হিপ হপ সঙ্গীত

হিপহপ এক প্রকার সঙ্গীত যা হিপ হপ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং হিপ হপের ৪ টি মূল উপাদান আছেঃ র‌্যাপিং, ডিজেইং, সিন্থিসিস ও বীটবক্সিং। ১৯৭০-এর দশকে নিউইয়র্ক সিটির সাউথ ব্রনক্স এলাকায় হিপ হপ শুরু হয়। র‌্যাপকে হিপ হপ-এর প্রতিশব্দ হিসেবে দেখা হলেও আসলে হিপ হপ বলতে একটা পুরো সংস্কৃতির চর্চাকে বোঝায়। র‌্যাপিং বলতে এমসিং বোঝানো হয়ে থাকে, যা এমন এক ধরনের গায়কী যাতে গানের কথা বলা হতে থাকে তাল ও ছন্দের মাধ্যমে যার সাথে থাকে নানা রকমের বীট। আধুনিক বীটে থাকে ড্রাম মেসিন, সিন্থিসাইজার ও সরাসরি ব্যান্ড।

আফ্রিকা বাম্বাতা

ইতিহাস

এমিনেম ২০০৫ সালে মঞ্চে

কিথ কাউবয় হিপ হপ শব্দটি প্রথম চালু করেন। যখন একে ডিস্কো র‌্যাপ বলা হতে থাকে তখন কিথ কাউবয়, ডিজে হলিউড ও লাভবাগ স্টারস্কি এই শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করেন।এটা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে কাউবয় শব্দটি চালু করে তার এক বন্ধুকে উত্ত্যক্ত করতে যে সামরিক বাহিনীতে মাত্র যোগ দিয়েছিল আর এটা সামরিক ক্যাডেটদের প্যারেডের মতো হিপ হপ শোনায়। কাউবয় তার মঞ্চ পরিবেশনাতে এটা শুরু করে এবং অন্যান্য শিল্পীরাও এটা শুরু করে। স্টিভেন হ্যাগার নামের একজন লেখক এটা লেখায় সর্ব প্রথম ব্যবহার করেন যা ভিলেজ ভয়েজ নামে পত্রিকায় ছাপা হয় ও পরে তিনি ১৯৮৪ সালে হিপহপের ইতিহাস লেখেন।ইউনিভার্সাল জুলু নেশনের প্রতিষ্ঠাতা আফ্রিকা বাম্বাতা সর্ব প্রথম এটা ব্যবহার করেন একটি সংস্কৃতিকে বোঝাতে যেখানে এই জাতের সঙ্গীত আছে। হিপহপ সঙ্গীতের উৎস আছে আসলে আফ্রিকান আমেরিকান সংগীতে, বিশেষ করে আফ্রিকান সংগীতে। পশ্চিম আফ্রিকার ভ্রমণকারী গায়কদের ও কবিদের একটি দল যাদের নাম গ্রিয়টস, তারা মৌখিক ঐতিহ্যবাহী এক প্রকার গান গাইত, যা র‌্যাপারদের গানের ধরনের মতোই। ১৯৭০-এর দশকে হিপহপ সঙ্গীতের উদ্ভব ঘটে যখন ব্লক পার্টিগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ব্লক পার্টিগুলো ডিজে নিয়ে আসত যারা ফাঙ্ক ও সোল মিউজিক করত। ভাল গ্রহণযোগ্যতার জন্য ডিজেরা আলাদাভাবে পারকাশন ভাংগানোর মতো একটা কৌশল প্রয়োগ করতে থাকে, যা জ্যামাইকান ডাব মিউজিকে প্রচলিত ছিল। এটা নিউইয়র্কে চলে আসে জ্যামাইকান লোকজনের অভিবাসনের ফলে। ডিজে কুল হারস এই কৌশল প্রয়োগ করেন প্রথম দিকেই যখন ১৯৬৭ সালে তিনি অভিবাসনের মাধ্যমে আমেরিকায় আসেন। ডাব মিউজিক জ্যামাইকাতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আমেরিকান নাবিকদের প্রভাব ও রিদম এ্যান্ড ব্ল্যুজ-এর কারণে। বড় সাউন্ড সিস্টেম বসানো হয় গরীব জ্যামাইকানদের জন্য। নিউইয়র্কানরা তখন রেগে ও ডাব সঙ্গীত পছন্দ করত না তেমন। হিপহপ সঙ্গীত ডিস্কো সঙ্গীত দ্বারা প্রভাবিত। সুগারহিল গ্যাং-এর রাপারস ডিলাইট প্রথম হিপহপ রেকর্ড যা ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয়।দ্যা ফ্যাটব্যাক ব্যান্ডের কিং টিম ৩ অ্যালবামটি অবশ্য কয়েক সপ্তাহ আগে প্রকাশ হয় বলে কেউ কেউ ধারণা করেন। ফিলাডেল্পিয়া শহরে হিপহপ সঙ্গীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে। ১৯৮০-এর দশকের হিপহপ সঙ্গীত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকাঅস্ট্রেলিয়া-তে বি-বয়িং-এর গান প্রথম হিপহপ সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত বিস্টি বয়েজের লাইসেন্সড টু ইল হিপহপ অ্যালবামটি বিলবোর্ড চার্টের ১ম স্থানে চলে আসে প্রথম বারের মতো, যা ছিল প্রথম বাণিজ্যিক সাফল্য। ১৯৮০-এর দশকের শেষ থেকে ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিককে হিপহপ-এর স্বর্ণযুক বলা হয়।গ্যাংস্টা র‌্যাপ হলো হিপহপ-এর উপধারা যা অনেক বেশি আক্রমণাত্নক। গানের কথায় উঠে আসত অবিরাম ধর্মনিন্দা, কালোদের নিগার বলে গালি, প্রচন্ড বিতর্কিত বিষয় এবং আমেরিকান কালো যুব সমাজের সহিংস জীবনযাত্রা। এফ বি আই-এর সহকারী পরিচালক মিল্ট আহ্লারিচ একটি চিঠি পাঠান স্ট্রেইট আউটা কম্পটনকে তাদের গান ফাক দ্যা পুলিশ-এর জন্য।বামপন্থী ঘরানার ও ডানপন্থী ঘরানার বিশ্লেষক এবং ধর্মীয় নেতারা তাদের সমালোচনা করতে থাকেন। গ্যাংস্টা র‌্যাপাররা বলতে থাকেন যে এটা তাদের জীবনের কঠোর বাস্তবতার কাহিনী এবং তারা এটা অভিনেতার মতো দেখাচ্ছেন মাত্র। ব্রাজিলীয় হিপহপ হলো আমেরিকার পর হিপহপ-এর বড় জায়গা। ব্রাজিলীয় হিপহপ-এ উঠে এসেছে ব্রাজিলীয় কালোদের বর্ণবাদী ও অর্থনৈতিক অবস্থা, যারা সেখানে খুবই খারাপ কুড়ে ঘরে থাকে।

জনপ্রিয়তা

১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে র‌্যাপ কোর, র‌্যাপ রক ও র‌্যাপ মেটাল যা হিপহপ-এর ফিউশন এবং হার্ডকোর পাঙ্ক, হেভি মেটালরক সংগীত মূলধারার শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রেজ অ্যাগেনিস্ট দ্যা মেসিন ও লিম্প বিজকিট ঐ সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠা দু’টি নাম। ২০০০ সহস্রাব্দের প্রথমদিকে হিপহপ অনেক নতুন নতুন জায়গায় বিস্তৃতি লাভ করে। রাশিয়া, ফিলিপাইন,কানাডা, চীন, ভারতভিয়েতনাম-এ হিপহপ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০০৫ সালের শুরুর দিকে হিপহপ অ্যালবামের বিক্রি কমতে থাকে। টাইম ম্যাগাজিনের মতে ৪৪% বিক্রি কমে গেছে রাপ অ্যালবামের ।এন পি আর সাংস্কৃতিক সমালোচক এলিজাবেথ ব্লেয়ার বলেন,

তবে অনেকে বলছেন যে আসলে জনপ্রিয়তা কমেনি। তরুণ প্রজন্ম অবৈধভাবে ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করাতে অ্যালবাম বিক্রি কমে গেছে। এমিনেম, ব্ল্যাক আইড পিস-এর গান ২০১০ সালের প্রথমদিকেও টপচার্টে উঠছে ১ম অবস্থানে।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.