বেলজিয়াম জাতীয় ফুটবল দল

বেলজিয়াম জাতীয় ফুটবল দল (ফরাসি: L'équipe belge de football, ওলন্দাজ: Het Belgisch voetbalelftal, জার্মান: Die Belgische Fußballnationalmannschaft) হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বেলজিয়ামের প্রতিনিধিত্বকারী পুরুষদের জাতীয় দল, যার সকল কার্যক্রম বেলজিয়ামের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়্যাল বেলজিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই দলটি ১৯০৪ সাল হতে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার এবং ১৯৫৪ সাল হতে তাদের আঞ্চলিক সংস্থা উয়েফার সদস্য হিসেবে রয়েছে। ১৯০৪ সালের ১লা মে তারিখে, বেলজিয়াম প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণ করেছে; বেলজিয়ামের উকলে অনুষ্ঠিত উক্ত ম্যাচে বেলজিয়াম ফ্রান্সের সাথে ৩–৩ গোলে ড্র করেছিল।

বেলজিয়াম
দলের লোগো
ডাকনামডে রোডে ডুইভেলস
লে দিয়াব্লে রোয়জ
ডি রটেন টয়ফেল (রেড ডেভিল)
অ্যাসোসিয়েশনরয়্যাল বেলজিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন
কনফেডারেশনউয়েফা (ইউরোপ)
প্রধান কোচরবের্তো মার্তিনেস
অধিনায়কএদেন আজার
সর্বাধিক ম্যাচইয়ান ভের্তোনেন (১২০)
শীর্ষ গোলদাতারোমেলু লুকাকু (৫৫)
মাঠবিভিন্ন
ফিফা কোডBEL
ওয়েবসাইটwww.belgianfootball.be
প্রথম জার্সি
দ্বিতীয় জার্সি
ফিফা র‌্যাঙ্কিং
বর্তমানহ্রাস ১ (৩১ মার্চ ২০২২)[1]
সর্বোচ্চ(নভেম্বর ২০১৫ – মার্চ ২০১৬, সেপ্টেম্বর ২০১৮ – বর্তমান)
সর্বনিম্ন৭১ (জুন ২০০৭)
এলো র‌্যাঙ্কিং
বর্তমানহ্রাস ২ (৩০ এপ্রিল ২০২২)[2]
সর্বোচ্চ(১৬ নভেম্বর ২০১৯ – ১০ অক্টোবর ২০২০)
সর্বনিম্ন৭০ (১৪ অক্টোবর ২০০৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১০)
প্রথম আন্তর্জাতিক খেলা
 বেলজিয়াম ৩–৩ ফ্রান্স 
(উকল, বেলজিয়াম; ১ মে ১৯০৪)
বৃহত্তম জয়
 বেলজিয়াম ৯–০ জাম্বিয়া 
(ব্রাসেল্‌স, বেলজিয়াম; ৪ জুন ১৯৯৪)
 বেলজিয়াম ১০–১ সান মারিনো 
(ব্রাসেল্‌স, বেলজিয়াম; ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০১)
 বেলজিয়াম ৯–০ জিব্রাল্টার 
(লিয়েজ, বেলজিয়াম; ৩১ আগস্ট ২০১৭)
 বেলজিয়াম ৯–০ সান মারিনো 
(ব্রাসেল্‌স, বেলজিয়াম; ১০ অক্টোবর ২০১৯)
বৃহত্তম পরাজয়
 ইংল্যান্ড ১১–২ বেলজিয়াম 
(লন্ডন, ইংল্যান্ড; ১৭ এপ্রিল ১৯০৯)
বিশ্বকাপ
অংশগ্রহণ১৩ (১৯৩০-এ প্রথম)
সেরা সাফল্যতৃতীয় স্থান (২০১৮)
উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ
অংশগ্রহণ৬ (১৯৭২-এ প্রথম)
সেরা সাফল্যরানার-আপ (১৯৮০)

রেড ডেভিল নামে পরিচিত এই দলটি বেশ কয়েকটি স্টেডিয়ামে তাদের হোম ম্যাচগুলো আয়োজন করে থাকে। এই দলের প্রধান কার্যালয় বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেল্‌সের কিং বাউদউইন স্টেডিয়ামের পাশে অবস্থিত। বর্তমানে এই দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন রবের্তো মার্তিনেস এবং অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যমাঠের খেলোয়াড় এদেন আজার

বেলজিয়াম এপর্যন্ত ১৩ বার ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে, যাদের সেরা সাফল্য হচ্ছে ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে ৩য় স্থান অর্জন করা, যেখানে তারা ইংল্যান্ডকে ২–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করেছে। অন্যদিকে, উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বেলজিয়াম এপর্যন্ত ৬ বার অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে সেরা সাফল্য হচ্ছে উয়েফা ইউরো ১৯৮০-এর ফাইনালে পৌঁছানো, যেখানে তারা পশ্চিম জার্মানির কাছে ২–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।

পল ভান হিমস্ট, বের্নার্ড ভরহফ, মার্ক ভিলমটস, ইয়ান ভের্তোনেন এবং এদেন আজারের মতো খেলোয়াড়গণ বেলজিয়ামের জার্সি গায়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন।

ইতিহাস

১৯০৪ সালের ১লা মে তারিখে অনুষ্ঠিত এভঁস কুপে শিরোপা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বেলজিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রথম খেলায় অংশগ্রহণ করে। ঘটনাবহুল উক্ত খেলায় ফ্রান্সের সাথে তারা ৩–৩ গোলে ড্র করে। এই খেলাটি উভয় দলেরই প্রথম খেলা ছিল। বেলজিয়ামের উকলের স্তাদ ভিভিয়ের দ্য’ওইয়ে অনুষ্ঠিত খেলায় প্রায় দেড় হাজার দর্শকের সমাগম হয়েছিল। হাত উত্তোলনের মাধ্যমে এ প্রতিযোগিতার প্রতীকী পুরস্কার প্রদান করা হয়।[3] ২০ দিন পর বেলজিয়াম ও ফ্রান্স দল ফিফা সাল প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যের অন্যতম হিসেবে অংশগ্রহণ করে।[4] ৩–৩ ড্রয়ের পূর্বে ফ্রান্সের সাথে বেলজিয়ামের নির্বাচিত খেলোয়াড়েরা চারটি খেলায় অংশ নিলেও দলে কয়েকজন ইংরেজ খেলোয়াড় থাকায় তা ফিফা কর্তৃক স্বীকৃত হয়নি।[5] ১৯০১ সালের ২৮শে এপ্রিল তারিখে, অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে বেলজিয়াম দল নেদারল্যান্ডসকে ৮–০ গোলে পরাজিত করেছিল।[6] উক্ত সময় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ১৯০৫ সাল থেকে বছরে দুই বার তারা একে-অপরের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এন্টওয়ার্প এবং রটার্ডামে (পরবর্তীকালে আমস্টারডামে) একবার করে খেলা আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত সময় ৬ অথবা ৭টি প্রধান ক্লাব দলের প্রতিনিধি নিয়ে গড়া কমিটির মাধ্যমে জাতীয় দলের খেলোয়াড় নির্ধারিত হতো। ১৯৩২ সাল পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিকভাবে বেলজীয়-ওলন্দাজ কাপ শিরোপা প্রতিযোগিতার প্রচলন ছিল।

আনুষ্ঠানিকভাবে দল প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছর পর পিঁয়ের ওয়াকিয়ার্স নামক এক সাংবাদিক বেলজিয়ামকে রেড ডেভিল নামে আখ্যায়িত করেন। ১৯০৬ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৫–০ এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩–২ গোলে জয়ের ফলেই পিঁয়ের এ নামকরণ করেছিলেন।[7] দলের জার্সির মূল রঙ লাল রাখা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯১৫ থেকে ১৯১৮ সময়কালের মধ্যে জাতীয় দলের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছিল।

সাফল্যগাঁথা

আন্তর্জাতিক ফুটবলে বেলজিয়ামের প্রধান সফলতা হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে ৬ বার ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করা। ১৯৮২ সাল হতে ২০০২ সাল পর্যন্ত সময়কালে তারা এই সাফল্য অর্জন করে; এর মধ্যে ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে হিসেবে তাদের ইতিহাসে সেরা সাফল্য হিসেবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল। এছাড়াও তারা ১ বার ১৯৮০ সালে রানার-আপ হয়েছিল। স্বাগতিক দল হিসেবে ১৯২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে বেলজিয়াম দল স্বর্ণ পদক জয়লাভ করে।

র‌্যাঙ্কিং

ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে বেলজিয়াম তাদের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সর্বোচ্চ অবস্থান (১ম) অর্জন করে এবং ২০০৭ সালের জুন মাসে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে তারা ৭১তম স্থান অধিকার করে, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে, বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিংয়ে বেলজিয়ামের সর্বোচ্চ অবস্থান হচ্ছে ১ম (যা তারা সর্বপ্রথম ২০১৯ সালে অর্জন করেছিল) এবং সর্বনিম্ন অবস্থান হচ্ছে ৭০। নিম্নে বর্তমানে ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং এবং বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিংয়ে অবস্থান উল্লেখ করা হলো:

ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং
৩১ মার্চ ২০২২ অনুযায়ী ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং[1]
অবস্থান পরিবর্তন দল পয়েন্ট
বৃদ্ধি  ব্রাজিল১৮৩২.৬৯
হ্রাস  বেলজিয়াম১৮২৭
অপরিবর্তিত  ফ্রান্স১৭৮৯.৮৫
অপরিবর্তিত  আর্জেন্টিনা১৭৬৫.১৩
বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিং
৩০ এপ্রিল ২০২২ অনুযায়ী বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিং[2]
অবস্থান পরিবর্তন দল পয়েন্ট
বৃদ্ধি  ফ্রান্স২১১৬
বৃদ্ধি  আর্জেন্টিনা২১০৮
হ্রাস  বেলজিয়াম২০৬৯
হ্রাস  স্পেন২০৩৯
বৃদ্ধি  ইংল্যান্ড২০৩৯

প্রতিযোগিতামূলক তথ্য

ফিফা বিশ্বকাপ

ফিফা বিশ্বকাপবাছাইপর্ব
সালপর্বঅবস্থানম্যাচজয়ড্রহারস্বগোবিগোম্যাচজয়ড্রহারস্বগোবিগো
উরুগুয়ে ১৯৩০প্রথম পর্ব১১তমআমন্ত্রণের মাধ্যমে উত্তীর্ণ
ইতালি ১৯৩৪১৫তম
ফ্রান্স ১৯৩৮১৩তম
ব্রাজিল ১৯৫০প্রত্যাখ্যান[8]প্রত্যাখ্যান
সুইজারল্যান্ড ১৯৫৪গ্রুপ পর্ব১২তম১১
সুইডেন ১৯৫৮উত্তীর্ণ হয়নি১৬১১
চিলি ১৯৬২১০
ইংল্যান্ড ১৯৬৬১২
মেক্সিকো ১৯৭০গ্রুপ পর্ব১০ম১৪
পশ্চিম জার্মানি ১৯৭৪উত্তীর্ণ হয়নি১২
আর্জেন্টিনা ১৯৭৮
স্পেন ১৯৮২গ্রুপ পর্ব ২১০ম১২
মেক্সিকো ১৯৮৬৩য় স্থান নির্ধারণী৪র্থ১২১৫
ইতালি ১৯৯০১৬ দলের পর্ব১১তম১৫
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪১১তম১০১৬
ফ্রান্স ১৯৯৮গ্রুপ পর্ব১৯তম১০২৩১৩
দক্ষিণ কোরিয়া জাপান ২০০২১৬ দলের পর্ব১৪তম১০২৭
জার্মানি ২০০৬উত্তীর্ণ হয়নি১০১৬১১
দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০১০১৩২০
ব্রাজিল ২০১৪কোয়ার্টার-ফাইনাল৬ষ্ঠ১০১৮
রাশিয়া ২০১৮৩য় স্থান নির্ধারণী৩য়১৬১০৪৩
কাতার ২০২২অনির্ধারিতঅনির্ধারিত
মোট৩য় স্থান নির্ধারণী১৩/২১৪৮২০১৯৬৮৭২১৩৩৭৭২৫৩১২৭৭১৪১

তথ্যসূত্র

  1. "ফিফা/কোকা-কোলা বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং"ফিফা। ৩১ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০২২
  2. গত এক বছরে এলো রেটিং পরিবর্তন "বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিং"eloratings.net। ৩০ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০২২
  3. "Belgium v France − a 109-year-old rivalry"UEFA। ১৩ আগস্ট ২০১৩।
  4. "History of FIFA - Foundation"FIFA.com। ২৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৪
  5. Hubert, Christian (১৯৮০)। Les diables rouges (French ভাষায়)। Brussels: Arts & voyages। পৃষ্ঠা 13। আইএসবিএন 978-28-016-0046-7।
  6. Hubert, Christian (১৯৮০)। Les diables rouges (French ভাষায়)। Brussels: Arts & voyages। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 978-28-016-0046-7।
  7. Guldemont, Henry; Deps, Bob (১৯৯৫)। 100 ans de football en Belgique: 1895–1995, Union royale belge des sociétés de football association (French ভাষায়)। Brussels: Vif। পৃষ্ঠা 65। আইএসবিএন 90-5466-151-8।
  8. Lisi 2007, পৃ. 47।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.