জয়গোপাল তর্কালঙ্কার

জয়গোপাল তর্কালঙ্কার (৭ অক্টোবর, ১৭৭৫ - ১৩ এপ্রিল,১৮৪৬) এর পরিচিতি প্রধানত সাহিত্যিক ও শাব্দিক হিসাবে।তবে আমৃত্যু সংস্কৃত কলেজে কাব্যের অধ্যাপনা করেছেন।পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন তার অন্যতম ছাত্র। [1]

জয়গোপাল তর্কালঙ্কার
জন্ম৭ অক্টোবর,১৭৭৫
মৃত্যু১৩ এপ্রিল, ১৮৪৬ (বয়স ৭১)
কলকাতা
পেশাসংস্কৃত পণ্ডিত ও অধ্যাপনা
পিতা-মাতাকেবলরাম তর্কপঞ্চানন (পিতা)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের জন্ম বৃটিশ ভারতের বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বজ্রাপুরে। তার শিক্ষা লাভ নিজের পিতা পণ্ডিত কেবলরাম তর্কপঞ্চাননের কাছে।

কর্মজীবন

পিতার কাছে শিক্ষা লাভের পর তিনি বারানসী চলে যান। সেখানে প্রাচ্যতত্ত্ববিদ হেনরি থমাস কোলব্রুককে বাংলা ও সংস্কৃত শেখানোর জন্য পণ্ডিতরূপে নিযুক্ত হন। ১৮০৫-২৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশনে উইলিয়াম কেরির অধীনে কাজ করেন। ওই সময়ে তিনি জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় সমাচার দর্পণ প্রকাশে সহায়তা করেন। ১৮১৮-২৩ খ্রিস্টাব্দে পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান কর্মীদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি সংস্কৃত বহুল কঠিন বাংলাকে ব্যবহারের উপযোগী ও সহজ করে তুলেছিলেন। বস্তুত তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষাকে পারসিক আরবিক প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে তার বিকাশ সাধন করা। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে কাব্যের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন এবং আমৃত্যু কাজ করেন। সেখানে তারাশঙ্করের তর্করত্ন, মদনমোহন তর্কালঙ্কারঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখেরা তার ছাত্র ছিলেন। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর 'চণ্ডী'র সম্পাদনা করেন। কাশীদাসী মহাভারত (১৮৩০-৩৪) ও কৃত্তিবাসী রামায়ণের (১৮৩৬) যথেচ্ছ পরিবর্তন করে প্রকাশ করায় তিনি সুনাম ও দুর্নাম দুই-ই অর্জন করেন। তবে প্রকৃতপক্ষে, বাজারে প্রচলিত বাংলা রামায়ণ ও মহাভারত জয়গোপালের সংশোধিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। [2] সুকবি হিসাবেও তার পরিচিতি ছিল। বিল্বমঙ্গল-কৃত হরিভক্তিমূলক সংস্কৃত কবিতার বঙ্গানুবাদ ও ষড়ঋতু বর্ণনা প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কবিতা তিনি রচনা করে গেছেন। এছাড়াও ফরাসি ভাষায় একখানি অভিধান সংকলন করেন। রাধাকান্ত দেব প্রতিষ্ঠিত ধর্মসভার একজন বিশিষ্ট সদস্য হিসাবে উক্ত সভা কর্তৃক পরিচালিত পরীক্ষাদি নির্বাহ করতেন। তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল -

  • 'শিক্ষাসার' (১৮১৮)
  • 'কৃষ্ণবিষয়কশ্লোকঃ' (১৮১৭)
  • 'চণ্ডী' (১৮১৯)
  • 'পত্রের ধারা' (১৮২১)
  • 'বঙ্গাভিধান' (১৮৩৮)
  • 'পারসিক অভিধান'

পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ই এপ্রিল ৭১ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ২৩৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. শিশিরকুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ৮৩ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-০০৭-৯ আইএসবিএন বৈধ নয়
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.