পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০
ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭০ সনে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সনের অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বন্যার কারণে ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৯৭১ এর জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে যায়।
| ||||||||||||||||||||||||||||
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ১৫১টি আসন | ||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ভোটের হার | ৬৩.১% | |||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||
বাংলাদেশ প্রবেশদ্বার
|
রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী
নির্বাচনে মোট ২৪ টি দল অংশ নেয়। ৩০০ টি আসনে মোট ১,৯৫৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এর পর কিছু প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে ১,৫৭৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করে। আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে ১৬২টি আসন পূর্ব পাকিস্তানে এবং অবশিষ্টগুলি পশ্চিম পাকিস্তানে। জামায়াতে ইসলামী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী দেয়। তাদের প্রার্থী সংখ্যা ১৫১। পাকিস্তান পিপলস পার্টি মাত্র ১২০ আসনে প্রার্থী দেয়। তার মধ্যে ১০৩ টি ছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে। পূর্ব পাকিস্তানে তারা কোন প্রার্থী দেয়নি। পিএমএল (কনভেনশন) ১২৪ আসনে, পিএমএল (কাউন্সিল) ১১৯ আসনে এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) ১৩৩ আসনে প্রতিদ্বন্দীতা করে।
নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং প্রায় ৬৫% ভোট পড়েছে বলে সরকার দাবী করে। সর্বমোট ৫৬,৯৪১,৫০০ রেজিস্টার্ড ভোটারের মধ্যে ৩১,২১১,২২০ জন পূর্ব পাকিস্তানের এবং ২৩,৭৩০,২৮০ জন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ভোটার।
জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল
দল | ভোট | % | আসন | |||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সাধারণ | নারী | মোট | ||||||
আওয়ামী লীগ | ১,২৯,৩৭,১৬২ | ৩৯.২ | ১৬০ | ৭ | ১৬৭ | |||
পাকিস্তান পিপলস পার্টি | ৬১,৪৮,৯২৩ | ১৮.৬৩ | ৮৩ | ৫ | ৮৮ | |||
জামায়াতে ইসলামী | ১৯,৮৯,৪৬১ | ৬.০৩ | ৪ | ০ | ৪ | |||
কাউন্সিল মুসলিম লীগ | ১৯,৬৫,৬৮৯ | ৫.৯৬ | ৭ | ০ | ৭ | |||
পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) | ১৪,৭৩,৭৪৯ | ৪.৪৭ | ৯ | ০ | ৯ | |||
জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম | ১৩,১৫,০৭১ | ৩.৯৮ | ৭ | ০ | ৭ | |||
জমিয়ত উলামায়ে পাকিস্তান | ১২,৯৯,৮৫৮ | ৩.৯৪ | ৭ | ০ | ৭ | |||
কনভেনশন মুসলিম লীগ | ১১,০২,৮১৫ | ৩.৩৪ | ২ | ০ | ২ | |||
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি) | ৮,০১,৩৫৫ | ২.৪৩ | ৬ | ১ | ৭ | |||
পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি | ৭,৩৭,৯৫৮ | ২.২৪ | ১ | ০ | ১ | |||
জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম (থানভি) | ৫,২১,৭৬৪ | ১.৫৮ | ০ | ০ | ০ | |||
অন্যান্য দল | ৩,৮৭,৯১৯ | ১.১৮ | ০ | ০ | – | |||
স্বতন্ত্র | ২৩,২২,৩৪১ | ৭.০৪ | ১৪ | ০ | ১৪ | |||
মোট | ৩,৩০,০৪,০৬৫ | ১০০ | ৩০০ | ১৩ | ৩১৩ | |||
নিবন্ধিত ভোটার/ভোটদান | ৫,৬৯,৪১,৫০০ | – | ||||||
উৎস: নোহলেন ও অন্যান্য,[1] বাংলাদেশ নথি |
প্রদেশওয়ারী ফলাফল
পার্টি | পাঞ্জাব | সিন্ধু | NWFP | বেলুচিস্তান | পশ্চিম পাকিস্তান (মোট) | পূর্ব পাকিস্তান [2] |
---|---|---|---|---|---|---|
আওয়ামী লীগ | ০ (০.০৭%) | ০ (০.০৭%) | ০ (০.২%) | ০ (১.০%) | ০ | ১৬০ (৭৪.৯%) |
পাকিস্তান পিপলস পার্টি | ৬২ (৪১.৬%) | ১৮ (৪৪.৯%) | ১ (১৪.২%) | ০ (২.৩%) | ৮১ | ০ |
পিএমএল (কাইয়ুম) | ১ (৫.৪%) | ১ (১০.৭%) | ৭ (২২.৬%) | ০ (১০.৯%) | ৯ | ০ (১.০%) |
পিএমএল (কনভেনশন) | ৭ (৫.১%) | ০ (১.৭%) | ০ | ০ | ৭ | ০ (২.৮%) |
জমিয়ত ইলেমা-ই-ইসলাম | ০ (৫.২%) | ০ (৪.৩%) | ৬ (২৫.৪%) | ১ (২০.০%) | ৭ | ০ (০.৯%) |
মারকাজি জমিয়ত-উলেমা-পাকিস্তান | ৪ (৯.৮%) | ৩ (৭.৪%) | ০ (০%) | ০ | ৭ | ০ |
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি) | ০ | ০ (০.৩%) | ৩ (১৮.৪%) | ৩ (৪৫.১%) | ৬ | ০ (১.৮%) |
জামায়াত-ই-ইসলামী | ১ (৪.৭%) | ২ (১০.৩%) | ১ (৭.২%) | ০ (১.১%) | ৪ | ০ (৬.০%) |
পিএমএল (কাউন্সিল) | ২ (১২.৬%) | ০ (৬.৮%) | ০ (৪.০%) | ০ (১০.৯%) | ২ | ০ (১.৬%) |
পিডিপি | ০ (২.২%) | ০ (০.০৪%) | ০ (০.৩%) | ০ (০.৩%) | ০ | ১ (২.২%) |
স্বতন্ত্র | ৫ (১১.৮%) | ৩ (১০.৭%) | ৭ (৬.০%) | ০ (৬.৮%) | ১৫ | ১ (৩.৪%) |
মোট আসন | ৮২ | ২৭ | ২৫ | ৪ | ১৩৮ | ১৬২ |
(বন্ধনীর ভিতরে সংখ্যা মোট ভোটের শতকরা নির্দেশক)
জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সাধারণ নির্বাচনের একই সাথে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগপূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভ করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে ১৩৮টি আসনের ৮১টিতে জয়লাভ করে।
কনজারভেটিভ দলগুলি নির্বাচনে খুব সুবিধা করতে পারেনি। সম্ভবত একই ধরনের পার্টিগুলো একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দীতার ফলে এমনটি হয়েছে। পিএমএল (কাইয়ুম), পিএমএল (কাউনসিল), পিএমএল (কনভেনশন), জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম, জমিয়ত উলেমা-ই-পাকিস্তাতন এবং জামায়াতে ইসলামী একত্রে ৩৭টি আসন পায়।
প্রাদেশিক নির্বাচনের ফলাফল
প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান এ্যাসেম্বলীর ৩০০টি আসনের ২৮৮টি জিতে নেয়। পশ্চিম পাকিস্তানের অপর চারটি এ্যাসেম্বলীতে তারা কোন আসন পায়নি। পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশের এ্যাসেম্বলীতে পাকিস্তান পিপলস পার্টি ভালো করে কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে কোন আসনে জয় পায়নি। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি) এবং পিএমএল (কাইয়ুম) ভালো করে।
দল | পাঞ্জাব | সিন্ধু | উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ | বেলুচিস্তান | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান | মোট |
---|---|---|---|---|---|---|---|
আওয়ামী লীগ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০ | ২৮৮ | ২৮৮ |
পাকিস্তান পিপলস পার্টি | ১১৩ | ২৮ | ৩ | ০ | ১৪৪ | ০ | ১৪৪ |
পিএমএল (কাইয়ুম) | ৬ | ৫ | ১০ | ৩ | ২৪ | ০ | ২৪ |
পিএমএল (কনভেনশন) | ১৫ | ৪ | ১ | ০ | ২১ | ১ | ২ |
জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামী | ২ | ০ | ৪ | ২ | ৮ | ০ | ৮ |
মারকাজি জমিয়ত-উলেমা-পাকিস্তান | ৪ | ৭ | ০ | ০ | ১১ | ০ | ১১ |
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি) | ০ | ০ | ১৩ | ৮ | ২১ | ১ | ২২ |
জামায়াতে ইসলামী | ১ | ১ | ১ | ০ | ৩ | ১ | ৪ |
পিএমএল (কাউন্সিল) | ৬ | ০ | ২ | ০ | ৮ | ০ | ৮ |
পিডিপি | ৪ | ০ | ০ | ০ | ৪ | ২ | ৬ |
অন্যান্য দল | ১ | ১ | ০ | ২ | ৪ | ১ | ৫ |
স্বতন্ত্র | ২৮ | ১৪ | ৬ | ৫ | ৫৩ | ৭ | ৬০ |
মোট আসন | ১৮০ | ৬০ | ৪০ | ২০ | ৩০০ | ৩০০ | ৬০০ |
আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ উভয় ক্ষেত্রে নির্বাচন করে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসন প্রাপ্তির ছক চিত্ররূপঃ[2]
ধরন | মোট আসন | পূর্ব পাকিস্তানে মোট আসন | আওয়ামী লীগের প্রাপ্তি | ||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
সাধারণ আসন | সংরক্ষিত মহিলা আসন | মোট | সাধারণ আসন | সংরক্ষিত মহিলা আসন | মোট | ||
জাতীয় পরিষদ | ৩১৩ | ১৬২ | ৭ | ১৬৯ | ১৬০ | ৭ | ১৬৭ |
প্রাদেশিক পরিষদ | ৬২১ | ৩০০ | ১০ | ৩১০ | ২৮৮ | ১০ | ২৯৮ |
তথ্যসূত্র
- দিয়েতের নোহলেন, ফ্লোরিয়ান গ্রটজ ও ক্রিস্টফ হার্টম্যান (২০০১) Elections in Asia: A data handbook, Volume I, পৃষ্ঠা ৬৮৬ আইএসবিএন ০-১৯-৯২৪৯৫৮-X
- সিরাজুল, ইসলাম। "নির্বাচন"। bn.banglapedia.org। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০২০।
- (Source G.W.Choudhury (1974) The last days of United Pakistan p128-129)