মুহাম্মদ নাদির শাহ

মুহাম্মদ নাদির শাহ (পশতু: محمد نادر شاه, উর্দু: محمد نادر شاه – জন্মনাম মুহাম্মদ নাদির খান; ৯ এপ্রিল ১৮৮৩ – ৮ নভেম্বর ১৯৩৩) ছিলেন আফগানিস্তানের বাদশাহ। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ অক্টোবর থেকে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি শাসন করেছেন। এর পূর্বে তিনি যুদ্ধমন্ত্রী, ফ্রান্সে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ও আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর জেনারেল হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি ও তার পুত্র মুহাম্মদ জহির শাহকে কখনো কখনো মুশাইবান বলে সম্বোধন করা হয়।

মুহাম্মদ নাদির শাহ
محمد نادر شاه
আফগানিস্তানের বাদশাহ[1]
আফগানিস্তানের বাদশাহ
রাজত্ব১৬ অক্টোবর ১৯২৯ - ৮ নভেম্বর ১৯৩৩
পূর্বসূরিহাবিবউল্লাহ কালাকানি
উত্তরসূরিমুহাম্মদ জহির শাহ
জন্ম৯ এপ্রিল ১৮৮৩
দেরাদুন, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৮ নভেম্বর ১৯৩৩(1933-11-08) (বয়স ৫০)
কাবুল, আফগানিস্তান
দাম্পত্য সঙ্গীমাহ পারওয়ার বেগম
রাজবংশবারাকজাই
পিতামুহাম্মদ ইউসুফ খান
মাতাশারাফ সুলতানা হুকুমত বেগম
ধর্মইসলাম (সুন্নি)

পটভূমি

নাদির খান ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের দেরাদুনে জন্মগ্রহণ করেছেন। মুহাম্মদ ইউসুফ খান ছিলেন তার পিতা। তার মা শারাফ সুলতানা পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত ছিলেন। তার দাদা ছিলেন ইয়াহিয়া খান ও প্রপিতামহ ছিলেন সুলতান মুহাম্মদ খান তেলাই। সুলতান মুহাম্মদ খান দোস্ত মুহাম্মদ খানের ভাই ছিলেন।

ক্ষমতায় উত্থান

নাদির খান ভারতে বেড়ে উঠেছেন। তার দাদা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান যুক্তরাজ্যআবদুর রহমান খান কর্তৃক আফগানিস্তান ফিরে আসার অনুমতি পাওয়ার পর নাদির খান প্রথমবার আফগানিস্তান আসেন।[2] পরে তিনি আমানউল্লাহ খানের সময় জেনারেল হন। তিনি তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধের সময় আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যুদ্ধের পর নাদির খান যুদ্ধমন্ত্রী এবং ফ্রান্সে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হন।

কিছু পশতু উপজাতীয় ব্যক্তি এবং হাবিবউল্লাহ কালাকানির তাজিক বাহিনীর বিদ্রোহের পর আমানউল্লাহ খানের সাথে মতবিরোধের ফলে নাদির খান নির্বাসিত হন। হাবিবউল্লাহ কালাকানি আমানউল্লাহ খানের রাজত্ব উৎখাত করার পর নাদির খান আফগানিস্তান ফিরে আসেন এবং তার বাহিনী নিয়ে আফগানিস্তানের অধিকাংশের নিয়ন্ত্রণ নেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর নাদির খান কাবুল অধিকার করেন[3] কালাকানিকে গ্রেপ্তার করার পর ১ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তার ঘনিষ্ঠ মহলের কয়েকজনেরও মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল।

আফগানিস্তানের বাদশাহ

নাদির শাহ শাসক হওয়ার পর আমানউল্লাহ খানের সংস্কারের অধিকাংশ বিলুপ্ত করেছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীর পুনর্গঠনের কার্যক্রম চালু রাখেন। তবে এ সত্ত্বেও সেনাবাহিনী দুর্বল ছিল এবং গোত্রীয় ও ধর্মীয় নেতারা শক্ত অবস্থান লাভ করেছিলেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বাঞ্চলের শিনওয়ারি গোত্র ও কাবুল ও কাবুলের উত্তরে তাজিকদের উত্থান ঘটে। একই বছরে সোভিয়েত ইউনিয়ন উজবেক নেতা ইবরাহিম বেকের সন্ধানে আফগানিস্তানের সীমানা অতিক্রম করে। ইবরাহিম বেক আফগানিস্তানে তার ঘাঁটি থেকে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আফগান সেনাবাহিনী ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে তাকে সোভিয়েতদের দিকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় এবং ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের শেষ নাগাদ তাদের প্রতিরোধ শেষ হয়ে যায়।

নাদির খান দশ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। এর অধিকাংশ সদস্য তার পরিবার থেকে নেয়া হয়েছি। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে তিনি লয়া জিরগার অধিবেশন আহ্বান করেন। লয়া জিরগার ২৮৬ জন সদস্য তার ক্ষমতারোহণ মঞ্জুর করে। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নতুন সংবিধান জারি করে। এতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের উল্লেখ থাকলেও এর মাধ্যমে রাজকীয় মুষ্টিমেয় ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

ধর্মীয় নীতি বাস্তবায়নে সাংবিধানিক গুরুত্ব আরোপ করলেও নাদির খান আফগানিস্তানের আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে এর তীব্রতা আমানউল্লাহ খানের চেয়ে কম ছিল। তিনি সড়কে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করেন। তার শাসনামলে আফগানিস্তানের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন।[4] আমানউল্লাহ খানের যাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন তাদের সাথে তিনি বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপন করেন। বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তার মাধ্যমে তিনি ব্যাংকিং প্রথা ও দীর্ঘ মেয়াদি অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করেন। সেনাবাহিনীর উন্নয়নে তার প্রচেষ্টা খুব বেশি সফল না হলেও ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর সময় আফগান সামরিক বাহিনীর সদস্য ৪০,০০০ এ পৌছায়।

হত্যাকাণ্ড

১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ নভেম্বর নাদির খান একটি উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনের যান। এখানে আবদুল খালিক তাকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।[5] তাকে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার মৃত্যুদণ্ড হয়।[6] হাফিজউল্লাহ ইমাদির মতে, "সরকার আবদুল খালিক, তার পরিবার ও বন্ধুদের গ্রেপ্তার করে এবং এই সুযোগে বাদশাহ নাদিরকে হত্যার অভিযোগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হত্যা করে।"[7]

মুহাম্মদ নাদির শাহর সমাধি

বংশলতিকা

মুহাম্মদ নাদির শাহর পরিবার
16. Payinda Khan Muhammadzai, Sarfraz Khan
8. Sultan Muhammad Khan Telai, Governor of Kabul, Peshawar and Kohat
17. a Alikozai lady
4. Mohammad Yahya Khan, Governor of Kabul
9. a Popalzai lady
2. Mohammed Yusuf Khan, Governor of Herat
20. Dost Mohammad Khan
10. Muhammad Akbar Khan
21. Mirmon Khadija Popalzai
5. Hamdan Sultana Begum
11.
1. Mohammed Nadir Shah[8]
24. Timur Shah Durrani
12.Ayub Shah Durrani
25. a Popalzai lady
6. Ali Ahmad Mirza, Khan Bahadur
13.
3. Sharaf Sultana Hukumat Begum
7.

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Royal Ark
  2. Schinasi, May (৭ এপ্রিল ২০০৮)। "MOḤAMMAD NĀDER SHAH"Encyclopædia Iranica (Online সংস্করণ)। United States: Columbia University
  3. Balland, D.। "AFGHĀNISTĀN"Ehsan YarshaterEncyclopædia Iranica (Online সংস্করণ)। United States: Columbia University। সংগ্রহের তারিখ 2008 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. Kabul University web page: History History
  5. Dupree, Louis: "Afghanistan", page 474. Princeton University Press, 1973
  6. Runion, Meredith (অক্টোবর ২০০৭)। The History of Afghanistan। Greenwood। পৃষ্ঠা 93আইএসবিএন 978-0-313-33798-7।
  7. Emadi, Hafizullah (২০০১)। Politics of the Dispossessed: Superpowers and Developments in the Middle East। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 24। আইএসবিএন 0-2759-7365-4।
  8. Royal Ark

বহিঃসংযোগ

মুহাম্মদ নাদির শাহ
জন্ম: ১০ এপ্রিল ১৮৮০ মৃত্যু: ৮ নভেম্বর ১৯৩৩
রাজত্বকাল শিরোনাম
পূর্বসূরী
হাবিবউল্লাহ কালাকানি
আফগানিস্তানের বাদশাহ
১৯২৯–১৯৩৩
উত্তরসূরী
মুহাম্মদ জহির শাহ
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.