অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম হল বাইরের কোনো উদ্দীপনা ছাড়াই মস্তিস্কে বাস্তবের মত অনুভূতি প্রত্যক্ষণের প্রক্রিয়া। অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম খুবই স্পষ্ট ও বাস্তবসদৃশ স্থায়ী হয়ে থাকে। তাছাড়া অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম বাস্তব জগতের স্থানও দখল করে। তবে অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমকে বাস্তব জীবনে আমাদের পরিচিত ঘটনাগুলো থেকে আলাদা করা হয়ে থাকে। যেমন, ঘুম আর অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম এক নয়। কারণ ঘুমের সাথে জেগে থাকার সম্পর্ক নেই। আবার ছদ্ম-অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম আর এই নিবন্ধে আলোচ্য অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমও এক নয়। কেননা, ছদ্ম-অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম বাস্তব অনুভূতির হুবুহু প্রতিচ্ছবি তৈরি করে না এবং এটি অবাস্তব কল্পনা হিসেবে গৃহীত হয়। অনুরূপ, বিভ্রম ও অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমও এক নয়। যেহেতু বিভ্রমের ক্ষেত্রে বাস্তব জগত অনেকটা বিকৃত দেখা যায়। মানসচিত্রও অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম থেকে আলাদা। কারণ মানসচিত্রও বাস্তব অনুভূতির হুবুহু অনুকরণ করে না এবং এটি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন হয়।[1] তাছাড়া অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম মতিবিভ্রম (Delusion) থেকেও ভিন্ন। মতিবিভ্রমে বাস্তব জগতের উদ্দীপক থাকে এবং অনুভূতিও একদম বাস্তব হয়। বাস্তব উদ্দীপক ও এর থেকে প্রাপ্ত অনুভূতি থেকেই বাড়তি (সাধারণত উদ্ভট) কিছু ব্যক্তির মাথায় ঢুকে যায়।
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম | |
---|---|
নিজের অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম নিয়ে বহুসংখ্যক চিত্রাঙ্কনকারী জার্মান চিত্রশিল্পী আউগুস্ট নাটেরারের আঁকা My eyes at the moment of the apparitions | |
বিশেষত্ব | মনোবিজ্ঞান |
দেহের যেকোনো সংবেদী অংশেই অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম ঘটতে পারে। যেমন, দর্শন-ইন্দ্রিয়, শ্রবণ-ইন্দ্রিয়, ঘ্রাণ-ইন্দ্রিয়, স্বাদ-ইন্দ্রিয়, স্পর্শ-ইন্দ্রিয়, স্বয়ংক্রিয় চলন-ইন্দ্রিয়, ভারসাম্য রক্ষাকারী ইন্দ্রিয়, ক্ষতিরোধক ইন্দ্রিয়, তাপ-ইন্দ্রিয় এবং সময়জ্ঞান-ইন্দ্রিয়।
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমের একটি হালকা পর্যায় আছে যাকে আমরা ভ্রম বা অনুভূতির বিশৃঙ্খলাও বলতে পারি। এটিও উপর্যুক্ত স্নায়ুগুলোতে ঘটতে পারে। এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রান্তিক দর্শনশক্তির মাধ্যমে কোনকিছু নড়তে দেখা, ক্ষীণ শব্দ বা ঝিরঝির আওয়াজ শুনতে পাওয়া। ভগ্নমনস্কতা রোগে অমূলক শ্রবণ বিভ্রম খুবই সাধারণ ব্যাপার। ভগ্নমনস্ক রোগীর এই অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমের কল্পিত ধ্বনিটি রোগীর উপকারীও হতে পারে (যেমন, তাকে ভাল ভাল উপদেশ দিতে পারে) আবার ক্ষতিকরও হতে পারে, রোগীকে সারাক্ষণ অভিশাপ দিতে পারে ইত্যাদি। ক্ষতিকর অমূলক শ্রবণ বিভ্রম ঘন ঘন শ্রুত হতে থাকে। মনে হতে পারে রোগীর পেছন থেকে কিছু মানুষ অনবরত কথা বলে যাচ্ছে। অমূলক শ্রবণ বিভ্রমের মত, শব্দের উৎসের প্রতিকৃতিও রোগীর পেছনে থাকার অনুভূতি হতে পারে। মনে হতে পারে শব্দ করা মানুষগুলো পেছন থেকে লক্ষ করছে বা তাকিয়ে আছে। এটাও সাধারণত ক্ষতিকর অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম হিসেবেই ঘটে। রোগীর এমনও হতে পারে যে, অমূলক শ্রবণ বিভ্রম এবং পেছন থেকে কাউকে দেখতে পাওয়ার ঘটনা একই সাথে ঘটতে পারে।
তন্দ্রাকালীন (হিপনাগজিক) এবং অর্ধজাগ্রত (হিপনোপম্পিক) অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমকে সাধারণ ঘটনা হিসেবেই গণ্য করা হয়। তন্দ্রাকালীন অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম ঘটতে পারে মানুষ যখন ঘুমাতে যায়। আর অর্ধজাগ্রত অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম ঘটে ঘুম থেকে ওঠার ঠিক আগে। মাদক সেবনের মাধ্যমেও অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম ঘটতে পারে (বিশেষত চিত্তবিকারকারক মাদকসমূহ)। এছাড়া অপর্যাপ্ত ঘুম থেকে, মনোবৈকল্য (Psychosis) থেকে, স্নায়ুকোষ বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা থেকে, ডেলিরিয়াম ট্রিমেনস (DTs-নেশাসৃষ্ট রোগ বিশেষ) থেকে।
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম কথাটির ইংরেজি পরিভাষা "হ্যালুসিনেশন" শব্দটির প্রথম ইংরেজি ভাষায় প্রয়োগ করেন ১৭শ শতাব্দীর চিকিৎসক স্যার টমাস ব্রাউন। ১৬৪৬ সনে তিনি লাতিন শব্দ আলুসিনারি ("alucinari") শব্দটি আনয়ন করেন যার অর্থ "মনের ভেতরে ঘুরে বেড়ানো"।[2]
শ্রেণীবিভাগ
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম বিভিন্নরূপে প্রকাশ পেতে পারে।[3] একেক ধরনের অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম একেক ধরনের ইন্দ্রিয়কে প্রভাবিত করতে পারে। কখনও আবার ধারাবাহিকভাবেও ঘটতে পারে। কখনও একসাথে কয়েক ধরনের অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমও ঘটতে পারে।
অমূলক দৃষ্টিবিভ্রম
অমূলক দৃষ্টিবিভ্রম (ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন) হল, "বাইরের কোনো উদ্দীপক ছাড়াই দর্শন অনুভূতি প্রত্যক্ষণ করার প্রক্রিয়া"।[4] আবার দৃষ্টিবিভ্রম (ভিজুয়াল ইলিউশন) হল বাহ্যিক উদ্দীপক হতে প্রাপ্ত বাস্তব অনুভূতির বিকৃতরূপ ধারণ। সুতরাং, এ দুটিকে এক মনে করা যাবে না।
অমূলক দৃষ্টিবিভ্রম সাধারণ ও জটিল এই দুই প্রকারে বিভক্ত।
- সাধারণ অমূলক দৃষ্টিবিভ্রমকে প্রাথমিক বা অগঠিত অমূলক দৃষ্টিবিভ্রমও বলা হয়। এ ধরনের অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম আলো, রং, জ্যামিতিক আকৃতি এবং অবিভক্ত বস্তু প্রভৃতির ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। একেও দুভাগে ভাগ করা যায়- ১. ফসফেন (কাঠামোবিহীন SVH) ২. ফটোপসেইস(জ্যামিতিক কাঠামোসহ SVH)
- জটিল অমূলক দৃষ্টিবিভ্রমকে সুগঠিত অমূলক দৃষ্টিবিভ্রমও বলা হয়। এ ধরনের অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম পরিষ্কার এবং মানুষ, প্রাণী, বস্তু, স্থান প্রভৃতির প্রাণবন্ত দৃশ্য বা ছবির মত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কারো যদি অমূলক দৃষ্টিবিভ্রমের মাধ্যমে একটি জিরাফ দেখার ঘটনা ঘটে। তাহলে সাধারণ অমূলক দৃষ্টিবিভ্রম হলে সে কেবল এমন একটা আকৃতি দেখবে যেটা অনেকটা জিরাফের মত দেখতে। আর জটিল অমূলক দৃষ্টিবিভ্রম হলে সে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে যে, ওটা একদম বাস্তব জীবন্ত একটা জিরাফ ছিল।
অমূলক শ্রুতিবিভ্রম
অমূলক শ্রুতিবিভ্রম (অডিটরি হ্যালুসিনেশন বা প্যারাকিউসিয়া)[5] হল, "বাইরের কোনো উদ্দীপক ছাড়াই শ্রবণের অনুভূতি প্রত্যক্ষণ করার প্রক্রিয়া"। অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমের অন্যান্য প্রকারগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে সাধারণ রোগ।[6] অমূলক শ্রুতিবিভ্রমকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: প্রাথমিক এবং জটিল। প্রাথমিক পর্যায়ের রোগীরা ফিস ফিস শব্দ, শিস দেয়ার শব্দ, দীর্ঘ সুর বা অনুরূপ কিছু শুনতে পায়। অনেক ক্ষেত্রে কানের ভেতর ঢং ঢং, ভোঁ ভোঁ, টিকটিক বা গর্জন জাতীয় শব্দ করলেও তাকে প্রাথমিক পর্যায়েরই ধরা হয়। তবে যদি কেউ নির্দিষ্ট ধরনের ধকধক শব্দ শুনতে পায়, বিশেষত নাড়ির শব্দের মত, তাহলে বুঝতে হবে এটা আসলে কর্ণকুহরের পাশ দিয়ে রক্তপ্রবাহের শব্দ। যেহেতু এখানে বাহ্যিক উদ্দীপক বিদ্যমান তাই একে অমূলক শ্রুতিবিভ্রম বলা হবে না।
জটিল অমূলক শ্রুতিবিভ্রমের ক্ষেত্রে রোগী সাধারণত কিছু কণ্ঠস্বর বা সঙ্গীত শুনতে পায়, যা স্পষ্টও হতে পারে বা অস্পষ্ট, পরিচিতও হতে পারে বা অপরিচিত, সুশ্রাব্য বা কর্কশ। রোগী যদি এক বা একাধিক মানুষের কথা বলার কণ্ঠস্বর শুনতে পায় তাহলে এই অমূলক শ্রুতিবিভ্রমকে সাধারণত মনোবৈকল্যজাত রোগসমূহ যেমন, ভগ্নমনস্কতা রোগের লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
যদি কোনও জনগোষ্ঠী জটিল কোনো অমূলক শ্রুতিবিভ্রমের অভিজ্ঞতা লাভ করে তাহলে কোনও একক ব্যক্তিকে মনোবৈকল্যে আক্রান্ত বা ভগ্নমনস্ক বলা যায় না।[7][8][9][10]
আরেকটি সাধারণ রোগ আছে যেখানে অমূলক শ্রুতিবিভ্রম প্রায়ই ঘটে সেটি হল বহুব্যক্তিত্ব রোগ (মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার)। ভগ্নমনস্কতায় সাধারণত রোগী বাইরে থেকে অন্য মানুষের কথা শুনতে পায়। কিন্তু মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে রোগীর ভেতর থেকেই ভিন্ন কণ্ঠস্বরের কথা তৈরি হয়। এখানে পেছন থেকে কথা বলার ব্যাপারটির পরিবর্তে মাথার ভেতর থেকেই কারা যেন কথা বলতে থাকে- এমন অনুভূতি হয়। স্কিযোফ্রেনিয়া এবং মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের মধ্যে পার্থক্য করে চিকিৎসা প্রদান অত্যন্ত জটিল একটি ব্যাপার। কারণ উভয় রোগের অনেক লক্ষণ প্রায় অভিন্ন বিশেষত বিজ্ঞানী কার্ল শ্নাইডারের উল্লেখিত প্রথম কয়েকটি উপসর্গ (যেমন, হ্যালোসিনেশন) উভয় ক্ষেত্রেই ঘটে।[11] যাক, মানসিকভাবে সুস্থরাও এধরনের কণ্ঠস্বর শুনতে পারে।[12] এধরনের অডিটোরি হ্যালোসিনেশনের একজন রোগীর রোগ আলাদা করে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আরেকটা কথা মনে রাখা দরকার যে, এটা পার্শ্বীয় টেম্পোরাল লোবের এপিলেপ্সিও হতে পারে। একজন রোগীর এধরনের কথা-বার্তা শুনতে পাওয়া, হ্যালোসিনেশন হওয়া, স্কিযোফ্রেনিয়া জাতীয় সাইকোটিক রোগের প্রবণতা বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যা থাকার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, খুব ভাল করে মনে রাখতে হবে যে, একজন ব্যক্তির মানসিক সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পেলেও ব্যক্তিটিকে বাস্তবিকভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত হতেই হবে এমনটা জরুরি না। উইলসন-ব্যাধী, বিভিন্ন ধরনের অন্তঃক্ষরা তন্ত্রের রোগ, বিভিন্ন ধরনের বিপাকীয় রোগ, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, লুপাস রোগ, পোরফাইরা, সারকোইডোসিস এবং আরো কিছু রোগ সাইকোসিসের সাথে থাকতে পারে।
মিউজিকের হ্যালোসিনেশনকে সাধারণত জটিল অমূলক শ্রুতিবিভ্রমের কাতারেই ফেলা হয়। এর নানান কারণ থাকতে পারে যেমন, শ্রুতিহ্রাস(উদাহরণস্বরূপ, মিউজিক্যাল এয়ার সিনড্রম, চার্লস বোনেট সিনড্রমের অডিটোরি ভার্সন), পার্শ্বীয় টেম্পোরাল লোবের এপিলেপ্সি,[13] স্ট্রোক, টিউমার, ধমনী-শিরার অস্বাভাবিক জট,[14] লেসিওন, ফোড়া প্রভৃতি থেকে হতে পারে।[15]
নেদারল্যান্ড থেকে প্রচলিত "হেয়ারিং ভয়েস মুভমেন্ট" তথা 'কণ্ঠস্বর-শ্রবণব্যাধীর আন্দোলন' এই ধরনের রোগীদের জন্য উপকারে আসতে পারে। এতে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়। একে অপরকে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানাতে পারে এইসব আয়োজনের মাধ্যমে।
অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ অমূলক শ্রুতিবিভ্রমের প্রবণতা বাড়ায়। অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষায় উঠে আসে যে, দৈনিক ন্যূনতম পাঁচ কাপ কফি (আনুমানিক ৫০০ মি.গ্রা.) এই সমস্যাটিকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে এসবের মাধ্যমে রোগীর মানসিক উন্নতি বা অবনতির কিছু বোঝা যায় না।[16]
অমূলক আদেশবিভ্রম
অমূলক আদেশবিভ্রম বলা হয় আদেশরূপে ঘটা হ্যালোসিনেশনসমূহকে অর্থাৎ অসুস্থ ব্যক্তির মনে হতে থাকবে কেউ যেন তার ভেতর থেকে তাকে কিছু করতে আদেশ করে যাচ্ছে।[17] এ ধরনের হ্যালোসিনেশন অডিটোরি হ্যালোসিনেশনরূপেও হতে পারে বা ব্যক্তির মনের বা অবচেতন মনের অভ্যন্তরীণ চিন্তার আকারেও হতে পারে।[17] এই ধরনের হ্যালোসিনেশনের ক্ষেত্রে অবচেতন অবস্থা থেকে এমন আদেশ আসতে পারে যা অন্য কারো ক্ষতিরও কারণ হতে পারে। কমান্ড হ্যালোসিনেশন প্রায়ই স্কিযোফ্রেনিয়ার সাথেও সম্পর্কযুক্ত হয়। কমান্ড হ্যালুসিনেশনসমূহের সম্মুখীন ব্যক্তিরা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে হ্যালুসিনেটেড আদেশগুলো মেনে চলতে পারে বা নাও পারে। অহিংস আদেশগুলো সাধারণত তারা বেশিরভাগ সময়ই মেনে চলে।[18]
অমূলক আদেশবিভ্রম কখনও কখনও সংঘটিত কোনো অপরাধ দমনের জন্য বা মানুষ-হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে।[19] এ ধরনের হ্যালোসিনেশনের ক্ষেত্রে অসুস্থ ব্যক্তি একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পায় যা তাকে কী করতে হবে তা বলে দেয়। কখনও কখনও কমান্ডগুলো বেশ বিনয়ী হয় যেমন "উঠে দাঁড়াও" বা "দরজা বন্ধ কর"।[20] আদেশগুলো ভালই হোক বা খারাপ হোক এগুলো অমূলক আদেশবিভ্রম হিসেবেই গণ্য হবে। কিছু সহায়ক প্রশ্ন আছে যেগুলো কোনো ব্যক্তির সমস্যা কীরূপ তা নির্ণয় করতে সহায়তা করে যেমন, "এই কণ্ঠস্বরগুলো আপনাকে কী করতে বলছে?", "আপনার শোনা কণ্ঠস্বর কখন আপনাকে প্রথমে কিছু করার কথা বলেছিল?", "আপনি কি মনে করতে পারবেন, ঠিক কোন মানুষটি আপানার নিজেকে (অথবা অন্যকে) ক্ষতি করতে বলেছেন?", "আপনার কি মনে হয় আপনি এই কণ্ঠস্বরের বিরোধিতা করতে পারেন?"[20]
অমূলক ঘ্রাণবিভ্রম
ফ্যান্টসমিয়া(Phantosmia)বা অলফ্যাক্টরি হ্যালোসিনেশন (ঘ্রাণের হ্যালোসিনেশন) হল, এমন কোন গন্ধ পাওয়া যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই।[21] আর প্যারোসমিয়া(Parosmia) বা অলফ্যাক্টরি ইলিউশন (ঘ্রাণের বিকৃতি) হল আসল গন্ধই নাকে নেওয়ার পর গন্ধটি বিকৃতরূপ অনুভূত হওয়া অর্থাৎ ঘ্রাণের অনুভূতির বিকৃতি ঘটা।[22] এটি মারাত্মক কোনো সমস্যা নয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর সাধারণত এই সমস্যা দূর হয়ে যায়।[21] নাকে জীবাণু সংক্রমণ, নাসাল পলিপস (এনপি) তথা নাক বা সাইনাসের মধ্যে টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, দন্তসমস্যা, মাইগ্রেইন, মাথায় আঘাত, স্ট্রোক, ব্রেইন টিউমার বা এপিলেপ্টিক সিজারের কারণে এ সমস্যা হতে পারে।[21][23] পরিবেশের প্রভাবকসমূহও এর কারণ হতে পারে যেমন, ধূমপান বা নির্দিষ্ট কোনো রাসায়নিকের ব্যবহারের প্রভাব (যেমন, কীটনাশক) অথবা মাথা বা কাঁধের ক্যান্সারের চিকিৎসায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের চিকিৎসার প্রভাব।[21] এটা অবশ্য মানসিক কিছু রোগের উপসর্গ হিসেবেও দেখা দিতে পারে যেমন, বিষণ্নতা, বাইপোলার ব্যাধী, নেশা বা ড্রাগ বা অ্যালকোহল ছাড়ার প্রভাব, সাইকোটিক ডিসঅর্ডার(যেমন, স্কিযোফ্রেনিয়া)।[23] এই রোগে অনুভূত গন্ধ সাধারণত অপ্রীতিকর এবং সাধারণত পোড়া গন্ধ, বা পঁচা গন্ধ হয় বলে জানা যায়।[21]
অমূলক স্পর্শবিভ্রম
অমূলক আদেশবিভ্রম (ট্যাকটাইল হ্যালোসিনেশন) হল, গৃহীত স্পর্শের অনুভূতির বিকৃতি; চামড়ায় বা অন্যান্য অঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চাপ অনুভূত হওয়া। অমূলক আদেশবিভ্রমের একটি উপপ্রকার হল ফরমিকেশন(formication) যেখানে রোগীর চামড়ায় পোকমাকড়ের কিলবিল করার অনুভূতি হয় এবং এই সমস্যা সাধারণত দীর্ঘকাল কোকেইন গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত।[24] তবে, ফরমিকেশন সাধারণ হরমোনগত পরিবর্তনের কারণেও হতে পারে যেমন, মহিলাদের রজঃনিবৃত্তির পরে বা পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, অনেক জ্বর, লাইম ডিজিজ(এঁটুলি পোকা তথা মাকড়ের কামড়ে সৃষ্ট ত্বকের রোগ বিশেষ), স্কিন ক্যানসার(ত্বকের ক্যানসার)-র মত রোগব্যাধীর মাধ্যমেও হতে পারে। [24]
অমূলক স্বাদবিভ্রম
অমূলক স্বাদবিভ্রম (গাস্টেটরি হ্যালোসিনেশন) হল বাহ্যিক উদ্দীপক ছাড়াই স্বাদের অনুভূতি প্রত্যক্ষণ। এই ধরনের হ্যালোসিনেশন, যেগুলো সাধারণত অদ্ভুত এবং অপ্রীতিকর হয়, ফোকাল এপিলেপ্সির(মৃগীরোগ বিশেষ) সমস্যাগ্রস্ত মানুষদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। বিশেষত টেম্পোরাল লোবের এপিলেপ্সিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হয়। মস্তিষ্কের যে অঞ্চলগুলি এর জন্য দায়ী সেগুলো হল, ইনসুলা(insula) এবং সিলভিয়ান ফিশারের(sylvian fissure) উপরস্থ কেন্দ্রীয় অংশ।[25][26]
সাধারণ দৈহিক সংবেদন
একটি হ্যালোসিনেটরি পরিবেশে সাধারণ দৈহিক সংবেদনের অভিজ্ঞতা অনেকটা এরকম যে, ব্যক্তির মনে হয় তার নিজের অস্তিত্ব বিকৃত হয়ে যাচ্ছে যেমন, দেহ মুচড়ে যাচ্ছে, বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে বা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এমন কিছু কেস আছে যেখানে বর্ণিত আছে যে, ব্যক্তির মনে হয় তার দেহের ভেতরে যেমন, পেটের ভেতরে সাপ বা পায়ুপথে ব্যাঙ ঢুকে গেছে। কারো যদি মনে হয় যে তার মাংসে পচন ধরছে তাহলে এরূপ বিভ্রমকেও এই ধরনের হ্যালোসিনেশনের কাতারেই ফেলা হবে।[25][26]
কারণ
হ্যালোসিনেশন বিভিন্ন প্রভাবকের দরুণ ঘটতে পারে।
হিপনাগোজিক হ্যালোসিনেশন
এই ধরনের হ্যালোসিনেশন সাধারণত ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই ঘটে। অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই এমনটা হতে দেখা যায়। একটি জরিপ অনুযায়ী অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ৩৭ ভাগই সপ্তাহে দুবার এ ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান।[27] সমস্যাটা নারকোলেপ্সির(নিয়মিত ঘুম ও জাগ্রত থাকার সময়ের ব্যাঘাত ঘটানো নিউরোলজিকাল রোগ বিশেষ) সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। এছাড়াও হিপনাগোজিক হ্যালোসিনেশন মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতার কারণেও ঘটতে পারে; তবে এমনটা পাওয়া বিরল।[28]
পেডুনকুলার হ্যালোসিনেশন
পেডুনকুলার হ্যালোসিনেশন হল মস্তিষ্কের পেডুনকুল সংক্রান্ত হ্যালোসিনেশন। পন্সের সম্মুখভাগ থেকে আগত সংবেদী ও মোটর স্নায়ুতন্তু নিয়ে গঠিত অংশ যা সেরেব্রামে পৌছে তাকে পেডুনকুল বলে। পেডুনকুলার হ্যালোসিনেশন সাধারণত সন্ধ্যার দিকে হয় কিন্তু তন্দ্রার সময় না। ভুক্তভোগী ব্যক্তি সাধারণত পূর্ণ সচেতন থাকা অবস্থায় এমনটা ঘটে এবং ব্যক্তিটি দীর্ঘ সময় নাগাদ হ্যালোসিনেশন-সংশ্লিষ্ট চরিত্রগুলোর সাথে মিথষ্ক্রিয়ায় সক্ষম থাকে। হিপনাগোজিক হ্যালোসিনেশনে যেমনটা হয়, দৃশ্যপটের প্রকৃতি নিখুঁত থাকে। ভ্রমসৃষ্ট ছবি দৃশ্যপটের যেকোনো অংশেই ঢুকে যেতে পারে এবং এগুলো সাধারণত বহু অনুভূতির ভ্রম(polymodal) হয় না।[28]
ডেলিরিয়াম ট্রিমেনস
ভিজুয়াল বা দৃষ্টির হ্যালোসিনেশনের সবচেয়ে রহস্যময় রূপগুলোর মধ্যে একটি হল, অতি পরিবর্তনশীল, সাধারণত বহু অনুভূতির ভ্রম(polymodal) ডেলিরিয়াম ট্রিমেনস। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিশেষত রোগের শেষ স্টেজগুলোয় উত্তেজিত এবং বিভ্রান্ত হতে পারে। এই ব্যাধী বৃদ্ধির সঙ্গে দৃষ্টি ক্রমবর্ধমান হ্রাস পেতে থাকে। ঘুমে বিঘ্ন ঘটে এবং খুব অল্প সময়ের জন্য হয়। আবার ঘুমের সময় চোখের পাতা দ্রুত নড়তে থাকে যেই ঘুমকে সাধারণত দ্রুত চোখের চলাচলের ঘুম বা সংক্ষেপে REM ঘুম বলে।
পারকিনসন-রোগ এবং লিউই বডি ডিমেনশিয়া
পারকিনসন-রোগ এবং লেওয়ি বডি ডিমেনশিয়া উভয়টির ক্ষেত্রেই একই রকম হ্যালোসিনেশনের উপসর্গ দেখা যায়। পারকিনসন-রোগ হল এক প্রকারের নিউরো-ডিজেনারাটিভ বা স্নায়বিক রোগ। আর লেওয়ি বডি ডিমেনশিয়া হল দ্বিতীয় শ্রেণীর ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ যা মূলত স্নায়ুকোষে লেওয়ি বস্তু তথা এক প্রকার জমাটবদ্ধ প্রোটিনের কারণে ঘটে। উভয় ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয় সন্ধ্যার সময়, দৃশ্যপটের যেকোনো স্থানে হ্যালোসিনেশন ঘটতে পারে তবে এগুলো সাধারণত বহু অনুভূতির ভ্রম(polymodal) হয় না। প্রথমে ইলিউশন হয়ে[29] তারপর হ্যালোসিনেশনে রূপান্তরিত হতে পারে; এ অবস্থায় সংবেদনশীল অনুভূতির বিকৃতি ঘটে তবে আবার কোনো বাহ্যিক উদ্দীপক তথা সংবেদক কোনো কিছুও বিদ্যমান থাকে না অর্থাৎ ইলিউশন ও হ্যালোসিনের মিশ্র এক অবস্থা বিরাজ করে। এই অবস্থা কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময় ভুক্তভোগী জাগ্রত এবং স্বাভাবিক অথবা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকতে পারে। এই হ্যালোসিনেশনের মধ্যে দৃশ্য সাধারণত সংরক্ষিত থাকে এবং REM ঘুম কমে যায়। পার্কিনসন রোগ সাধারণত ডিগ্রেডেড সারিয়া নিগ্রা পার্স কম্প্যাক্ট (degraded substantia nigra pars compacta)-র সাথে সম্পৃক্ত(অর্থাৎ কেবল মস্তিষ্কের মধ্যভাগে অবস্থিত ক্ষুদ্র অংশ সারিয়া নিগ্রা যা দৈহিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে তাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে)। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পারিকিনসন রোগ(PD) মস্তিষ্কের আরো কিছু অঞ্চলকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরকম কিছু অঞ্চল হল, Raphe nuclei এর মধ্যভাগ, locus coeruleus এর নর-অ্যাড্রেনালিন অঞ্চল, স্নায়ুতন্ত্রের কোলিনারজিক অংশ প্রভৃতি।[28]
মাইগ্রেইন কোমা
এই ধরনের হ্যালুসিনেশন সাধারণত কোমায় থাকা অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধারের পরে ঘটে থাকে। মাইগ্রেইন কোমা দুই দিনেরও বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে আর এর সাথে যুক্ত হতে পারে গভীর বিষণ্নতা। এধরনের হ্যালোসিনেশন ঘটে থাকে সম্পূর্ণ সচেতন অবস্থায় এবং হ্যালোসিনেটরি ছবির প্রকৃতি মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়ে যায়। এটি লক্ষ করা গেছে যে, অ্যাটাক্সিয়া রোগের ক্ষতের সম্পর্ক মাইগ্রেন কোমার সঙ্গে থাকতে পারে।[28]
চার্লস বোনেট সংলক্ষণ
চার্লস বোনেট ব্যাধী বলা হয় আংশিক বা গুরুতরভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির দ্বারা ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশনের অভিজ্ঞতাকে। এধরনের হ্যালোসিনেশন যেকোনো সময়ই ঘটতে পারে এবং যেকোনো বয়সের মানুষকেই চাপের মধ্যে ফেলে দিতে পারে যে তারা শুরুতে হ্যালোসিনেশন হচ্ছে- এমটা নাও বুঝতে পরে, শুরুতে তারা নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে ভয় পেতে পারে যার ফলে তারা বুঝে ওঠার আগ পর্যন্ত কারো কাছে ঘটা ঘটনাগুলো খুলে বলতে দেরি করে। হ্যালোসিনেশনগুলো ভীতিপ্রদ এবং বিশৃঙ্খল হতে পারে এতে বোঝা মুশকিল হয়ে যায় যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। পরিচর্যাকরীকেও ভুক্তভোগীকে কীভাবে সেবা ও সমর্থন দেয়া যায় তা ভালভাবে জানতে হয়। হ্যালুসিনেশনগুলি কখনও কখনও চোখ নাড়িয়ে বা সম্ভবত পাকাপোক্ত যুক্তি দ্বারা দূর হয়ে যেতে পারে যেমন, "আমি আগুন দেখছি কিন্তু এর কোনো ধোঁওয়া নেই কোনো উত্তাপও নেই" অথবা "আমরা ইঁদুরের উপদ্রবে পড়েছি তবে ইঁদুরগুলোর ঘাড়ে ঘণ্টা লাগানো গোলাপী ফিতা বাঁধা-তা কি করে সম্ভব!" এ জাতীয় যুক্তি মাথায় আসার সাথে সাথে হ্যালোসিনেশন দূর হতে পারে। মাস এবং বছর যেতে যেতেই হ্যালুসিনেশনগুলির প্রকাশভঙ্গির পরিবর্তন হতে পারে; দেখতে কম বা বেশি ঘন হতে পারে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের এই হ্যালোসিনেশনে ভোগার সময় চোখের অবনতির অন্তর্নিহিত গতি অনুসারে বিভিন্ন হয়ে থাকে। একটি ডিফারেনশিয়াল ডায়াগনসিস হল চক্ষুচক্রের হ্যালুসিনেশন(ophthalmopathic hallucinations)।[30]
ফোকাল এপিলেপ্সি
ফোকাল সিযারের কারণে ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন মস্তিষ্কের যে অঞ্চলে সিযার ঘটেছে তার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, অক্সিপিটাল লোবের সিযারকালীন ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশনগুলো সাধারণত উজ্জ্বল রঙিন হয়, জ্যামিক আকৃতি সংবলিত হয় যেগুলো দর্শনক্ষেত্রে চতুর্পার্শ্বে চলাচল করতে পারে, বহুসংখ্যক হতে পারে বা এককেন্দ্রীক কয়েকটি বলয়(রিং) গঠন করতে পারে এবং সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই আকৃতিগুলো সাধারণ একপাশ্বীয় এবং সিযার কেন্দ্রের বিপরীত কোনো অংশের দর্শনক্ষেত্রে(সাধারণত টেম্পোরাল ফিল্ড) স্থায়ী হয়। যাক, অনুভূমিকভাবে দর্শনক্ষেত্রের চারপাশে নড়তে থাকা একপার্শ্বীয় দৃশ্যগুলো শুরু হয় বিপরীতপার্শ্বীয় অঞ্চরে এবং দ্বিপক্ষীয় অংশের দিকে অগ্রসর হয়।[25][31]
টেম্পোরাল লোবের সিযার অবশ্য মানুষ, দৃশ্য, প্রাণী এবং আরো অনেক কিছুর জটিল ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশনও সৃষ্টি করতে পারে আবার দর্শন অনুভূতির বিকৃতিও ঘটাতে পারে। জটিল ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশনগুলো বাস্তবও হতে পারে বা অবাস্তবও হতে পারে, আকৃতিগত বিকৃত হতে পারে বা নাও পারে, বিরক্তিকর মনে হতে পারে বা সাধারণও লাগতে পারে। এর একটি বিরল তবে লক্ষ্যণীয় হ্যালোসিনেশন হল হিটোস্কপি: ব্যক্তির নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পাওয়ার হ্যালোসিনেশন। ব্যক্তির অন্য অস্তিত্বটি স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারে অথবা কঠিন কঠিন কাজ করতে পারে, এই সত্তাটি ব্যক্তির বর্তমান বয়সের হতে পারে বা ছোটও হতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ উপস্থিত হতে পারে। টেম্পোরাল লোবের এপিলেপ্সিতে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে জটিল হ্যালোসিনেশন তুলনামূলক কম দেখা যায়। অক্সিপিটাল সিযার বা প্যারাইটাল লোবের সিযারের ক্ষেত্রেও এগুলো বিরল।[25]
মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবের সিযারের ক্ষেত্রে দর্শন অনুভূতির বিকৃতি ঘটলে তা নানাভাবে ঘটতে পারে যেমন, আকার বিকৃতি (ম্যাক্রোপসিয়া বা মাইক্রোপসিয়া), নড়াচড়ার অনুভূতির বিকৃতি(যেখানে চলন্ত বস্তুকে স্থির মনে হতে পারে বা খুব ধীরগতির মনে হতে পারে), এমন অনুভূতি হওয়া যে, তলসমূহ যেমন ছাদ এবং মেঝে একটা ভঙিতে দূরে সরে যাচ্ছে অনেকটা ডলি যুম ইফেক্টের (dolly zoom effect) মত।[32] এমনকি যখন কারো চেতনার প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয় তখনও হ্যালুসিনেশন বা ইলিউশনের দৃশ্য সাধারণ অবস্থায় সংরক্ষিত থাকে।
ঔষধঘটিত হ্যালোসিনেশন
অষুধঘটিত হ্যালোসিনেশন(drug-induced hallucinations) ঘটে থাকে হ্যালোসিনোজেন(hallucinogens), ডিযঅ্যসোসিয়েটিভ(dissociatives), ডেলিরিয়েন্টসমূহ(deliriants)-সহ বিভিন্ন এন্টিকোলিনারজিক প্রভাব সম্পন্ন অষুধ এবং নির্দিষ্ট কিছু উদ্দীপকের(stimulants) কারণে যেগুলো সাধারণত ভিজুয়াল এবং অডিটোরি হ্যালোসিনেশনের জন্য দায়ী। লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড(LSD) এবং সাইক্লোবিনের মত সাইকেডেলিক অষুধ(মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের জন্য পরিচিত অষুধ) হ্যালোসিনেশনের জন্য দায়ী হতে পারে যে হ্যালোসিনেশনের বিস্তৃতি মৃদু থেকে বড় পর্যায়েও হতে পারে।
হ্যালোসিনেশন, ছদ্ম বা সিউডোহ্যালোসিনেশন, বা প্যারিডিলিয়ার তীব্রতাবৃদ্ধি(বিশেষত অডিটোরি ধরনের) অপিওয়েড শ্রেণীর অষুধের ডিগ্রির ওপর নির্ভর করে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়। এটি বিশেষত অপিওয়েড রিসেপ্টর, সিগমা রিসেপ্টর, ডেল্টা অপিওয়েড রিসেপ্টর এবং এনএমডিএ রিসেপ্টরগুলির এগোনিস্ট/অ্যান্টাগেনিস্ট ক্রিয়ার মাত্রার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। অথবা সিনথেটিক(কৃত্রিম বা সংশ্লেষিত) অপিওয়েডের মত সকল রিসেপ্টর সক্রিয়কারী উপকরণ যেমন, পেন্টাজোকাইন, লেভোরফেনল, ফেন্টানিল, পেথিডিন, মেথাডোন এবং অন্য কিছু শ্রেণীর অষুধ বা রাসায়নিক রয়েছে যেগুলো প্রাকৃতিক মরফিন এবং কোডাইন এবং আধা-সিনথেটিক যেমন হাইড্রোমোরফোনের মতো প্রাকৃতিক অপিওয়েডের চেয়ে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সাথে বেশি জড়িত; এগুলোর মধ্যে বেদনানাশক ক্ষমতার আপিক্ষক সম্পর্কও বিদ্যমান অর্থাৎ এই অষুধগুলোর ব্যাথানাশক ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে হ্যালোসিনেশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাড় বা কমে। ত্রিঅপিওয়েড সাইক্লাজোকাইন(ডেজোকাইন, পেন্টাজোকাইন এবং ফেনাজোকাইন এই তিনের সমন্বয়ে মিশ্র অপিওয়েড; এই অপিওয়েড অষুধের পরিবারকে বেনজোমোরফ্যানও বলা হয়) এবং দুইটি লেভোরফানল সম্পর্কিত মরফিন জাতীয় অপিওয়েড সাইক্লোরফ্যান ও ডেক্সট্রোরফ্যানকে হ্যালোসিনোজেনের শ্রেণিভুক্ত করা হয়। আর ডেক্সট্রোমেথরফ্যানকে ডিযঅ্যাসোসিয়েটিভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[33][33][34][35]
এই অষুধগুলো ঘুম ধরাতে পারে(ফলে হিপনাগোজিক হ্যালোসিনেশন হতে পারে) এবং বিশেষত পেথিডিনসমূহের অ্যাট্রোপিনের মত অ্যান্টিকোলিনারজিক ক্রিয়া দেখা দেয় যা সাধারণত মরফিন, অক্সিকোডোন এবং স্কোপোলামিনসহ অন্যান্য অপিওয়েডসমূহ ব্যবহারের সাইকোটোমোমেটিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য সীমিত মাত্রার প্রভাবকের মত কাজ করতে পারে। উল্লেখ্য, স্কোপোলামিন এবং এফিড্রিন, ১৯২৮ সালে জার্মানিতে আবিষ্কারের পরে "১৯৩০ এর আশ্চর্য ড্রাগ" নামে পরিচিত হয়।[36]
সংবেদনহীনতাজনিত হ্যালোসিনেশন
সংবেদনহীনতা তথা সংবেদনশীল অঙ্গের অনুকরণক্ষমতা হৃাস বা বিলুপ্তির মাধ্যমেও হ্যালোসিনেশন হতে পারে যখন এই অবস্থা দীর্ঘ সময়কাল ব্যাপী হয়। এই সমস্যা প্রায়শয়ই ঘটে থাকে নিষ্ক্রিয় সংবেদনশীল অংশে (যেমন, অন্ধদের ক্ষেত্রে ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশন, বোবাদের ক্ষেত্রে অডিটোরি হ্যালোসিনেশন ইত্যাদি)।
অভিজ্ঞতাজনিত হ্যালোসিনেশন
অদ্ভুত অভিজ্ঞতা, যাকে বেনাইন হ্যালোসিনেশও বলে, একজন ব্যক্তির সুস্থ শারীরিক ও মানসিক অবস্থাতেই ঘটতে পারে এমনকি অবসাদ, নেশা বা সংবেদনহীনতা মতো ক্ষণস্থায়ী ট্রিগার ফ্যাক্টরের না থাকলেও।
প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই সমস্যার বিবরণ ও প্রমাণাদি সংগ্রহ করা হচ্ছে। বেনাইন হ্যালোসিনেশনের গবেষণাগুলো,যেগুলো ১৮৮৬ সনের সোসাইটি ফর সাইকিকাল রিসার্চের[37][38] সত্যতার কথাই বলছে, বলছে, প্রায় ১০% জনগণ জীবনের কোনো একটি পর্যায়ে অন্তত একবার হলেও হ্যালোসিনেশনের অভিজ্ঞতা লাভ করে। অতি সম্প্রতি আরো কিছু গবেষণা এই অনুসন্ধানগুলোকে আরো জোরদার করেছে; প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট ঘটনাগুলি "হ্যালুসিনেশন" এর মানদণ্ড এবং সময়কালের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়, তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানটি এখন দলিল প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত হয়েছে।[39]
নন-সিলিয়াক গ্লুটেন সেনসিটিভিটি
সিলিয়াক রোগ (পাকস্থলীর রোগ) এমন রোগ যাতে রোগী ময়দাজাত প্রোটিন গ্লুটেন খেয়ে হজম করতে পারে না। তবে পাকস্থলীর সমস্যা ছাড়াও ময়দাজাতীয় খাবার হজমের সমস্যা হতে যাকে নন-সিলিয়াক গ্লুটেন সেনসিটিভিটি বলে(যেমন, আইবিএস রোগ)। নন-সিলিয়াক গ্লুটেন সেনসিটিভিটির সাথে হ্যালোসিনেশনের সম্পর্কের অস্থায়ী প্রমাণ মিলেছে যাকে বলা হচ্ছে "গ্লুটেন সাইকোসিস" বা গ্লুটেন সমস্যাজনিত মানসিকরোগ।[40]
রোগশারীরবিজ্ঞান
স্নায়ুশারীরস্থান
হ্যালেসিনেশন মূলত মূখ্য বা গৌণ সংবেদী অঙ্গের গাঠনিক ও কার্যিক অস্বাভাবিকতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবের ঊর্ধ্ব বা মধ্য জাইরাসঅঞ্চলে (ব্রোাকা'স অঞ্চলসহ) ধূসর বস্তুর অভাব অডিটোরি হ্যালোসিনেশনের সাথে একটি বৈশিষ্ট্যসূচক সম্পর্ক রাখে; যেহেতু তীব্র হ্যালোসিনেশনের সাথে এইসব অঞ্চলের সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্কও রয়েছে। তাছাড়া এসময় আরো কিছু অঞ্চল যেমন, হিপোক্যাম্পাস, প্যারাহিপোক্যাম্পাস, টেম্পোরাল লোবের নিম্ন সম্মুখ জাইরাসের মধ্যকার ব্রাকো'স অঞ্চলের ডান হেমিস্ফিয়ারীয় হোমোলোগ প্রভৃতিতেও সক্রিয়তা বেড়ে যায়।[41] দৃশ্যমান অঞ্চলে ধূসর ও সাদা বস্তুর অস্বাভাবিকতা ভিজুয়াল হ্যালোসিনেশনের সাথে সম্পর্কিত। বিভিন্ন রোগ যেমন, আলযেইমার'স ডিজিজের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়।[42]
হ্যালুসিনেশনের একটি প্রস্তাবিত মডেল(যা সাধারণত নিম্ন ফ্রন্টাল জাইরাসের সাথে সংযুক্ত ফিডওয়ার্ড নেটওয়ার্কের মধ্যমে তৈরি ইন্টারনাল সোর্স হিসেবে পরিচিত) সংবেদনশীল অঞ্চলের অতি সক্রিয়তার সমধর্মী। মডেলটিকে ফিডওয়ার্ড নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা ও সম্পর্কযুক্ততার অস্বাভাবিকতার কারণে তৈরি হচ্ছে বলে ব্যাখ্যা করা হয়।[41] এই মডেল ঐসব গবেষণাকে সমর্থন করে যেগুলো সম্পাদন করা হয়েছি এমন হ্যালোসিনেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে যাদের কথায় স্বতঃপ্রস্তুত উদ্দীপকের (self generated stimuli) অস্বাভাবিকতার বিষয়টি উঠে আসে।[43]
থ্যালামোকোর্টিকাল সার্কিটের বিঘ্নতা হয়ত টপডাউন বা বটমআপ ডিযফাংশনকে চিহ্নিত করতে পারে।[44] থ্যালামোকোর্টিকাল সার্কিট (মস্তিষ্কের থ্যালামাস ও কর্টেক্সের নিউরোনসমূহ এবং সংলগ্ন ইন্টারনারিউনগুলোর মধ্যকার প্রজেকশনের সমন্বয়) নির্দিষ্ট কিছু ইলেক্ট্রোফিজিক্যাল বৈশিষ্ট্য ও ধর্ম(গামা তরঙ্গায়ন) প্রদর্শন করে যেগুলো সংবেদন প্রক্রিয়ার বর্ণনা দেয়। থ্যালামাসের নিউরোন থেকে তথ্য কর্টেক্সে যায় এবং সংবেদী নিউরোনগুলোর অ্যাটেনশনাল মডুলেশন ঘটে। সংবেদন অংশের অকার্যকারিতা এবং কর্টেক্সে অস্বাভাবিক তথ্যপ্রাপ্তির ফলে সংবেদন অভিজ্ঞতাকে পরিবর্তন করে কোন পূর্ব প্রত্যাশিত কোন অনুভূতির জন্ম দিতে পারে এবং এর সম্ভাব্য ফলানুযায়ী হ্যালোসিনেশনের উদ্ভব ঘটতে পারে। হ্যালোসিনেশন মূলত দূর্বল সংবেদনশীল প্রক্রিয়াকরণের সাথে সম্পৃক্ত। সঠিক সংবেদনশীল প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রয়োজন কম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ অনেক গভীর উদ্দীপনা এবং গামা তরঙ্গের উপস্থিতি। প্রথম উদ্দীপনার পর দ্বিতীয় উদ্দীপনা মাঝে পি৫০ বিস্তারের পরিমাণ কমার সাথে হ্যালোসিনেশনের সম্পর্ক বিদ্যমান; ধারণা করা হয়, এমনটা ঘটার কারণ সংবেদন উদ্দীপনা গ্রহণের ব্যর্থতা এবং এটা ডোপামিন মুক্তকারী এজেন্টসমূহের দ্বারা উত্তেজিত হতে পারে।[45]
উদ্দীপনার বৈশিষ্ট্য গ্রহণের অস্বাভাবিকতাও হ্যালোসিনেশনের প্রস্তুতির একটি কারণ হতে পারে। অকার্যকরী ডোপামিন সিগনালিং সংবেদন প্রক্রিয়ার অস্বাভাবিক টপ ডাউন রেগুলেশন ঘটাতে পারে; যাতে করে মানুষের প্রত্যাশা সংবেদনের গৃহীত তথ্যকে বিকৃত করার সুযোগ পেয়ে যায়।[46]
রোগের ব্যাপকতা
১৮৯৫ এর শুরুর ভাগের একটি গবেষণার তথ্যমতে,[47] বিপুল সংখ্যক জনগণ প্রায় ৩৯ শতাংশই হ্যালোসিনেশনের অভিজ্ঞতার কথা জানায় যার ২৭ শতাংশই দিনের বেলায় হ্যালোসিনেশন এবং বেশিরভাগই অসুস্থতা বা অষুধের সম্পর্ক ছাড়াই। জরিপটিতে ঘ্রাণ ও স্বাদের হ্যালোসিনেশনই বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ঘটেছে বলে দেখানো হয়।
চিকিৎসা
বিভিন্ন ধরনে হ্যালোসিনেশনের জন্য বিভিন্ন প্রকারের কয়েকটি চিকিৎসাপদ্ধতি আছে। যাই হোক, যেসব হ্যালোসিনেশন মানসিক রোগের কারণে হয়, একজন সাইকোলজিস্ট(মনস্তত্ত্বিক: মনস্তত্বে পিএইচডি ধারী) বা সাইকিয়াট্রিস্ট(মনোচিকিৎসক: মনস্তত্বের মেডিকেল ডাক্তার যার মনস্তত্বে পিএইচডি নেই)-কে বলা উচিৎ এবং ডাক্তারের পর্যবেক্ষণেই চিকিৎসা হতে হবে। রোগের উপসর্গ বিভিন্ন হলে এবং গুরুতর সঙ্কটের কারণ হলে অ্যান্টিসাইকোটিক এবং অ্যাটপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিক অষুধও ব্যবহার করা যেতে পারে। হ্যালোসিনেশনের অন্যান্য কারণগুলোর জন্য কোন একক চিকিৎসাপদ্ধতি আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। যাই হোক, হ্যালোসিনেজেনিক ড্রাগ, স্টিমুলেন্ট ড্রাগ পরিহার, মানসিক চাপ কমানো, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, পর্যাপ্ত ঘুমই পারে হ্যালোসিনেশনের প্রাদুর্ভাব রুখতে। হ্যালুসিনেশনের সমস্ত ক্ষেত্রে, চিকিৎসার প্রতি মনোযোগ দেয়া উচিত এবং আক্রান্ত ব্যক্তির নির্দিষ্ট লক্ষণসমূহ জানানো উচিত।
আরও পড়ুন
তথ্যসূত্র
- Leo P. W. Chiu (১৯৮৯)। "Differential diagnosis and management of hallucinations" (PDF)। Journal of the Hong Kong Medical Association। t 41 (3): 292–7।
- Browne, Thomas (1646). Pseudodoxia Epidemica. Book III, chapter XVIII: That Moles are blinde and have no eyes.
- Chen E, Berrios GE (১৯৯৬)। "Recognition of hallucinations: a multidimensional model and methodology"। Psychopathology। 29 (1): 54–63। ডিওআই:10.1159/000284972। পিএমআইডি 8711076।
- Pelak, Victoria। "Approach to the patient with visual hallucinations"। www.uptodate.com। ২০১৪-০৮-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-২৫।
- "Paracusia"। thefreedictionary.com।
- Nolen-Hoeksema, Susan (২০১৪)। Abnormal Psychology (6e সংস্করণ)। McGraw-Hill। পৃষ্ঠা 283।
- ""Rescuers heard a voice" Ben Brumfield, CNN March 9, 2015"। মার্চ ১০, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩১, ২০১৯।
- ""'Mysterious voice' led Utah Officers to child who survived for 14 hours in submerged car" Joel Landau, New York Daily News, March 9, 2015"। জুন ২৮, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩১, ২০১৯।
- ""Lily Groesbeck Rescue" NBC news"। ২০১৬-০৮-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩১।
- "Rescuers recall 'distinct voice' that spurred them to rescue trapped toddler - KSL.com"। ksl.com।
- Shibayama M (২০১১)। "Differential diagnosis between dissociative disorders and schizophrenia"। Seishin Shinkeigaku Zasshi। 113 (9): 906–911। পিএমআইডি 22117396।
- Thompson, Andrea (সেপ্টেম্বর ১৫, ২০০৬)। "Hearing Voices: Some People Like It"। LiveScience.com। নভেম্বর ২, ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১১-২৫।
- Engmann, Birk; Reuter, Mike: "Spontaneous perception of melodies – hallucination or epilepsy?" Nervenheilkunde 2009 Apr 28: 217-221. আইএসএসএন 0722-1541
- Ozsarac M, Aksay E, Kiyan S, Unek O, Gulec FF (২০১২)। "De novo cerebral arteriovenous malformation: Pink Floyd's song "Brick in the Wall" as a warning sign"। The Journal of Emergency Medicine। 43 (1): e17–20। ডিওআই:10.1016/j.jemermed.2009.05.035। পিএমআইডি 19682829।
- "Rare Hallucinations Make Music In The Mind"। ScienceDaily.com। আগস্ট ৯, ২০০০। ডিসেম্বর ৫, ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-৩১।
- "Medical News Today: "Too Much Coffee Can Make You Hear Things That Are Not There""। ২০১৩-০৩-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩১।
- Beck-Sander A, Birchwood M, Chadwick P (১৯৯৭)। "Acting on command hallucinations: A cognitive approach"। The British Journal of Clinical Psychology। 36 (1): 139–48। ডিওআই:10.1111/j.2044-8260.1997.tb01237.x। পিএমআইডি 9051285।
- Lee TM, Chong SA, Chan YH, Sathyadevan G (২০০৪)। "Command hallucinations among Asian patients with schizophrenia"। The Canadian Journal of Psychiatry। 49 (12): 838–42। ডিওআই:10.1177/070674370404901207। পিএমআইডি 15679207।
- Knoll, James L.; Resnick, Phillip J. (২০০৮)। "Insanity Defense Evaluations: Toward a Model for Evidence-Based Practice"। Brief Treatment and Crisis Intervention। 8 (1): 92–110। ডিওআই:10.1093/brief-treatment/mhm024। সাইট সিয়ারX 10.1.1.606.6552 ।
- Shea, Sean Christopher। "M.D"। ২০১৪-০১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- HealthUnlocked (২০১৪), "Phantosmia (Smelling Odours That Aren't There)", NHS Choices, ২ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৬
- Hong, Seok-Chan; Holbrook, Eric H.; Leopold, Donald A.; Hummel, Thomas (২০১২), "Distorted Olfactory Perception: A Systematic Review", Acta Oto-Laryngologica Supplementum, 132 (S1): S27
- Leopold, D. A. (২০০২), "Distortion of Olfactory Perception: Diagnosis and Treatment", Chemical Senses, 27 (7): 611–615, ডিওআই:10.1093/chemse/27.7.611, পিএমআইডি 12200340
- Berrios GE (এপ্রিল ১৯৮২)। "Tactile hallucinations: conceptual and historical aspects"। Journal of Neurology, Neurosurgery, and Psychiatry। 45 (4): 285–93। ডিওআই:10.1136/jnnp.45.4.285। পিএমআইডি 7042917। পিএমসি 491362 ।
- Panayiotopoulos CP (২০০৭)। A clinical guide to epileptic syndromes and their treatment (2nd সংস্করণ)। London: Springer। আইএসবিএন 978-1846286438।
based on the ILAE classification and practice parameter guidelines
- Barker P (১৯৯৭)। Assessment in psychiatric and mental health nursing: in search of the whole person। Cheltenham, UK: Stanley Thornes Publishers। পৃষ্ঠা 245। আইএসবিএন 978-0748731749।
- Ohayon MM, Priest RG, Caulet M, Guilleminault C (১৯৯৬)। "Hypnagogic and Hypnopompic Hallucinations: Pathological Phenomena?"। British Journal of Psychiatry। 169 (4): 459–67। ডিওআই:10.1192/bjp.169.4.459। পিএমআইডি 8894197।
- Manford, M (১৯৯৮)। "Complex visual hallucinations. Clinical and neurobiological insights"। Brain। 121 (10): 1819–40। ডিওআই:10.1093/brain/121.10.1819। পিএমআইডি 9798740।
- Mark Derr (2006) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে "Marilyn and Me," The New York Times, February 14, 2006
- Engmann, Birk (২০০৮)। "Phosphene und Photopsien – Okzipitallappeninfarkt oder Reizdeprivation?" [Phosphenes and photopsias - ischaemic origin or sensorial deprivation? - Case history]। Zeitschrift für Neuropsychologie (German ভাষায়)। 19 (1): 7–13। ডিওআই:10.1024/1016-264X.19.1.7।
- Teeple RC, Caplan JP, Stern TA (২০০৯)। "Visual Hallucinations: Differential Diagnosis and Treatment"। The Primary Care Companion to the Journal of Clinical Psychiatry। 11 (1): 26–32। ডিওআই:10.4088/PCC.08r00673। পিএমআইডি 19333408। পিএমসি 2660156 ।
- Bien CG, Benninger FO, Urbach H, Schramm J, Kurthen M, Elger CE (২০০০)। "Localizing value of epileptic visual auras"। Brain। 123 (2): 244–253। ডিওআই:10.1093/brain/123.2.244। পিএমআইডি 10648433।
- "Fentanyl (Transdermal Route) Side Effects - Mayo Clinic"। ২০১৮-০৪-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৪।
- "Talwin Injection - FDA prescribing information, side effects and uses"। Archived from the original on ২০১৮-০৪-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-২৪।
- "Prescription Drugs That Can Cause Hallucinations"। azcentral.com।
- Trauner, Richard; Obwegeser, Hugo (১৯৫৭)। "The surgical correction of mandibular prognathism and retrognathia with consideration of genioplasty"। Oral Surgery, Oral Medicine, Oral Pathology। 10 (7): 677–89; contd। ডিওআই:10.1016/S0030-4220(57)80063-2। পিএমআইডি 13441284।
- Gurney, E., Myers, F.W.H. and Podmore, F. (1886). Phantasms of the Living, Vols. I and II. London: Trubner and Co..
- Sidgwick, Eleanor; Johnson, Alice; and others (1894). Report on the Census of Hallucinations, London: Proceedings of the Society for Psychical Research, Vol. X.
- See Slade, P.D. and Bentall, R.P. (1988). Sensory Deception: a scientific analysis of hallucination. London: Croom Helm, for a review.
- Losurdo G, Principi M, Iannone A, Amoruso A, Ierardi E, Di Leo A, ও অন্যান্য (২০১৮)। "Extra-intestinal manifestations of non-celiac gluten sensitivity: An expanding paradigm."। World J Gastroenterol (Review)। 24 (14): 1521–1530। ডিওআই:10.3748/wjg.v24.i14.1521। পিএমআইডি 29662290। পিএমসি 5897856 ।
- Brown, Gregory; Thompson, Wesley (২০১০)। "Functional Brain Imaging in Schizophrenia: Selected Results and Methods"। Swerdlow, Neal। Behavioral Neurobiology of Schizophrenia and its Treatment। Springer। পৃষ্ঠা 185–189।
- Schmoldt, A; Benthe, HF; Haberland, G (১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫)। "Digitoxin metabolism by rat liver microsomes."। Biochemical Pharmacology। 24 (17): 1639–41। ডিওআই:10.1016/j.neubiorev.2007.07.012। পিএমআইডি 17884165।
- Boksa, P (জুলাই ২০০৯)। "On the neurobiology of hallucinations."। Journal of Psychiatry & Neuroscience। 34 (4): 260–2। পিএমআইডি 19568476। পিএমসি 2702442 ।
- Kumar, S; Soren, S; Chaudhury, S (জুলাই ২০০৯)। "Hallucinations: Etiology and clinical implications."। Industrial Psychiatry Journal। 18 (2): 119–26। ডিওআই:10.4103/0972-6748.62273। পিএমআইডি 21180490। পিএমসি 2996210 ।
- Behrendt, RP (মে ২০০৬)। "Dysregulation of thalamic sensory "transmission" in schizophrenia: neurochemical vulnerability to hallucinations."। Journal of Psychopharmacology (Oxford, England)। 20 (3): 356–72। ডিওআই:10.1177/0269881105057696। পিএমআইডি 16174672।
- Aleman, Andre; Vercammon, Ans (২০১৩)। "The Bottom Up and Top Down Components of Hallucinatory Phenomenon"। Jardri, R; Cachia, A; Pins, D; Thomas, P। The Neuroscience of Hallucinations। Springer।
- Ohayon, Maurice M (২০০০)। "Prevalence of hallucinations and their pathological associations in the general population"। Psychiatry Research। 97 (2–3): 153–64। ডিওআই:10.1016/S0165-1781(00)00227-4। পিএমআইডি 11166087।