অব্যয় পদ

অব্যয় হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি পদ, যেটির বাক্যের মধ্যে ব্যবহারের সময় কোনো পরিবর্তন ঘটে না।[1] তবে আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে এই পদটি অনুসর্গ, সংযোজকআবেগসূচক পদে বিভক্ত।

অব্যয় পদের উদাহরণ

সংজ্ঞা

বাক্যে বা শব্দের সাথে ব্যবহৃত যে সকল ধ্বনি-বিভক্তি, বচন, লিঙ্গকারকভেদে কোনোভাবে পরিবর্তন হয় না, সেসকল পদকে অব্যয় বলে।

প্রকৃতি

বাংলা ব্যাকরণে অব্যয়ের নির্ধারিত প্রকৃতিসমূহ:

  • এর বহুবচন হয় না।
  • ক্রিয়ার কাল দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
  • লিঙ্গান্তর নেই।
  • এর সাথে কোনো বিভক্তি যুক্ত হয় না।

রূপ ও ব্যবহার

গঠন প্রকৃতির দিক থেকে অব্যয় এক বা একের অধিক বর্ণ বা শব্দ দিয়ে হতে পারে। যেমন–

  • একটি বর্ণ-
  • একাধিক বর্ণ- বটে
  • একটি শব্দ- অতএব, বটে
  • একাধিক শব্দ- হায় হায়, মরি মরি

বাক্যে অব্যয়ের ব্যবহার যেসব কারণে হয়ে থাকে:

  • বাক্যের শোভা বৃদ্ধি করা
  • বাক্যকে সংযুক্ত করা
  • শব্দের অর্থগত পার্থক্য সৃষ্ট করা[2]

প্রকারভেদ

আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে অব্যয়পদ তিনটি মূল ভাগে বিভক্ত:

  • অনুসর্গ: যেসব পদ কোনো শব্দের পরে বসে বাক্যকে সম্পর্কিত করে, যেমন- অবধি, পর্যন্ত, ভিতরে প্রভৃতি।
  • সংযোজক পদ: পদ, বর্গ ও বাক্যকে যেসব শব্দ সংযুক্ত করে, যেমন- এবং, আর, তবে প্রভৃতি।
  • আবেগসূচক পদ: ভাব বা আবেগকে প্রকাশ করে, যেমন- হায় হায়!, বাহ্, ছি! প্রভৃতি।

শব্দ-উৎসের বিচারে অব্যয়

শব্দ-উৎসের বিচার হলো নির্ধারিত অব্যয়টি কোন ভাষার সূত্রে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। এই বিচারে অব্যয় চার প্রকার।[2]

  1. তৎসম অব্যয়: যে সকল অব্যয় সংস্কৃত থেকে অবিকৃতভাবে গৃহীত হয়েছে। যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্ত্তত[টীকা 1]
  2. তদ্ভব বা অর্ধ-তৎসম অব্যয়: যে সকল অব্যয় সংস্কৃত থেকে বিবর্তিত হয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছে। যেমন আর= সংস্কৃত অপর>প্রাকৃত আর>বাংলা আর।
  3. বাংলা অব্যয়: যে সকল অব্যয় দেশী উৎস থেকে গৃহীত হয়েছে। আর, আবার, , হাঁ, না
  4. বিদেশী অব্যয়: সংস্কৃত, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব ও দেশী অব্যয় ব্যতীত সকল অব্যয়কেই বিদেশী অব্যয় বলা হয়। আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা

ভাবগত ও ব্যবহারিক অর্থের বিচারে অব্যয়

ভাবগত ও ব্যবহারিক অর্থের বিচারে অব্যয় হলো শব্দ হিসাবে এবং তা বাক্যে কি ভাবগত অর্থে ব্যবহৃত হয়, তার বিচারে অব্যয়কে প্রাথমিকভাবে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়।[2]

  1. সংযোগ-বাচক বা সম্বন্ধবাচক
  2. মনোভাববাচক (রাজা রামমোহন রায়ের মতে অন্তর্ভাবার্থক) অব্যয়।
  3. শব্দ-উৎপাদক বা পরিবর্তক অব্যয়।

আরও দেখুন

টীকা

  1. এবংসুতরাং শব্দ দুটি অব্যয় পদ ও সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে অর্থাৎ তৎসম শব্দ। তবে এ দুটি অব্যয় শব্দের অর্থ বাংলা ভাষায় এসে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সংস্কৃতিতে "এবং = এমন" আর "সুতরাং = অত্যন্ত, অবশ্য" বাংলায় "এবং = ও" আর "সুতরাং = অতএব"

তথ্যসূত্র

  1. "বাংলা ভাষার ব্যাকরণ"। মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা।
  2. মো. সুজাউদ দৌলা। "অব্যয় পদ কাকে বলে"দৈনিক ইত্তেফাকঃ অনুশীলন। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.