ওত্যর

ওত্যর (ফরাসি: Auteur; আ-ধ্ব-ব: [otœʁ]) সাধারণত এমন একজন শিল্পীকে (মূলত চলচ্চিত্র পরিচালকদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) বোঝায় যিনি একটি সহযোগিতামূলক সৃষ্টিশীল কর্মের বিভিন্ন দিকের উপরে অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করেন, অর্থাৎ যাকে একজন উপন্যাস বা নাটক রচয়িতার সমতুল্য কেউ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। [1] ওত্যর পরিভাষাটি মূলক এমন সব চলচ্চিত্র নির্মাতা বা পরিচালকদেরকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়, যাদের শৈলী বা আগ্রহের বিষয়বস্তু সহজেই শনাক্ত করা যায়[2] একজন ওত্যর হলেন একটি সহযোগিতামূলক শিল্পকর্মের প্রধান সৃষ্টিশীল চালিকাশক্তি।

ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক আলেক্সঁদ্র আস্ত্র্যুক প্রস্তাব করেন যে একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের তাঁর ক্যামেরাকে লেখনী বা কলমের মতো ব্যবহার করা উচিত, যে ধারণাটির তিনি নাম দেন "কামেরা-স্তিলো" অর্থাৎ "কলমরূপী ক্যামেরা"

১৯৪০-এর দশকের শেষ দিকে ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচনা ক্ষেত্রে ওত্যর তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটে।[3] মূলত অঁদ্রে বাজাঁ এবং আলেক্সঁদ্র আসত্র্যুকের চলচ্চিত্র বিষয়ক তত্ত্বগুলি থেকে এই ধারণাটির উৎপত্তি; পরে মার্কিন সমালোচক অ্যানড্রিউ স্যারিস এটিকে "ওত্যর তত্ত্ব" নামকরণ করেন।[4][5] আলেক্সঁদ্র আস্ত্র্যুক "কামেরা-স্তিলো" (Caméra-stylo, "কলমরূপী ক্যামেরা") নামক ধারণাটি ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক একটি চলচ্চিত্রের সমস্ত শ্রাব্য (অডিও) ও দৃশ্যমান উপাদানগুলির উপরে নজরদারি করেন, তাই একজন চিত্রনাট্য রচয়িতার চেয়ে চলচ্চিত্র পরিচালককেই একটি চলচ্চিত্রের "ওত্যর" অর্থাৎ রচয়িতা হিসেবে গণ্য করা উচিত।[6][7] অর্থাৎ চলচ্চিত্র দর্শক কীভাবে দেখবে, সেটি ক্যামেরার অবস্থান, আলোকসম্পাত, দৃশ্যের দৈর্ঘ্য, ইত্যাদি ব্যাপারগুলি কাহিনীসূত্রের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওত্যর তত্ত্বের সমর্থকেরা আরও বলেন যে শৈল্পিক দিক থেকে সফল ও সার্থক চলচ্চিত্রগুলির বেশিরভাগগুলিতেই সেগুলির পরিচালকের ব্যক্তিগত ছাপ থাকে।

১৯৫৫ সালে বাজাঁ-র প্রতিষ্ঠিত কাইয়ে দ্যু সিনেমা সাময়িকী পত্রিকাতে ফরাসি সমালোচক ফ্রঁসোয়া ত্র্যুফো রচিত একাধিক নিবন্ধে এই তত্ত্বটি "ওত্যর তত্ত্ব" হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিতি পায়। ত্রুফো আলফ্রেড হিচককহাওয়ার্ড হক্‌সের মতো চলচ্চিত্র পরিচালকদের প্রতি তাঁর সমর্থন জ্ঞাপন করেন। তিনি ঐসব পরিচালকদের সৃষ্ট চলচ্চিত্রকর্মগুলিকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করেন এবং এগুলি ভেতরে যে বিষয়গুলি বারংবার ফেরত এসেছে, সেগুলি দেখার প্রস্তাব করেন। আরেক ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক জঁ-ল্যুক গদার-ও এ নিয়ে লেখেন। ওত্যর তত্ত্বকে ফরাসি নবকল্লোল ("নুভেল ভাগ") নামক চলচ্চিত্র আন্দোলনের একটি ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। ত্রুফো ও গদার উভয়েই পরবর্তীতে ফরাসি নবকল্লোল ধারার প্রধান পরিচালক হিসেবে আবির্ভূত হন।

তথ্যসূত্র

  1. Santas 2002, পৃ. 18।
  2. Min, Joo এবং Kwak 2003, পৃ. 85।
  3. Caughie 2013, পৃ. 22–34, 62–66।
  4. The Editors of Encyclopædia Britannica (n.d.)। "Auteur theory"Encyclopædia Britannica
  5. Sarris, Andrew (Winter ১৯৬২–১৯৬৩)। "Notes on the Auteur Theory in 1962" (পিডিএফ)Film Culture27: 1–8। ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২০
  6. Alexandre Astruc, "The Birth of a New Avant-Garde: La Caméra-Stylo," in The New Wave, ed. Peter Graham, pp. 17-23. Trans. from "Naissance d'une nouvelle avant-garde: la caméra-stylo," L'Écran Français 144, 30 March 1948.
  7. Astruc, Alexandre (১৯৪৮)। "The Birth of a New Avant-Garde: La Caméra-Stylo"New Wave Film। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.