মুশতাক আহমেদ (ক্রিকেটার)

জানুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে ১৬ বছর বয়সে মুশতাক আহমেদের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে।[1] মুলতান দলের সদস্যরূপে সুক্কুরের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট দখল করেন তিনি।[2] পরের মৌসুমে ঐ স্তরের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পান। সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে পাঞ্জাব মূখ্যমন্ত্রী একাদশের সদস্যরূপে এ সাফল্য পান তিনি।[3] এর অল্পকাল পরই ১৯৮৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৬.২১ গড়ে ১৯ উইকেটে নিয়ে প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হন।[4] এরফলে পাকিস্তান ফাইনালে উন্নীত হয় ঠিকই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে দলটি ৫ উইকেটের ব্যবধানে হেরে যায়।[5] পরের মৌসুমের শুরুতে মুশতাক তার প্রথম ১০-উইকেট পান। পেশাওয়ারের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ছয় ও দ্বিতীয় ইনিংসে আট উইকেট দখল করেন তিনি।[6] ঐ মৌসুমে তিনি তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ২২.৮৪ গড়ে ৫২ উইকেটে নেন।[7] পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলা অব্যাহত রাখেন। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ২৬ উইকেট নেন যা যে-কোন পাকিস্তানি বোলারের তুলনায় দ্বিগুণ।[8] চমকপ্রদ ক্রীড়াশৈলীর কারণে মার্চ, ১৯৮৯ সালে জাতীয় দলে খেলার জন্য আমন্ত্রিত হন।[1]

২৩ মার্চ, ১৯৮৯ তারিখে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে ২/৩৩ লাভ করেন। ঐ খেলায় তার দল ৩৩ রানে জয় তুলে নেয়।[9] স্বীয় স্থান বজায় রেখে ভারত, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজে খেলেন। জানুয়ারি, ১৯৯০ সালে অ্যাডিলেড ওভালে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে।[1] ঐ টেস্টে তিনি কেবলমাত্র মার্ক টেলরের উইকেট পেয়েছিলেন।[10]

টেস্টে অভিষেকের পর থেকেই ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ মেয়াদে বেশ কয়েক বছরের জন্য তাকে দলে টিকে থাকার লড়াই করতে হয়েছে। এ সময়ে তিনি কেবলমাত্র ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজে দশ বা ততোধিক উইকেটে লাভে সমর্থ হন। কিন্তু নভেম্বর, ১৯৯৫ থেকে মে, ১৯৯৮ পর্যন্ত সময়কালে অনুষ্ঠিত প্রত্যেক টেস্টে সিরিজেই কমপক্ষে দশ উইকেট পেয়েছিলেন। এছাড়াও দশবার পাঁচ উইকেট পেয়েছেন।[7] নভেম্বর, ১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২য় টেস্টে প্রথমবারের মতো এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।[11] ঐ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে এ সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটান। পরবর্তী সিরিজের একমাত্র টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৭/৫৬ লাভে করেন।[12]

কানাডার টরন্টোতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সাহারা ফ্রেন্ডশিপ কাপের পঞ্চম ওডিআইয়ে একমাত্র পাঁচ উইকেট পেয়েছেন। খেলায় তিনি ৫/৩৬ নিয়ে দলকে ৫২ রানের জয়সহ ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয় পায় তার দল।[13] ১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ১৬ উইকেটে পান। এরফলে সতীর্থ ওয়াসিম আকরামের পর যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন তিনি।[14] এছাড়াও তার দল প্রতিযোগিতার শিরোপা জয় করেছিল।

টেস্টের স্বর্ণালী সময় অতিক্রমণকালে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেন। এডি লরেন্স তার 'সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব (হান্ড্রেড গ্রেটস)' শীর্ষক গ্রন্থে মুশতাককে সমারসেটের অন্যতম সেরা বিদেশী চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়রূপে আখ্যায়িত করেন।[15] কাউন্টি দলটির পক্ষে ৬২টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৬.৩২ গড়ে ২৮৯ উইকেট দখল করেন।[15]

১৯৯৭ সালে পাঁচজন ক্রিকেটারের একজনরূপে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন। এ বিষয়ে উইজডেন মন্তব্য করে যে, 'আধুনিক ক্রিকেটে রিস্ট স্পিনারদের উজ্জীবিত করতে তিনি ভূয়সী প্রশংসা পাবার যোগ্য।'[16]

১৯৯০-এর দশকের শেষার্ধ্বে পাতানো খেলার সাথে জড়িত পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম সন্দেহভাজন হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার সেলিম পারভেজ অভিযোগ করেন যে, সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইচ্ছাকৃতভাবে হেরে যাবার বিনিময়ে সেলিম মালিকের সাথে £এক লক্ষ পাউন্ড-স্টার্লিং ভাগাভাগি করে নেন।[17] তদন্তের পর মুশতাককে £৩,৫০০ পাউন্ড জরিমানাসহ পাকিস্তানের অধিনায়কের পদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।[18] এ প্রসঙ্গে মহামান্য বিচারক মন্তব্য করেন যে, পর্যাপ্ত ক্ষেত্র থাকা স্বত্ত্বেও মুশতাক আহমেদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা সন্দেহজনক অবস্থায় রয়েছে।[17]

পাকিস্তান দল থেকে বিতাড়িত হবার পর ২০০২ সালে সারে দলের পক্ষে খেলেন। এর পূর্বেকার বছরে নর্থপ হলের পক্ষে লিভারপুল ও জেলা ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলেন।[1] কিন্তু সারে দলের পক্ষে আহামরি কিছু দেখাতে পারেননি। ৩৮.১২ গড়ে আট উইকেট পান তিনি।[19] পরের মৌসুমে সাসেক্সে যোগদান করেন। ঐ দলে থাকাবস্থায় পরবর্তী পাঁচ বছর একাধিক্রমে কাউন্টির শীর্ষ উইকেট সংগ্রাহক হন। এছাড়াও সাসেক্সের প্রথম কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি।[20]

কাউন্টিতে ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী অব্যাহত রাখার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য পাকিস্তান দলে ডাক পান। কিন্তু তা স্বল্পসময়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল। চূড়ান্তভাবে দল থেকে বাদ হবার পূর্বে দুই টেস্টে ও এক ওডিআই খেলার সুযোগ লাভে করেন মুশতাক।[1] সাসেক্স দলকে তিনি আরও দুইবার শিরোপার বিজয়ে প্রভূতঃ সহায়তা করেন। ২০০৮ সালের পর হাঁটুর ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্তি জোরপূর্বক অবসর নিতে বাধ্য করে তাকে।[21] ঐ ক্লাবে ৮৫ খেলায় অংশ নিয়ে ২৫.৩৪ গড়ে ৪৭৮ উইকেট লাভ করেন।[19]

২০০৮ সালের শেষদিকেইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড ইংল্যান্ড দলের স্পিন বোলিং কোচরূপে তাকে মনোনয়ন দেয়। পিটার মুরেজ পুনরায় প্রধান কোচের দায়িত্ব পেলে ২০১৪ সালে এ দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যহতি দেয়া হয়। ব্যাটিং কোচ গ্রাহাম গুচ ও ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হালসলের সাথে কাজ করেন। গ্রেম সোয়ানকে দলের প্রধান স্পিন বোলারে রূপান্তর করাই তার প্রধান সফলতা ছিল।[22]

২০১২ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সারে ক্লাবের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন।[23] ২০১৩ সালের আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসেরও বোলিং কোচ ছিলেন তিনি।[24]

২০১৪ সালে পাকিস্তানের নবনিযুক্ত কোচ ওয়াকার ইউনুসের অধীনে বোলিং পরামর্শক হিসেবে মুশতাকের নাম ঘোষণা করা হয়। মে, ২০১৬ সালে তার এ দায়িত্ব শেষ হবার কথা ছিল।[25][26] এপ্রিল, ২০১৬ সালে তাকে পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি'র প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।[27]

• মোহাম্মদ নওয়াজ
• ওয়াজাহাতুল্লাহ ওয়াস্তি
• উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার
• ১৯৯৮-৯৯ এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ
• আনুষ্ঠানিক কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ বিজয়ী দলের তালিকা
• পাকিস্তানি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের তালিকা

উইকিমিডিয়া কমন্সে মুশতাক আহমেদ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।

• ইএসপিএনক্রিকইনফোতে মুশতাক আহমেদ (ইংরেজি)

• ক্রিকেটআর্কাইভে মুশতাক আহমেদ (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)