জ্যাক আইভারসন

জন ব্রায়ান জ্যাক আইভারসন (ইংরেজি: Jack Iverson; জন্ম: ২৭ জুলাই, ১৯১৫ - মৃত্যু: ২৩ অক্টোবর, ১৯৭৩) মেলবোর্নের সেন্ট কিল্ডায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ছিলেন।[1] অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ১৯৫০ থেকে ১৯৫১ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে পাঁচ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ লেগ ব্রেক গুগলি বোলার ছিলেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করার সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন জ্যাক আইভারসন

জ্যাক আইভারসন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজন ব্রায়ান আইভারসন
জন্ম(১৯১৫-০৭-২৭)২৭ জুলাই ১৯১৫
সেন্ট কিল্ডা, মেলবোর্ন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু২৩ অক্টোবর ১৯৭৩(1973-10-23) (বয়স ৫৮)
ব্রাইটন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেগব্রেক গুগলি
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩৪
রানের সংখ্যা ২৭৭
ব্যাটিং গড় ০.৭৫ ১৪.৫৭
১০০/৫০ ০/০ ০/০
সর্বোচ্চ রান ১* ৩১*
বল করেছে ১১০৮ ৮৮৭৮
উইকেট ২১ ১৫৭
বোলিং গড় ১৫.২৩ ১৯.২২
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/২৭ ৭/৭৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২/০ ১৩/০
উৎস: ক্রিকইনফোl, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

অনন্য সাধারণ বাঁকানো আঙ্গুলে বলকে গ্রিপ করে বেশ পরিচিতি লাভ করেন।[2][3][4] সংক্ষিপ্তকালের জন্য তার এ বোলিং কৌশল অস্ট্রেলিয়াসহ সফরকারী ইংরেজ দলের মাঝেও বেশ সাড়া ফেলে। ১৯৫০-৫১ মৌসুমে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের গড়া সিরিজের সবগুলো টেস্টেই তার অংশগ্রহণ ছিল। তবে, পিতার ইচ্ছানুসারে পৈত্রিক ব্যবসায় সময় দিতে জোরপূর্বক খেলা থেকে অবসর নিতে হয়। যদি তিনি সময় দিতে পারতেন তাহলে হয়তো বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ে রূপান্তরিত হতে পারতেন।[5]

প্রারম্ভিক জীবন

সেন্ট কিল্ডায় জন্মগ্রহণকারী জ্যাক আইভারসন জিলং কলেজে অধ্যয়ন করেন। এ কলেজে থাকাকালেই ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক খেলায় ইনসুইঙ্গারে লিন্ডসে হ্যাসেটকে আউট করার ঘটনাটি স্মরণীয় হয়ে আছে তার। পরবর্তীকালে হ্যাসেট ভিক্টোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া দলে অধিনায়কত্ব করে তাকেসহ দলকে পরিচালনা করেছিলেন।

স্নাতক ডিগ্রি সমাপনের পরবর্তী বারো বছর ক্রিকেটে অংশ নেননি তিনি ও পরবর্তী পনেরো বছর প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ ছিল না তার। ১৯৩৩ সালে মলিতে জ্যাকারুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ও টলারুকের এসিংটন লুইসের সম্পত্তির সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর ১৯৩৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্সে তালিকাভূক্ত হন। মধ্যপ্রাচ্যে নবম ডিভিশনে এন্টি-এয়ারক্রাফ্ট রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এরপর পাপুয়া নিউগিনিতে স্থানান্তরিত হন। সেখানে থাকাকালে সার্জেন্ট ইভারসন বলকে স্পিন করার আনঅর্থোডক্স পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটান। এ পদ্ধতিতে বৃদ্ধাঙ্গুলী ও মধ্যমায় বলকে গ্রিপ করে বোলিং করতেন তিনি। এরফলে অফ ব্রেক, লেগ ব্রেক ও গুগলিসহ বিভিন্ন ধরনের বোলিংয়ে সিদ্ধহস্তের অধিকারী হন আইভারসন। এ পর্যায়ে তিনি কেবলমাত্র নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর সহকর্মীদের সাথে খেলতেন।

যুদ্ধ শেষ হবার পর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান। বিনোদনের উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র গল্ফ ও টেনিসে জড়িত ছিলেন। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের কাছে অন্ধ ক্রিকেটারদের সহায়তা করতেন। ফলশ্রুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রাইটন ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন। এ সময়ে তার কাছে কোন ক্রিকেট সরঞ্জামাদি ছিল না। দ্রুততার সাথে তার খেলোয়াড়ী জীবনের উত্তরণ ঘটতে থাকে। ১৯৪৬ সালে শেষার্ধ্বে ব্রাইটনে তৃতীয় একাদশ, ১৯৪৮ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব ও এক বছর বাদে ভিক্টোরিয়া দলের সদস্য হন। ১৯৪৯-৫০ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বপ্রথম সকলের নজর আকর্ষণ করেন। ভিক্টোরিয়ার পক্ষে ১৬.১২ গড়ে ৪৬ উইকেট নেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

পরের শরৎ মৌসুমে বিল ব্রাউনের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। প্রত্যেক খেলাতেই সপ্রতিভ অংশগ্রহণ ছিল তার। গড়ে সাত রান দিয়ে ৭৫ উইকেট দখল করেন তিনি। পরবর্তী অস্ট্রেলীয় মৌসুমে ৩৫ বছর বয়সে এফ. আর. ব্রাউনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ টেস্ট দলের মুখোমুখি হন তিনি। তার অনবদ্য বোলিং ভঙ্গীমায় সফরকারী দল বিষ্ময়ে বিমোহিত হয়ে পড়ে। টেস্ট সিরিজে তিনি ১৫.৭৩ গড়ে ২১ উইকেট পান। ব্রিসবেনে সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেক হয় তার। প্রথম ইনিংসে তিনি বোলিংয়ে অগ্রসর হননি। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪/৪৩ পান। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ৬/৭৩ পান। তবে, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/২৭ লাভ করেন তিনি।

ফলশ্রুতিতে অস্ট্রেলিয়া দল ইনিংস ব্যবধানে জয় তুলে নেয়। অ্যাডিলেডের চতুর্থ টেস্টে বল আটকাতে গিয়ে পায়ের গোড়ালিতে আঘাত পান। এরফলে তার বোলিং ক্ষমতা অনেকাংশেই কমে যায়। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ দুই টেস্টে ৩/৬৮ ও ২/৮৪ পান। পরবর্তী দুই মৌসুমে মাত্র একটি করে খেলার সুযোগ লাভ করেন। এরপর তিনি খেলা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

পূর্ণাঙ্গ টেস্ট জীবনের বোলিং গড়
চার্লস ম্যারিয়ট (ইংল্যান্ড)
৮.৭২
ফ্রেডরিক মার্টিন (ইংল্যান্ড)
১০.০৭
জর্জ লোহম্যান (ইংল্যান্ড)
১০.৭৫
লরি ন্যাশ (অস্ট্রেলিয়া)
১২.৬০
জন ফেরিস (অস্ট্রেলিয়া/ইংল্যান্ড)
১২.৭০
টম হোরান (অস্ট্রেলিয়া)
১৩.০০
হ্যারি ডিন (ইংল্যান্ড)
১৩.৯০
আলবার্ট ট্রট (অস্ট্রেলিয়া/ইংল্যান্ড)
১৫.০০
মাইক প্রোক্টর (দক্ষিণ আফ্রিকা)
১৫.০২
জ্যাক আইভারসন (অস্ট্রেলিয়া)
১৫.২৩
টম কেন্ডল (অস্ট্রেলিয়া)
১৫.৩৫
অ্যালেক হারউড (অস্ট্রেলিয়া)
১৫.৪৫
বিলি বার্নস (ইংল্যান্ড)
১৫.৫৪
জন ট্রিম (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
১৬.১৬
বিলি বেটস (ইংল্যান্ড)
১৬.৪২

তথ্য: ক্রিকইনফো
যোগ্যতা: পূর্ণাঙ্গ টেস্ট জীবনে কমপক্ষে ১০ উইকেট।

খেলার ধরন

'বিগ জ্যাক' ও 'রং-গ্রিপ জ্যাক' ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। কেবলমাত্র ভিক্টোরিয়ার সতীর্থ ও অস্ট্রেলীয় দলনায়ক লিন্ডসে হ্যাসেট তার বোলিং সম্বন্ধে অবগত ছিলেন। এমনকি জাতীয় দলের প্রশিক্ষণ শিবিরেও তার বোলিং ভঙ্গীমা লুকিয়ে রাখতে বলেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে আইভারসনকে বোলিং করতে বারণ করেন। শেফিল্ড শিল্ডের খেলাগুলোয় নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে তার বোলিংয়ের কার্যকারীতা প্রকাশিত হয়। এরফলে নিউ সাউথ ওয়েলসের ব্যাটসম্যানেরা বেশ বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়। টেস্টগুলোয় বোলিংকালে নিউ সাউথ ওয়েলসের বোলার কিথ মিলারকে প্রথম স্লিপ থেকে দূরে সরিয়ে মিড অনে রাখেন। এরফলে তিনি আইভারসনের পিছনে অবস্থান করেন ও আইভারসনের বোলিং সম্পর্কে অবগত হতে পারেননি।[6]

সতীর্থ অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিনার ও জাতীয় দলের অধিনায়ক রিচি বেনো তার বোলিংয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেন।[7]

ব্যক্তিগত জীবন

পারিবারিক দায়বদ্ধতা ও আবাসন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনের ফলে ১৯৫১ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে দূরে সরে আসেন। তাস্বত্ত্বেও ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে তিনটি অনানুষ্ঠানিক টেস্টে কমনওয়েলথ দলের বিপক্ষে লড়েন। এরপর তিনি এবিসি রেডিও’র ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করেছেন।

পঞ্চাশ বছর বয়সের শুরুতে মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হন যার ফলে প্রায়শঃই মানসিক অবসাদজনিত রোগে ভুগতেন। অতঃপর ২৩ অক্টোবর, ১৯৭৩ তারিখে ৫৮ বছর বয়সে ভিক্টোরিয়ার ব্রাইটনে ৫৮ বছর বয়সে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন।[8]

তথ্যসূত্র

  1. Pierce, Peter। "Iverson, John Brian (1915–1973)"অস্ট্রেলিয়ান ডিকশনারি অফ বায়োগ্রাফি (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যানবেরা: অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদালয়। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৪
  2. Cashman; Franks; Maxwell; Sainsbury; Stoddart; Weaver; Webster (১৯৯৭)। The A-Z of Australian cricketers। Melbourne: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 147। আইএসবিএন 0-19-550604-9।
  3. "Players and Officials – Jack Iverson"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০২
  4. "Statsguru – JB Iverson – Tests – Innings by innings list"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০২
  5. pp47-52, Kay
  6. Pollard, Jack (১৯৬৯)। Cricket the Australian Way
  7. Benaud, Richie (২০০৫)। My Spin on Cricket। London: Hodder & Staughton। পৃষ্ঠা 140.। আইএসবিএন 0-340-83393-9।
  8. Haigh, Gideon (১৯৯৯)। Mystery Spinner: The Story of Jack Iverson। Melbourne: Text Pub। আইএসবিএন 1-876485-20-5।

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.