অণুচক্রিকা
অণুচক্রিকা (ইংরেজি: Platelet) নিউক্লিয়াসবিহীন, গোলাকার বা ডিম্বাকার বা রড আকৃতির বর্ণহীন সাইটোপ্লাজমীয় চাকতি বিশিষ্ট রক্তের ক্ষুদ্রতম কোষকে অণুচক্রিকা বলে।[1] এদের সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমে কোষ অঙ্গানু- মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজি বস্তু থাকে কিন্তু নিউক্লিয়াস থাকে না।[2]
অণুচক্রিকা | |
---|---|
বিস্তারিত | |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | থ্রোম্বোসাইটাস |
মে-এসএইচ | D001792 |
এফএমএ | FMA:62851 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
পরিমাণ
অণুচক্রিকার ঘনত্ব হিমোসাইটোমিটার ব্যবহার করে মাপানো হয় বা কুল্টার কাউন্টারের মতো বৈদ্যুতিক প্রতিবন্ধকতা ব্যবহার করে একটি স্বয়ংক্রিয় অণুচক্রিকা বিশ্লেষকে রক্ত রেখে মাপা যায়। স্বাস্থ্যবানদের জন্য সাধারণ পরিসীমা (জনসংখ্যার ৯৯% বিশ্লেষণ) প্রতি ঘন মিলিমিটারে ১৫০,০০০ থেকে ৪৫০,০০০ টি অণুচক্রিকা (ঘন মিমি মাইক্রোলিটারের সমান) হয়। বা ১৫০-৪৫০x১০^৯ প্রতি লিটার প্রবীণদের ক্ষেত্রে। প্রতিদিন প্রায় 200 বিলিয়ন অনুচক্রিকা উৎপন্ন হয়। [3] [1][2]
অণুচক্রিকা (থ্রম্বোসাইট)
অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট বা প্লেটলেট হল অতিক্ষুদ্র, অনিয়মিত আকারের কোষ (এতে কোন ডিএনএধারী নিউক্লিয়াস নেই)। এর ব্যাস ২-৩ µm[4] এবং প্রিকার্সর মেগাকারিওসাইটের গাঁজান থেকে সৃষ্টি হয়। এর আয়ু বড়জোর ৫-৯ দিন। অণুচক্রিকা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উৎস। স্তন্যপায়ীদের দেহে এরা সংবাহিত হয় এবং রক্ততঞ্চনে অর্থাৎ ক্ষতস্থানের রক্ত জমাট বাঁধায় নিয়োজিত থাকে। অণুচক্রিকা সূতার আঁশের ন্যায় রক্তকে জমাট বাঁধায়।
অণুচক্রিকার সংখ্যা খুব কমে গেলে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার অণুচক্রিকার সংখ্যা খুব বেরে গেলে তা রক্তনালিকাগুলোকে বাঁধা দিয়ে থ্রম্বোসিস ঘটাতে পারে এবং এমন পরিস্থিতিতে স্ট্রোক, মাইওকার্ডিয়াল ইনফ্র্যাকশন, ফুসফুসীয় ধমনীরোধ এবং রক্তনালিকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অণুচক্রিকার অস্বাভাবিকতা বা রোগকে থ্রম্বোসাইটোপ্যাথি বলা হয়[5] যা হতে পারে অণুচক্রিকা কমে গেলে (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া), অণুচক্রিকার স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হলে (থ্রম্বোস্টেনিয়া) কিংবা অণুচক্রিকার সংখ্যা বেড়ে গেলে (থ্রম্বোসাইটোসিস)। এছাড়া বেশকিছু রোগের কারণেও অণুচক্রিকা কমতে পারে যেমন ডেঙ্গু বা হেপারিন-ইনডিউজড থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (এইচআইটি)।
অণুচক্রিকা বিভিন্ন বৃদ্ধিবর্ধক উপাদান উৎপন্ন করে যেমন প্লেটলেট-ডেপরাইভড্ গ্রোথ ফ্যাক্টর (পিডিজিএফ), এ পটেন্ট কেমোট্যাক্টিক এজেন্ট এবং টিজিএফ বেটা যা অতিরিক্ত কোষীয় মাতৃকাকে ত্বরান্বিত করে। উভয় বৃদ্ধিবর্ধক উপাদান সংযোজক কলার পুনর্গঠন এবং পুনঃনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও আরো কিছু বৃদ্ধিবর্ধক উপাদানও তৈরি করে অণুচক্রিকা যেমন ফাইব্রোব্লাস্ট গ্রোথ ফ্যাক্টর, ইনসুলিন-এর ন্যায় গ্রোথ ফ্যাক্টর-১, প্লেটলেট-ডেপরাইভড এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর এবং ভাস্কুলার এন্ডোথেলিয়াল গ্রোথ ফ্যাক্টর। এসব উপাদানের স্থানীয় প্রয়োগ প্লেটলেট-রিচ প্লাজমা (পিআরপি)-এর ঘনত্ব বাড়ায় এবং ক্ষত সারাতে যুগ-যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে[6]।
তথ্যসূত্র
- উচ্চমাধ্যমিক জীববিজ্ঞান। কলকাতা: কলকাতা বুক হাউস।
- চক্রবর্তী, ডা. সৌমিত্র (২০১৯)। মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান (২০১৩ সংস্করণ)। ঢাকা: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। পৃষ্ঠা ১৪০।
- গাজী আজমল স্যারের বই, একাদশ-দ্বাদশ
- Campbell, Neil A. (২০০৮)। Biology (8th সংস্করণ)। London: Pearson Education। পৃষ্ঠা 912। আইএসবিএন 978-0-321-53616-7।
Platelets are pinched-off cytoplasmic fragments of specialized bone marrow cells. They are about 2–3µm in diameter and have no nuclei. Platelets serve both structural and molecular functions in blood clotting.
- Maton, Anthea (১৯৯৩)। Human Biology and Health। Englewood Cliffs NJ: Prentice Hall। আইএসবিএন 0-13-981176-1।
- O'Connell SM, Impeduglia T, Hessler K, Wang XJ, Carroll RJ, Dardik H (২০০৮)। "Autologous platelet-rich fibrin matrix as cell therapy in the healing of chronic lower-extremity ulcers"। Wound Repair Regen। 16 (6): 749–56। ডিওআই:10.1111/j.1524-475X.2008.00426.x। পিএমআইডি 19128245।