শ্রীলঙ্কার প্রদেশ

শ্রীলঙ্কায় প্রদেশ (সিংহলি: පළාත; তামিল: மாகாணம், প্রতিবর্ণী. Mākāṇam) হল প্রথম স্তরের প্রশাসনিক বিভাগ। ১৮৩৩ সালে সিলেনের ব্রিটিশ শাসকরা সর্বপ্রথম এ অঞ্চলটিকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী শতাব্দীতে বেশিরভাগ প্রশাসনিক কাজ জেলাগুলোতে (দ্বিতীয় স্তরের প্রশাসনিক বিভাগ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। আর বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রদেশগুলো কেবল আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছিল। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছিল ১৯৮৭ সালে; যখন বহু দশকের ক্রমবর্ধমান প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের চাহিদার ভিত্তিতে দেশটির সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।[1][2] বর্তমানে দেশটিতে মোট নয়টি প্রদেশ রয়েছে।

প্রদেশ
පළාත
மாகாணம்
শ্রেণীপ্রথম স্তরের প্রশাসনিক বিভাগ
অবস্থানশ্রীলঙ্কা
প্রতিষ্ঠার তারিখ
  • ১ অক্টোবর ১৮৩৩
সংখ্যা৯ (১ জানুয়ারি ২০০৭ অনুযায়ী)
জনসংখ্যা১০,৬১,৩১৫–৫৮,৫১,১৩০
আয়তন৩,৬৮৪–১০,৪৭২ বর্গ কিলোমিটার
সরকার
  • প্রাদেশিক সরকার
উপবিভাগ

ইতিহাস

অনুরাধাপুর রাজ্য

মায়া রাতা, পিহিতি ও রুহুনা

ব্রিটিশ সিলন

১৮১৫ সালে ব্রিটিশরা পুরো দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পরে এটিকে জাতিগত বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে তিনটি প্রশাসনিক কাঠামোতে বিভক্ত করেছিল। এগুলো হলো: লো কান্ট্রি সিংহলী, ক্যান্ডিয় সিংহলী এবং তামিল। ১৮২৯ সালে ব্রিটিশরা সিলেনের ঔপনবেশিক সরকার এবং প্রশাসনিক কাঠামো নতুন করে পর্যালোচনা করার জন্য কোলব্রুক-ক্যামেরন কমিশন গঠন করেছিল।[3] কমিশন সে সময়ে বিদ্যমান তিনটি জাতি ভিত্তিক প্রশাসনকে একীভূত করে ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে পাঁচটি প্রদেশে বিভক্ত একটি একক প্রশাসন গঠন করার সুপারিশ করেছিল।[3] উক্ত সুপারিশ অনুসারে ১৮৩৩ সালের ১ অক্টোবর পুরো দ্বীপপুঞ্জটি পরিচালনায় একটি একক প্রশাসন গঠন করে এর অধীনে পাঁচটি প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়।[4][5][6][7] এগুলো হলো:

  • মধ্য প্রদেশ: মধ্য ক্যান্ডিয় প্রদেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত।
  • পূর্ব প্রদেশ: ট্রিনকোমালে এবং বাটিকালোয়ার সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলি এবং ক্যান্ডির প্রদেশ বিন্তেনাতামানকাদুয়া নিয়ে গঠিত।
  • উত্তর প্রদেশ: জাফনা, মান্নার ও ভ্যানির সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা, এবং ক্যান্ডির প্রদেশ নুয়ারা কালাওইয়া নিয়ে গঠিত।
  • দক্ষিণ প্রদেশ: গল, হাম্বানটোটা, মাতারা ও টাঙ্গালের সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা, এবং ক্যান্ডির প্রদেশ নিম্ন উভার, সাফারগাম এবং ওয়েলাসা নিয়ে গঠিত।
  • পশ্চিম প্রদেশ: কলম্বো, চিলাউ ও পুতলমের সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা, এবং ক্যান্ডির প্রদেশ থ্রি কোরালস, ফোর কোরালস, সেভেন কোরালস এবং লোয়ার বুলাথগামার সমন্বয়ে গঠিত।

পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে আরো চারটি প্রদেশ গঠন করা হয়েছিল। ফলে, মোট প্রদেশের সংখ্যা দাঁড়ায় নয়টি।[6][7][8] এই প্রদেশ চারটি হল:

  • উত্তর পশ্চিম প্রদেশ: ১৮৪৫ সালে পশ্চিম প্রদেশের উত্তরের জেলাগুলো (চিলাউ, পুতালাম এবং সেভেন কোরাল) নিয়ে গঠন করা হয়েছিল।[9]
  • উত্তর মধ্য প্রদেশ: ১৮৭৩ সালে উত্তর প্রদেশের দক্ষিণের জেলাগুলো (নুওয়ারা কালওয়াইয়া জেলা) এবং পূর্ব প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমের (তামানকাদুয়া জেলা) নিয়ে গঠন করা হয়েছিল।[10]
  • উভা প্রদেশ: ১৮৮৬ সালে মধ্য প্রদেশের অংশ বিশেষ, পূর্ব প্রদেশের বিন্তেনা জেলা এবং দক্ষিণ প্রদেশের ওয়েলসারার জেলা নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।[10]
  • সবরগামুয়া প্রদেশ: ১৮৮৯ সালে গঠন করা হয়েছিল।[11]

শ্রীলঙ্কা

স্বল্পস্থায়ী উত্তর পূর্ব প্রদেশ

১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রদেশের সংখ্যা অপরিবর্তিত ছিল। এরপর ইন্দো-শ্রীলঙ্কা চুক্তি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জয়বর্ধনে উত্তর ও পূর্বীয় প্রদেশকে একীভূত করে একটি নির্বাচিত পরিষদ দ্বারা পরিচালিত একক উত্তর-পূর্ব প্রদেশ গঠনের ঘোষণা দেন।[12] এই ঘোষণাপত্রটি কেবলমাত্র একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা ছিল; কারণ প্রদেশ দুটি স্থায়ীভাবে একীভূত করার জন্য পূর্ব প্রদেশে গণভোটের মাধ্যমে এর অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, এই গণভোট কখনোই অনুষ্ঠিত হয়নি এবং শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি এই "অস্থায়ীত্বের" আয়ু বাড়ানোর জন্য প্রতি বছর একের পর এক ঘোষণাপত্র জারি করছিলেন।[13] শ্রীলঙ্কার জাতীয়তাবাদীরা এই সংযুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছিল। একীভূতকরণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০০৬ সালের ১৪ জুলাই জেভিপি পূর্বের জন্য পৃথক প্রাদেশিক পরিষদের আবেদন করে শ্রীলঙ্কার উচ্চ আদালতে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করে।[12] ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট উক্ত মামলার রায়ে রাষ্ট্রপতি জয়বর্ধনের ঘোষণাপত্রকে অকার্যকর এবং আইনত ভিত্তিহীন ঘোষণা করে।[12] ফলে, ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি উত্তর-পূর্ব প্রদেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর এবং পূর্ব প্রদেশে বিভক্ত হয়।

বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় ৯টি প্রদেশ রয়েছে। এদের মধ্যে সাতটির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই প্রাদেশিক পরিষদ আছে।[2]

প্রদেশসমূহ

বর্তমান

জনসংখ্যা সম্পর্কিত উপাত্তগুলি শ্রীলঙ্কার সর্বশেষ (২০১২ সালের) আদমশুমারী থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রদেশের নাম
ও পতাকা
শ্রীলঙ্কার মানচিত্রে
প্রদেশটির অবস্থান
প্রাদেশিক
রাজধানী
গঠনের
তারিখ
স্থলভাগের আয়তন
কিলোমিটার (মাইল)[14]
জলভাগের
আয়তন
কিলোমিটার (মাইল)[14]
মোট আয়তন
কিলোমিটার (মাইল)[14]
জনসংখ্যা
(২০১২)[15]
জনসংখ্যার ঘনত্ব- প্রতি কিমি
(প্রতি মাইলএ)[lower-alpha 1]
 মধ্য Area map of Central Province of Sri Lanka ক্যান্ডি ১ অক্টোবর ১৮৩৩ 7003557500000000000৫,৫৭৫ (২,১৫৩) 7001990000000000000৯৯ (৩৮) 7003567400000000000৫,৬৭৪ (২,১৯১) ২৫,৭১,৫৫৭ 7002461000000000000৪৬১ (১,১৯০)
 পূর্ব Area map of Eastern Province of Sri Lanka ত্রিঙ্কোমালে ১ অক্টোবর ১৮৩৩ 7003936100000000000৯,৩৬১ (৩,৬১৪) 7002635000000000000৬৩৫ (২৪৫) 7003999600000000000৯,৯৯৬ (৩,৮৫৯) ১৫,৫৫,৫১০ 7002166000000000000১৬৬ (৪৩০)
 উত্তর মধ্য Area map of North Central Province of Sri Lanka অনুরাধাপুরা ১৮৭৩ 7003974100000000000৯,৭৪১ (৩,৭৬১) 7002731000000000000৭৩১ (২৮২) 7004104720000000000১০,৪৭২ (৪,০৪৩) ১২,৬৬,৬৬৩ 7002130000000000000১৩০ (৩৪০)
 উত্তর Area map of Northern Province of Sri Lanka জাফনা ১ অক্টোবর ১৮৩৩ 7003829000000000000৮,২৯০ (৩,২০০) 7002594000000000000৫৯৪ (২২৯) 7003888400000000000৮,৮৮৪ (৩,৪৩০) ১০,৬১,৩১৫ 7002128000000000000১২৮ (৩৩০)
 উত্তর পশ্চিম Area map of North Western Province of Sri Lanka কুরুনেগল ১৮৪৫ 7003750600000000000৭,৫০৬ (২,৮৯৮) 7002382000000000000৩৮২ (১৪৭) 7003788800000000000৭,৮৮৮ (৩,০৪৬) ২৩,৮০,৮৬১ 7002317000000000000৩১৭ (৮২০)
 সাবরাগমুওয়া Area map of Sabaragamuwa, Sri Lanka রত্নাপুরা ১৮৮৯ 7003492100000000000৪,৯২১ (১,৯০০) 7001470000000000000৪৭ (১৮) 7003496800000000000৪,৯৬৮ (১,৯১৮) ১৯,২৮,৬৫৫ 7002392000000000000৩৯২ (১,০২০)
 দক্ষিণ Area map of Southern Province of Sri Lanka গালে ১ অক্টোবর ১৮৩৩ 7003538300000000000৫,৩৮৩ (২,০৭৮) 7002161000000000000১৬১ (৬২) 7003554400000000000৫,৫৪৪ (২,১৪১) ২,৪৭৭,২৮৫ 7002460000000000000৪৬০ (১,২০০)
 উভা Area map of Uva, Sri Lanka বড়ুলা ১৮৮৬ 7003833500000000000৮,৩৩৫ (৩,২১৮) 7002165000000000000১৬৫ (৬৪) 7003850000000000000৮,৫০০ (৩,৩০০) ১২,৬৬,৪৬৩ 7002152000000000000১৫২ (৩৯০)
 পশ্চিমাঞ্চল Area map of Western Province of Sri Lanka কলম্বো ১ অক্টোবর ১৮৩৩ 7003359300000000000৩,৫৯৩ (১,৩৮৭) 7001910000000000000৯১ (৩৫) 7003368400000000000৩,৬৮৪ (১,৪২২) ৫৮,৫১,১৩০ 7003162800000000000১,৬২৮ (৪,২২০)
মোট 7004627050000000000৬২,৭০৫ (২৪,২১১) 7003290500000000000২,৯০৫ (১,১২২) 7004656100000000000৬৫,৬১০ (২৫,৩৩০) ২,০৩,৫৯,৪৩৯ 7002325000000000000৩২৫ (৮৪০)

আরো দেখুন

টীকা

  1. স্থলভাগের আয়তনের ভিত্তিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব হিসাব করা হয়েছে; মোট আয়তনের ভিত্তিতে নয়।

তথ্যসূত্র

  1. Law, Gwillim (২০১০)। "Provinces of Sri Lanka"statoids.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১০
  2. "Introduction"Provincial CouncilsGovernment of Sri Lanka। ৭ জুলাই ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১০
  3. "The Colebrooke-Cameron Reforms"Sri LankaLibrary of Congress। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০০৯
  4. Mills, Lennox A. (১৯৩৩)। Ceylon Under British Rule 1795–1932। London: Oxford University Press/Humphrey S. Milford। পৃষ্ঠা 68। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০০৯
  5. Mendis 1946, পৃ. 39।
  6. Samarasinghe, L. M. (২১ মার্চ ২০০৩)। "River basins as administrative divisions"Daily News (Sri Lanka)
  7. "Sinhala Colonisation in the Hereditary Tamil Regions of the Island of Sri Lanka"UN Commission on Human Rights 56th Sessions: March/April 2000। Tamil Nation। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০০৯
  8. Karalliyadda, S. B. (৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Independence Struggle for a Hundred and Thirty Three Years"Daily News (Sri Lanka)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০০৯
  9. Mendis 1946, পৃ. 51।
  10. Mendis 1946, পৃ. 84।
  11. Mendis 1946, পৃ. 85।
  12. Selvanayagam, S. S. (১৭ অক্টোবর ২০০৬)। "North-East merger illegal: SC"The Daily Mirror (Sri Lanka)। ৩ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  13. Sambandan, V. S. (১৪ নভেম্বর ২০০৩)। "Sri Lanka's North-East to remain united for another year"The Hindu। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০২০
  14. "Table 1.1: Area of Sri Lanka by province and district" (পিডিএফ)Statistical Abstract 2014। Department of Census and Statistics, Sri Lanka।
  15. "Census of Population and Housing of Sri Lanka, 2012 – Table A1: Population by district, sex and sector" (পিডিএফ)। Department of Census & Statistics, Sri Lanka। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২০

গ্রন্থপঞ্জী

  • মেন্ডিস, জি. সি. (১৯৪৬)। Ceylon Under the British (২য় (সংশোধিত) সংস্করণ)। কলম্বো: Colombo Apothecaries' Company।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.