পান্তা ভাত

পান্তা ভাত গ্রামীণ বাঙালি জনগোষ্টির একটি জনপ্রিয় খাবার। নৈশভোজের জন্য রান্না করা ভাত বেঁচে গেলে সংরক্ষণের জন্য জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরদিন এই জলে ভিজিয়ে রাখা ভাত হল পান্তা ভাত।পান্তা ভাত গ্রামীণ মানুষ সকালের খাবার হিসাবে খেয়ে থাকেন। সাধারণত লবণ, কাঁচা লঙ্কা ও পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া হয়, অনেকেই আবার এর সাথে আলু ভাতে,বেগুন ভর্তা,ডাল সিদ্ধ মাখা,শুটকি ভর্তা বা সরিষার তেল দিয়ে পান্তা ভাতের রুচি বৃদ্ধি করে থাকেন।

পান্তা ভাত
পান্তা-ইলিশ -- ইলিশ মাছের সাথে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ, আঁচার, ডাল, কাঁচা লঙ্কা, এবং পিয়াঁজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পয়লা বৈশাখ এবং বিশ্বকর্মা পূজার জনপ্রিয় খাদ্য।
প্রকারসকালের খাবার
উৎপত্তিস্থলবাংলাদেশ
ভারত(পশ্চিম বঙ্গ,অসম, ত্রিপুরা)
অঞ্চল বা রাজ্যগ্রামীণ মানুষ
প্রধান উপকরণভাত, জল
ভিন্নতাপাখাল, Poitabhat

ইতিহাস

পান্তা ভাতের ইতিহাস আনুমানিক দুই হাজার বছরের পুরনো তবে ইসলামিক ঐতিহাসিকরা এটিকে মুঘল শাসনের সাথে যুক্ত করতে দ্বিধাবোধ করেন নি। উদাহরন হিসাবে গোলাম রাব্বানীর লেখা ধরা যেতে পারে। মুঘল শাসনামলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো, আগত দর্শক শ্রোতাগণ ঐতিহ্যবাহী পান্তাভাত খেতো।[1] বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে শহুরে বাঙালী বাংলা নববর্ষকে ঘটা করে উদ্‌যাপন শুরু করে। এই দিন বাঙালিয়ানার প্রতীক হিসেবে ভাজা ইলিশ মাছ সহযোগে পান্তা ভাত খাওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়। যদিও এটি ভুল তথ্য কারণ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ইলিশ মাছ সহযোগে পান্তা ভাত বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে বহু প্রাচীন ভাবে যুক্ত ।

ঐতিহ্যে পান্তা ভাত

বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পান্তা ভাত হলো বাঙালির প্রধান খাবার যা দুই হাজার বছরের পুরনো রীতি যা আজও পালন করা হয়। তবে বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে পান্তা উৎসবের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার সংস্কৃতি চালু ও পরিব্যাপ্ত হয়েছে।

তৈরি প্রণালী

নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতকে জলে প্রায় এক রাত ডুবিয়ে রাখলেই তা পান্তায় পরিণত হয়। ভাত মূলত পুরোটাই শর্করা (Carbohydrate)। ভাতে জল দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারি (Fermentation) ব্যাক্টেরিয়া (Bacteria) বা ইস্ট (Yeast) শর্করা ভেঙ্গে ইথানলল্যাকটিক এসিড তৈরি করে। এই ইথানলই পান্তাভাতের ভিন্ন রকম স্বাদের জন্য দায়ী। পান্তা ভাত মূলত ভাত সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। ভাত বেশিক্ষণ রেখে দিলে তা পচে খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কিন্তু জল দিয়ে রাখলে গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া সেখানে ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে যার ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায় (pH কমে)। তখন পচনকারি ও অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না।

৮-১০ ঘণ্টা পরে পান্তা ভাত তৈরী হয়।[2] কোন প্রকার সংক্রমন এড়াতে খাবারের পাত্রটি সতর্কতার সংগে ঢেকে রাখতে হবে।[3] সকাল বেলা পান্তাভাত লবণ, লেবু, লঙ্কা এবং কাটা পেঁয়াজ দিয়ে খাওয়া হয়।[4][5] খাওয়ার সময় জল আলাদা করা হয় অনেকসময়। অনেকে পান্তাভাতের সঙ্গে ভোজ্য তেল ব্যবহার করে।[6]

গবেষণা

পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। এর আয়রন দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়। ক্যালসিয়াম শরীরের হাড়কে শক্ত করে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরে নিঃসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। এসব কোলেস্টোরেল কমাতেও সাহায্য করে। এতে থাকা আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।[7]

১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাতের ফারমেন্টেশন হলে সেখানে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরি হয় এবং সেই পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে ও ঘুম পেতে পারে। পান্তা ভাত যদি পরিষ্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা না হয়, তাহলে সেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। সেই ভাত খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।[7]

তথ্যসূত্র

  1. Golam Rabbani (১৯৯৭)। Dhaka: From Mughal Outpost to Metropolis। Dhaka: University Press Limited। পৃষ্ঠা 168। আইএসবিএন 9789840513741।
  2. Jitendra Nath Rakshit (১৯১৬)। "Rice, as Prepared for Food in Bengal"The Agricultural Journal of India। Calcutta: Government of India, Central Publication Branch for the Imperial Council of Agricultural Research11: 189।
  3. Brian J.B. Wood (১৯৮৫)। Microbiology of Fermented Foods। Springer। পৃষ্ঠা 796। আইএসবিএন 9780751402162।
  4. Akhter Hameed Khan, The Works of Akhter Hameed Khan (Volume 1), page 288, Bangladesh Academy for Rural Development, 1983
  5. Debates: official report (Volume 2, Issues 16-30), page 1092, Pakistan. National Assembly, 1966
  6. Narendra S. Bisht and T. S. Bankoti, Encyclopaedic Ethnography of the Himalayan Tribes: R-Z (Volume 4), Page 1336, Global Vision, 2004, আইএসবিএন ৯৭৮৮১৮৭৭৪৬৯৫৯
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.