সিলেট
সিলেট উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের একটি প্রধান শহর, একই সাথে এই শহরটি সিলেট বিভাগের বিভাগীয় শহর। এটি সিলেট জেলার অন্তর্গত। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকাই মূলত সিলেট শহর হিসেবে পরিচিত। সিলেট ২০০৯ সালের মার্চ মাসে একটি মেট্রোপলিটন শহরের মর্যাদা লাভ করে।[1] সুরমা নদীর তীরবর্তী এই শহরটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ শহরটি দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত। সিলেট অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত। শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক ভাবে সিলেট দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ধনী জেলা। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ, বিছনাকান্দির স্বচ্ছ জলরাশি পর্যটকদের টেনে আনে বার বার। এ শহরের বিশাল সংখ্যক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।[3] সিলেটের পাথর, বালুর গুণগতমান দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এখানকার প্রাকৃতিক গ্যাস সারা দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে।[3]
সিলেট | |
---|---|
মহানগরী | |
সিলেট সিলেট সিলেট সিলেট | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৪′ উত্তর ৯১°৫২′ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
জেলা | সিলেট জেলা |
মহানগরী | ৩১ মার্চ ২০০৯[1] |
সিটি কর্পোরেশন | ৯ এপ্রিল ২০০১ |
পৌর শহর | ১৮৬৭ |
সরকার | |
• ধরন | মেয়র - কাউন্সিলর |
• শাসক | সিলেট সিটি কর্পোরেশন |
• মেয়র | আরিফুল হক চৌধুরী |
আয়তন | |
• মোট | ৪১.৮৫ বর্গকিমি (১৬.১৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[2] | |
• মোট | ৫,৩১,৬৬৩ |
সময় অঞ্চল | বামাস (ইউটিসি+০৬:০০) |
পোস্ট কোড | ৩১০০ |
ওয়েবসাইট | www |
স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার ভূমিকা অপরিসীম। জেনারেল এম.এ.জি. ওসমানী এ জেলারই কৃতী সন্তান। শাহ জালাল ও শাহ পরান-এর পবিত্র মাজার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লোক মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করে। আসে বিপুল সংখ্যক পর্যটক। সিলেট এর স্থানীয় ভাষা “সিলেটি ভাষার” একটি বিশেষত্ব রয়েছে যা অন্য অঞ্চল থেকে আলাদা। এ ছাড়া নাগরী বর্ণমালা নামে সিলেটের নিজস্ব বর্ণমালা ও রয়েছে। শীত মৌসুমে সিলেটের হাওর গুলোতে অতিথি পাখির দেখা মেলে। এটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
নামকরণ
বাংলা ও আঞ্চলিক সিলটি ভাষায় প্রাচীনকাল থেকেই সিলেটকে শ্রীহট্ট নামে ডেকে আসা হয়েছে। কিন্তু শ্রীহট্ট নামের উৎস নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অস্পষ্টতা। এর সাথে হিন্দু পৌরাণিক আখ্যানের প্রভাব জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী শ্রী শ্রী হাটকেশ্বর হচ্ছে মহাদেব শিবের বহু নামের অন্যতম। তৎকালীন গৌড় (শ্রীহট্ট) রাজাদের কর্তৃক পুজিত শ্রী হাটকেশ্বরই শ্রীহট্ট নামের উৎস বলে অনেকে মনে করেন।[4] আবার হিন্দুদেবী লক্ষ্মীর আরেক নাম শ্রী, বর্তমান সিলেট শহরের অনতিদূরে দেবী মহালক্ষ্মীর একটি সুপ্রসিদ্ধ মন্দিরও রয়েছে, যেটি আবার সতীপীঠের মধ্যেও অন্যতম, অতএব, শ্রীহট্ট নামটি শ্রী-এর হাট (অর্থাৎ বাজার) থেকেও হতে পারে।
আর, সিলেটের নামকরণের বিষয়ে একটি প্রচলিত কিংবদন্তীতুল্য কাহিনী হলো, হযরত শাহজালাল যখন শ্রীহট্টের দিকে আগমন করেন তখন তৎকালীন হিন্দু রাজা গৌড়গোবিন্দ তার আগমন থামাতে শ্রীহট্ট সীমান্তে তার কথিত জাদু ক্ষমতার দ্বারা পাথরের দেয়াল বা পাহাড়ের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। হযরত শাহজালালও তার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে ‘শিল হট্’ বলতেই সেই শিল বা পাথরের প্রতিবন্ধক হটে যায় বা অপসারিত হয়। এ থেকেই এই ভূমির অন্য নাম হয়েছে শিল-হট থেকে সিলেট।[1] বরং ব্রিটিশ আমলেই এই সিলেট শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পুরনো কাগজপত্রে বাংলায় শ্রীহট্ট হিসেবে লেখা হলেও ভারতের সরকারি নথিপত্রে যেমন আসাম গেজেটিয়ারে (Assam District Gazetteers) বা অন্যত্র শ্রীহট্টকে ইংরেজিতেই প্রথম ‘সিলহেট’ (Sylhet) হিসেবে উদ্ধৃত হতে দেখা যায়। তৎকালীন ভারতবর্ষে শাসক হিসেবে আধিপত্যকারী ব্রিটিশদের নিজস্ব ইংরেজি উচ্চারণে অন্য অনেক বাংলা যুক্তশব্দের বিবর্তন প্রক্রিয়ার মতোই ‘শ্রীহট্ট’ শব্দটিও যে ভিন্নমাত্রিক ‘সিলহেট’ শব্দে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান ‘সিলেট’-এ রূপান্তরিত হয়েছে, এই ব্যাখ্যাই যুক্তিসঙ্গত মনে হয়।
ইতিহাস
ইতিহাসবিদেরা বলেন, বহুযুগ ধরে সিলেট একটি বাণিজ্যিক শহর হিসেবে প্রচলিত আছে। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, "হরিকেল রাজত্বের" মূল ভূখণ্ড ছিল এই সিলেট। চতুর্দশ শতকের দিকে এই অঞ্চলে ইসলামি প্রভাব দেখা যায় সুফী দার্শনিকদের আগমনের মাধ্যমে। ১৩০৩ সালে কালৈতিহাসিক মুসলিম ধর্মপ্রচারক হযরত শাহ জালাল রহ.-এর আবির্ভাব ঘটে এই সময়ে। তিনি মক্কা থেকে দিল্লি ও ঢাকা হয়ে এই এলাকায় আসেন। তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার প্রভাবে ও তার অনুসারী ৩৬০ জনের মাধ্যমে আরও অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তা দেশের অন্যত্র ও ছড়িয়ে পড়ে। তার দরগাহ সিলেটের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।একসময় তার নামানুসারে এ অঞ্চল জালালাবাদ নামে পরিচিত হয়। হযরত শাহ্ পরান ও শাহ্ কামাল কাহাফানের সান্নিধ্যে এসেও অনেকে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর শাসনামলে ইন্ডিয়ান লস্করেরা এই এলাকায় তাঁবেদারি শাসন চালাতো।[5] ১৭৭৮ সালে রবার্ট লিন্ডসে কে সিলেটের দায়ভার দেয়া হয়। তবে তখনকার স্থানীয় সিলেটিরা তাকে ভালোভাবে নেয় নি। ১৭৮১ সালে এই এলাকায় একটি বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল। এতে অসংখ্য ফসল ও পাখি মারা যায়। স্থানীয়রা এজন্য ব্রিটিশদের দায়ী করে। এই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সৈয়দ হাদী ও সৈয়দ মাহাদী (পীরজাদা নামে পরিচিত)। লিন্ডসের সাথে তখন তাদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় যাতে প্রচুর ভারতীয় তস্কর অংশ নেয়। ফলশ্রুতিতে অনেকেই সিলেট ছেড়ে লন্ডনে চলে যায় ও বসতি গড়ে তোলে। ব্রিটিশ শাসনের সময় আসাম ও সিলেট একত্রিত হয়ে আসামের অংশ ছিল। পরবর্তীতে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা দেশ গঠনের সময় আসাম ও সিলেট আলাদা হয়ে যায়। ১৯৭১-এর যুদ্ধে জয়লাভের পর এটি পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ-এর ভূখণ্ডে পড়ে।[6]
ভূগোল
সিলেট বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার সিলেট সদর উপজেলায়, ২৪.৮৯১৭° উত্তর ৯১.৮৮৩৩° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। কোপেন জলবায়ু শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী সিলেটে সাধারণত বাংলাদেশ গ্রীষ্মমন্ডলীয় বর্ষা জলবায়ু (কোপ্পেন এএম) বিরাজমান, যা এর উচ্চতার কারণে আর্দ্র উষ্ণমঞ্চলীয় জলবায়ু (সিডব্লিউএ) এর সাথে সীমাবদ্ধ। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এখানে বর্ষাকাল, যার ফলে প্রায় প্রতিদিন প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝড়বাতাস সহ আবহাওয়া গরম এবং আর্দ্র থাকে, যদিও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বল্প শুকনো মৌসুম খুব উষ্ণ এবং আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার থাকে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের ৪,২০০ মিলিমিটার (১৭০ ইঞ্চি) এবং ৮০% বৃষ্টিপাত হয় মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে।[7]
সিলেট, বাংলাদেশ-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৫.২ (৭৭.৪) |
২৭.১ (৮০.৮) |
৩০.৪ (৮৬.৭) |
৩০.৮ (৮৭.৪) |
৩০.৮ (৮৭.৪) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
৩১.৬ (৮৮.৯) |
৩১.২ (৮৮.২) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
২৯.২ (৮৪.৬) |
২৬.৩ (৭৯.৩) |
২৯.৬ (৮৫.৩) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১২.৯ (৫৫.২) |
১৪.২ (৫৭.৬) |
১৮.১ (৬৪.৬) |
২০.৮ (৬৯.৪) |
২২.৬ (৭২.৭) |
২৪.৪ (৭৫.৯) |
২৪.৯ (৭৬.৮) |
২৫.০ (৭৭.০) |
২৪.৩ (৭৫.৭) |
২২.৫ (৭২.৫) |
১৮.৪ (৬৫.১) |
১৪.০ (৫৭.২) |
২০.২ (৬৮.৪) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৮ (০.৩) |
৩১ (১.২) |
১৪৬ (৫.৭) |
৩৭২ (১৪.৬) |
৫৬৯ (২২.৪) |
৭৯৬ (৩১.৩) |
৮৩৪ (৩২.৮) |
৬২১ (২৪.৪) |
৫৪৮ (২১.৬) |
২৩২ (৯.১) |
৩০ (১.২) |
১৩ (০.৫) |
৪,২০০ (১৬৫.১) |
উৎস: WMO[8] |
জনসংখ্যা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সিলেট মহানগরের জনসংখ্যা ছিল ৫,৩১,৬৬৩ জন[2] (সিটি কর্পোরেশন এলাকার জনসংখ্যা ছিল ৪,৭৯,৮৩৭ জন), যা জাতীয় মোট জনসংখ্যার ২.২৫%। এর মধ্যে ২,৮৫,৮৯২ জন পুরুষ এবং ২,৪৫,৮২১ জন নারী। নারী ও পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত ১০০:১১৬, যেখানে জাতীয় লিঙ্গ অনুপাত হল ১০০.৩ এবং জাতীয় শহুরে লিঙ্গ অনুপাত হল ১০৯.৩।[9] ২০১১ সালে তথ্য অনুযায়ী স্বাক্ষরতার হার ৬৭.৬%, যেখানে জাতীয় শহুরে স্বাক্ষরতার হার ৬৬.৪% এর চেয়ে বেশি। সিলেট শহরে ১০৬,১০৭টি খানা বা পরিবার রয়েছে।[2]
শহরের জনংখ্যার ৮৭.৭৭% মুসলমান, ১২.৬৩% হিন্দু, ০.০৯% খ্রিস্টান, ০.০৬% বৌদ্ধ এবং ০.০৭% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। এখানে নাস্তিক বা ধর্মহীনদের কোন পরিসংখ্যানগত তথ্য নেই।
সরকার ও রাজনীতি
সিলেট মহানগরী সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক শাসিত হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশন ২৭টি ওয়ার্ড ও ২৩৬টি মহল্লায় বিভক্ত। সিটি কর্পোরশেন এলাকার আয়তন ২৬·৫০ বর্গ কিলোমিটার। ২০০১ সালের ৯ এপ্রিল সিলেট শহরকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অধীন করা হয়। সিলেট শহর হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের বিভাগীয় শহর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশন মূলত সিলেট শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তা নির্মাণ, ট্রাফিক পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ, নিবন্ধনসহ আরও অনেক কাজে সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদন করে। কর্পোরেশনের মেয়র ও ২২ জন কমিশনার পুরো শহরের সব ধরনের উন্নয়নের কাজ করে থাকেন।[5]
শিক্ষা
শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেটের রয়েছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। এ শহরে সাক্ষরতার হার প্রায় ৬৭.৬%। এখানে রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত মুরারিচাঁদ কলেজ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রদানের জন্য সরকারি বেসরকারি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম। উচ্চ মাধ্যমিক এবং অনার্স স্তরের জন্য এখানে রয়েছে সিলেট সরকারি কলেজ, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা সহ আরও অনেক কলেজ এবং মাদ্রাসা। উচ্চতর শিক্ষার জন্য রয়েছে সিলেট সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সিলেট, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।
যাতায়াত
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সিলেটে যাওয়া আসা করে ৩টা (পারাবত, জয়ন্তিকা, উপবন) ট্রেন। এবং সিলেট থেকে প্রতিদিন যাওয়া আসা করে ১টি (কালনী) ট্রেন। ট্রেনের ভাড়া প্রকারভেদে ২৬৫ টাকা থেকে ২৬০০ টাকা পর্যন্ত। আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। এছাড়া বাসেও যাওয়া যাবে। এর মধ্যে শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এনা, গ্রীন লাইন উল্লেখযোগ্য। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের তৃতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রতিদিন ঢাকা- সিলেট রুটে বিমান, ইউ-এস বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে। তাছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেট থেকে প্রতিদিন যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাই দুবাই প্রতিদিন (দুবাই-সিলেট-দুবাই) রুটে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। টিএসি অ্যাভিয়েশন (TAC Aviation) এই বিমানবন্দর থেকে বিমান চালানো প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই এয়ারপোর্ট থেকে সেনা প্যারাট্রুপার প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে।
খেলাধুলা
বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটে বিভিন্ন জনপ্রিয় খেলা যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, বিলিয়ার্ড, টেবিল টেনিস, অ্যাথলেটিক্স, সকার, দাবা, বাস্কেটবল, হকি, কাবাডি, ভলিবল ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে। বর্তমানে দেশী খেলার চেয়ে ক্রিকেট খেলা অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ফ্র্যাঞ্চাইজি সিলেট সিক্সার্স এখানে অবস্থিত, যা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে (এম এ জি ওসমানী স্টেডিয়াম) তাদের ঘরের মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে। এটি ২০০৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং এর ধারণ ক্ষমতা ১৮,৫০০। ২০১৪ সালে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছিল বিশেষত ২০১৪ আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলি আয়োজন করার জন্য। এটি শহরের বাইরে সবুজ চা বাগানের কাছাকাছি অবস্থিত। সিলেট বিভাগ ক্রিকেট দল জাতীয় ক্রিকেট লীগে বিজয়ী হতে না পারলেও ২০০১-০২ সেশনে জাতীয় ক্রিকেট লীগ ওয়ানডেতে শিরোপা জিতেছিল। সিলেটের উল্লেখযোগ্য ক্রিকেটার, যারা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজিন সালেহ, এনামুল হক জুনিয়র, তাপস বৈশ্য, এবং অলোক কাপালি। সিলেটের দাবা খেলোয়াড় রানী হামিদ ১৯৮৫ সালে ফিদে আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার খেতাব পান।
সিলেট জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিলেট জেলা স্টেডিয়াম হচ্ছে শহরের দ্বিতীয় প্রধান স্টেডিয়াম। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।[1]
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
- হযরত শাহজালাল ইয়ামনি র.-ইসলাম প্রচারক।
- মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য দেব- বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক।
- হাছন রাজা- মরমি কবি।
- সৈয়দ মুজতবা আলী - সাহিত্যিক।
- জেনারেল এম এ জি ওসমানী - মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব - দার্শনিক।
- শামসুল উলামা আবু নসর ওহীদ- শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ
- অশোকবিজয় রাহা - কবি।
- হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী - সাবেক স্পীকার।
- মাওলানা আতহার আলী - রাজনীতিবিদ।
- শিতালং শাহ - সুফি কবি।
- আবদুল মতিন চৌধুরী - পাকিস্তানের কৃষিমন্ত্রী।
- আলতাফ হোসেইন- প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ।
- আবুল মাল আবদুল মুহিত - রাজনীতিবিদ।
- যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য - সাহিত্য গবেষক।
- ভূদেব চৌধুরী- সাহিত্যিক।
- রিয়ার এডমিরাল এম এ খান- সাবেক উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, নৌবাহিনী প্রধান, কৃষিমন্ত্রী ও যোগাযোগ মন্ত্রী
- সুন্দরীমোহন দাস- ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতিবিদ ও চিকিৎসক
- আল্লামা মুশাহিদ বাইয়মপুরী- ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক ও রাজনীতিবিদ।
- আল্লামা ফুলতলী র. - প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ এবং ক্বিরাত ও হাদীসশাস্ত্রের যুগবিখ্যাত পণ্ডিত
- মাওলানা উবায়দুল হক - জাতীয় মসজিদের সাবেক খতিব
- আল্লামা নূর উদ্দিন গহরপুরী - বিখ্যাত মুসলিম সাধক
- ডক্টর জামিলুর রেজা চৌধুরী - বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও শিক্ষাবিদ।
- দিলওয়ার - গণমানুষের কবি।
- নুরুল ইসলাম নাহিদ - সাবেক শিক্ষামন্ত্রী।
- ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডাঃ এম এ মালিক- জাতীয় অধ্যাপক
- ডা. শাহলা খাতুন - জাতীয় অধ্যাপক
- রুনা লায়লা- কণ্ঠশিল্পী।
- সালমান শাহ - চিত্রাভিনেতা
- হেনা দাস- ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী।
- রাণী হামিদ - বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারী দাবাড়ু।
- মুহাম্মদ নুরুল হক - সাহিত্যসেবক।
- মাহমুদুল আমিন চৌধুরী - সাবেক প্রধান বিচারপতি।
- ইসমাঈল আলম- উর্দু ভাষার কবি।
- সাইফুর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী
- রুশনারা আলী, ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যক্তি
- একলিমুর রাজা কাব্যবিশারদ- কবি
- কমরেড অজয় ভট্টাচার্য - নানকার কৃষক বিদ্রোহের নেতা।
- এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
- অলোক কাপালি, বাংলাদেশি ক্রিকেটার।
গ্যালারি
- শাহী ঈদগাহ, সিলেট
- গড়ান গাছ, টিলাগড় ইকোপার্ক
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- "অফিসিয়াল ওয়েবসাইট"
- "Sylhet City Corporation"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৩: Urban Area Rport, 2011। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা ২৭৭। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯।
- "সিলেট জেলা তথ্য বাতায়ন" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ মে ২০১৩ তারিখে
- "সিলেটের আদি নাম শ্রীহট্ট ছিল কেন ? শ্রীহট্ট থেকে সিলেট কীভাবে হলো ?"। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০১৬।
- "সিলেট জেলার ঐতিহ্য"। ৮ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৪।
- "সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস"। দৈনিক সিলেটের ডাক। ২১ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৪।
- Monthly Averages for Sylhet, BGD ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে MSN Weather. Retrieved 25 May 2009.
- "Climatological Information"। WMO। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৫।
- "BANGLADESH URBAN CENSUS RESULTS AT A GLANCE"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৩: Urban Area Rport, 2011। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা x। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯।
- সিলেটের শহরের ভেতরে ঘুরাঘুরির জায়গা গুলোর নাম এবং যাতায়াত ব্যবস্থা
বহিঃসংযোগ
- উইকিভ্রমণ থেকে সিলেট ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।
- "Population and Housing Census 2011 - Volume 3: Urban Area Report" [জনসংখ্যা ও গৃহগণনা ২০১১ - খণ্ড ৩: নগর অঞ্চলের প্রতিবেদন] (পিডিএফ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। আগস্ট ২০১৪।