সম্রাট

সম্রাট (ইংরেজি: Emperor) সাধারণত কোন একটি স্বাধীন দেশের শাসক কিংবা সাম্রাজ্যের অধীন কোন রাজ্যের পুংলিঙ্গধারী রাজা বা শাসনকর্তা। প্রাচীন ফরাসী এম্পারিয়র শব্দটি ল্যাটিন ইম্পারেটর শব্দ থেকে আহুত।[1] সম্রাটের স্ত্রীলিঙ্গ হিসেবে মূলত সম্রাজ্ঞী রয়েছেন। অনেক সময় সম্রাটের অনুপস্থিতিতে সম্রাজ্ঞী নিজস্ব ক্ষমতাবলে শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকেন। সাধারণতঃএকজন সম্রাটের অবস্থান রাজার তুলনায় অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন এবং শীর্ষস্থানীয়।

রুশ সম্রাজ্ঞী মহারাণী ক্যাথরিন

বর্তমান বিশ্বে কেবলমাত্র জাপানেই সম্রাট পদবি রয়েছে ও দেশ শাসন করছেন।

শাসনকর্তার তুলনায় পার্থক্য

রাজা এবং সম্রাট - উভয়েই নির্দিষ্ট কোন এলাকা বা রাজ্যের শাসনকর্তা হিসেবে ক্ষমতাসীন হন। কিন্তু ইউরোপীয় মানদণ্ডে সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞী উচ্চপদস্থ ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হন। কিন্তু সাম্রাজ্যের অধীনস্থ রাজ্যের প্রধান হিসেবে সবসময় সম্রাট পদবি ব্যবহার করা হয় না। ব্রিটিশশাসিত অবিভক্ত ভারতে সম্রাট পদবির ব্যবহার হয়নি কিংবা যতটুকুই বা ব্যবহৃত হয়েছে তা সীমিত পর্যায় ও মানদণ্ডে অনুসরণপূর্বক ব্যবহার করা হয়েছে। সম্রাটগণ রাজাদেরকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে ও কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাভার অর্পণ করেছেন। বর্তমানে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে সম্রাট সরকার প্রধানের কর্মপরিধি ও সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

ইউরোপের বাইরে সম্রাট পদবিধারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার লক্ষ্যে মনোনয়ন দেয়া হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে উভয় শাসকই নিজস্ব ভাষায় তাদের ইউরোপীয় সঙ্গীদের কাছে সমান মর্যাদাসম্পন্ন। কয়েক শতক ধরে চলে আসা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাদের অংশগ্রহণকে আধুনিক যুগে তৎকালীন প্রাধান্য বিস্তারকারী শাসক ও সম্রাট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কিছু সাম্রাজ্য বিশেষ করে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য এবং রুশ সাম্রাজ্যে রোমান শাসক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সম্রাট মনোনীত করা হয়েছিল। এ পদবি প্রদানের ফলে ঐ সাম্রাজ্যের সাথে সংযোগ সাধনের চেষ্টা করা হয় যাতে রোমানদের চিন্তাধারার প্রসার ও বিস্তৃত করার প্রয়াস চালানো হয়। একই ধাঁচে অনেক প্রজাতন্ত্রের আইনসভার নামকরণও রোমান সিনেটের অনুসরণে সৃষ্টি হয়েছে।

ইতিহাসবেত্তাগণ সম্রাট এবং সাম্রাজ্যের আনুমানিক তারিখ, সালের ব্যবহার স্বাধীনভাবে ঘটিয়েছেন তাদের বিষয়বস্তুতে। তাতে সুদূর অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত রোমান এবং ইউরোপীয়ানদের সুবিশাল সাম্রাজ্য ও তাদের শাসকদের কথকতা তুলে ধরেছেন তারা। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত অধীনস্থ রাষ্ট্রে মনোনীত শাসকদের তুলনায় সাম্রাজ্যের অধিকর্তাকেই তুলে ধরা হয়েছে বেশি।

প্রাচীন ভারত

প্রাচীন ভারতবর্ষের নৃপতিগণ সম্রাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করতেন। তাদের স্ত্রীগণের পদবি ছিল সম্রাজ্ঞী। ঋগ্বেদে সম্রাট বরুণের কথা উল্লেখ আছে। প্রচলিত আছে যে, বৈদিক যুগের পরবর্তী সময়ে হিন্দু রাজা-মহারাজাগণ বৈদিক রাজসূয় যজ্ঞাদি সমাপান্তে সম্রাট নামে অভিহিত হতেন। সেজন্যে তাদেরকে ধর্মীয় রীতি-নীতি পালনের জন্য অন্য রাজা এবং রাজপুত্রদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হতো। সম্রাটের সমার্থক সার্বভৌম শব্দের প্রচলন রয়েছে।

হিন্দু পৌরাণিক উপাখ্যান অনুযায়ী ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক শাসক সম্রাট পদবি ধারণ করেছিলেন। অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণ নির্ভুলভাবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যকে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সম্রাট হিসেবে উল্লেখ করেছেন; কেননা তিনি বিরাট ও বিস্তৃত সাম্রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন। মৌর্য্য সম্রাট মহামতি অশোকও বিস্তৃত সাম্রাজ্য পরিচালনায় অংশ নিয়ে সম্রাট অশোক নামে সর্বসমক্ষে পরিচিত হয়ে আছেন স্ব-মহিমায়।

১৫৫৬ সালে সম্রাট আকবর হিমুর হেমচন্দ্র বিক্রমাদিত্য বাহিনীকে আগ্রা ও দিল্লীতে পরাভূত করেন। ভাগ্যলক্ষ্মীর সহায়তা নিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে ২২টি যুদ্ধে জয়ী হয়ে পুরো উত্তর ভারত বিশেষ করে পাঞ্জাব থেকে বাংলা পর্যন্ত শাসনকার্য্য পরিচালনা করেন। এরফলে তিনি সম্রাট পদবিতে পরিচিত হন।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.