তাহিরি রাজবংশ

তাহিরি রাজবংশ (ফার্সি: طاهریان) ছিল পারস্যের দিহকান বংশোদ্ভূত একটি রাজবংশ।[3][4] এই রাজবংশ ৮২১ থেকে ৮৭৩ সাল পর্যন্ত আব্বাসীয় প্রদেশ খোরাসান এবং ৮২০ থেকে ৮৯১ সাল পর্যন্ত বাগদাদ শহর শাসন করেছে। তাহির ইবনে হুসাইন এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুনের একজন শীর্ষ সেনাপতি ছিলেন। প্রথমদিকে খোরাসানের মার্ভে‌ তাদের রাজধানী ছিল। পরে তা নিশাপুর স্থানান্তরিত করা হয়। তাহিরিরা স্বাধীন শাসক ছিল না বরং তারা ছিল আব্বাসীয় খিলাফতের অধীনস্থ। এসত্ত্বেও খোরাসান শাসনের ক্ষেত্রে তাহিরিরা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেছে।[3]

তাহিরি রাজবংশ

طاهریان
৮২১–৮৭৩
তাহিরিদের দ্বারা শাসিত প্রদেশ
তাহিরিদের দ্বারা শাসিত প্রদেশ
অবস্থাআব্বাসীয় খিলাফতের অংশ (৮২১-৮২২)
রাজধানীমার্ভ‌, পরবর্তীতে নিশাপুর
প্রচলিত ভাষাফার্সি(অনানুষ্ঠানিক)[1]
আরবি(সাহিত্য/কাব্য/বিজ্ঞান)[2]
ধর্ম
ইসলাম (সুন্নি)
সরকারআমিরাত
আমির 
 ৮২১
তাহির ইবনে হুসাইন
ঐতিহাসিক যুগমধ্যযুগ
 প্রতিষ্ঠা
৮২১
 বিলুপ্ত
৮৭৩
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
আব্বাসীয় খিলাফত
সাফারি সাম্রাজ্য

খোরাসানের গভর্নর

উত্থান

তাহিরি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা তাহির ইবনে হুসাইন খলিফা আল-আমিনআল-মামুনের মধ্যকার গৃহযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি ও তার পূর্বপুরুষরা খোরাসানে কিছু মাত্রায় শাসনাধিকার পেয়েছিলেন।[3] ৮২১ সালে তাহির খোরাসানের গভর্নর হন। এর অল্প কাল পরে তিনি মারা যান। খলিফা এসময় তাহিরের পুত্র তালহাকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন। তালহার শাসনকাল ৮২২ থেকে ৮২৮ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।[5] তাহিরের আরেক পুত্র আবদুল্লাহ মিশর ও আরব উপদ্বীপের ওয়ালি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তালহার মৃত্যুর পর তাকে খোরাসানের গভর্নর করা হয়। আবদুল্লাহকে তাহিরিদের মধ্যে সবচেয়ে সফল শাসকদের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়[5] তার শাসনামলে খোরাসানে কৃষির উন্নতি হয়। এছাড়া তিনি জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ছিলেন। [6]

৯ম শতাব্দীতে তিনি ফার্সি ভাষা লেখার জন্য পাহলভি লিপির বদলে আরবি লিপি চালু করেন।[7][8]

পতন

৮৪৫ সালে আবদুল্লাহ মারা যান। এরপর তার পুত্র তাহির ইবনে আবদুল্লাহ তার উত্তরসুরি হন। তার শাসন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। তবে তার শাসনামলে বিদ্রোহীদের হাতে সিস্তান হাতছাড়া হয়। তাহির ইবনে আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ ইবনে তাহির গভর্নর হওয়ার পর তাহিরি শাসন ভেঙে পড়তে শুরু করে। তাবারিস্তানে দমনমূলক নীতির কারণে এই অঞ্চলের জনতা বিদ্রোহ করে ৮৬৪ সালে স্বাধীন জায়েদি শাসক হাসান ইবনে জায়েদ আল-দাইয়ের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে।[5] খোরাসানেও মুহাম্মদ ইবনে তাহিরের শাসন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। শেষে ৮৭৩ সালে সাফারিদের হাতে তাহিরিরা উৎখাত হয়। সাফারিরা খোরাসানকে তাদের সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেয়।[9]

বাগদাদের গভর্নর

খোরাসানের পাশাপাশি তাহিরিরা বাগদাদের সামরিক গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ৮২০ সালে তাহির সর্বপ্রথম এই পদে নিয়োগ পান। তিনি খোরাসানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পর তাদের পরিবারের একটি শাখার সদস্য ইসহাক ইবনে ইবরাহিমের হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তিনি ২৫ বছরের বেশি সময় শহর নিয়ন্ত্রণ করেছেন।[10] সামারা শহর নির্মাণের পর খলিফার বাগদাদ ত্যাগ তার শাসনামলে ঘটে।[11] ৮৪৯ সালে ইসহাক মারা যাওয়ার পর প্রথমে তার দুই পুত্র এবং এরপর তাহিরের নাতি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ পদ লাভ করেন।[10]

৮৬০ এর দশকে সামারার নৈরাজ্যের সময় আবদুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি খলিফা আল-মুসতাইনকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং আল-মুতাজ বাগদাদ অবরোধ করলে তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। পরের বছর তিনি আল-মুসতাইনকে ক্ষমতাত্যাগে বাধ্য করেন এবং আল-মুতাজকে খলিফা হিসেবে মেনে নেন।[12] তার জীবনের শেষের দিকে বাগদাদে দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। তার মৃত্যুর পর অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। তার মৃত্যুর পর প্রথমে তার ভাই উবাইদুল্লাহ ও পরে তার আরেক ভাই সুলাইমান তার উত্তরসুরি হন।[13] এরপর বাগদাদে শৃঙ্খলা আনয়ন করা হয়। তাহিরিরা আরো দুই দশক শহরের গভর্নর ছিল। ৮৯১ সালে তাহিরিদের পরিবর্তে বদর আল-মুতাদিদি বাগদাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পান।[10] এরপর এই পরিবার তাদের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।[5]

তাহিরি রাজবংশের সদস্যগণ

তাহিরি খোরাসানের মানচিত্র
গভর্নর[10][14]মেয়াদ
খোরাসানের গভর্নর
তাহির ইবনে হুসাইন৮২১-৮২২
তালহা ইবনে তাহির৮২২-৮২৮
আবদুল্লাহ ইবনে তাহির আল-খোরাসানি৮২৮-৮৪৫
দ্বিতীয় তাহির৮৪৫-৮৬২
মুহাম্মদ ইবনে তাহির৮৬২-৮৭৩
বাগদাদের গভর্নর
তাহির ইবনে হুসাইন৮২০-৮২২
ইসহাক ইবনে ইবরাহিম আল-মুসআবি৮২২-৮৫০
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহিম৮৫০-৮৫১
আবদুল্লাহ ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহিম৮৫১
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে তাহির৮৫১-৮৬৭
উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে তাহির৮৬৭-৮৬৯
সুলাইমান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে তাহির৮৬৯-৮৭৯
উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ (পুনরায়)৮৭৯-৮৮৫
মুহাম্মদ ইবনে তাহির৮৮৫-৮৯০
উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ (পুনরায়)৮৯০-৮৯১

বংশলতিকা

গাঢ় নামগুলো খোরাসানের গভর্নর এবং ইটালিক নামগুলো বাগদাদের গভর্নর নির্দেশ করছে।[15]

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
মুসআব
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
হুসাইন
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
প্রথম তাহির
৮২১–৮২২
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
ইবরাহিম
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
তালহা
৮২২–৮২৮
 
 
 
 
 
 
 
আবদুল্লাহ
৮২৮–৮৪৫
 
 
 
 
 
 
 
 
ইসহাক
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
দ্বিতীয় তাহির
৮৪৫-৮৬২
 
মুহাম্মদ
 
উবাইদুল্লাহ
 
সুলাইমান
 
মুহাম্মদ
 
আবদুল্লাহ
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
মুহাম্মদ
৮৬২–৮৭২
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

আরও দেখুন

  • সুন্নি মুসলিম রাজবংশের তালিকা

তথ্যসূত্র

  1. Introduction:the Turko-Persian tradition, Robert L. Canfield, Turko-Persia in Historical Perspective, ed. Robert Leroy Canfield, (Cambridge University Press, 1991), 6.
  2. Language situation and scripts: Arabic, S. Blair, History of Civilizations of Central Asia, Vol. IV, ed. C.E. Bosworth and M.S. Asimov, (Motilal Banarsidass, 2003), 340.
  3. The Tahirids and Saffarids, C.E. Bosworth, The Cambridge History of Iran, Vol. 4, ed. Richard Nelson Frye, (Cambridge University Press, 1999), 90-91.
  4. Sectarian and national movements in Iran, Khurasan and Transoxanial during Umayyad in early Abbasid times, F. Daftary, History of Civilizations of Central Asia, Vol. IV, 57.
  5. Tahirids, C.E. Bosworth, The Encyclopaedia of Islam, Vol. X, ed. P. J. Bearman, T. Bianquis, C. E. Bosworth, E. van Donzel and W. P. Heinrichs, (Brill, 2000), 104-105.
  6. Hammuda, Abdul Hamid, H. The History of Independent Islamic States:Tarikh Adduwal Al-Islamiyyah Al-Mustaqillah, al-Dar al-Thaqafiyyah lil-Nashr, Cairo, 2010, p.30-40
  7. Ira M. Lapidus (২৯ অক্টোবর ২০১২)। Islamic Societies to the Nineteenth Century: A Global History। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 256–। আইএসবিএন 978-0-521-51441-5।
  8. Ira M. Lapidus (২২ আগস্ট ২০০২)। A History of Islamic Societies। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 127–। আইএসবিএন 978-0-521-77933-3।
  9. see Hammuda
  10. Bosworth, Clifford Edmund (1996), The New Islamic Dynasties, (New York: Columbia University Press, 1996), 168-9.
  11. Gordon, Matthew S. (2001), The Breaking of a Thousand Swords: A History of the Turkish Military of Samarra (A.H. 200-275/815-889 C.E.), Albany, NY: State University of New York Press, p. 47 ff.
  12. Kennedy, Hugh (2001), The Armies of the Caliphs: Military and Society in the Early Islamic State, London: Routledge, pp. 135-9.
  13. Yar-Shater, Ehsan, ed. (1985-2007), The History of al-Tabari, Vols. 1-40, Albany, NY: State University of New York Press, v. XXXV p. 124 ff.; v. XXXVI pp. 3-5, 13 ff.
  14. Yar-Shater, Ehsan, ed. (1985-2007), The History of al-Tabari, Vols. 1-40, Albany, NY: State University of New York Press, v. XXXIV pp. 105, 108, 110, 116; v. XXXVII pp. 147, 160
  15. Kraemer, Joel L (1989), Foreword, in Ehsan Yar-Shater (Ed.), The History of al-Tabari, Volume XXXIV: Incipient Decline, Albany, NY: State University of New York Press, p. xxviii.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.