বাঙাল
বাঙাল (ঘটি জনগোষ্ঠীর বিপরীত) একটি জনগোষ্ঠী, অঞ্চল তথা বর্তমান বাংলাদেশের মানুষদের বোঝায়। এই শব্দটি অখণ্ড বাংলার পূর্ব প্রান্তের বাঙালিদের বর্ণনার জন্য ব্যবহৃত হয়, যাদের আলাদা স্বতন্ত্র উচ্চারণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। সাধারণত এটি ধারণা করা হয় যে হুগলি নদীর পূর্ব থেকে ব্রহ্মপুত্র-পদ্মা নদী হল অখণ্ড বাংলার এলাকা। ব্রহ্মপুত্র-পদ্মা নদীর পূর্বের অঞ্চলগুলি ঐতিহ্যগতভাবে বাঙালদের আদিভূমি হিসাবে ধারণ করা হয়। যদিও কিছু পণ্ডিত দাবি করেছেন যে সিলেট ও চট্টগ্রাম অংশের অঞ্চলগুলিকে বাঙাল অঞ্চল হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়, যথাক্রমে সিলেটি ও চাটগাঁয়ের লোকদের আশ্রয় করে পৃথক অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। আরও যথাযথ সংজ্ঞা অনুসারে, বাঙালরা হলেন সেই লোকেরা যাদের পূর্ব পুরুষরা পূর্ববঙ্গের মাটির সাথে সম্পৃক্ত। আরও কিছু মতামত রয়েছে যে, পূর্ববঙ্গের আদি মানুষদের মধ্যে কেবলমাত্র আর্থিক সমৃদ্ধশালি গোষ্ঠীর লোকদেরই বাঙাল হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা উচিত। এই মতামত অনুসারে, বাঙাল শব্দের একটি নৃতাত্ত্বিক-ভৌগোলিক এবং পাশাপাশি একটি সামাজিক অর্থও রয়েছে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় পূর্ববঙ্গ থেকে কিছু লোক প্রধানত হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। পশ্চিমবঙ্গের আদি জনগোষ্ঠী এই শরণার্থীদেরই মাঝে মাঝে বাঙাল বলে অভিহিত করত। এই হিসাবে, ঘটি ও বাঙাল শব্দটি পশ্চিমবঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যদিও বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত অভিবাসীদের তুলনামূলক বেশি সংখ্যক অঞ্চল ছাড়া এই শব্দের ব্যবহার বিরল। আধুনিক যুগে, উচ্চ বর্ণের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে, "বাঙাল" এবং "ঘটি" সামাজিক উপ-গোষ্ঠী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। দেশ বিভাগের সময় যাদের পরিবার পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছিল তারা হল বাঙাল এবং যাদের পরিবার সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন তারা হলেন ঘটি। একইভাবে, ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ববঙ্গে আগত লোকেরা ঘটি নামেও পরিচিত, যেহেতু তারা স্বাধীনতার সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিল। এখানে ব্যবহৃত শব্দটির প্রকৃত ভূগোলের সাথে খুব কম সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু এই গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সদস্যই এখন ভারতে বাস করছেন। ঐতিহাসিকভাবে, তাদের বর্ণের মধ্যে বিবাহ করার পাশাপাশি, এই গোষ্ঠীর লোকেরাও বাঙাল বা ঘটি যাই হোক না কেন, এই গোষ্ঠীর মধ্যেই বিবাহ পছন্দ করত। ইস্টবেঙ্গল (বাঙালদের) এবং মোহনবাগান (ঘটিদের) এই দুটি ফুটবল ক্লাবকে তাদের নিজ নিজ সমর্থনের মাধ্যমে বাঙাল এবং ঘটিরা তাদের সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রেখেছে। এছাড়াও তারা স্ব স্ব রান্না এবং বিশেষত নদী-ভিত্তিক স্বাদযুক্ত খাবারের আধিপত্যের দাবির মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও লালন করে। যথা: চিংড়ি ঘটিদের জন্য এবং ইলিশ বাঙালদের জন্য।
গঙ্গা পাড়ের ঘটি ও পদ্মা পাড়ের বাঙাল
হুগলি নদী পশ্চিম দক্ষিণে (ডান দিকে) যে বাঙালির বাস, তাঁরা হলেন ঘটি। পরিসংখ্যান বিচার করলে সেরকমই কিছু একটা দাঁড়ায়। তবে পশ্চিমবঙ্গে মূলত যাঁরা এখানকার আদি বাসিন্দা, তাঁদের বলা হয় ঘটি, যাঁরা ওপার বাংলা থেকে এসেছেন, তাঁরা হলেন বাঙাল।
ইতিহাস
১৯৪৭'এ দেশভাগ জনিত কারনে বাঙ্গাল/বাঙাল শব্দের উৎপত্তি নয়। আজ থেকে একশো বছরেরও বেশি আগে এ শব্দের ব্যবহারের কথা জানা গেছে।
আজকের ভৌগোলিক বাংলাদেশের মানুষ মাত্রই বাঙ্গাল/বাঙাল অভিহিত হতেননা; ওই একই অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে কোন কোন স্থানের বসিন্দাদের অন্যরা— যারমধ্যে ওই অঞ্চলের বাইরের লোকেরাও পড়ছেন,
রবীন্দ্রনাথ ও বাঙালসভা
এছাড়াও তিনি মজা করে লেখা এক ছড়া্য় নিজ 'খাস দপ্তর' এ সহায়ক সুধীর চন্দ্র কর কে লেখেন "… … পশ্চিম বঙ্গের কবি দেখিলাম মোর/ বাঙালের মতো নাই জেদের অপ্রতিহত জোর।" (২রা ডিসেম্বর, ১৯৪০)। যশোর জেলার ওনার পূর্বপুরুষ রা সবাই বঙ্গাল প্রদেশ ছিলেন। এবং কিছু মুসলিম হই পড়ছিলেন।
নমঃশূদ্র সভাই ওনার ছিল নিত্য আনা গোনা। কলকাতাকে পূর্ব বঙ্গ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পশ্চিম বঙ্গে রাখা একটি লড়াই
বাঙাল বনাম ঘটি
আপাতদৃষ্টিতে যেই তফাৎগুলো আমি দেখেছি:-
1. বিভাজনটা নদীর হিসেবে, সীমান্ত নয়।
ঘটি = গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের মানুষ, এবং তার মধ্যে খুলনা, যশোর ও আছে।
বাঙাল = গঙ্গার পূর্ব পাড়ের মানুষ, এবং তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিও আছে।
2. ঘটিরা দীপাবলির দিন লক্ষ্মী পুজো করে, বাঙালরা কালী পুজো। এই তফাৎটা আমি পশ্চিমবঙ্গে নিবাস কালীন পর্যবেক্ষণ করে পাই।
3. বাকি তো অনেক কথা আছে, ঝাল বনাম মিষ্টি এগুলো এক কালে সত্য হলেও এখন হয়তো সময়ের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে, অন্ততঃ শহুরে জীবনে।
আরো দেখুন
মন্তব্য: বিশ্বাস পদবী যেমন ঘটি, তেমনি দে পদবী আবার বাঙাল