ক্যামেরুন জাতীয় ফুটবল দল

ক্যামেরুন জাতীয় ফুটবল দল (ফরাসি: Équipe nationale du camerounaise de football, ইংরেজি: Cameroon national football team) হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্যামেরুনের প্রতিনিধিত্বকারী পুরুষদের জাতীয় দল, যার সকল কার্যক্রম ক্যামেরুনের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্যামেরুনীয় ফুটবল ফেডারেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই দলটি ১৯৬২ সাল হতে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার এবং ১৯৬৩ সাল হতে তাদের আঞ্চলিক সংস্থা আফ্রিকান ফুটবল কনফেডারেশনের সদস্য হিসেবে রয়েছে। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, ক্যামেরুন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণ করেছে; বেলজীয় কঙ্গোতে অনুষ্ঠিত উক্ত ম্যাচে ফরাসি ক্যামেরুন হিসেবে ক্যামেরুন বেলজীয় কঙ্গোর কাছে ৩–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।

ক্যামেরুন
দলের লোগো
ডাকনামলে লিওঁস ইন্দোম্পতাবলেস
(অদম্য সিংহ)
অ্যাসোসিয়েশনক্যামেরুনীয় ফুটবল ফেডারেশন
কনফেডারেশনক্যাফ (আফ্রিকা)
প্রধান কোচতনি কোন্সেইকাও
অধিনায়কএরিক মাক্সিম চুপো-মটিং
সর্বাধিক ম্যাচরিগোবার্ট সং (১৩৭)
শীর্ষ গোলদাতাস্যামুয়েল ইতো (৫৬)[1]
মাঠআহমাদু আহিজো স্টেডিয়াম
ফিফা কোডCMR
ওয়েবসাইটfecafoot-officiel.com
প্রথম জার্সি
দ্বিতীয় জার্সি
ফিফা র‌্যাঙ্কিং
বর্তমান ৩৭ বৃদ্ধি ১ (৩১ মার্চ ২০২২)[2]
সর্বোচ্চ১১ (নভেম্বর ২০০৬ – জানুয়ারি ২০০৭, নভেম্বর – ডিসেম্বর ২০০৯)
সর্বনিম্ন৭৯ (ফেব্রুয়ারি – মার্চ ২০১৩)
এলো র‌্যাঙ্কিং
বর্তমান ৫৬ বৃদ্ধি ১৬ (৩০ এপ্রিল ২০২২)[3]
সর্বোচ্চ১২ (জুন ২০০৩)
সর্বনিম্ন৭৬ (এপ্রিল ১৯৯৫)
প্রথম আন্তর্জাতিক খেলা
 বেলজীয় কঙ্গো ৩–২ ফরাসি ক্যামেরুন
(বেলজীয় কঙ্গো; সেপ্টেম্বর ১৯৫৬)
বৃহত্তম জয়
 ক্যামেরুন ৯–০ চাদ 
(কিনিশাসা, কঙ্গো কিনশাসা; ৭ এপ্রিল ১৯৬৫)
বৃহত্তম পরাজয়
 দক্ষিণ কোরিয়া ৫–০ ক্যামেরুন 
(সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া; ৪ অক্টোবর ১৯৮৪)
 নরওয়ে ৬–১ ক্যামেরুন 
(অসলো, নরওয়ে; ৩১ অক্টোবর ১৯৯০)
 রাশিয়া ৬–১ ক্যামেরুন 
(ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; ২৮ জুন ১৯৯৪)
 কোস্টা রিকা ৫–০ ক্যামেরুন 
(সান হোসে, কোস্টা রিকা; ৯ মার্চ ১৯৯৭)
বিশ্বকাপ
অংশগ্রহণ৭ (১৯৮২-এ প্রথম)
সেরা সাফল্যকোয়ার্টার-ফাইনাল (১৯৯০
আফ্রিকা কাপ অব নেশন্স
অংশগ্রহণ১৯ (১৯৭০-এ প্রথম)
সেরা সাফল্যচ্যাম্পিয়ন (১৯৮৪, ১৯৮৮ আফ্রিকান কাপ অফ ১৯৮৮, ২০০০, ২০০২, ২০১৭)
আফ্রিকান নেশন্স চ্যাম্পিয়নশিপ
অংশগ্রহণ১ (২০১৬-এ প্রথম)
সেরা সাফল্যকোয়ার্টার-ফাইনাল (২০১৬)
কনফেডারেশন্স কাপ
অংশগ্রহণ৩ (২০০১-এ প্রথম)
সেরা সাফল্যরানার-আপ (২০০৩)

৪০,০০০ ধারণক্ষমতাবিশিষ্ট আহমাদু আহিজো স্টেডিয়ামে অদম্য সিংহ নামে পরিচিত এই দলটি তাদের সকল হোম ম্যাচ আয়োজন করে থাকে। এই দলের প্রধান কার্যালয় ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াওনডেতে অবস্থিত। বর্তমানে এই দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন তনি কোন্সেইকাও এবং অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন বায়ার্ন মিউনিখের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় এরিক মাক্সিম চুপো-মটিং

ক্যামেরুন এপর্যন্ত ৭ বার ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে সেরা সাফল্য হচ্ছে ১৯৯০ ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছানো, যেখানে তারা ইংল্যান্ডের কাছে অতিরিক্ত সময়ে ৩–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। অন্যদিকে, আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্সে ক্যামেরুন অন্যতম সফল দল, যেখানে তারা ৫টি (১৯৮৪, ১৯৮৮ আফ্রিকান কাপ অফ ১৯৮৮, ২০০০, ২০০২, ২০১৭) শিরোপা জয়লাভ করেছে। এছাড়াও, ক্যামেরুন ২০০৩ ফিফা কনফেডারেশন্স কাপে রানার-আপ হয়েছে, যেখানে তারা ফ্রান্সের কাছে অতিরিক্ত সময়ে ১–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।

রিগোবার্ট সং, নিতাপ জেরেমি, স্যামুয়েল ইতো, ভিনসেন্ট আবুবকর এবং পাত্রিক এম'বোমার মতো খেলোয়াড়গণ ক্যামেরুনের জার্সি গায়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন।

আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্স

১৯৬০ সালে জিবুতি দলের বিপক্ষে ক্যামেরুন সর্বপ্রথম খেলতে নামে। খেলায় ক্যামেরুন ৯–২ গোলের বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়। ১৯৭০ সালের আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্স প্রতিযোগিতায় সর্বপ্রথম অংশগ্রহণ করে। কিন্তু প্রথম পর্বেই দলটিকে ফিরে আসতে হয়। দুই বছর পর ১৯৭২ সালে আফ্রিকান নেশন্স কাপে স্বাগতিকের মর্যাদা লাভ করে দলটি। খেলায় অদম্য সিংহ দল তৃতীয় স্থান লাভ করে। এরপর পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে দলটি এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি। ১৯৮৪ সালের নেশন্স কাপে অংশ নিয়ে গ্রুপ-পর্বে দ্বিতীয় হয় ও পেনাল্টি গোলে আলজেরিয়াকে সেমি-ফাইনালে পরাজিত করে ফাইনালে উঠে। চূড়ান্ত খেলায় তারা ৩–১ গোলের ব্যবধানে নাইজেরিয়াকে পরাজিত করার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো শিরোপা লাভ করে।

ফিফা বিশ্বকাপ

১৯৮২ সালের ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনে নিজেদের অস্তিত্ব তুলে ধরে ক্যামেরুন। স্পেনে অনুষ্ঠিত ঐ প্রতিযোগিতায় ১৬ দল থেকে ২৪ দলে উন্নীত করা হয়। আলজেরিয়ার পাশাপাশি তারাও আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করে। গ্রুপ পর্বে ইতালি (১–১), পোল্যান্ড (০–০) ও পেরুর (০–০) সাথে ড্র করে দলটি। তা স্বত্ত্বেও দ্বিতীয় রাউন্ডে উন্নীত হতে পারেনি।

বাছাই পর্বে তিউনিসিয়াকে পরাজিত করে ও নাইজেরিয়াকে পাশ কাটিয়ে ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ক্যামেরুন। বি গ্রুপে অবস্থান করে উদ্বোধনী খেলায় ফ্রঁসোয়া ওমাম-বিয়িকের গোলে পূর্বতন চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ১–০ ও রোমানিয়াকে ২–১ ব্যবধানে পরাজিত করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন দলের কাছে ৪-০ ব্যবধানে হেরে যায়। এরফলে গোল পার্থক্যে দলটি শীর্ষস্থান অর্জন করে। দ্বিতীয় পর্বে অতিরিক্ত সময়ে ৩৮ বছর বয়সী রজার মিলার দুই গোলে কলম্বিয়াকে হারায় তারা। কোয়ার্টার ফাইনালে গ্যারি লিনেকারের পেনাল্টিতে ইংল্যান্ডের কাছে ৩–২ গোলে পরাজিত হয়। রুশ ম্যানেজার ও সাবেক খেলোয়াড় ভালেরি নেপোমনিয়াচি দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় আফ্রিকা মহাদেশ থেকে নাইজেরিয়ামরক্কোর পাশাপাশি ক্যামেরুনও প্রতিযোগিতার মূল পর্বে উন্নীত হয়। বি গ্রুপে তারা সুইডেনের সাথে ২–২ ড্র এবং ব্রাজিলরাশিয়ার কাছে যথাক্রমে ৩–০ ও ৬–১ ব্যবধানে পরাজিত হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয়। রাশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ-পর্বের শেষ খেলায় ৪২ বছর বয়সী রজার মিলা সর্বাপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান ও দলের একমাত্র গোলটি করেন।

১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলে দল সংখ্যা ২৪ থেকে ৩২-এ উপনীত হয়। ক্যামেরুন পাঁচটি আফ্রিকান দেশের অন্যতম ছিল। গ্রুপ-পর্বে ৯০ মিনিটের পূর্ব পর্যন্ত ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও অস্ট্রিয়ার সাথে ১–১ ও দুই গোল বাতিল হওয়ায় চিলির সাথে ১–১ ড্র হয়। এছাড়া ইতালির সাথে ৩–০ ব্যবধানে পরাভূত হয়। প্রতিযোগিতায় যে-কোন দলের চেয়ে ক্যামেরুন খেলোয়াড়দেরকে মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয়। প্রতি খেলায় গড়ে সর্বোচ্চ কার্ড পায়। প্রতি খেলায় গড়ে দলটির প্রতি খেলোয়াড় চারটি কার্ড পায়।[4]

র‌্যাঙ্কিং

ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে, ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে ক্যামেরুন তাদের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সর্বোচ্চ অবস্থান (১১তম) অর্জন করে এবং ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে তারা ৭৯তম স্থান অধিকার করে, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে, বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিংয়ে ক্যামেরুনের সর্বোচ্চ অবস্থান হচ্ছে ১২তম (যা তারা ২০০৩ সালে অর্জন করেছিল) এবং সর্বনিম্ন অবস্থান হচ্ছে ৭৬। নিম্নে বর্তমানে ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং এবং বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিংয়ে অবস্থান উল্লেখ করা হলো:

প্রতিযোগিতামূলক তথ্য

ফিফা বিশ্বকাপ

ফিফা বিশ্বকাপবাছাইপর্ব
সালপর্বঅবস্থানম্যাচজয়ড্রহারস্বগোবিগোম্যাচজয়ড্রহারস্বগোবিগো
উরুগুয়ে ১৯৩০অংশগ্রহণ করেনিঅংশগ্রহণ করেনি
ইতালি ১৯৩৪
ফ্রান্স ১৯৩৮
ব্রাজিল ১৯৫০
সুইজারল্যান্ড ১৯৫৪
সুইডেন ১৯৫৮
চিলি ১৯৬২
ইংল্যান্ড ১৯৬৬প্রত্যাহারপ্রত্যাহার
মেক্সিকো ১৯৭০উত্তীর্ণ হয়নি
পশ্চিম জার্মানি ১৯৭৪
আর্জেন্টিনা ১৯৭৮
স্পেন ১৯৮২গ্রুপ পর্ব১৭তম১৬
মেক্সিকো ১৯৮৬উত্তীর্ণ হয়নি
ইতালি ১৯৯০কোয়ার্টার-ফাইনাল৭ম১২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪গ্রুপ পর্ব২২তম১১১৪
ফ্রান্স ১৯৯৮গ্রুপ পর্ব২৫তম১০
দক্ষিণ কোরিয়া জাপান ২০০২গ্রুপ পর্ব২০তম১০২০
জার্মানি ২০০৬উত্তীর্ণ হয়নি১০১৮১০
দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০গ্রুপ পর্ব৩১তম১২২৩
ব্রাজিল ২০১৪গ্রুপ পর্ব৩২তম১২
রাশিয়া ২০১৮উত্তীর্ণ হয়নি১০
কাতার ২০২২অনির্ধারিতঅনির্ধারিত
মোটকোয়ার্টার-ফাইনাল৭/২১২৩১২১৮৪৩৮৭৫১২৩১৩১৪৩৬৫

অর্জন

শিরোপা

  • আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্স
  • চ্যাম্পিয়ন (৫): ১৯৮৪, ১৯৮৮, ২০০০, ২০০২, ২০১৭
  • রানার-আপ (১): ২০০৩
  • চ্যাম্পিয়ন (১): ২০০০

তথ্যসূত্র

  1. "9 Samuel ETOO"FIFA.com। ১৮ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৬
  2. "ফিফা/কোকা-কোলা বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং"ফিফা। ৩১ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০২২
  3. গত এক বছরে এলো রেটিং পরিবর্তন "বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিং"eloratings.net। ৩০ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০২২
  4. "Top Cards – France 1998"। fifa.com। জুন ১৫, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২১, ২০০৯

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Football in Cameroon

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.