২০০৫ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ড সফর

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড সফরে যায়। বাংলাদেশ তাদের ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয় করে। তা সত্ত্বেও দলটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের তালিকার নিচের দিকে অবস্থান করছিল। অন্যদিকে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল টেস্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে চলে যায়।

২০০৫ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ড সফর
 
  ইংল্যান্ড বাংলাদেশ
তারিখ ১০ মে, ২০০৫ – ৩০ জুন, ২০০৫
অধিনায়ক মাইকেল ভন হাবিবুল বাশার
টেস্ট সিরিজ
ফলাফল ২ ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ড ২–০ ব্যবধানে জয়ী হয়
সর্বাধিক রান মার্কাস ট্রেসকোথিক (৩৪৫) জাভেদ ওমর (১৫৫)
সর্বাধিক উইকেট ম্যাথু হগার্ড (১৪) মাশরাফি বিন মর্তুজা (৪)
সিরিজ সেরা খেলোয়াড় জাভেদ ওমরমার্কাস ট্রেসকোথিক

ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটিজ, সাসেক্সনর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ তাদের সফর শুরু করে। তারপর তারা দুই টেস্টে অংশ নিয়ে উভয়টিতেই ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়ে নাকানি-চুবানি খায়। কোন খেলাই তৃতীয় দিনের মধ্যাহ্নভোজন পর্যন্ত গড়ায়নি। এরপর এ সফরটি একদিনের খেলার দিকে চলে যায়। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে অংশ নেয়ার পূর্বে ডার্বিশায়ারওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নেয়। এ সিরিজে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে অত্যাশ্চর্যজনক বিজয় ছিনিয়ে নেয়।

প্রথম-শ্রেণীর খেলা

ফেনার্সে ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটিজের বিপক্ষে নিশ্চিত ড্রয়ের মাধ্যমে সফরটি শুরু করে। এরপূর্বে সাসেক্সের বিপক্ষে বিপর্যয়মূলক ইনিংস পরাজয়ে নাস্তানুবাদ হয় ও দ্বিতীয় সারির নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে বৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটায় খেলাটি ড্র হলে সমূহ পরাজয় থেকে রক্ষা পায়। তবে সাসেক্সে প্রথম টেস্ট মোকাবেলায় ভয়ঙ্কর ধরনের খেলায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা অপেক্ষা করতে থাকে। ইংল্যান্ড নিখুঁত ক্রিকেট না খেললেও ইনিংস ও ২৬১ রানে জয় পায়। দ্বিতীয় টেস্টে জয় পায় ইনিংস ও ২৭ রানের ব্যবধানে। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার সাথে ত্রি-দেশীয় সিরিজে নেতৃত্ব দেয়।

খেলার বিবরণ

ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটিজ ব বাংলাদেশ একাদশ (১০-১২ মে)

ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটিজ বাংলাদেশ একাদশের সাথে ড্র করে

বাংলাদেশ একাদশ ইংল্যান্ডে তাদের সফর হালকা মেজাজের প্রস্তুতিমূলক খেলায় ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটিজের বিপক্ষে অংশ নেয়ার মাধ্যমে শুরু করে। ফেনার্সের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক পরিবেশ পেয়ে ৯৯/৩ থেকে জাভেদ ওমরের অপরাজিত শতকের সুবাদে বৃষ্টি আক্রান্ত প্রথম দিন শেষ করে। দ্বিতীয় দিনও সফরকারীদের অন্যতম সফল দিন হিসেবে কাটে। ওমর ১৬৭ রানে ও মোহাম্মদ আশরাফুল ১০২ তুললে বাংলাদেশ একাদশ তাদের ইনিংস ৩৮১ রানে শেষ করে। জবাবে ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটিজ ৮২/৫ তুলে থমকে যায়। এরপর লুক পার্কারজোশ নাপেট ডুবন্ত অবস্থা থেকে দলকে টেনে আনেন ও দিনশেষে ১৯০/৫-এ নিয়ে যান। তৃতীয় দিন সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে ড্রয়ে পরিণত হয়।

চূড়ান্ত দিনে ছাত্রদের দলটি তাদের ইনিংস ২৩৮ রানে শেষ করে ও বাংলাদেশ একাদশ ব্যাটিং অনুশীলনের জন্য মাঠে নেমে ২৪৬/৪ তোলে। সামগ্রিকভাবে প্রথম খেলাটি বাংলাদেশ একাদশের জন্য বেশ আনন্দদায়ক ছিল।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

সাসেক্স ব বাংলাদেশ একাদশ (১৫-১৭ মে)

সাসেক্স ইনিংস ও ২২৬ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ একাদশকে পরাজিত করে

হোভে অনুষ্ঠিত খেলায় সাসেক্স বাংলাদেশী বোলারদের তুলোধুনো করে বড় ধরনের বিজয়ের রেকর্ড গড়ে। বোলিং করে তারা দুইবার অল-আউট করে যা বাংলাদেশ একাদশকে এক সপ্তাহ পর লর্ডসে অনুষ্ঠিত খেলায় প্রকৃতপক্ষে আস্থা আনতে সহায়তা করেনি। খেলার প্রধান তারকা ছিলেন মাইকেল ইয়ার্দি। তিনি তার সুবিশাল ২৫৭ রান তোলেন ৩৫ চার ও দুই ছক্কার সাহায্যে যা ইংরেজ প্রথম-শ্রেণির মৌসুমে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহরূপে বিবেচিত ছিল। এরফলে সাসেক্স ৭ উইকেটে ৫৪৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে ২২ রানে অপরাজিত থাকাবস্থায় জেসন লিউরি’র বাউন্সারে হাবিবুল বাশার আঘাত পেলে অবসর নিতে বাধ্য হন। এরপর থেকে কেবলমাত্র আসা-যাওয়ার পালা চলতে থাকে। বাংলাদেশ একাদশ দুই ইনিংস মিলে (১২৭ ও ১৯৬) কেবলমাত্র ৩২৩ রান তুলতে সক্ষম হয়। একমাত্র ১৬ বছর বয়সী উইকেট-রক্ষক মুশফিকুর রহিম চল্লিশ ও দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ঘণ্টায় ৬৩ রান তুলে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভকারী মাইকেল ইয়ার্দির বলে স্ট্যাম্পড হন। তিনি তার খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা বোলিংয়ে পাঁচ উইকেট লাভ করেন ৮৩ রানের বিনিময়ে।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

নর্দাম্পটনশায়ার ব বাংলাদেশ (২০-২২ মে)

নর্দাম্পটনশায়ার বাংলাদেশ একাদশের সাথে ড্র করে

নর্দাম্পটনে অনুষ্ঠিত খেলার প্রথম দিনে নর্দাম্পটনশায়ার সফরকারী বাংলাদেশ একাদশের বিপক্ষে ১৪৯/৫ তোলে। সফরকারী দলের বোলাররা কাউন্টি ব্যাটসম্যানদেরকে খেলায় উদ্বুদ্ধ করতে আলগা বল করে। কিন্তু বিলাল শাফায়াত এর ব্যতিক্রম ছিলেন। বামহাতি স্পিনার এনামুল হকের বল মোকাবেলায় মনোসংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হলে তিনি ৭৬ রানে আউট হন। তবে আনোয়ার হোসেন মনির তাদেরকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করতে সর্বাপেক্ষা সফল হন ৩/৬৭ পেয়ে। বৃষ্টিতে দ্বিতীয় দিনের পুরোটাই নষ্ট হয় যা তৃতীয় দিনে দলের খেলাকে অর্থহীন করে তোলে। আনোয়ার ম্যাথু ফ্রিডল্যান্ডারের উইকেট পেয়ে তার সংগ্রহকে স্ফীত করে তোলেন ৪/১১৩। জবাবে বাংলাদেশ একাদশ দ্রুততার সাথে উইকেট হারাতে থাকে ও ১০৫/৫ তুলে ছন্দ হারায়। তবে, ১৬ বছরের ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী মুশফিকুর রহিম তার ক্রীড়াশৈলীকে ধারাবাহিকভাবে অক্ষুণ্ণ রেখে ১৫ চার ও এক ছক্কার সাহায্যে ১১৫* রানে অপরাজিত থাকেন। এরফলে বাংলাদেশ একাদশ ৩০৯/৭ তুলে সীমাবদ্ধতাতুল্য ক্ষেত্রে অনুশীলনের দিকে ধাবিত হয়।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

প্রথম টেস্ট: ইংল্যান্ড ব বাংলাদেশ (২৬-২৮ মে)

২৬-৩০ মে, ২০০৫
স্কোরকার্ড
১০৮ (৩৮.২ ওভার)
জাভেদ ওমর ২২ (৬০)
এমজে হগার্ড ৪/৪২ (১৩.২ ওভার)
৫২৮/৩ডি. (১১২ ওভার)
এমই ট্রেসকোথিক ১৯৪ (২৫৯)
মাশরাফি বিন মর্তুজা ২/১০৭ (২৯ ওভার)
১৫৯ (৩৯.৫ ওভার)
খালেদ মাসুদ ৪৪ (৮৫)
এসপি জোন্স ৩/২৯ (১১ ওভার)
ইংল্যান্ড ইনিংস ও ২৬১ রানে বিজয়ী
লর্ড’স, লন্ডন
আম্পায়ার: কে হরিনাথন (ভারত) ও ডিজে হার্পার (অস্ট্রেলিয়া)
ম্যাচসেরা: এমই ট্রেসকোথিক (ইংল্যান্ড)
  • ইংল্যান্ড টসে জয়ী হয়ে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

লর্ডসে অনুষ্ঠিত প্রথমদিনের খেলায় মাইকেল ভন টসে জয়ী হয়ে বাংলাদেশকে সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানায়। স্টিভ হার্মিসনম্যাথু হগার্ডের প্রথম দশ ওভার বোলিং ছিল নিষ্প্রভ। সকালের শুরুতে সুইংয়ে ফলে তারা কেউই আধিপত্য বিস্তার করতে পারেননি ও লাইনের দূরত্ব দিয়ে বোলিংয়ে অগ্রসর হন। এ সময়ে শক্তিশালী দলের মুখোমুখি হলে অধিক রান সংগ্রহ করতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশ দল মাত্র ৩১ রান তুলে তাদের প্রথম উইকেট হারায়। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার ক্রিজে আসেন ও আত্মঘাতীরূপে বলকে তুলে মারলে মাত্র তিন রানে বিদায় নেন। দলের বাদ-বাকী সদস্যরা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে দ্রুততার সাথে বিদায় নেন। ইংরেজ পরিবেশে নিজেদেরকে একাত্মতা করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায়ই তারা সহজ বলকে মোকাবেলা করতে পারেননি। ইংরেজরা শর্ট ও ওয়াইড ধরনের গুড লেন্থের বল ফেলে উদ্বুদ্ধের মাধ্যমে নিয়মিত বিরতিতে প্রতিপক্ষের ব্যাটের প্রান্ত স্পর্শ করে স্লিপের দিকে নিয়ে যান। তবে, শুরুর টেস্টে বাংলাদেশ দল কখনো আউট হতো না যদি তারা আরও রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলার চেষ্টা চালাতো।

জাভেদ ওমর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অধিক রান তুলেন। তিনি ২২ রান তুলে ইংরেজ বোলারদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা নিখুঁত সাইমন জোন্সের বলে মার্কাস ট্রেসকোথিকের হাতে কট আউটে পরিণত হন। ছয়জন ব্যাটসম্যান এক অঙ্কে ছিলেন। কেবলমাত্র আফতাব আহমেদকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে দেখা যায়। তিনিও স্লিপে অবস্থানকারী অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের হাতে ধরা পড়েন। শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের ১২ নো-বলের কল্যাণে বাংলাদেশ ৩৮.২ ওভারে মাত্র ১০৮ রান তুলে। তন্মধ্যে হগার্ড দেন ৮ ও হার্মিসন ৪ নো-বল করেন। খুব কম ব্যাটসম্যানকেই তাদরে সুইং বলের উপর অনুশীলনের দক্ষতা প্রদর্শন এবং স্থির থাকা ও বলকে ঠেলার চেয়ে সোজা ব্যাট চালাতে দেখা যায়।

মার্কাস ট্রেসকোথিক ও অ্যান্ড্রু স্ট্রস ধৈর্যসহকারে চা বিরতি পর্যন্ত ব্যাটিং চালিয়ে যান। বিশেষ করে টেস্টে অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেনের বলকে বেশ কয়েকবার বাউন্ডারিতে রূপান্তর করেন। এ জুটি চা বিরতির পূর্ব-পর্যন্ত ৭০ রান তুলেন। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, দুই অধিবেশন খেলে দশ উইকেট হাতে নিয়ে ইংল্যান্ড মাত্র ৩৮ রানে পিছনে ছিল। চা বিরতির ঘণ্টাখানেক বাদেই ইংল্যান্ড এগিয়ে যায়। আনোয়ার হোসেন মনিরের বোলিংয়ে বিব্রত হবার পরও স্ট্রস তার অর্ধ-শতকের সন্ধান পান। এরপর ৫১ রানে থাকাকালীন আউট হওয়া থেকে রক্ষা পান। মোহাম্মদ রফিকের বলে চার মেরে ট্রেসকোথিক অর্ধ-শতক করেন। এ জুটি ১৪৮ রানের মূল্যবান জুটি গড়ে। তন্মধ্যে স্ট্রস ইনসুইং বলে ৬৯ রানে প্রায় এলবিডব্লিউ হয়ে যাচ্ছিলেন ও পরের বলেই মাশরাফি মর্তুজা’র ধৈর্যশীল বোলিংয়ের স্বীকৃতস্বরূপ এলবিডব্লিউতে আউট হন।

তা সত্ত্বেও ইংল্যান্ড বোলারদেরকে আঠার মতো লাগিয়ে রাখতে চেষ্টা চালায়। তবে অধিনায়ক মাইকেল ভন একাধিকবার ভাগ্যের সহায়তা পান। তন্মধ্যে মোহাম্মদ রফিক তার নিজের বোলিংয়ে কট ধরতে ব্যর্থ হন। দিনশেষে এ জুটি ৪০ রান তুলে ও প্রথম দিনের তুলনায় কম থাকা রৌদ্রোজ্জ্বল দ্বিতীয় দিনের দিকে ধাবিত হয়। ভন দ্রুততার সাথে ১২০ রানে মাশরাফির ক্যাচে পরিণত হওয়া বাদে সবটুকুই বাংলাদেশের অনুকূলে ছিল। চার ওভার পর ধৈর্যশীলতার পরিচয়জ্ঞাপনকারী রফিক অবশেষে তার পুরস্কার পান। খালেদ মাসুদ দর্শনীয় ক্যাচ নিয়ে ট্রেসকোথিককে তার দ্বিশতক থেকে মাত্র ছয় রান দূরে থাকা অবস্থায় বিদায় করেন। বাংলাদেশের জন্য এটি বৃহৎ প্রাপ্তি ছিল। তবে, ওয়ারউইকশায়ারের স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত ইয়ান বেল অপরাজিত ৬৫ ও গ্রাহাম থর্প সর্বত্র দৌড়ে অপরাজিত ৪২ তুলেন। তার ইনিংসে মাত্র দুই বাউন্ডারি ছিল। সাত উইকেট হাতে রেখে ও ৪২০ রানে এগিয়ে থেকে যথেষ্ট হয়েছে ভেবে ইনিংস ঘোষণা করেন।

তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ড অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজায়। কেবলমাত্র বোলার ও স্ট্যাম্পের সামনে সিলি পয়েন্টে ফিল্ডারেরা অবস্থান করছিলেন।

জবাবে বাংলাদেশের আরও একটি দুঃখজনক অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। আবারো তারা শর্ট বলগুলোকে ভালোভাবে খেলতে ব্যর্থ হয় ও পাঁচ উইকেট হারায়। এরজন্য সাইমন জোন্স ও অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ এজন্য প্রধান দায়ী। ৬৫ রানের মধ্যেই উভয়ে দুই উইকেট পান। খালেদ মাসুদ ও আফতাব আহমেদ কিছুটা দায়িত্ব সচেতন হন ও দিনশেষে ৯৫/৫-এ নিয়ে যান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। তৃতীয় দিনের মাত্র ছয় বল পরেই হগার্ডের চমৎকার অফ-কাটারে আফতাব আহমেদ বোল্ড হন। তিনি বলটিকে সঠিকভাবে খেলতে পারেননি ও প্যাডে আঘাত করে। তার চমৎকার ৩২ রান টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল।

তারপর স্টিভ হার্মিসন প্যাভিলিয়ন এন্ড থেকে পরের ওভারে বোলিং করতে নেমে স্পিনার রফিককে তার দ্বিতীয় বলে শূন্য রানে কট আউটে বিদায় করেন ও মর্তুজাকে বোল্ড করেন। মর্তুজা বলটি মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে প্যাডে স্পর্শ করে লেগ স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। নয় বলের ব্যবধানে দুই রান তুলে বাংলাদেশ তিন উইকেট হারায়। হার্মিসন আরেকটি উইকেট তার ঝুলিতে যুক্ত করতে পারতেন। আনোয়ার হোসেন মনিরের প্যাডের সামনে তার বল আঘাত করে। তবে আম্পায়ার হরিহরণের কাছে বলটি স্ট্যাম্পে আঘাত হানার মতো মনে হয়নি ও হার্মিসন হ্যাটট্রিক থেকে বঞ্চিত হন।

খেলা শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লেগে যায়। দর্শকেরা তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হবার পূর্বেই তা ধারণা করেছিল। তবে, নো-বলের সহায়তা পেয়ে ও উইকেট-রক্ষক খালেদ মাসুদের কিছু চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর কারণে আফতাব আহমেদের সংগ্রহকে ছাড়িয়ে যান। এ সময় খেলাটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগুচ্ছিল। আনোয়ার হোসেন ও খালেদ মাসুদ তা করছিলেন। তারা নবম উইকেটে একত্রে ৫৮ রান তুলেন যা খেলায় বাংলাদেশের সেরা জুটি ছিল। অবশেষে সাইমন জোন্স তাদের এ প্রতিরক্ষাকে ভেঙে ফেলতে অগ্রসর হন। আনোয়ার হোসেন মনিরকে আদর্শমানের বল ব্যাটের প্রান্ত স্পর্শ করে প্রথম স্লিপে দণ্ডায়মান ট্রেসকোথিকের হাতে চলে যায়। এরফলে নবম উইকেটের পতন ঘটলে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫৬/৯। এর এক ওভার পর খালেদ মাসুদ অবশেষে আউট হন। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের অফের দিকে যাওয়া বল শর্ট লেগে গ্রাহাম থর্পের হাতে পৌঁছে। ফলশ্রুতিতে ইংল্যান্ড ইনিংস ও ২৬১ রানে জয় তুলে নেয় তৃতীয় দিনের দুপুরের পূর্বেই ও মধ্যাহ্নভোজনের আধা ঘণ্টা আগে। মজার বিষয় ছিল আঘাতপ্রাপ্ত অ্যাশলে জাইলসের স্থলাভিষিক্ত ইংল্যান্ডের স্পিন-বোলার গারেথ ব্যাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত স্কোরকার্ডে একবার উল্লেখ করা হয়েছিল। অথচ, তিনি ব্যাট, বল কিংবা কোন ক্যাচও নেননি। ট্রেসকোথিক তার ১৯৪ রানের সুবাদে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

দ্বিতীয় টেস্ট: ইংল্যান্ড ব বাংলাদেশ (৩-৫ জুন)

৩-৭ জুন, ২০০৫
স্কোরকার্ড
১০৪ (৩৯.৫ ওভার)
জাভেদ ওমর ৩৭ (৮৩)
এসজে হার্মিসন ৫/৩৮ (১২/৫ ওভার)
৪৪৭/৩ডি (৭৮ ওভার)
আইআর বেল ১৬২* (১৬৮)
মাশরাফি বিন মর্তুজা ২/৯১ (২২ ওভার)
৩১৬ (৭২.৫ ওভার)
আফতাব আহমেদ ৮২* (৮২)
এমজে হগার্ড ৫/৭৩ (১৫.৫ ওভার)
ইংল্যান্ড ইনিংস ও ২৭ রানে বিজয়ী
রিভারসাইড গ্রাউন্ড, চেস্টার-লি-স্ট্রিট
আম্পায়ার: ডিজে হার্পার (অস্ট্রেলিয়া) ও টনি হিল (নিউজিল্যান্ড)
ম্যাচসেরা: এমজে হগার্ড (ইংল্যান্ড)
প্লেয়ার অব দ্য সিরিজি: জাভেদ ওমর (বাংলাদেশ) ও এমই ট্রেসকোথিক (ইংল্যান্ড)
  • ইংল্যান্ড টসে জয়ী হয়ে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রথম টেস্টের ন্যায় মাইকেল ভন আবারো টস জয় করেন ও বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। এরপর থেকেই ইংরেজ বোলারগণের কাছ থেকে ক্রমাগতভাবে পেশাদারী বোলিংশৈলী আসতে থাকে। হার্মিসন তার নিজ মাঠের পরিবেশকে সর্বাধিক কাজে লাগিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন। ফলে, বাংলাদেশ ১০৪ রান তুলে পরিষ্কারভাবে খেলা থেকে ছিটকে পড়ে। কেবলমাত্র জাভেদ ওমর ও খালেদ মাসুদ দুই অঙ্কের কোঠায় পৌঁছুতে সক্ষম হন। জবাবে ইংল্যান্ড শুধুমাত্র অ্যান্ড্রু স্ট্রসের উইকেট হারিয়ে দ্রুত তাদের রানকে অতিক্রম করে। তিনি এই সিরিজে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র তিনিই ৮০-এর অধিক গড়ে রান তুলেছিলেন। প্রথম দিন শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬৯/৩। ক্রিকেটবোদ্ধাদের ধারণা ছিল যে, খেলা সম্ভবতঃ তৃতীয় দিনে গড়াবে না।

দ্বিতীয় দিনে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৭০ বছর পর প্রথম ইংরেজ হিসেবে ইয়ান বেল মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বেই ১০০ রান তোলেন। সর্বশেষ এ কৃতিত্ব গড়েন লেস অ্যামিস। মধ্যাহ্নভোজনকালে সম্ভাব্য ইনিংস ঘোষণার পূর্বাভাস পেয়ে বেল ও থর্প ক্রমাগতভাবে এগিয়ে চলেন। ইংল্যান্ড ৪৪৭/৩ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। শুরু থেকে সিরিজের যাচ্ছেতাই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ সঠিকমানের ক্রিকেটীয় শট খেলে নিজেদেরকে উজ্জ্বীবিত করে তুলে। তবে কিছু বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান অস্বাভাবিক শট খেলে আউট হন। জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়েরা বলের দিকে নজর রেখে নির্বাচিত বলকে মোকাবেলা করেন, ইংল্যান্ড সর্বাপেক্ষা আক্রমণাত্মক ধাঁচের ফিল্ডিং দাঁড় করায়। এরফলে শক্ত জুটি গড়ে উঠে ও ইনিংসে ভিত্তি রচিত হয়।

প্রথমে নাফিস ইকবাল আউট হন। দলের সংগ্রহ ৫০ থাকাকালে ব্যক্তিগত ১৫ রানে কট বিহাইন্ড হন। ইকবালের দূর্ভাগ্যচিত্র ভিডিও রিপ্লেতে ফুটে উঠে যাতে বল বাউন্স খেয়ে জারিয়েন্ট জোন্সের গ্লাভসে যায় কিন্তু পিচে ফিরে আম্পায়ারের কাছে আবেদন করা স্বত্ত্বেও তাকে ফিরে যেতে হয়। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জাভেদ ওমর, অধিনায়ক হাবিবুল বাশার ও আফতাব আহমেদ - সকলেই অর্ধ-শতকের সন্ধান পান ও দুই দিনেই ইংল্যান্ডের খেলা শেষ করার চিন্তাধারাকে বাদ দিতে বাধ্য করে। স্বাভাবিক খেলার সপ্তম ওভারে ২৪৫/৭ হলে ইংল্যান্ড অতিরিক্ত অর্ধ-ঘণ্টা খেলার দাবী করে। কিন্তু বাংলাদেশ কিছুটা বীরত্ব প্রদর্শন করে ও আরও একটি উইকেট হারায়। তবে, তৃতীয় দিনের খেলা শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যে সব উইকেট তুলে নেয় কিন্তু, বাংলাদেশ আক্রমণধর্মী ফিল্ডিংয়ের বিপরীতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ৩১৬ রান তুলে যা স্বাগতিকদেরকে ২৭ রানের জন্য পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামাত পারেনি।

ফলশ্রুতিতে ইংল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয় করে। উভয় খেলাই ইনিংসের ব্যবধানে জয় পায়। এর মাধ্যমে তারা উপর্যুপরি পঞ্চম টেস্ট সিরিজ জয় করে ও ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো পাঁচটি সিরিজে এ সফলতা পায়। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম তিনটি ইনিংসে ২০০-এর কম রান তুলেছিল। সিরিজটি পূর্ণাঙ্গভাবেই ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে ছিল যার ফলে তারা আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে চলে যায়। বাংলাদেশ তাদের সর্বশেষ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে। খেলাশেষে ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেন, ‘মূল্যায়ণ করা বেশ কঠিন যে খেলাগুলো থেকে আমরা কি পেয়েছি কেননা আমরা খুব সহজেই জয় তুলে নিয়েছি’।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

একদিনের খেলা

সফরে প্রথম-শ্রেণির খেলাগুলোয় দুর্বলমানের ক্রীড়া প্রদর্শনের পর বাংলাদেশ একদিনের খেলায় উন্নতি ঘটানোর আশাবাদ নিয়ে মাঠে নামে। বিশেষ করে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে উজ্জীবিত হওয়া অন্যতম বিষয় ছিল। তবে, ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের পূর্বে প্রথম প্রস্তুতিমূলক খেলায় ডার্বিশায়ারের কাছে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়। কিন্তু, ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ছয় উইকেটের জয় পেয়ে নিজেদের অবস্থানকে উত্তরণ ঘটাতে সচেষ্ট হয়। ওভালে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেও এসেছিল কিন্তু বোলারদের ব্যর্থতায় তা হয়নি ও ইংল্যান্ড খুব সহজেই দশ-উইকেটে জয় তুলে নেয়।

১৮ জুন, ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে পরাভূত করে। অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ২৪৯ রান তুলে। মোহাম্মদ আশরাফুলের সেঞ্চুরির কল্যাণে বাংলাদেশ ৪ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে। পরবর্তী তিন খেলায় ধারাবাহিকভাবে পরাজিত হলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয়।

ডার্বিশায়ার বনাম বাংলাদেশ একাদশ (১০ জুন)

ডার্বিশায়ার ৬ উইকেটে বাংলাদেশ একাদশকে পরাজিত করে

ডার্বিতে অনুষ্ঠিত দিবা-রাত্রির খেলায় ডার্বিশায়ার বাংলাদেশ একাদশকে খুব সহজেই পরাজিত করে। বাংলাদেশ একাদশ টসে জয়ী হয়ে ব্যাট করতে নামে। কেবলমাত্র আঘাতপ্রাপ্ত মাইকেল ডি ভেনুতো বাদে ডার্বিশায়ার দলটি পূর্ণাঙ্গ শক্তিধর ছিল। জাভেদ ওমর, নাফিস ইকবাল ও রাজিন সালেহ খুব সহজেই আউট হলে সফরকারী দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯/৩। তারপর তুষার ইমরান ও হাবিবুল বাশার কিছুটা আশার আলো দেখান। চতুর্থ উইকেটে তারা ৮০ রান তুলে একটি পূর্ণাঙ্গ লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যান। তন্মধ্যে, তুষার ইমরান তার ইনিংসে দু’টি ছক্কা হাঁকান। এরপর থেকে বাংলাদেশ একাদশ নিয়মিত বিরতিতে তাদের উইকেট হারাতে থাকে। অবশেষে ৩.৫ ওভার বাকি থাকতেই ১৮৯ রানে অল-আউট হয়। বাংলাদেশের টেস্টে বোলিংয়ের দিকে অমনোযোগিতা দেখানোর সাথে মিল রেখে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষেও একই ধারা অব্যাহত রাখে। জোনাথন মসের ৭২ রানের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১১.৫ ওভার ও ৬ উইকেট বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয়।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

ওরচেস্টারশায়ার বনাম বাংলাদেশ একাদশ (১২ জুন)

বাংলাদেশ একাদশ চার উইকেটে ওরচেস্টারশায়ারকে পরাজিত করে

ওরচেস্টারের কাউন্টি গ্রাউন্ডে ওরচেস্টারশায়ারকে পরাজিত করে ইংল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ তাদের প্রথম জয় পায়। সুশৃঙ্খল বোলিংয়ের প্রচেষ্টায় নাজমুল হোসেন শুরুতেই দুই উইকেট পান। বাংলাদেশ ৩৩ ওয়াইড ও ৬ নো-বল দিলে ওরচেস্টারশায়ার ১৬৮ রানে অল-আউট হয়। ধীরলয়ে শুরু করে জয়ের সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ একাদশ। হাবিবুল বাশারের অপরাজিত ২৬ ও জাভেদ ওমরের ৪৩ রানের সহায়তায় ১৪ ওভার বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

ইংল্যান্ড ব বাংলাদেশ (১৬ জুন)

১৬ জুন, ২০০৫
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ 
১৯০ (৪৫.২ ওভার)
 ইংল্যান্ড
১৯২/০ (২৪.৫ ওভার)
আফতাব আহমেদ ৫১ (৫৮)
এসজে হার্মিসন ৪/৩৯ (১০ ওভার)
ইংল্যান্ড ১০ উইকেটে বিজয়ী
দি ওভাল, লন্ডন
আম্পায়ার: আলীম দার (পাকিস্তান) ও এমআর বেনসন (ইংল্যান্ড)
ম্যাচসেরা: এমই ট্রেসকোথিক (ইংল্যান্ড)
  • ইংল্যান্ড টসে জয়ী হয়ে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

সমূহ বৃষ্টির আশঙ্কার মাঝে ওভালে ইংল্যান্ডের জন লুইসের বাংলাদেশের বিপক্ষে বিস্ময়কর ওডিআই অভিষেক হয়। চমৎকার উদ্বোধনী স্পেলে নাফিস ইকবালের উইকেট নেয়ার পূর্বে জাভেদ ওমর ও মোহাম্মদ আশরাফুলকে ধারাবাহিক ডেলিভারিতে বিদায় করেন। শুরুতেই মেঘলা আকাশের সহায়তা পেয়ে লুইস তার প্রধান অস্ত্র সুইং দিয়েছেন যা কেবলমাত্র অভিষিক্ত হবার ফলস্বরূপ ছিল। স্টিভ হার্মিসন তার সহজাত অস্থিরচিত্তের ছিলেন ও তুষার ইমরানকে স্ট্যাম্পের পিছনে গ্লাভসে বন্দি করার পূর্বে প্রথম পাঁচ বলেই নয় রান দেন। পনের ওভার শেষে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৭/৪। গড়পড়তা ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থানে থাকা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হাবিবুল বাশার হার্মিসনের শর্ট বল মোকাবেলা করলে জারেইন্ট জোন্সের ডাইভিংয়ে গ্লাভস বন্দী হন ও ১৯ রানে উইকেট থেকে বিদায় নিলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭২/৫ হয়। সত্যিকার অর্থেই লুইস তার দশ ওভারে সোজাসাপ্টা বোলিং করেন ও ৩/৩২ লাভ করেন। তন্মধ্যে, তার শেষ ওভারটি সফরকারীরা প্রতিরক্ষার জন্য অনুশীলনে নামেন। পরবর্তীতে উইকেট-রক্ষক খালেদ মাসুদ আউট হন। তিনি লেগসাইডে থাকা দুর্বলমানের বলকে উঠিয়ে মারতে গিয়ে ১ রানে বিদায় নেন। তবে আফতাব আহমেদ ও মোহাম্মদ রফিকের ধীরলয়ে দলীয় সংগ্রহ পুনরুদ্ধারের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের সুযোগ আসে। ৩০ ওভার পর পুনরায় বৃষ্টি ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

বৃষ্টি থামলে আফতাব ও রফিক ইংরেজ বোলারদের বিশেষত পল কলিংউডের উপর বেশ চড়াও হন। কিন্তু হার্মিসনের বলে লং লেগ অঞ্চলে রফিকের আউটে বাংলাদেশের ১৫২ রানে সাত উইকেটের পতন ঘটে। এর মাত্র কয়েক ওভার পরই ৫১ রানে আফতাবের সূক্ষ্ম রান-আউট হয়। হার্মিসনের শর্ট বলে দূর্বল শট মারতে গিয়ে খালেদ মাহমুদ গোল্ডেন ডাক পেলে চার উইকেট পান। তবে নাজমুল হোসেন ও মাশরাফি মর্তুজা ইংরেজ বোলারদেরকে হতাশ করেন। ড্যারেন গফ নাজমুলের গড়া ৬ রানের প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেঙ্গে দিলে বাংলাদেশ তাদের ইনিংস ১৯০ রানে শেষ করে। তবে বাংলাদেশীরা বোলিংয়ের মাধ্যমে কোনরূপ প্রতিরোধ করতে পারেনি। কেবলমাত্র মর্তুজা ওভারপ্রতি ছয় রানের কম দিয়েছেন। মাত্র ৭৬ বলে মার্কাস ট্রেসকোথিক তার নবম ওডিআই সেঞ্চুরি করেন। অ্যান্ড্রু স্ট্রস বলের সাথে মিল রেখে ৮২ তুলেন। অতিরিক্ত দশ রান আসলে ১৯২ রান সংগৃহীত হয়। জয়সূচক চার মেরে স্ট্রস দলকে ২৫ ওভারের মধ্যেই দশ উইকেট হাতে রেখে জয় এনে দেন।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

অস্ট্রেলিয়া ব বাংলাদেশ (১৮ জুন)

১৮ জুন, ২০০৫
স্কোরকার্ড
অস্ট্রেলিয়া 
২৪৯/৫ (৫০ ওভার)
 বাংলাদেশ
২৫০/৫ (৪৯.২ ওভার)
ডিআর মার্টিন ৭৭ (১১২)
তাপস বৈশ্য ৩/৬৯ (১০ ওভার)
মোহাম্মদ আশরাফুল ১০০ (১০১)
জেএন গিলেস্পি ২/৪১ (৯.২ ওভার)
বাংলাদেশ ৫ উইকেট বিজয়ী
সোফিয়া গার্ডেন্স, কার্ডিফ
আম্পায়ার: বিএফ বাউডেন (নিউজিল্যান্ড) ও ডিআর শেফার্ড (ইংল্যান্ড)
ম্যাচসেরা: মোহাম্মদ আশরাফুল (বাংলাদেশ)
  • অস্ট্রেলিয়া টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

সম্ভবত সীমিত ওভারের ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিপর্যয় ঘটান মাশরাফি মর্তুজা। সোফিয়া গার্ডেন্সে সমাগত দর্শকেরা দ্বিতীয় ওডিআইয়ের দ্বিতীয় বলে প্রথম অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে আউট করেন তিনি। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল শূন্য রান ও এটিই খেলার গতিধারাকে তুলে ধরতে সহায়তা করে। অধিকাংশ ব্যক্তিই আশা করেছিলেন যে, উদ্বোধনী খেলায় ইংল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশী টাইগারদের ১০ উইকেটে পরাজয়ের ফলে অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশকে ধুলোয় মিশিয়ে দেবে। কিন্তু মর্তুজার মেইডেন প্রাপ্তি কমপক্ষে কিছুটা হলেও আশার প্রদীপ জ্বালায়। ম্যাথু হেইডেন তাপস বৈশ্যের বলে অফের দিকে বাউন্ডারি হাঁকালে অস্ট্রেলিয়া সঠিক পথেই এগুচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু আরেকটি মেইডেন প্রাপ্তির পর ষষ্ঠ ওভারে তাপস বৈশ্যের বল রিকি পন্টিংয়ের প্যাডে আঘাত হানে। ফলাফল হিসেবে এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দেয়া হয় ও অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ অবিশ্বাস্যভাবে ৯/২-এ পরিণত হয়। পরবর্তীতে হেইডেন ও ড্যামিয়েন মার্টিনের সতর্কতামূলক ব্যাটিং করেন। কিন্তু বৈশ্যের কিছু খরুচে বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া কিছুটা উজ্জীবিত হয়ে উদ্ধারে সচেষ্ট হয়। ১৫ ওভারের সবটুকু সময়ই তারা নিজেদের রক্ষায় নামে। তাপসের নো-বলে হেইডেন কট হলেও উদ্ধার পান। কিন্তু ১৬শ ওভারে নাজমুল হোসেনের অফের দিকে যাওয়া বল ব্যাটের প্রান্ত স্পর্শ করলেও বোল্ড হয়ে তিনি ৩৭ রানে বিদায় নেন ও হেইডেন যেন নিজেকে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। মোহাম্মদ রফিক কিছু মিতব্যয়ী বোলিং প্রদর্শন করেন। নির্ধারিত দশ ওভারে ৩১ রান দেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মর্তুজা। শেষদিকে চমকপ্রদ বোলিং করেন। এরফলে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৪৯/৫। মার্টিন ৭৭ রানে বৈশ্যের বলে উইকেট হারান ও মাইকেল ক্লার্ক ৫৪ করে একই ব্যক্তির শিকারে পরিণত হন। মূলত মাইকেল হাসি ২১ বলে অপরাজিত ৩১ ও সাইমন ক্যাটিচ ২১ বলে অপরাজিত ৩৬ রান তুললে তারা লড়াইয়ের উপযোগী সংগ্রহ দাঁড় করায়।

তবে, এতে অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে খুব ধীরলয়ে যাত্রা শুরু করে। কেবলমাত্র তুষার ইমরান একটু তাড়াহুড়ো করে ব্র্যাড হগের বল থেকে রান উঠাচ্ছিলেন। কিন্তু হগ ২৪ রানে তুষারকে ক্যাটিচের হাতে কটে আউট করে প্রতিশোধ নেন। শুরুতে নাফিস ইকবাল ৮ রানে ও জাভেদ ওমর ৫১ বলে ১৯ রানে থার্ডম্যান অঞ্চলে ধরা পড়েন যা বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিক বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু এ খেলায় আরও কৌশলগাঁথা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। হগ ও ক্লার্ক ছয়টি ওয়াইড বল ছুঁড়লে রান ফুলেফেঁপে উঠে এবং মোহাম্মদ আশরাফুল আরেকবার নিজের স্বরূপ তুলে ধরেন যে তাকে কেন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানরূপে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশ দলের ইতিহাসে দ্বিতীয় ওডিআই শতক তুলে নেন। হাবিবুল বাশারের সাথে ১৩০ রানের বড় ধরনের জুটি গড়েন ও ক্রিজে মূল্যবান দুই ঘণ্টাকাল অতিবাহিত করেন। তবে, ৫৪ রানে তিনি রেহাই পান। ঠিক ১০০ রান তুলে লং অনে জেসন গিলেস্পি’র বলে আউট হন। তখনও বাংলাদেশের ১৭ বলে ২৩ রানের দরকার ছিল। কিন্তু আফতাব আহমেদ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালে অনুষ্ঠিত খেলা থেকে তার ধারাবাহিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করে চলছিলেন। আশরাফুলের লেগ বাইয়ে দায়িত্ব নেন। তারপর রফিককে স্ট্রাইক দেন। তিনি কভার ড্রাইভে চার নিয়ে আরও একটি লেগ-বাই নেন। একটি চার ও একটি বল রানবিহীন হলে ওভারটিতে ১০ রান উঠে। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, বাংলাদেশের তখন কেবলমাত্র ১২ বলে ১৩ রানের দরকার ছিল। পরবর্তীতে ম্যাকগ্রা চমৎকার ওভার করে মাত্র ছয় রান দেন। এতে রফিকের ব্যাটের প্রান্ত ছুঁয়ে চার রান হয়। শেষ ওভারে বাংলাদেশের সাত রানের প্রয়োজন পড়ে। আহমেদ ঐ ওভারের প্রথম বলেই মিডউইকেট বরাবর ছক্কা হাঁকান। ফলে আড়ম্বরপূর্ণভাবে বাংলাদেশ চার বল ও পাঁচ উইকেট বাকি থাকতেই জয় তুলে নিয়ে আজকের ক্রিকেটকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে। এ ফলাফলে পরের দিন ব্রিস্টলে অনুষ্ঠিত খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অসিদের জয়ের মাধ্যমে গ্রুপপর্বে টিকে থাকার লড়াইয়ে অংশ নিবে। (ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

ইংল্যান্ড ব বাংলাদেশ (২১ জুন)

২১ জুন, ২০০৫
স্কোরকার্ড
ইংল্যান্ড 
৩৯১/৪ (৫০ ওভার)
 বাংলাদেশ
২২৩ (৪৫.২ ওভার)
এজে স্ট্রস ১৫২ (১২৮)
নাজমুল হাসান ৩/৮৩ (১০ ওভার)
ইংল্যান্ড ১৬৮ রানে বিজয়ী
ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহাম
আম্পায়ার: বিএফ বাউডেন (নিউজিল্যান্ড) ও ডিআর শেফার্ড (ইংল্যান্ড)
ম্যাচসেরা: পিডি কলিংউড (ইংল্যান্ড)
  • ইংল্যান্ড টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

ট্রেন্ট ব্রিজে সুন্দর ব্যাটিং উপযোগী উইকেটে মাইকেল ভন প্রথম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। ইংল্যান্ডকে বড় ধরনের লক্ষ্যমাত্রা গড়ার দিকে ধাবিত হচ্ছিল ও তাদের ভাল অবস্থান টিকে রাখছিল। অ্যান্ড্রু স্ট্রসের আউট থেকে বঞ্চিত হবার পর কিছুটা নড়বড়ে সূচনার ঘটে। কিন্তু, মার্কাস ট্রেসকোথিক মাঠের সবদিক দিয়ে বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের বোলারদেরকে সাধারণমানের করে তোলেন। ট্রেসকোথিক ৫১ বলে অর্ধশতক করেন। ১৫শ ওভারের মধ্যে তাপস এক হাত নিয়ে নেন। ফলে ১৫ ওভার শেষে ইংল্যান্ড দ্রুতলয়ে বিনা উইকেটে ১২৮ রান তুলে। কয়েক ওভার পর নাজমুল হোসেন দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন। বড় ধরনের রান তুলতে গিয়ে শাহরিয়ার নাফিসের হাতে বন্দি হন ও ট্রেসকোথিকের ৮৫ রানের বিনোদনধর্মী ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।

নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ভন ক্রিজে এসে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েন এবং নাজমুলের বোলিংয়ে ব্যাটের প্রান্ত স্পর্শ করলে আট বল মোকাবেলা করলেও শূন্য রানে বিদায় নেন। এরপর অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের পতন ঘটে। আফতাব আহমেদের বলে অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের হাতে ধরার পড়ার পূর্বে তিনি ১৭ রান তুলেন। কিন্তু স্ট্রস ও পল কলিংউড দৃঢ়তাপূর্ণভাবে অবস্থা সামাল দিয়ে রান রেটকে ছয়ের উপরে নিয়ে যান। দলীয় চল্লিশতম ওভারে রফিকের কাছ থেকে এক রান তুলে ঠিক ১০০ বলে নিজ শতক তুলে নেন। পরের বলেই বাউন্ডারি মেরে কলিংউড তার অর্ধ-শতক পান। দশ ওভার পর ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৭০/৩। স্ট্রস ও কলিংউড কিছু মজা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন। পরের নয় ওভারে ১১৬ রান উঠে। নাজমুল ইনিংসের শেষ বলের দ্বিতীয়টিতে ১৫২ রানে আউট করেন। ১৯৮৩ সালের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের পর ইংল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তুলে। পাশাপাশি পল কলিংউড ১১২ রানে অপরাজিত থাকেন। কেবলমাত্র তার দ্বিতীয় ওডিআই সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ইংল্যান্ডকে তাদের ওডিআইয়ের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা তালিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯১/৪-এ চাঙ্গা করতে সহায়তা করেন।

ইংল্যান্ডের পক্ষে অভিষেক ঘটা ক্রিস ট্রেমলেট প্রায় ১৪০ কিমি/ঘ গতিবেগে দূর্দান্ত পেসে বোলিং শুরু করেন। অন্যদিকে অপরপ্রান্ত থেকে জন লুইস ফুলটস ও ওয়াইড দিয়ে যাচ্ছিলেন। দশম ওভারে ট্রেমলেট তার সফলতা পান। প্রথমে শাহরিয়ার নাফিসকে ব্যাটের অভ্যন্তর অংশের কানায় ও তারপর তুষার ইমরানকে গোল্ডেন ডাকে কট বিহাইন্ড করেন। ট্রেমলেটের বলে সঠিকভাবে বল মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্ট্যাম্পে আঘাত হলেও বেইল না পড়ায় মোহাম্মদ আশরাফুল নবজীবন লাভ করেন। পরের ২০ বলে তিনি রানের জন্য ধাবিত হন। বিশেষ করে স্টিভ হার্মিসনকে বেছে নেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পুরো খেলার তুলনায় তিনি আজ আরও অতিরিক্ত ১৭ বল বেশি খেলেন। মাত্র ২১ বলে বাংলাদেশীদের পক্ষে দ্রুততম ওডিআই অর্ধ-শতক করেন। ৫১ বলে ৯৪ রান তোলার পর কলিংউডের বলে একটি উচ্চাভিলাষী স্ট্রোক মারতে গিয়ে বোল্ড হন।

২৬ ওভার পর ইংল্যান্ড দলের উপর থেকে স্নায়ুসমেত চাপ দূরীভূত হয়। শেষ ২৪ ওভারে ওভারপ্রতি দশ রানের প্রয়োজন পড়ে ও সাত উইকেট হাতে থাকে। ক্রিজে অবস্থান করে জাভেদ ওমর ও হাবিবুল বাশার- উভয়েই ওভারে চারের কম স্ট্রাইক রেট তুলেন। তখন একমাত্র প্রশ্ন জাগাচ্ছিল যে বাংলাদেশ কি ইংরেজদের কাছ থেকে বোনাস পয়েন্ট রাখতে পারবে! কিন্তু, কলিংউড দ্রুত দুই উইকেট তুলে নিলে তা অসম্ভব হয়ে পড়ে ও তাদের সংগ্রহকে ১৮০/৫-এ রূপান্তর করেন। পরের ওভারে জাভেদ ওমর তার উইকেট হারালে বাংলাদেশীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। অবশেষে কলিংউড ৬/৩১ পেয়ে তার কোটা শেষ করেন। খালেদ মাসুদ এবং মাশরাফি মর্তুজারও উইকেট নেন। মর্তুজা তার ১০ ওভারের বোলিং স্পেলের শেষ বলে আউট হন। এরফলে ওডিআইয়ের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সেঞ্চুরিসহ ছয় উইকেট লাভের বিরল কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন কলিংউড। গত খেলার জয়ের নায়ক হার্মিসন নিজের বোলিং ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হলে আট ওভারে ৫৫ রান দেন। তবে তাকে দশ ওভারের সবটুকু করতে হয়নি। ট্রেমলেট ১৯ রানে মোহাম্মদ রফিককে বিদায় করেন। এরফলে বাংলাদেশের ইনিংস ২২৩ রানে শেষ হয়। তখনও তারা ১৬৮ রানে পিছিয়ে ছিল। সর্বোপরি, ইংল্যান্ড তাদের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের দারুণ ব্যাটিং প্রদর্শনী ও লুইসের তুলনায় অভিষিক্ত ট্রেমলেটের বিস্ময়কর বোলিংয়ের সন্ধান পায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলকে আশরাফুলের চলনসই ব্যাটিং ও নাজমুলের তিন উইকেটপ্রাপ্তি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

অস্ট্রেলিয়া ব বাংলাদেশ (২৫ জুন)

২৫ জুন, ২০০৫
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ 
১৩৯ (৩৫.২ ওভার)
 অস্ট্রেলিয়া
১৪০/০ (১৯ ওভার)
মোহাম্মদ আশরাফুল ৫৮ (৮৬)
এ সাইমন্ডস ৫/১৮ (৭.২ ওভার)
অস্ট্রেলিয়া ১০ উইকেটে বিজয়ী
ওল্ড ট্রাফোর্ড, ম্যানচেস্টার
আম্পায়ার: বিএফ বাউডেন (নিউজিল্যান্ড) ও জেডব্লিউ লয়েড (ইংল্যান্ড)
ম্যাচসেরা: এ সাইমন্ডস (অস্ট্রেলিয়া)
  • অস্ট্রেলিয়া টসে জয়ী হয়ে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

অস্ট্রেলিয়া অস্বাভাবিকভাবে ১০ উইকেটের জয় নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে পারস্পরিক মুখোমুখিতে রেকর্ড গড়ে ও ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে ১-১ সমতা আনে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে মেঘাচ্ছন্ন আকাশে রিকি পন্টিং বিজ্ঞতাসূচক সিদ্ধান্ত নেন ও বোলিং করার দিকে অগ্রসর হন। এর পরপরই ব্রেট লি’র শর্ট বলে বাংলাদেশের ব্যাটিং দুঃশ্চিন্তায় আক্রান্ত হয়। তারা ছয় ওভার পার করে। কিন্তু ইনসুইঙ্গারের কবলে পড়ে জাভেদ ওমর ২০ বলে ৩ রান তুলে ফিরে যান। তুষার ইমরান লি’র পরবর্তী শিকারে পরিণত হন। অনেকেই আশা করেছিলেন যে এই বোধহয় আসা-যাওয়ার খেলা শুরু হলো বলে! কিন্তু শাহরিয়ার নাফিসমোহাম্মদ আশরাফুল কিছু বিশেষ স্ট্রোকে দর্শকদের আচরণকে সংযত করেন। আশরাফুল ব্যাটের শীর্ষপ্রান্তের সাহায্যে দুইটি ছক্কা হাঁকান। লি একাদশ ওভারে ২০ রান দেন। ১৫ ওভার শেষে চা বিরতিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৬/২। শেষ ৩৯ বলে ৫৩ রান যুক্ত হয়। তাস্বত্ত্বেও পন্টিং স্পিনার ব্র্যাড হগ ও অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে ডেকে আনেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডের পিচে তারা ব্যাপকভাবেই বল ঘুরাতে সক্ষম হন। সাইমন্ডসের ইয়র্কার বলটি দেরিতে খেললে শাহরিয়ার ৪৭ রানে বোল্ড হন। পরের বলেই তিনি স্বাভাবিক খেলা থেকে ক্রমশ দূরে চলে যাওয়া অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের উইকেট নিলে উইকেট দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। সাইমন্ডস ১৮ রানে পাঁচ উইকেট পান। হগ ২৯ রানে তিন উইকেট নিলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৩৭/৬-এ দাঁড়ায়। খালেদ মাসুদ হগের বলে বোল্ড হলে তিন ওভারের ব্যবধানে ১৩৯ রানে অল-আউট হয়। কেবলমাত্র আশরাফুল ৫৮ রান তুলেন এবং অন্য কেউই ধীরগতিসম্পন্ন অস্ট্রেলীয় বোলারদেরকে শক্তভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষমতা দেখাননি।

শুরুর দিকে বাংলাদেশ অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে কিছুটা ভোগান্তিতে রাখে, বিশেষত ফাস্ট বোলার মাশরাফি মুর্তজা তাকে চাপে রাখেন। উদ্বোধনী ওভারগুলোয় বেশ কয়েকবার তাকে নাজেহাল করেছেন গিলক্রিস্ট। কিন্তু ম্যাথু হেইডেন ক্রিজে এসে স্বরূপ ধারণ করেন। নাজমুল হোসেনের খারাপ বলগুলো খেলতে থাকেন ও তিন ওভারে ২৯ রান নিয়ে নেন। তাদের এ ধ্বংসলীলা কেউই আটকাতে সক্ষম হননি। হেইডেন ও গিলক্রিস্ট কিছুক্ষণ পরই ক্রমাগতভাবে রান তুলতে থাকেন ও ২০ ওভারের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যায়। ফলশ্রুতিতে তিন পয়েন্ট পেয়ে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মধ্যকার পার্থক্য পূরণে সচেষ্ট হয়। এ পরিস্থিতিতে সিরিজ শুরুর পূর্বেকার আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের দিকে আরও সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ ক্রমাগত পরাজিত হতে থাকে এবং ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সম্মুখের দিকে ধাবিত হয়।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

ইংল্যান্ড ব বাংলাদেশ (২৬ জুন)

২৬ জুন, ২০০৫
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ 
২০৮/৭ (৫০ ওভার)
 ইংল্যান্ড
২০৯/৫ (৩৮.৫ ওভার)
জাভেদ ওমর ৮১ (১৫০)
এ ফ্লিনটফ ৪/২৯ (৯ ওভার)
এজে স্ট্রস ৯৮ (১০৪)
মানজারুল ইসলাম রানা ৩/৫৭ (৯.৫ ওভার)
ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে বিজয়ী
হেডিংলি স্টেডিয়াম, লিডস
আম্পায়ার: আলীম দার (পাকিস্তান) ও এমআর বেনসন (ইংল্যান্ড)
ম্যাচসেরা: এজে স্ট্রস (ইংল্যান্ড)
  • বাংলাদেশ টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশকে পরাজিত করতে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী বোলারদের সপ্রতিভ প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় যাতে তারা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের চূড়ান্ত খেলায় অংশ নিতে পারে। হাবিবুল বাশার টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন। কিন্তু ইংরেজ উদ্বোধনী বোলাদের কাছ থেকে শাহরিয়ার নাফিস, জাভেদ ওমর ও তুষার ইমরানকে মূল্য দিতে হয়। বিশেষত আঘাত থেকে ফিরে এসে সাইমন জোন্স অস্থির মেজাজের ছিলেন। খেলায় তিনি আটটি ওয়াইড বল ছোঁড়েন। অন্যদিকে ড্যারেন গফ পার্কে মাত্র নিজেকে আটকানোর চেষ্টায় ছিলেন। এ অবস্থায় জোন্সের বলে নাফিস কাট করতে গেলে স্লিপে মার্কাস ট্রেসকোথিকের হাতে ধরা পড়েন। ফলে, বাংলাদেশকে পুনরায় ইনিংস গুছাতে হয়। ১৬ ওভার শেষে তারা ৮২/১ তোলে ও বড় ধরনের লক্ষ্যমাত্রার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল।

তবে, ঐ সময়ে মাত্র ৫০ ঊর্ধ্ব ওডিআই স্ট্রাইক রেটের অধিকারী তাদের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জাভেদ তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন ও অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের কাছ থেকে দ্বিগুণ ধ্বংসাত্মক মনোভাবে প্রথমে তুষারকে ব্যাটের ভিতরের অংশে লেগে বোল্ড ও তারপর মোহাম্মদ আশরাফুলকে বডিলাইন-ধাঁচে গোল্ডেন ডাকে বিদায় করেন। এতেই বাংলাদেশ পিছনে চলে যায় ও অ্যাশলে জাইলসের ধৈর্যশীল বোলিং এবং অধিনায়ক হাবিবুলকে ১০ রানে পল কলিংউড রান-আউট করেন। আফতাব আহমেদ ১৫ রানে বিদায় নেবার পর উইকেট-রক্ষক খালেদ মাসুদের উপর দায়িত্ব বর্তায়। তিনি বাংলাদেশকে ২০০ রানের কোটা অতিক্রমণে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে গফকে একহাত নিয়ে ৪৩ বলে অপরাজিত ৪২ রানের ইনিংস করেন। ফ্লিনটফ ইনিংসে আরও দুইটি উইকেট পান। সবমিলিয়ে তিন ২৯ রানে চার উইকেট পান। জাভেদকে ৮১ রানে ও মাশরাফিকে ১ রানে বোল্ড করেন তিনি।

ইংল্যান্ড খুব সুন্দরভাবে তাদের ইনিংস শুরু করে। বাংলাদেশের বিপক্ষে পূর্ববর্তী খেলাগুলোর রেশ ধরে ট্রেসকোথিক ও অ্যান্ড্রু স্ট্রস ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেন। প্রথম উইকেটে এ জুটি ৯৯ রান তুলেন। অবশেষে ট্রেসকোথিক মোহাম্মদ রফিকের বলে ৪৩ রানে কট বিহাইন্ডে পরিণত হন। কিন্তু স্পিনাররা উইকেট লাভ করলেও তারা আরও আগ্রাসী হন। বিশেষ করে স্ট্রস রানের পিছনে ছুটছিলেন ও ৯৮ রানে বোল্ড হবার পূর্বে সুইপ শটে দলের জয়সহ বোনাস পয়েন্ট এবং নিজের সেঞ্চুরির চেষ্টা চালান। এ জয়টি বেশ সহজাত প্রবৃত্তির বিপক্ষে হয়। জারিয়েন্ট জোন্স মানজারুল ইসলাম রানার তিন বল মোকাবেলা করেন ও ওয়াইড বলে শেষ হয়। ইংল্যান্ডের অতৃপ্তি ছিল ফ্লিনটফের স্বাভাবিক ক্রীড়াশৈলীতে না আসা। তিনি মাত্র ২২ রান তুলেন যদিও তা খেলায় খুব কমই প্রভাব বিস্তার করেছে। ইংল্যান্ড বোনাস পয়েন্ট পায় ও চূড়ান্ত খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। এরফলে শেষ দুই খেলা তেমন গুরুত্ব পায়নি।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

অস্ট্রেলিয়া ব বাংলাদেশ (৩০ জুন)

৩০ জুন, ২০০৫
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ 
২৫০/৮ (৫০ ওভার)
 অস্ট্রেলিয়া
২৫৪/৪ (৪৮.১ ওভার)
শাহরিয়ার নাফিস ৭৫ (১১৬)
এসআর ওয়াটসন ৩/৪৩ (১০ ওভার)
অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে বিজয়ী
সেন্ট লরেন্স গ্রাউন্ড, ক্যান্টারবারি
আম্পায়ার: আলীম দার (পাকিস্তান) ও জেডব্লিউ লয়েডস (ইংল্যান্ড)
ম্যাচসেরা: শাহরিয়ার নাফিস (বাংলাদেশ)
  • অস্ট্রেলিয়া টসে জয়ী হয়ে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের রাউন্ড রবিন পদ্ধতির শেষ খেলায় অস্ট্রেলীয়রা প্রত্যাশিত জয় তুলে নয়ে। তবে এ খেলায় ইংল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতি দেখা যায়। প্রথম আন্তর্জাতিকে ইংরেজদের বিপক্ষে তারা নো-বলের উপর দুইবার চড়াও হয়। কিন্তু শেষ খেলায় ব্রেট লিজেসন গিলেস্পি শুরু থেকেই তাদেরকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রাখে। শেন ওয়াটসনের সহায়তা তারা ৭৫/৫ রান দিয়ে ছড়ি ঘোরায়। বাংলাদেশ পরবর্তীতে ২৫০/৮ তুলে নিজেদেরকে গুছিয়ে নেয়। তত্ত্বগতভাবে খেলায় একটা সুযোগ তৈরি করে। তবে, তারা খুবই নড়বড়ে অবস্থায় খেলা শুরু করে। তৃতীয় ওভারেই ম্যাথু হেইডেনের হাত থেকে রক্ষা পান জাভেদ ওমর। পরবর্তী আট বলে কোন রান না দিয়ে জেসন গিলেস্পি’র হাতে আউট হন। চমৎকার সিরিজ কাটানো এ বাংলাদেশীর শেষটি ভালো হয়নি। তুষার ইমরানমোহাম্মদ আশরাফুলকে পূর্ণাঙ্গ মানের ডেলিভারিতে ব্রেট লি আউট করেন। বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯/৩ এবং সবগুলো উইকেটই একই অবস্থান থেকে নেয়া হয়।

অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ঝড়োগতির ৩০ রান দলের উদ্বেগ কিছুটা দূর করতে সহায়তা করে। তন্মধ্যে ব্রেট লি’র এক ওভারে বাশার ১৬ রান তুলেন। কিন্তু শেন ওয়াটসনের বাউন্সারকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারেনন ও অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ক্যাচ নেন। আফতাব আহমেদ ৭ রানে স্থির থাকেন এবং শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফিস দ্রুতগতিতে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন ও উইকেট-রক্ষক খালেদ মাসুদ ক্রিজে ছিলেন। তবে, এ দু’জন নিখুঁত ৯৪ রানের জুটি গড়লে তাদের দলকে দৃঢ়তাপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যান। অবশেষে ৭৫ রানে ফেরৎ যান শাহরিয়ার। শেন ওয়াটসনের শর্ট বলে ব্যাটের প্রান্ত স্পর্শ করে উইকেট-রক্ষকের কাছ যায় যা ডিসমিসালে স্বাভাবিক পদ্ধতিরূপে বিবেচিত। তবে, তাদের এ জুটি বাংলাদেশকে আশার আলো জাগায় ও মোহাম্মদ রফিক ওয়াটসনের বলে ছক্কা হাকিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেন। আরও দুই উইকেট পতনের পরও রফিক ও খালেদ মাহমুদের কল্যাণে বাংলাদেশ ২৫০/৮ তুলে পুনরুদ্ধার করে যা তাড়া করতে কিছুটা কৌশলের প্রয়োজন পড়ে। তন্মধ্যে খালেদ মাহমুদ শেষ বলে মিড-অনে ধরা পড়েন।

প্রথম ওভারেই মাশরাফি মর্তুজা বারো রান দিয়ে দেন এবং খেলার গতিধারা অস্ট্রেলিয়ার দিকে দুলতে থাকে। মর্তুজা ঘুরে দাঁড়ান ও ব্যাটের বাইরের অংশ স্পর্শ করে ম্যাথু হেইডেনকে উইকেট-রক্ষক মাসুদের হাতে ১ রানে ফেরত পাঠান। চার বল পর মর্তুজার বলে অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের প্যাডে আঘাত হানলে তার এ জোরালো আবেদনটি বেশ উঁচুতে বল পড়ায় গৃহীত হয়নি। গিলক্রিস্ট ও পন্টিং জুটি বেশ ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে, গিলক্রিস্ট বেশ কয়েকবার বলকে শূন্যে মারতে গিয়ে রক্ষা পান কিন্তু দশম ওভারে স্লিপে খালেদ মাহমুদের কিছুটা সন্দেহজনক ক্যাচে ৪৫ রানে ফেরত যান। আবহাওয়াও খেলায় হুমকি হিসেবে আসতে থাকে। আবহাওয়ার উন্নতি হবার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ারও সুযোগ বাড়তে থাকে। ১৫ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮৩/৩। ড্যামিয়েন মার্টিন ৯ রানে আউট হলেও ওভারপ্রতি পাঁচ রানের কম প্রয়োজন পড়ে। তবে মিতব্যয়ী বোলিং ও অস্ট্রেলিয়ার ঝুঁকিহীন ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পুনরায় সুযোগ লাভ করতে থাকে। পন্টিং ও মাইকেল ক্লার্ক রানরেটকে ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি নিয়ে যান। কিন্তু খালেদ মাহমুদের বোলিংয়ে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস আকাঙ্ক্ষিত জয়ের দিকে নিয়ে যান। অস্ট্রেলিয়া প্রয়োজনীয় রান তোলায় সচেষ্ট হয় ও ১১ বল এবং ছয় উইকেট বাকি থাকতেই জয় পায়। মজার ব্যাপার হলো - বাংলাদেশের শাহরিয়ার নাফিস দলের ৭৫/৫ হবার পর খেলাকে ধরে রাখতে প্রয়াস চালানোর প্রেক্ষিতে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।(ক্রিকইনফো স্কোরকার্ড)

পরিসংখ্যান

ব্যাটিং

বাংলাদেশ - প্রথম-শ্রেণীর ব্যাটিং গড়
খেলোয়াড় খেলা ইনিংস অপরাজিত রান গড় বিএফ এসআর সর্বোচ্চ ১০০ ৫০
জাভেদ ওমর ৩৬৫৫২.১৪৬৮২৫৩.৫১১৬৭
মুশফিকুর রহিম ২১৮৫৪.৫০৪০১৫৪.৩৬১১৫*
হাবিবুল বাশার ১৯৩৩২.১৬২০২৯৫.৫৪৭৫
আফতাব আহমেদ ১৯০৩১.৬৬২৬৫৭১.৬৯৮২*
নাফিস ইকবাল ১৭২১৯.১১৩৬৬৪৬.৯৯৪৬
মোহাম্মদ আশরাফুল ১৬৯২১.১২২৫৪৬৬.৫৩১০২
খালেদ মাসুদ ১৪৬২৪.৩৩৪০৬৩৫.৯৬৪৪
মোহাম্মদ রফিক ৮৪১৪.০০৮৭৯৬.৫৫৫৪
শাহরিয়ার নাফিস ৮২২০.৫০১৩৩৬১.৬৫৫০
রাজিন সালেহ ৭১১১.৮৩২৩৯২৯.৭০৩০*
তাপস বৈশ্য ৪০২০.০০৫৫৭২.৭২১৬*
মাশরাফি বিন মর্তুজা ৩৯৫.৫৭৮৯৪৩.৮২২১
শাহাদাত হোসেন ২০৬.৬৬৪৪৪৫.৪৫১২*
আনোয়ার হোসেন মনির ১৮৯.০০৬৪২৮.১২১৩
এনামুল হক জুনিয়র ৩.৫০২৬২৬.৯২
তালহা জুবায়ের ২.৫০১৮২৭.৭৭

বোলিং

বাংলাদেশ - প্রথম-শ্রেণীর বোলিং গড়
খেলোয়াড় খেলা ওভার মেইডেন রান উইকেট বিবি গড় ইকো এসআর ৫-উইঃ ১০-উইঃ
মাশরাফি বিন মর্তুজা ৯৫১৯৩৪৬১০-৫২৭.৬৬৩.৬৪৯৫.০০
শাহাদাত হোসেন ৪৯২১৮৪-৩৩৫৪.৫০৪.৪৪৭৩.৫০
এনামুল হক জুনিয়র ৩৭.৫১৯৫৩-১৭৪৪৮.৭৫৫.১৫৫৬.৭৫
আনোয়ার হোসেন মনির ৫৭৩২৫১০-১১৩৮১.২৫৫.৭০৮৫.৫০
তাপস বৈশ্য ৩৯২০২২-৬৯৬৭.৩৩৫.১৭৭৮.০০
মোহাম্মদ রফিক ৮৫.৫৩৩১২-৪৭১১০.৩৩৩.৮৫১৭১.৬৬
আফতাব আহমেদ ৩৩১৬১২-৫০৫৩.৬৬৪.৮৭৬৬.০০
তালহা জুবায়ের ২২১৩৬১৫১৩৬.০০৬.১৮১৩২.০০
মোহাম্মদ আশরাফুল ১৬--৫.৩৩-
রাজিন সালেহ ১২--৬.০০-

ব্যাটিং

বাংলাদেশ - টেস্ট ব্যাটিং গড়
খেলোয়াড় খেলা ইনিংস অপরাজিত রান গড় বিএফ এসআর সর্বোচ্চ ১০০ ৫০
জাভেদ ওমর ১৫৫৩৮.৭৫২৯৫৫২.৫৪৭১
আফতাব আহমেদ ১৪০৪৬.৬৬১৬০৮৭.৫০৮২*
খালেদ মাসুদ ৯৭২৪.২৫২৫৮৩৭.৫৯৪৪
হাবিবুল বাশার ৮৮২২.০০৮১১০৮.৬৪৬৩
নাফিস ইকবাল ৩৩৮.২৫৮৮৩৭.৫০১৫
মোহাম্মদ আশরাফুল ২৩৫.৭৫৫৬৪১.০৭১২
মুশফিকুর রহিম ২২১১.০০৬৫৩৩.৮৪১৯
আনোয়ার হোসেন মনির ১৮৯.০০৬৪২৮.১২১৩
তাপস বৈশ্য ১৮৯.০০২৮৬৪.২৮১৮
মোহাম্মদ রফিক ১২৩.০০১৬৭৫.০০
রাজিন সালেহ ৪.৫০৫০১৮.০০
শাহাদাত হোসেন ৬.০০১৩৪৬.১৫
মাশরাফি বিন মর্তুজা ০.২৫১২৮.৩৩

বোলিং

বাংলাদেশ - টেস্ট বোলিং গড়
নাম খেলা ওভার মেইডেন রান উইকেট বিবি গড় ইকো এসআর ৫-উইঃ ১০-উইঃ
মাশরাফি বিন মর্তুজা ৫১১০১৯৮২-৯১৪৯.৫০৩.৮৮৭৬.৫০
মোহাম্মদ রফিক ৫৯২৫৭১-১৫০২৫৭.০০৪.৩৫৩৫৪.০০
আফতাব আহমেদ ১৬১০১১-৫৬১০১.০০৬.৩১৯৬.০০
শাহাদাত হোসেন ১২১০১--৮.৪১-
আনোয়ার হোসেন মনির ৩৭২১২--৫.৭২-
তাপস বৈশ্য ১৫৮০--৫.৩৩-

ব্যাটিং

ইংল্যান্ড - টেস্ট ( ও প্রথম-শ্রেণী) ব্যাটিং গড়
খেলোয়াড় খেলা ইনিংস অপরাজিত রান গড় বিএফ এসআর সর্বোচ্চ ১০০ ৫০
মার্কাস ট্রেসকোথিক ৩৪৫১৭২.৫০৪০৭৮৪.৭৬১৯৪
ইয়ান বেল ২২৭-২৬২৮৬.৬৪১৬২*
মাইকেল ভন ১৬৪৮২.০০২১৪৭৬.৬৩১২০
গ্রাহাম থর্প ১০৮-১৫৭৬৮.৭৮৬৬*
অ্যান্ড্রু স্ট্রস ৭৭৩৮.৫০১২৩৬২.৬০৬৯
অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ --
জারিয়েন্ট জোন্স --
গ্যারেথ বেটি --
ম্যাথু হগার্ড --
স্টিভ হার্মিসন --
সাইমন জোন্স --

বোলিং

ইংল্যান্ড - টেস্ট ( ও প্রথম-শ্রেণী) বোলিং গড়
খেলোয়াড় খেলা ওভার মেইডেন রান উইকেট বিবি গড় ইকো এসআর ৫-উইঃ ১০-উইঃ
ম্যাথু হগার্ড ৫০.১১৫১৮১১৪৫-৭৩১২.৯২৩.৬০২১.৫০
স্টিভ হার্মিসন ৫৩.৫২০১১০৫-৩৮২০.১০৩.৭৩৩২.৩০
অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ৩৬.৫১৩৮৩-৪৪১৫.৩৩৩.৭৪২৪.৫৫
সাইমন জোন্স ৩৫১০১০৮৩-২৯২১.৬০৩.০৮৪২.০০
গ্যারেথ বেটি ১৫৪৪১-৪৪৪৪.০০২.৯৩৯০.০০

ব্যাটিং

বাংলাদেশ - লিস্ট-এ ব্যাটিং গড়
খেলোয়াড় খেলা ইনিংস অপরাজিত রান গড় বিএফ এসআর সর্বোচ্চ ১০০ ৫০
হাবিবুল বাশার ৯৪৪৭.০০১৩৬৬৯.১১৪৯
আফতাব আহমেদ ৯৩৩১.০০১১১৮৩.৭৮৫১
মোহাম্মদ রফিক ৬৬৩৩.০০১০০৬৬.০০৩৬
জাভেদ ওমর ৬৫২১.৬৬৯৮৬৬.৩২৪৩
তুষার ইমরান ৫৭১৯.০০১১০৫১.৮১৪০
মোহাম্মদ আশরাফুল ৪০২০.০০৪০১০০.০০৪০
মাশরাফি বিন মর্তুজা ২৯২৯.০০২৫১১৬.০০২৯*
নাফিস ইকবাল ১৯৯.৫০৩১৬১.২৯১৯
মানজারুল ইসলাম রানা ১৬-২২৭২.৭২১৬*
খালেদ মাহমুদ ১১৫.৫০২৬৪২.৩০১১
নাজমুল হোসেন ৭.০০৩৩২১.২১
রাজিন সালেহ ২.৫০২৮১৭.৮৫
খালেদ মাসুদ ১.০০১৪১৪.২৮
শাহরিয়ার নাফিস ০.০০০.০০
তাপস বৈশ্য --

বোলিং

বাংলাদেশ - লিস্ট-এ বোলিং গড়
খেলোয়াড় খেলা ওভার মেইডেন রান উইকেট বিবি গড় ইকো এসআর ৪-উইঃ ৫-উইঃ
নাজমুল হোসেন ২৩১২২৩-২৪২৪.৪০৫.৩০২৭.৬০
খালেদ মাহমুদ ১৬.১১০৬৩-২৯৩৫.৩৩৬.৫৫৩২.৩৩
মানজারুল ইসলাম রানা ২১২-২১১০.৫০২.৩৩২৭.০০
মাশরাফি বিন মর্তুজা ১৬৮৬১-৫৩৮৬.০০৫.৩৭৯৬.০০
আফতাব আহমেদ ১৫.৫৮০১-৪০৮০.০০৫.০৫৯৫.০০
তাপস বৈশ্য ১০৪১১-৪১৪১.০০৪.১০৬০.০০
মোহাম্মদ রফিক ১৫৬৯--৪.৬০-
রাজিন সালেহ --২.০০-
হাবিবুল বাশার ০.১--১২.০০-

ব্যাটিং

বাংলাদেশ - ওডিআই ব্যাটিং গড়
খেলোয়াড় খেলা ইনিংস অপরাজিত রান গড় বিএফ এসআর সর্বোচ্চ ১০০ ৫০
আফতাব আহমেদ ৫১৫১.০০৫৮৮৭.৯৩৫১
মোহাম্মদ রফিক ৩০৩০.০০৫৭৫২.৬৩৩০
মাশরাফি বিন মর্তুজা ২৯-২৪১২০.৮৩২৯*
নাফিস ইকবাল ১৯১৯.০০২৮৬৭.৮৫১৯
হাবিবুল বাশার ১৯১৯.০০২৮৬৭.৮৫১৯
জাভেদ ওমর ১৩১৩.০০১৯৬৮.৪২১৩
তুষার ইমরান ১০১০.০০২৭৩৭.০৩১০
নাজমুল হোসেন ৬.০০২৩২৬.০৮
খালেদ মাসুদ ১.০০১০১০.০০
খালেদ মাহমুদ ০.০০০.০০
মোহাম্মদ আশরাফুল ০.০০০.০০

বোলিং

বাংলাদেশ - ওডিআই বোলিং গড়
খেলোয়াড় খেলা ওভার মেইডেন রান উইকেট বিবি গড় ইকো এসআর ৪-উইঃ ৫-উইঃ
মাশরাফি বিন মর্তুজা ৩৩--৫.৫০-
নাজমুল হোসেন ৬১--৮.৭১-
খালেদ মাহমুদ ৩৯--১৩.০০-
মোহাম্মদ রফিক ৪০--৬.৬৬-
আফতাব আহমেদ ২.৫১৪--৪.৯৪-

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

    • Playfair Cricket Annual 2006
    • Wisden Cricketers Almanack 2006

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.