ভিক্টর ট্রাম্পার

ভিক্টর টমাস ট্রাম্পার (ইংরেজি: Victor Trumper; জন্ম: ২ নভেম্বর, ১৮৭৭ - মৃত্যু: ২৮ জুন, ১৯১৫) নিউ সাউথ ওয়েলসের ডার্লিংহার্স্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ক্রিকেটের স্বর্ণযুগে তার দর্শনীয় খেলা প্রদর্শন, খেলা অনুপযোগী মাঠে তিনি দলকে জয়সূচক ইনিংস খেলার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ায় রাগবি লীগ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ভিক্টর ট্রাম্পার[1]

ভিক্টর ট্রাম্পার
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামভিক্টর টমাস ট্রাম্পার
জন্ম(১৮৭৭-১১-০২)২ নভেম্বর ১৮৭৭
ডার্লিংহার্স্ট, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু২৮ জুন ১৯১৫(1915-06-28) (বয়স ৩৭)
ডার্লিংহার্স্ট, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৭৯)
১ জুন ১৮৯৯ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১ মার্চ ১৯১২ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৮৯৪১৯১৪নিউ সাউথ ওয়েলস
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪৮ ২৫৫
রানের সংখ্যা ৩,১৬৩ ১৬,৯৩৯
ব্যাটিং গড় ৩৯.০৪ ৪৪.৫৭
১০০/৫০ ৮/১৩ ৪২/৮৭
সর্বোচ্চ রান ২১৪ * ৩০০*
বল করেছে ৫৪৬ ৩,৮২২
উইকেট ৬৪
বোলিং গড় ৩৯.৬২ ৩১.৩৭
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৩/৬০ ৫/১৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩১/ ১৭৩/
উৎস: ক্রিকইনফো, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

প্রারম্ভিক জীবন

খুব সম্ভবতঃ সিডনিতে ট্রাম্পার জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[2] তার জন্মের বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যাবলী খুঁজে পাওয়া যায়নি। চার্লস টমাস ট্রাম্পার ও লুইস অ্যালিস লুই দম্পতির সন্তান হিসেবে তাকে মনে করা হয়ে থাকে।[2][3] ক্রাউন স্ট্রিট সুপারিয়র পাবলিক স্কুলে অধ্যয়ন করেন ট্রাম্পার।[2] সেখানেই তার ব্যাটিংয়ের দক্ষতা ধরা পড়ে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে অ্যান্ড্রু স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তরুণদের নিয়ে গড়া দলের সদস্য হিসেবে তিনি ৬৭ রান তুলেছিলেন। ১৮৯৪-৯৫ মৌসুমে নিউ সাউথ ওয়েলসের সদস্য মনোনীত হন। কিন্তু সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত অভিষেক প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনি মাত্র ১১ ও রান তুলেছিলেন।[2]

খেলোয়াড়ী জীবন

১৮৯৯ মৌসুমে ইংল্যান্ড সফরের পূর্বে শেষ মুহুর্তে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলে বিতর্কিতভাবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১ থেকে ৩ জুন, ১৮৯৯ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্টব্রিজে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অ্যাশেজ সিরিজের টেস্টে অংশ নেন। এটিই ট্রেন্ট ব্রিজে প্রথম টেস্ট খেলা ছিল ও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। জয়ের জন্যে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৩৫ রান ও অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩ উইকেট। ঐ খেলায় ডব্লিউ জি গ্রেস তার সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ করেন এবং উইলফ্রেড রোডস ও অস্ট্রেলিয়ার ফ্রাঙ্ক লেভারের সাথে তারও একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়েছিল।

ঐ সফরে লর্ডসে অনুষ্ঠিত টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১৩৫* রান তোলেন। জুন, ১৮৯৯ সালে ঐ ইনিংস শেষে বিখ্যাত ইংরেজ ব্যাটসম্যান ডব্লিউ. জি. গ্রেস অস্ট্রেলীয় শিবিরে যান ও নিজ ব্যাটটি ট্রাম্পারের হাতে তুলে দেন। ঐ সময় তিনি ঘোষণা করেন যে, ‘বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কর্তৃক ভবিষ্যৎ চ্যাম্পিয়নকে এ উপহার প্রদান করা হলো।’ ঐ ব্যাটটি বর্তমানে ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও সাসেক্সের বিপক্ষে অপরাজিত ৩০০* তোলে নিজ সক্ষমতা দেখান।

১৯০২ মৌসুমে ইংল্যান্ডে সর্বাপেক্ষা নিজের সেরা সময় কাটান। ঐ মৌসুমে ৫৩ ইনিংসে কোন অপরাজিত না থাকা স্বত্ত্বেও ৪৮.৪৯ গড়ে ২,৫৭০ রান তোলেন তিনি। ১৯০২ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মধ্যাহ্নবিরতীর পূর্বেই ১০৩ রান তুলে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন।[4] অন্যরা হচ্ছেন - চার্লি ম্যাককার্টনি (১৯২৬), ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান (১৯৩০), মজিদ খান (১৯৭৬) এবং ডেভিড ওয়ার্নার (২০১৬)।

মূল্যায়ন

মন্টি নোবেল কোনরূপ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না ভোগে তাকে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানরূপে আখ্যায়িত করেন যার সাথে কারও তুলনা করা চলে না। ১৯০৩ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।[5] ১৯১৪ সালে নিউ সাউথ ওয়েলস রাগবী লীগে আজীবন সদস্য মনোনীত হন।

১৯৬৩ সালে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকের শততম সংস্করণে উইজডেন শতাব্দীর ছয় অসাধারণ খেলোয়াড়ের তালিকায় নেভিল কারদাস কর্তৃক বার্নসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[6] এই বিশেষ স্মারক সংখ্যায় তার সাথের অন্য পাঁচ খেলোয়াড় ছিলেন - ডন ব্র্যাডম্যান, ডব্লিউ. জি. গ্রেস, জ্যাক হবস, টম রিচার্ডসনসিডনি বার্নস। ১৯৮১ সালে টনি রাফটি কর্তৃক ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিকৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার ডাকটিকিটে তুলে ধরা হয়। ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট হল অব ফেমের উদ্বোধনে প্রথম দশজনের একজন হিসেবে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তার সাথে অন্যান্যরা ছিলেন - জন ব্ল্যাকহাম, ফ্রেড স্পফোর্থ, ক্ল্যারি গ্রিমেট, বিল পন্সফোর্ড, স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান, বিল ও’রিলি, কিথ মিলার, রে লিন্ডওয়ালডেনিস লিলি[7] ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০৯ তারিখে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করা হয়।[8] পরবর্তীতে ৪ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি।[9]

দেহাবসান

১৯১৪ সালে তার স্বাস্থ্য বেশ ভেঙ্গে পড়ে। ২৮ জুন, ১৯১৫ তারিখে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে সিডনির ডার্লিংহার্স্টে তার দেহাবসান ঘটে। তার শবযাত্রায় প্রায় ২০,০০০ জনতা অংশ নেন। এসময় তিনি স্ত্রী সারাহ, পুত্র ভিক্টর ও কন্যা ন্যান্সিকে রেখে যান।

তথ্যসূত্র

  1. nswrl.com.au। "History"New South Wales Rugby LeagueNSWRL। ৭ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১১
  2. Bede Nairn, 'Trumper, Victor Thomas (1877 - 1915)', Australian Dictionary of Biography, Vol. 12, MUP, 1990, pp 269-272. retrieved 13 January 2010
  3. Ancestry.com.au Stanford Family Tree by Thomas H Stanford
  4. "Hundred before lunch"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৭
  5. "Wisden Cricketers of the Year"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২১
  6. Cardus, Neville (১৯৬৩)। "Six Giants of the Wisden Century"Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co.। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০০৮
  7. "Australian Cricket Hall of Fame Inductees"Melbourne Cricket Ground। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২৩
  8. "Sutcliffe, Grimmett, Trumper, Wasim and Waugh new inductees into Cricket Hall of Fame"। ১৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  9. "Lindwall, Miller, O'Reilly, Trumper and Waugh - Australian legends inducted into ICC Cricket Hall of Fame"। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আরও দেখুন

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.