কালিয়াকৈর উপজেলা

কালিয়াকৈর উপজেলা বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।

কালিয়াকৈর
উপজেলা
কালিয়াকৈর
কালিয়াকৈর
বাংলাদেশে কালিয়াকৈর উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪′৩৪″ উত্তর ৯০°১২′৫১″ পূর্ব
দেশবাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলাগাজীপুর জেলা
আয়তন
  মোট৩১৪.১৪ বর্গকিমি (১২১.২৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (1991)
  মোট২,৩২,৯১৫
  জনঘনত্ব৭৪০/বর্গকিমি (১,৯০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড১৭৫০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৩৩ ৩২
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান ও আয়তন

গাজীপুর সদর উপজেলার পশ্চিমে ২৪.৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০.১৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা অংশে কালিয়াকৈর উপজেলা অবস্থিত। এই উপজেলার উত্তরে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলাসখিপুর উপজেলা, দক্ষিণে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলা, ধামরাই উপজেলা, পূর্বে গাজীপুর সদর উপজেলাশ্রীপুর উপজেলা, পশ্চিমে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা। কালিয়াকৈর থানার পাশে একটি হাইটেক সিটি রয়েছে যার নাম বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি।

প্রশাসনিক এলাকা

এ উপজেলায় ১ টি পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়ন রয়েছে; এগুলো হলো:

অর্থনীতি

এ উপজেলায় অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, ফ্যান কারখানা, শপিং মল আছে।

ভাষা ও সংষ্কৃতি

শ্রীপুর উপজেলার ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান এই উপজেলার মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে। এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই, তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন কথ্য ভাষায় মহাপ্রাণধ্বনি অনেকাংশে অনুপস্থিত, অর্থাৎ ভাষা সহজীকরণের প্রবণতা রয়েছে। উপজেলা উপজেলার আঞ্চলিক ভাষার সাথে সন্নিহিত ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলঢাকার ভাষার অনেকটা সাযুজ্য রয়েছে। শীতলক্ষা নদীর গতিপ্রকৃতি পাদদেশে শ্রীপুর, মানুষের আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ভাষা, সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

এই এলাকার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে শ্রীপুর সভ্যতা বহুপ্রাচীন। এই এলাকায়[1] প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রাচীন সভ্যতার বাহক হিসেবে দেদীপ্যমান। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে শ্রীপুর অবদানও অনস্বীকার্য।  প্রমুখ শিল্প সাহিত্য ভুবনবিখ্যাত সংগীতজ্ঞদের স্মৃতি বিজড়িত শ্রীপুর।

কালিয়াকৈর থানার একটি গ্রামের নাম খালপাড়।যা মুক্তিযুদ্ধের জন্য অনেক ভূমিকা রেখেছে।

খেলাধুলা ও বিনোদন

প্রাচীনকাল থেকেই  কালিয়াকৈর উপজেলা জনগোষ্ঠী ক্রীড়ামোদী। এখানে প্রতিবছরই বিভিন্ন টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এখানকার জনপ্রিয় খেলার মধ্যে বর্তমানে ক্রিকেট ও ফুটবলের আধিপত্য দেখা গেলেও অন্যান্য খেলাও পিছিয়ে নেই। কালিয়াকৈরে বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ রয়েছে।  প্রতি বছর নিম্নলিখিত ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ঃ

(ক) গোল্ডকাপ ফুটবল

(খ) প্রিমিয়ার ফুটবল লীগ

(গ) ১ম বিভাগ ফুটবল লীগ

(ঘ) বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ।

(ঙ) বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ।

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলায় গত [1] ২০১২সালে বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

ফুটবল, ক্রিকেট, ভরিবল, ব্যাটমিন্টন, ০২টি সিনেমাহল এবং নন্দনপার্ক

দর্শনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ

এছাড়াও মৌচাক ইউনিয়নের বাঁশতলী গ্রামে সাম্প্রতিককালে ৩০০ বছরের পুরানো একটি সাদা পাকুড় গাছ আবিস্কৃত হয়েছে যা এ পর্যন্ত বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় নি। গাছটিকে ঘিরে পর্যটনশিল্প গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।[2]

নদ-নদী

তুরাগ নদী, বংশাই নদী,

এখানে একটি তুরাগ নদী আছে যা খালপাড় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। তুরাগ নদীটি শিল্পকারখানার দূষিত পানির কবলে পরে স্বীয় সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে।

নামকরণ

কালিয়াকৈর উপজেলা গাজীপুর জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা। ১৯২৩ ইং সনে কালিয়াকৈর থানা গঠন করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয়। এই উপজেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে বেশি কিছু জানা সম্ভব হয়নি।তবে স্থানীয়ভাবে প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে, একটা পুকুরে কালিয়া নাগ নামে একটা বড় সাপ ছিল। কালক্রমে সেই কালিয়ানাগ এর কালিয়া এবং পুকুর এর কৈরা এই দুই শব্দ মিলে কালিয়াকৈর নামকরণ করা হয়েছে।


ইতিহাসঃ আয়তন: ৩১৪.১৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০০´ থেকে ২৪°১৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৯´ থেকে ৯০°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মির্জাপুর ও সখীপুর উপজেলা, দক্ষিণে সাভারও ধামরাই উপজেলা, পূর্বে গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলা, পশ্চিমে মির্জাপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৬৭০০৩; পুরুষ ১৩৮২৪০, মহিলা ১২৮৭৬৩। মুসলিম ২৩১৬৭২, হিন্দু ৩৪৩০৬, বৌদ্ধ ৯১০, খ্রিস্টান ৩০ এবং অন্যান্য ৮৫। এ উপজেলায়  কোচ, বেঁদে প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: তুরাগ, বংশী, সালদা। বোয়ালি বিল, হাওলা বিল, উজান বিল, মার্কাজ বিল এবং গোয়ালার খাল, বেতজুরী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কালিয়াকৈর একসময় সাভার থানার অন্তর্গত ছিল। কালিয়াকৈর থানা গঠিত হয় ১৯২৩ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ২ জুলাই থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৮১ ২৮৭ ১৯৪৪০ ২৪৭৫৬৩ ৮৫০ ৬১.৪ ৪৭.৪
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.৩৮ ১৯৪৪০ ৩৬২০ ৬১.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আটাবহ ০৯ ৫৭১৬ ১২৭১৮ ১২০৮৪ ৪৫.৮১
চাপাইর ২৮ ৮৬৩৬ ১১৬০৬ ১১৬৪৯ ৪৬.১৮
ঢালজোড়া ৩৮ ৪৮৪৭ ৯৬৫৪ ৯৫৩৮ ৩৫.৯২
ফুলবাড়ি ৪৭ ১৮৩৮২ ১৫৮৭২ ১৫৬৩৪ ৩৫.১১
বোয়ালি ১৯ ৮৮০৫ ১০৫৩৫ ১০৫১২ ৪৪.৭৪
মধ্যপাড়া ৫৭ ৮৫৯৭ ১১৯৬২ ১১২৬৩ ৪৫.৭২
মৌচাক ৬৬ ১৩৫৮৬ ৩৮৬৫২ ৩৩২৫১ ৫৯.০৪
শ্রীফলতলী ৭৬ ৪৫৪০ ১৭১৭৩ ১৫৪৪১ ৫৪.০৫
সূত্রাপুর ৮৫ ৩৮৬৮ ১০০৬৮ ৯৪৩১ ৪৫.৪৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  সিদ্ধিমাধব সাকাশ্বর বৌদ্ধ স্তম্ভ (মধ্যপাড়া), ডাকুরাইলে প্রাচীন সভ্যতা ডোলসমুদ্রের ধ্বংসাবশেষ ও কোটামনি দিঘি, চান্দ্রা মসজিদ (মৌচাক)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলায় কাদেরিয়া বাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ফুলবাড়ি ইউনিয়নের  উত্তর পাড়ায় পাকবাহিনীর ঘাটি আক্রমণ করলে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা কালিয়াকৈর ঘাঁটি আক্রমণ করলে প্রায় ৩৪ জন রাজাকার ও ১২ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৮ অক্টোবর কাচিঘাটা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সংঘটিত লড়াইয়ে প্রায় ৫২জন পাকসেনা নিহত হয়। ৩০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা ফুলবাড়ি এলাকায় প্রায় ৭জন পাকসেনাকে হত্যা করে এবং মাইন বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে একটি সেতু ধ্বংস করে। ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনা ভর্তি ৩ টি ট্রাক ধ্বংস করলে ২৭ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং পরবর্তীতে পাকবাহিনী উপজেলার কাচিঘাটা গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। উপজেলার লতিফপুর সেতুর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের সম্মূখ লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে পাকবাহিনী শ্রীফলতলী গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। ১৩ ডিসেম্বর বংশী সেতুর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সংঘটিত লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৪ ডিসেম্বর সফিপুরে কাদেরিয়া বাহিনীর নেতৃত্বে এক লড়াইয়ে পাকসেনারা পরাজিত হয় এবং কালিয়াকৈর উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪১৩, মন্দির ৯২, গির্জা ৭।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "কালিয়াকৈর উপজেলা | গাজীপুর প্রেস"গাজীপুর প্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৩-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-০৭
  2. "৩০০ বছর পর নামকরণ - দৈনিক কালের কন্ঠ (২৩ মে ২০১৫)"। ২৭ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.