রাখাইন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ২০১২

রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে মায়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহ। দাঙ্গাটির সূত্রপাত হয় জাতিগত কোন্দলকে কেন্দ্র করে এবং উভয় পক্ষই এতে জড়িত হয়ে পরে।[5] অক্টোবর মাসে এটি সকল নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধের দাঙ্গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।[6] দাঙ্গার তাৎক্ষণিক কারণ জানা যায় এক রাখাইন তরুণীকে কয়েকজন মুসলিম কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যার এবং এর ফলে রাখাইন বৌদ্ধদের দ্বারা ১০জন মুসলিম রোহিঙ্গাকে আহত করা প্রধান কারণ। দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে, মায়ানমার সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দাঙ্গা কবলিত এলাকায় কারফিউ জারি করে এবং সৈন্য মোতায়েন করে। ১০জুন রাখাইনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং সামরিক বাহিনীকে ঐ অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।[7][8] চলমান দাঙ্গায় অনেকেই নিহত হয়। ২২শে আগস্ট সরকারিভাবে ৮৮ জনের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয় – রোহিঙ্গা ৫৬ এবং ৬০ রাখাইন। আনুমানিক ৯০,০০০ লোক বাস্তুচ্যূত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।[9] প্রায় ২,৫২৮টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় যাদের বেশিরভাগই ছিল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর।[10] দাঙ্গায় বার্মিজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বে্র অভিযোগ পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক তরফাভাবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক গণ গ্রেফতার এবং ধরপাকড়ের অভিযোগ উঠেছে।[11]

রাখাইন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা - ২০১২
স্থানরাখাইন রাজ্য, মায়ানমার
তারিখ০৮ জুন, ২০১২ (ইউ.টি.সি+০৬:৩০)
হামলার ধরনধর্মীয়
নিহতজুন: ৮৮[1][2][3]
অক্টোবর: কমপক্ষে ৮০[4]
১০০,০০০ বাস্তুচ্যূত[4]

সরকারের প্রাথমিক পদক্ষেপে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন,[12][13]অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্হাগুলো প্রশংসা করলেও মূলত মায়ানমার সরকারের কয়েক দশকের পরিকল্পিত বৈষম্যের কারণে রোহিঙ্গারা গণগ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে যায়।[12] মায়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান থেইন সেইনের রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের বাইরে পাঠানোর প্রস্তাব জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার এবং কিছু মানবাধিকার সংস্হা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে।[14] কিছু সাহায্য প্রদানকারী সংস্হা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বিচ্ছিন্ন করে, অবমাননাকর আচরণ করে এবং মানবিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্হার কর্মীদের গ্রেফতার করে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সংকট সৃষ্টির জন্য মায়ানমার সরকারকে দায়ী করেছেন।[15]

অক্টোবরে মাসে দাঙ্গা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে কমপক্ষে ৮০জন নিহত হয়, বাস্তুচ্যূত হয় প্রায় ২০,০০০ মানুষ এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে যায়।

জুনের দাঙ্গা

প্রতিক্রিয়া

তথ্যসূত্র

  1. "সংবাদ সম্মেলন" (পিডিএফ)। মায়ানমার সরকারের পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয়। ২১ অগাস্ট ২০১২। ২০১২-১০-২৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১২
  2. "মায়ানমার সরকারের জাতিগত সহিংসতার তদন্ত শুরু"The Guardian। ১৭ আগস্ট ২০১২। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১২
  3. "রাখাইনের ঘটনায় মায়ানমার সরকারের ধর্মীয় পক্ষপাতিত্ব ও বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার"। Xinhua। ২৭ অক্টোবর ২০১২। ২১ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১২
  4. বিবিসি নিউজ আর্কাইভ
  5. "সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় চারজন নিহত : সরকার"। রয়টার্স। জুন ৮, ২০১২। ১৯ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৯, ২০১২
  6. "রাখাইন ধ্বংস্তূপে বার্মা সরকার"। বিবিসি নিউজ। ২৭ অক্টোবর ২০১২। ২৭ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১২
  7. লিন হতেত (১১ জুন ২০১২)। "রাখাইনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা"। The Irrawaddy। ১৩ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১২
  8. কিনি, ফারগেল (১১ জুন ২০১২)। "পুরাতন চেতনা বার্মায় বুদবুদ করছে"। বিবিসি নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১২
  9. "বার্মার দাঙ্গায় ৯০,০০০ জনের খাদ্য প্রয়োজন, জাতিসংঘ বলছে"টরেন্টো স্টার। ১৯ জুন ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১২
  10. "দাঙ্গায় উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত"। এ.পি। ১৫ জুন ২০১২। ১১ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১২
  11. হিন্ডস্টর্ম, হানা (২৮ জুন ২০১২)। "বার্মিজ সরকার রোহিঙ্গাদের টার্গেট করেছে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট"ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১২
  12. ১৯ জুন ২০১২। "যুক্তরাষ্ট্রের মায়ানমার সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা"। রয়টার্স। ২ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১২
  13. "সরকারের পদক্ষেপে ই.ইউ'র স্বাগতম"। রয়টার্স। ১১ জুন ২০১২। ৬ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১২
  14. "জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার প্রধানের রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের বাইরে পাঠানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান"। হাফিংটন পোস্ট। ১২ জুলাই ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১২
  15. ওয়াদি, ফ্রাঞ্চিজ (১৩ জুলাই ২০১২)। "বার্মা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী"দ্যা গার্ডিয়ান। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১২

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.