিত হওয়ার পর ভারতে বর্ণপ্রথার ফলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সরকারে ইতিবাচক পদক্ষেপের সুবিধা পায়।

১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে যৌন বিপ্লবের সময় অনেক সমাজে বিবাহপূর্ব যৌনতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এ শতাব্দীর শেষদিকে সমকামিতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে হতে শুরু করে। [10][11]

২০ শতকের শেষে পৃথিবী

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দৈনন্দিন জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। ইউরোপ প্রথমবারের মতো একটি টেকসই শান্তিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণ, ২০ শতকের শেষের দিকে বিশ্বের জনসংখ্যার এক ষষ্ঠাংশ, এ শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। চীন, বিশ্বের জনসংখ্যার পঞ্চমাংশ নিয়ে গঠিত একটি প্রাচীন জাতি, অবশেষে বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত হয়। পুরনো সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসের পরে চীন একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন করে। ঔপনিবেশিকতা এবং স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের সাথে সাথে আফ্রিকার প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ নতুন জাতিরাষ্ট্রে থেকে যায়।

পৃথিবী বিশ্বায়নের দ্বিতীয় প্রধান সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল যার প্রথমটি ১৮ শতকে শুরু হয়েছিল এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। যেহেতু এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রভাবশালী অবস্থানে ছিল ফলে এই প্রক্রিয়ার একটি বড় অংশই ছিল আমেরিকানাইজেশন । চীন ও ভারতের প্রভাবও ক্রমবর্ধমান ছিল, কারণ বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যা দ্রুত বিশ্ব অর্থনীতির সাথে একীভূত হচ্ছিল।

সন্ত্রাসবাদ, একনায়কতন্ত্র এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার বৈশ্বিক সমস্যাগুলোকে ধামাচাপা দিয়েছিল। পৃথিবী তখনও ছোট আকারের যুদ্ধ,সম্পদের প্রতিযোগিতা, জাতিগত সংঘাত এবং অন্যান্য সহিংস সংঘাতের কারণে বিধ্বস্ত ছিল।

রোগ বিশ্বের অনেক অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের মতো নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগগুলো বিরাট জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে। এইচআইভি ভাইরাসের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ এইডসে আক্রান্ত হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাইরাসটি মহামারীতে পরিণত হয়।

জলবায়ু বিজ্ঞানীদের করা গবেষণার উপর ভিত্তি করে, বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশই বিবেচনা করে যে পরিবেশগত সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকির কারণ হতে পারে। [12] একটি যুক্তি হলো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটছে। [13] এটি অনেক দেশকে আলোচনার এবং কিয়োটো চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে উৎসাহিত করে। এই চুক্তি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের বাধ্যতামূলক সীমা নির্ধারণ করে দেয়।

বিশ্বের জনসংখ্যা ১৯০১ সালের প্রায় ১.৬ বিলিয়ন থেকে বেড়ে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ প্রায় ৬.১ বিলিয়নে পৌঁছায় । [14] [15]

যুদ্ধ এবং রাজনীতি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে আঞ্চলিক পরিবর্তনের মানচিত্র (১৯২৩ সালের )

এ শতাব্দীতে সরকারী কর্মকাণ্ডে নিহত মানুষের সংখ্যা ছিল কয়েক মিলিয়ন । এদের মধ্যে যুদ্ধ, গণহত্যা এবং রাজনৈতিক হত্যার ফলে মৃত্যু উল্লেখযোগ্য। শুধুমাত্র দুটি বিশ্বযুদ্ধেই যথাক্রমে প্রায় ৬০ ও ৮০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় । রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুডলফ রুমেল ধারণা করেন যুদ্ধে নিহত ব্যক্তি, অনিচ্ছাকৃতভাবে নিহত বেসামরিক ব্যক্তি এবং দাঙ্গায় হত্যাকাণ্ড বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গণহত্যার কারণেই ২৬২,০০০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে । [16] চার্লস টিলির মতে, "এ শতাব্দীতে একটি সরকার বা অন্য সরকার সমর্থিত সংগঠিত সামরিক বাহিনীগুলোর কর্মকান্ডের ফলে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সম্ভবত সমসংখ্যক বেসামরিক লোক যুদ্ধজনিত রোগ এবং অন্যান্য পরোক্ষ প্রভাবের কারণে মারা যায়।" [17] ধারণা করা হয় যে ১৯১৪ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইউরোপীয় যুদ্ধ, সহিংসতা এবং দুর্ভিক্ষের কারণে মারা যায় [18]

রিচার্ড নিক্সনরিচার্ড নিক্সন এবং লিওনিদ ব্রেজনেভ ইউএসএস সেকোইয়া(প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ট), ১৯ জুন ১৯৭৩
১৮৪২ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীন হংকং, যা চার এশীয় বাঘের একটি।

সংস্কৃতি এবং বিনোদন

  • এই শতাব্দীর শুরুতে প্যারিস ছিল বিশ্বের শৈল্পিক রাজধানী, যেখানে ফরাসি ও বিদেশী লেখক, সুরকার এবং শিল্পী সকলেই একত্রিত হয়েছিল। শতাব্দীর মাঝামাঝি নিউইয়র্ক শহর বিশ্বের শৈল্পিক রাজধানী হয়ে ওঠে।
  • থিয়েটার, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং মিডিয়া জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে ফ্যাশন এবং ট্রেন্ডের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। অনেক চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উদ্ভূত হওয়ায়, আমেরিকান সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
  • ১৯৫৩ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক হয় , যিনি এ শতাব্দীর একজন আইকনিক ব্যক্তিত্ব।
  • ভিজ্যুয়াল সংস্কৃতি শুধু চলচ্চিত্রেই নয় বরং কমিকস এবং টেলিভিশনেও আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। এই শতাব্দীতে আখ্যানবাদী চিত্রের একটি নতুন দক্ষ বোধের জন্ম হয়।
  • এই শতাব্দীর শেষ ২৫ বছরে কম্পিউটার গেমস এবং ইন্টারনেট সার্ফিং বিনোদনের নতুন এবং জনপ্রিয় রূপ হয়ে ওঠে।
  • সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, ফ্যান্টাসি (সু-বিকশিত কাল্পনিক জগতের বিস্তারিত বিবরণ)এবং বিকল্প ইতিহাস কল্পকাহিনী জনপ্রিয়তা লাভ করে। আন্তঃযুদ্ধের সময় গোয়েন্দা কল্পকাহিনী জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রোভ প্রকাশনী হেনরি মিলারের একটি উপন্যাস ট্রপিক অফ ক্যান্সার প্রকাশ করে যা আমেরিকায় পর্নোগ্রাফি প্রকাশ এবং সেন্সরশিপকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করে।

সঙ্গীত

১৯৫৬ সালে এলভিস প্রেসলি , যিনি ছিলেন রক অ্যান্ড রোল এবং রকবিলির একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব।

ফোনোগ্রাফ রেকর্ডের মতো সঙ্গীত রেকর্ডিং প্রযুক্তি এবং বেতার সম্প্রচারের মতো প্রচার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে গানের শ্রোতা সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায় । ২০ শতকের আগে, সঙ্গীত সাধারণত শুধুমাত্র সরাসরি পরিবেশন করা হতো। বিংশ শতাব্দীতে সঙ্গীতের অনেক নতুন ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়।

  • ইগর স্ট্রাভিনস্কি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত রচনায় বিপ্লব ঘটান।
  • ১৯২০ এর দশকে,আর্নল্ড শোয়েনবার্গ বারো-টোন কৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন, যা ২০ শতকের সুরকারদের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।
  • শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কম্পোজিশন সম্পূর্ণ নতুন অনেক রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। এদের মধ্যে রয়েছে ডোডেক্যাফোনি, অ্যালেটোরিক সঙ্গীত এবং মিনিমালিজম ।
  • ট্যাঙ্গো আর্জেন্টিনায় তৈরি হয়ে আমেরিকা ও ইউরোপের বাকি অংশে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
  • ব্লুজ এবং জ্যাজ সঙ্গীত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১০, ১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৪০ এর দশকে জ্যাজের একটি রূপ হিসাবে বেবপ বিকশিত হয়।
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকে কান্ট্রি মিউজিকের বিকাশ ঘটে।
  • ব্লুজ এবং কান্ট্রি ১৯৫০-এর দশকে রক অ্যান্ড রোলকে প্রভাবিত করে। আমেরিকান লোকসংগীতের পাশাপাশি ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে ব্রিটিশ আক্রমণের সময় এদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
  • রক গান দ্রুতই বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়ে যায় যার মধ্যে রয়েছে ফোক রক, হেভি মেটাল, পাংক রক এবং অল্টারনেটিভ রক। এগুলো জনপ্রিয় সঙ্গীতের প্রভাবশালী ধারায় পরিণত হয়।
  • ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে হিপ হপের উত্থানের ফলে রক গানকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল।
  • অন্যান্য ঘরানা যেমন হাউস, টেকনো, রেগে এবং সোল সবই শতাব্দীর শেষার্ধে বিকশিত হয়েছিল এবং জনপ্রিয়তার বিভিন্ন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল।
  • এসময় সঙ্গীতে ব্যাপকভাবে সিনথেসাইজারের ব্যবহার শুরু হয় এবং ১৯৮০ এর দশকে নতুন তরঙ্গ সঙ্গীতের মাধ্যমে এটি মূলধারায় প্রবেশ করে। ইলেকট্রনিক বাদ্যন্ত্রগুলো জনপ্রিয় সঙ্গীতের সমস্ত রীতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা শুরু হয় এবং হাউস, সিন্থ-পপ, ইলেকট্রনিক ডান্স মিউজিক এবং শিল্প সঙ্গীতের মতো ঘরানার সঙ্গীতের বিকাশ ঘটায়।

চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং থিয়েটার

চার্লি চ্যাপলিন তার ১৯২১ সালের চলচ্চিত্র দ্য কিড এ জ্যাকি কুগানের সাথে।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Twentieth Century's Triumphant Entry"The New York Times। পৃষ্ঠা 1। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-০৩
  2. "The 21st Century and the 3rd Millennium When Did They Begin?"। United States Naval Observatory। ২০১৯-১০-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০৭
  3. পিংকার, স্টিভেন (২০১১)। The Better Angels of Our Nature। Viking। আইএসবিএন 978-0-670-02295-3।
  4. Ferguson, Niall (২০০৪)। Empire: The rise and demise of the British world order and the lessons for global power। Basic Books। আইএসবিএন 978-0-465-02328-8।
  5. Mark Harrison (2002). Accounting for War: Soviet Production, Employment, and the Defence Burden, 1940–1945. Cambridge University Press. p. 167. আইএসবিএন ০-৫২১-৮৯৪২৪-৭
  6. Delaney, Tim। "Pop Culture: An Overview"Philosophy Now। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
  7. Bell, P., R. (১৯৯৬)। ""Americanization": Political and cultural examples from the perspective of "Americanized" Australia" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
  8. Malchow, Howard (২০১১)। Special Relations: The Americanization of Britain?। Stanford University Press। আইএসবিএন 978-0-804-77399-7।
  9. Fleegler, Robert L. Theodore G. Bilbo and the Decline of Public Racism, 1938–1947 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০২-০৬ তারিখে. Retrieved 23 December 2014
  10. Zadey, Siddhesh (২০১৯-১১-২৫)। "Constitution Day: Do We Truly Know the 'Real' Ambedkar?"TheQuint (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩০
  11. "Ambedkar and political reservation"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩০
  12. Smith, J.B.। "Ch. 19. Vulnerability to Climate Change and Reasons for Concern: A Synthesis"Extreme and Irreversible EffectsSec 19.6.। ২০১৬-১০-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-১০, in IPCC TAR WG2 2001
  13. IPCC AR5 WG1 2013, "Summary for Policymakers, Observed Changes in the Climate System", pp. 10–11: "Total radiative forcing is positive, and has led to an uptake of energy by the climate system. The largest contribution to total radiative forcing is caused by the increase in the atmospheric concentration of CO2 since 1750." (p 11). "From 1750 to 2011, CO2 emissions from fossil fuel combustion and cement production have released 375 [345 to 405] GtC to the atmosphere, while deforestation and other land use change are estimated to have released 180 [100 to 260] GtC." (p. 10).
  14. "World Population: Historical Estimates of World Population"। United States Census Bureau। ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-০৯
  15. "World Population: Total Midyear Population for the World: 1950–2050"। United States Census Bureau। ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-০৯
  16. Democide See various exclusions
  17. Charles Tilly (2003). "The politics of collective violence" Cambridge University Press. p. 55. আইএসবিএন ০-৫২১-৫৩১৪৫-৪.
  18. Gary Rodger Weaver (1998). Culture, Communication, and Conflict. Simon & Schuster. p. 474. আইএসবিএন ০-৫৩৬-০০৩৭৩-৪
  19. Suny 2015, পৃ. 245, 330।
  20. Bozarslan, Duclert এবং Kévorkian 2015, পৃ. 187।
  21. Prominent among this group was the late Tony Judt.
  22. Geoffrey A. Hosking (2001). "Russia and the Russians: a history". Harvard University Press. p. 469. আইএসবিএন ০-৬৭৪-০০৪৭৩-৬
  23. "The Other Killing Machine". The New York Times. May 11, 2003
  24. "China's great famine: 40 years later". British Medical Journal 1999;319:1619–1621 (December 18 )
  25. Thee, Marek (১৯৭৬)। "The Indochina Wars: Great Power Involvement – Escalation and Disengagement"। SAGE Publications: 117–129। আইএসএসএন 1460-3578জেস্টোর 423343ডিওআই:10.1177/002234337601300204
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.