হ্যানা মার্শম্যান
হ্যানা মার্শম্যান ছিলেন ভারতে আগত একজন খ্রিষ্টান মিশনারি। জন শেফার্ড নামক একজন কৃষক ও তার স্ত্রী র্যাফেল ছিলেন হ্যানার পিতামাতা। ঠাকুরদা জন ক্লার্ক উইল্টশায়ারের ক্রোকারটন গির্জার ধর্মযাজক ছিলেন[1]। আট বছর বয়সে তার মাতৃবিয়োগ হয়। ১৭৯১ খ্রিঃ জোশুয়া মার্শম্যানের সঙ্গে হ্যানা শেফার্ডের বিয়ে হয়। ১৭৯৪ খ্রিঃ মার্শম্যান দম্পতি উইল্টশায়ার ছেড়ে ব্রিস্টল শহরে এসে ব্রোডমীড ব্যাপ্টিস্ট চার্চে যোগ দেন। তাদের ১২ টি সন্তান হয়েছিল, যাদের মধ্যে কেবল পাঁচজনকে হ্যানা মৃত্যুকালে জীবিত দেখে যেতে পেরেছিলেন। হ্যানা মার্শম্যান ছিলেন ভারতে আগত প্রথম মহিলা খ্রিষ্টান মিশনারি[2]। ভারতে আগমন১৭৯৯ খ্রিঃ ২৯শে মে মার্শম্যান দম্পতি তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে পোর্টসমাউথ বন্দর থেকে ক্রাইটেরিয়ন জাহাজে চড়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। যাত্রাপথে ফরাসি নৌসেনার তরফ থেকে আক্রমণের আশঙ্কা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি এবং ১৩ই অক্টোবর ১৭৯৯ খ্রিঃ নিরাপদে তারা শ্রীরামপুরে অবতরণ করেন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখনও পর্যন্ত মিশনারি কাজকর্মের বিরোধিতা করত বলে তারা শ্রীরামপুরের দিনেমার উপনিবেশে আসেন। এখানেই ১৮০০ খ্রিঃ ১০ই জানুয়ারি উইলিয়াম কেরি তাদের সাথে দেখা করেন। মিশনারি জীবন![]() হ্যানা ব্যবহৃত চেয়ার, শ্রীরামপুর কলেজ। ১৮০০ খ্রিঃ ১লা মে মার্শম্যান দম্পতি শ্রীরামপুরে দু'টো আবাসিক বিদ্যালয় খোলেন। বিদ্যালয় দু'টি দ্রুত খ্যাতিমান হয়ে ওঠে এবং হ্যানা ও জোশুয়ার ছেলে জন ক্লার্ক মার্শম্যান এই স্কুলেই শিক্ষালাভ করেন এবং ক্রমশ খুব ভালো বাংলা বলতে শিখে যান। উইলিয়াম কেরি তার চার ছেলের প্রতি অত্যন্ত অমনোযোগী ছিলেন। হ্যানা, জোশুয়া এবং তাদের বন্ধু উইলিয়াম ওয়ার্ড তাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব নেন। তাদের দৃঢ় অধ্যবসায়ের ফলে চারজনেই পরবর্তী জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল। এই সময়ে কেরি সম্বন্ধে হ্যানা মার্শম্যান লেখেন, "ভদ্রলোক ভালোমানুষ, উনি অশুভের প্রাবল্য দেখে হা-হুতাশ করেন কিন্তু তার প্রতিকারের চেষ্টা করার পক্ষে উনি বড্ড নরম প্রকৃতির।" শ্রীরামপুর কলেজ এবং শ্রীরামপুর বালিকা বিদ্যালয়১৮১৮ খ্রিঃ ৫ই জুলাই উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। এই বিবৃতিতে "প্রাচ্য সাহিত্য ও পাশ্চাত্য বিজ্ঞান বিষয়ে এশীয়, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য যুবকদের শিক্ষাদানের জন্য একটি নতুন কলেজ" প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। বিবৃতিটির লেখক ছিলেন জোশুয়া মার্শম্যান। এই বিবৃতির উপর ভিত্তি করেই শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজও সক্রিয় আছে। হ্যানা নিজের উদ্যোগে শ্রীরামপুর বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটিই শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় বা চলতি কথায় আক্না স্কুল নামে পরিচিত। ![]() জোশুয়া ও হ্যানা মার্শম্যানের সমাধিফলক মৃত্যু এবং স্মৃতিরক্ষাহ্যানা মার্শম্যান ১৮৪৭ খ্রিঃ ৫ই মার্চ মারা যান[3]। ছবিতে প্রদর্শিত মার্শম্যান দম্পতির সমাধিফলকটি শ্রীরামপুরের মিশন গির্জা চত্বরে রক্ষিত আছে। হ্যানা মার্শম্যানের প্রতি মরণোত্তর শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আনুষ্ঠানিক লিপিটি এখানে পাওয়া যাবে। তথ্যসূত্র
|