অতিবৃহৎ মাপনীর সমন্বয়
অতিবৃহৎ মাপনীর সমন্বয় (ইংরেজি: Very large-scale integration সংক্ষেপে VLSI) বলতে এক লক্ষাধিক মস ট্রানজিস্টরকে একটি মাত্র সিলিকন চিলতের উপরে স্থাপন ও সংযোজিত করে একটি সমন্বিত বর্তনী তৈরির প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়।[1] ১৯৭০-এর দশকে যখন মস ট্রানজিস্টরভিতিক সমন্বিত বর্তনী চিলতেগুলি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হওয়া শুরু হয়, তখন এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা শুরু হয় এবং এর ফলে জটিল অর্ধপরিবাহী ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়। মাইক্রোপ্রসেসর ও স্মৃতি বা মেমরি চিলতেগুলি মূলত অতিবৃহৎ মাপনীর সমন্বয় ব্যবহার করে সৃষ্ট চিলতে। অতিবৃহৎ মাপনীর সমন্বয় প্রযুক্তির আবির্ভাবের আগে বেশিরভাগ সমন্বিত বর্তনীগুলির সম্পাদনযোগ্য কার্যপরিধি সীমিত ছিল। একটি ইলেকট্রনীয় বর্তনীতে একটি কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ অংশ, রম, র্যাম ও অন্যান্য যৌক্তিক যন্ত্রকৌশল থাকতে পারে। অতিবৃহৎ মাপনীর সমন্বয় সমন্বিত বর্তনী নকশাবিদদেরকে এই সবগুলি উপাদান একটিমাত্র সিলিকন চিলতের উপরে সংযোজন করায় সাহায্য করে। বর্তমানে সমস্ত আধুনিক সমন্বিত বর্তনীগুলি অতিবৃহৎ মাপনীর সমন্বয় প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সৃষ্ট। বর্তমানে বাজারে লভ্য সমস্ত মাইক্রোপ্রসেসর (অণুপ্রক্রিয়াজাতকারক), স্মৃতি (মেমরি) ও ডিজিটাল সংকেত প্রক্রিয়াজাতকারক সমন্বিত বর্তনীতগুলি এই প্রযুক্তিতে তৈরি এবং এগুলিতে শত শত কোটি যুক্তিদ্বার (লজিক গেট) থাকতে পারে।
পরিলেখ
একসময় বিভিন্ন সমন্বিত বর্তনীত বৈশিষ্ট্য হিসেবে ভিএলএসআই নাম সংযোজনের প্রচেষ্টা ছিল। এজন্য অতিমহা বৃহৎ মাপনীর সমন্বয় (ইউএলএসআই) নামটিও ব্যবহৃত হত। পরে প্রায় সব ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক যুক্তিদ্বারবিশিষ্ট (বুলিয়ান লজিকের বর্তনীকে যুক্তিদ্বার বা গেট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, যা এক বা একাধিক ট্রানজিস্টর থেকে তৈরী) চিলতের প্রচলন হওয়াতে এই বিশেষণ অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়। এখন শুধু ভিএলএসআই-ই অত্যন্ত বৃহৎসংখ্যক যুক্তিদ্বারবিশিষ্ট চিলতে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে তা-ও ব্যবহৃত হয় না, কারণ এখন প্রায় সব চিপই অতিবৃহৎ মাপনীর সমন্বয় বা এর চেয়ে অধিক সংখ্যক যুক্তিদ্বার (গেট) ধারণ করে।
২০০৮ সালের শুরুতে বাজারে আসা ইন্টেল ইটানিয়াম ছিল একশত কোটি ট্রানজিস্টর বিশিষ্ট প্রথম সমন্বিত বর্তনী।
প্রথম দিকের অর্ধপরিবাহী চিলতেগুলিতে শুধুমাত্র একটি ট্রানজিস্টর থাকত। পরে সমন্বিত বর্তনী তৈরির প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আরও ট্রানজিস্টর যুক্ত করা সম্ভব হয়। পরবর্তীকালের সমন্বিত বর্তনীগুলিতে শুধু অল্প কয়েকটি ডায়োড, ট্রানজিস্টর, রেজিস্টর ও ক্যাপাসিটর থাকত যাতে একটি সমন্বিত বর্তনীতে এক বা অল্প সংখ্যক যুক্তিদ্বার (লজিক গেট) তৈরি অর্থাৎ আরও কার্যকারিতা যোগ করা সম্ভব হয়। বৃহৎ মাপনীর সমন্বয় (এলএসআই) প্রযুক্তিতে শত শত যুক্তিদ্বার ছিল। বর্তমানে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে চিলতেগুলিতে শত সহস্র লক্ষ ট্রানজিস্টর এবং কোটি কোটি যুক্তিদ্বার থাকে।
বিভিন্ন ধরনের সমন্বিত বর্তনীকে এগুলিতে উপস্থিত যুক্তিদ্বারের (লজিক গেট) সংখ্যার ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস করা যেতে পারে। নিচে একটি সাধারণ শ্রেণীবিন্যাস উল্লেখ করা হল, যা সমন্বিত বর্তনীতে যুক্তিদ্বার সংযোজনের ধারণা পরিষ্কারে সহায়তা করবে।
নাম | সংক্ষিপ্ত রূপ | যুক্তিদ্বার (গেট) সংখ্যা | বিশেষত্ব |
---|---|---|---|
ক্ষুদ্র মাপনীর সমন্বয় | ক্ষুমাস (এসএসআই) | ১০-এর কম | |
মধ্যম মাপনীর সমন্বয় | মমাস (মএসআই) | ১০-১০০ | কমপক্ষে একটি যৌক্তিক কাজ সম্পন্ন করার ক্ষমতাবিশিষ্ট |
বৃহৎ মাপনীর সমন্বয় | বৃমাস (এলএসআই) | ১০০-১,০০০টি | একটি যৌক্তিক কাজ সম্পন্ন করার ক্ষমতা বিশিষ্ট |
অতিবৃহৎ মাপনীর সমন্বয় | অবৃমাস (ভিএলএসআই) | ১,০০০-১০,০০০ | |
অতিমহাবৃহৎ মাপনীর সমন্বয় | অমবৃমাস (ইউএলএসআই) | ১০,০০০-১০,০০,০০০ | |
তথ্যসূত্র
- Andrew Butterfield; Gerard Ekembe Ngondi; Anne Kerr, সম্পাদকগণ (২০১৬), A Dictionary of Computer Science (৭ম সংস্করণ), Oxford University Press