ভারতের চলচ্চিত্র

ভারতের চলচ্চিত্র শিল্প টিকিট বিক্রির সংখ্যা এবং প্রতি বছর মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীতে অন্যতম বৃহৎ। কেবল ২০০৩ সালেই এদেশে ৮৭৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য এবং ১১৭৭টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে।[1]

ভারতে চলচ্চিত্রে প্রবর্তন

আঞ্চলিক চলচ্চিত্র শিল্প

চাকমা চলচ্চিত্র শিল্প ( চাকউড )

বিস্তারিত: চাকমা চলচ্চিত্র ( চাকউড )

চাকমা চলচ্চিত্র শিল্প বলতে মূলত চাকউড-কে বোঝায়। চাকমা চলচ্চিত্র শিল্প মূলত বাংলাদেশভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যের একটি ছোট শিল্প।

বাংলা চলচ্চিত্র শিল্প

বিস্তারিত: পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র (টলিউড)

দেনা পাওনা, ১৯৩১ – দ্বিতীয় বাংলা সবাক চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

বাংলা চলচ্চিত্র শিল্প বলতে মূলত টলিউড-কে বোঝায়। আবার টলিউড বলতে কলকাতার টালিগঞ্জ-কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চলচ্চিত্র শিল্পকেন্দ্র কে বোঝায়। এই চলচ্চিত্র শিল্পকেন্দ্র ভারতের মধ্যে সমালোচকদের দ্বারা বহুল প্রশংসিত চলচ্চিত্রগুলির জন্ম দেয়। পাশাপাশি সমান্তরাল ধারার চলচ্চিত্র তৈরিতেও এই টলিউড বিশেষ উল্লেখ-এর দাবি রাখে। এই টলিউডের উল্লেখযোগ্য চিত্রপরিচালকদের মধ্যে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, তপন সিনহা, বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত প্রমুখ অন্যতম।

হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্প ( বলিউড )

বলিউড (बॉलीवूड) ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থিত হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রের পীঠস্থান। বলিউড নামটি হিন্দি যা হলিউডের সাথে নামের মিল রেখে পূর্বতন বোম্বে শহরের নামে বলিউড হয়।

বলিউড শব্দটা হলিউড থেকে ধার করা। সে সময় মুম্বাইয়ের নাম ছিল বোম্বে। তাই বোম্বের প্রথম অংশ আর হলিউডের শেষ অংশ নিয়ে করা হয় বলিউড।[2]

১৯১৩ সালে প্রযোজক ও পরিচালক দাদাসাহেব ফালকের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে বলিউড। সে বছর ৩ মে তার পরিচালিত প্রথম ভারতীয় ছবি রাজা হরিশচন্দ্র মুক্তি পায় করোনেশন সিনেমায়। ছবিটি ছিল নির্বাক।[3] ১৯৩১ সালে আরদেশির ইরানির প্রযোজনায় নির্মিত হয় প্রথম সবাক হিন্দি ছবি আলম আরা।[4]

অসমীয়া চলচ্চিত্র

প্রথম অসমীয়া সিনেমা – জোয়মতী ১৯৩৫ সালে নির্মিত

অসমীয়া চলচ্চিত্র বা অহমীয়া চলচ্চিত্র বলতে সাধারণত অসমীয়া ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রকে বুঝায়। কিন্তু কখনো কখনো আবার অসমীয়া চলচ্চিত্র বলতে অসম রাজ্যে নির্মিত অন্য ভাষার চলচ্চিত্র যেমন কার্বি ভাষা ও বডো ভাষার চলচ্চিত্রকেও বুঝায়। অর্থাৎ অসমীয়া চলচ্চিত্র বলতে অসম রাজ্যের চলচ্চিত্রও বুঝায়।

অসমের প্রথম চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা ১৯৩৫ সালে যেটির নাম ছিল জয়মতী[5]জয়মতী ছবিটির মাধ্যমেই অসমের চলচ্চিত্র জগৎ যাত্রা শুরু করে[6]। সেইথেকে অনেক উত্থান-পতনের পর অহমীয়া চলচ্চিত্র আজকের রূপধারণ করেছে। বর্তমানে এখানে প্রচুর পরিমাণে সমান্তরাল ধারার ছবির নির্মাণ হয়। ড. ভবেন্দ্র নাথ শইকীয়া, জাহ্নু বড়ুয়াদের মত পরিচালকরা সমান্তরাল ধারার ছবি নির্মাণে সিদ্ধহস্ত[7]
অসমীয়া চলচ্চিত্রের ইতিহাস পুরনো এবং রাষ্ট্রীয় স্তরের অনেকগুলি পুরস্কার পেলেও আন্তর্রাষ্ট্রীয় স্তরে অসমীয়া চলচ্চিত্র কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। বর্তমানে অসমীয়া চলচ্চিত্র অনেক সমস্যায় জর্জরিত, এর প্রধান কারণ হিন্দি ছবির প্রভাব[8]

কান্নড় চলচ্চিত্র শিল্প

কর্ণাটকের চলচ্চিত্র ভারতীয় রাজ্য কর্ণাটকের কন্নড়ভাষী চলচ্চিত্র শিল্প। এই শিল্প সাধারণভাবে স্যান্ডেলউড নামে পরিচিত। কন্নড় ছাড়াও টুলু ও কোঙ্কনিতে কিছু কিছু চলচ্চিত্র এই রাজ্যে নির্মিত হয়।

মালায়ালাম চলচ্চিত্র শিল্প

কেরলের চলচ্চিত্র (বা মালয়ালম চলচ্চিত্র) বলতে বোঝায় ভারতের কেরল রাজ্যে নির্মিত মালয়ালমভাষী চলচ্চিত্র। শিল্পগুণের বিচারে কেরলের চলচ্চিত্র ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী। সাধারণত মালয়ালম চলচ্চিত্রে সামাজিক ও পরিচিত ইস্যুগুলি প্রতিফলিত হয়। এই চলচ্চিত্র বলিউডের তুলনায় অনেক বেশি বাস্তববোধসম্পন্ন। ভারতে প্রযোজিত প্রথম থ্রিডি চলচ্চিত্র, মাই ডিয়ার কুট্টিচাতান মালয়ালম ভাষায় নির্মিত হয়। এই ভাষায় নির্মিত প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র হল তাচোলি অম্বু। এই সকল চলচ্চিত্র নির্মিত হয় নবোদয় স্টুডিওতে, যেটি মালয়ামল চলচ্চিত্র জগতে ঐতিহ্যমণ্ডিত এক স্থানের অধিকারী। মালয়ালম চলচ্চিত্র কেরলের অধিবাসীদের বিনোদনের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় মাধ্যম।

তামিল চলচ্চিত্র শিল্প

তামিল চলচ্চিত্র (বা তামিলনাড়ুর চলচ্চিত্র, তামিল চলচ্চিত্র শিল্প বা চেন্নাই চলচ্চিত্র শিল্প নামেও পরিচিত) দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর চেন্নাই-ভিত্তিক তামিলভাষী চলচ্চিত্র নির্মাণশিল্প। এই শিল্পের মূল কেন্দ্র চেন্নাইয়ের কোডামবক্কম অঞ্চল। এই কারণে সাধারণভাবে এই চলচ্চিত্র শিল্পকে কলিউড নামে অভিহিত করা হয় (তামিল: கோலிவுட் kōlivūṭ), যা কোডামবক্কমহলিউড শব্দদুটির মিশ্রণ।

১৯১৬ সাল থেকে চেন্নাইয়ে নির্বাক চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৩১ সালে কালিদাস চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে শুরু হয় তামিল সবাক চলচ্চিত্রের যাত্রা। ১৯৩০-এর দশকের শেষদিকে মাদ্রাজের প্রাদেশিক আইনসভা বিনোদন কর আইন ১৯৩৯ পাস করে। ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পে তামিলনাড়ুর সিনেমার বিশেষ অবদান রয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে তামিল ছাড়াও অন্যান্য চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় চেন্নাই। এগুলির মধ্যে শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্রও অন্যতম। আবার তামিলভাষী চলচ্চিত্র নির্মিত হতে থাকে অন্য দেশেও।

আজ তামিল চলচ্চিত্র শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মরিশাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও অন্যান্য তামিল জাতি অধ্যুষিত পৃথিবীর নানা অংশে প্রদর্শিত হয়ে থাকে।

তেলুগু চলচ্চিত্র শিল্প

তেলুগু চলচ্চিত্র বা অন্ধ্রপ্রদেশের চলচ্চিত্র (তেলুগু: తెలుగు సినీపరిశ్రమ) ভারতের তেলুগু চলচ্চিত্র শিল্প।

বাৎসরিক চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা অনুযায়ী এই চলচ্চিত্র শিল্প পৃথিবীতে বৃহত্তম[9] এবং পরিকাঠামোর দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম।[10] ভারতে সর্বাধিক সংখ্যক সিনেমাহল অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যেই অবস্থিত। হায়দ্রাবাদ শহরের আইম্যাক্স একাধিক বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী।[11]

মারাঠি চলচ্চিত্র শিল্প

মারাঠি চলচ্চিত্র ( মারাঠি: मराठी चित्रपट, মরাঠি চিত্রপট) ভারতের মারাঠিভাষী চলচ্চিত্র শিল্প। এটি দেশের অন্যতম প্রাচীন স্থানীয় চলচ্চিত্র শিল্প। মারাঠি ভাষায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ছিল অযোধ্যেচা রাজা[12] প্রভাত ফিল্মস প্রযোজিত এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৩২ সালে; অর্থাৎ, প্রথম হিন্দি সবাক চলচ্চিত্র "আলম আরা" মুক্তি পাবার ঠিক একবছর পর। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মারাঠি চলচ্চিত্রের সমৃদ্ধি ঘটেছে। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের রাজধানী মুম্বাই শহরে এই শিল্পের মূল কেন্দ্র অবস্থিত।

বিভিন্ন ভাষায় চলচ্চিত্রের সংখ্যা

তথ্যছক: ভাষা অনুসারে বর্গীকরণ
কেন্দ্রীয় ফিল্ম প্রমাণন বোর্ড দ্বারা ২০১২সালের ভারতীয় চলচ্চিত্রের ভাষা অনুসারে বর্গীকরণ।[13]
ভাষাচলচ্চিত্রের সংখ্যা
তামিল ২৬২
তেলুগু ২৫৬
হিন্দী ২২১
মালয়ালম ১৮৫
কন্নড় ১২৮
মারাঠি ১২৩
বাংলা ১২৩
ভোজপুরী ৮৭
গুজরাটি ৭২
উড়িয়া ৩০
পাঞ্জাবী ২৬
ছত্তিশগঢ়ী ২০
অসমীয়া ১১
ইংরেজি ১০
রাজস্থানী
হরিয়াণী
ব্রজভাষা[14]
কোঙ্কনী
তুলু
শোরুডুপেন
অন্যান্য
মোট ১৫৮৫


চলচ্চিত্র শিক্ষা কেন্দ্র

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Central Board of Film Certification of India"। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০০৮
  2. Rajghatta, Chidanand (৬ জুলাই ২০০৮)। "Bollywood in Hollywood"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২০
  3. Gulzar; Nihalani, Govind; Chatterji, Saibal (২০০৩)। Encyclopaedia of Hindi Cinema। Encyclopaedia Britannica (India) Pvt Ltd.। পৃষ্ঠা 136–137। আইএসবিএন 81-7991-066-0।
  4. "Talking Images, 75 Years of Cinema"। Tribuneindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-০৯
  5. Joymoti (1935), IMDB.com
  6. "History of Assamese Cinema"। itsmynortheast.com। ১৭ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৩০, ২০১৩
  7. Assam General Knowledge। Bright Publications। পৃষ্ঠা 109–। আইএসবিএন 978-81-7199-451-9। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১২
  8. "Lakshmi B. Ghosh, "A rare peep into world of Assamese cinema", the [http://www.sproutseo.com/ seo services] Hindu, 2006"। ১০ জানুয়ারি ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৬ |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  9. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৬
  10. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৬
  11. "Telugu film industry, Ind: msg#00117"। ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৬
  12. "Films of Prabhat Film Company"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১২
  13. "Indian Feature Films certified during the year 2012"। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪
  14. cbfcindia.gov.in/html/uniquepage.aspx?lang=BRIJBASI&va=&Type=search

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.