হোসেনি দালান

হোসেনি দালান বা ইমামবাড়া বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বকশীবাজারে অবস্থিত একটি শিয়া উপাসনালয় এবং কবরস্থান। বিকল্প উচ্চারণ হুস্নী দালান এবং ইমারতের গায়ে শিলালিপিতে ফারসি ভাষায় লিখিত কবিতা অনুসারে উচ্চারণ হোসায়নি দালান। এটি মোগল শাসনামলে ১৭শ শতকে নির্মিত হয়। ইমারতটি মুহাম্মাদের পৌত্র হুসাইন বিন আলী শহীদ হওয়ার স্মরনে নির্মিত।

হোসেনি দালান
হোসেনি দালানে প্রবেশ পথ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিশিয়া ইসলাম
ফেরকাইসনা আশারিয়া
জেলাঢাকা
প্রদেশঢাকা
উৎসবআশুরা
অবস্থান
অবস্থানঢাকা
দেশবাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২৩.৭২২৪° উত্তর ৯০.৩৯৭৯° পূর্ব / 23.7224; 90.3979
স্থাপত্য
ধরনহুসাইনিয়া
স্থাপত্য শৈলীইসলামি, পারসিকব্রিটিশ স্থাপত্য
প্রতিষ্ঠাতামীর মুরাদ
অর্থায়নেশাহ সুজা
প্রতিষ্ঠার তারিখ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দ (১০১৫ হিজরি)
অভ্যন্তরীণ৯,৩৮০ ফু (৮৭১ মি)
হোসেনী দালান (২০১৭)

নির্মাণ ইতিহাস

হোসেনী দালান ইমামবাড়া (১৯০৪)

প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো এ স্থাপনা মোগল আমলের ঐতিহ্যের নিদর্শন। মোগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে এটি নির্মিত হয়।[1] এর নির্মাণকাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। ইমামবাড়ার দেয়ালের শিলালিপি থেকে জানা যায়, শাহ সুজার সুবেদারির সময় তাঁর এক নৌ-সেনাপতি মীর মুরাদ এটি হিজরী ১০৫২ সনে (১৬৪২ খ্রিস্টাব্দ) সৈয়দ মীর মোরাদ কর্তৃক নির্মিত হয়।তিনি প্রথমে তাজিয়া কোণা নির্মাণ করেন। ইমামবাড়া তারই পরিবর্ধিত আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তাঁর 'বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ' বইয়ে ভবনের দেয়ালে লাগানো শিলালিপির কথা উল্লেখ করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা পরীক্ষার পর দেখেছেন ওই শিলালিপিটি নকল নয়। শিলালিপিতে উল্লেখ রয়েছে নির্মাতা হিসেবে মীর মুরাদের নাম। ঐতিহাসিক এম হাসান দানীও বলেছেন, 'মীর মুরাদই এখানে প্রথম ছোট আকারের একটি ইমামবাড়া স্থাপন করেছিলেন। পরে এটি ভেঙে যায় এবং নায়েব-নাজিমরা নতুন করে তা নির্মাণ করেন।ইতিহাসবিদ জেমস টেলর তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেন, ১৮৩২ সালেও আদি ইমামবাড়া টিকে ছিল। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দুই দফায় ইমামবাড়ার সংস্কার হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি প্রায় বিধ্বস্ত হয়।পরে খাজা আহসানউল্লাহ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে তা পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করেন। ১৯৯৫-এ একবার এবং পরবর্তীতে ২০১১ তে পুনর্বার দক্ষিণের পুকুরটির সংস্কার করা হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় হোসেনী দালান ইমামবাড়ার সংস্কারসাধন ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়।

বিবরণ

হোসেনী দালানের দক্ষিণাংশে রয়েছে একটি বর্গাকৃতির পুকুর। এর উত্তরাংশে শিয়া বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের কবরস্থান অবস্থিত। দালানটি সাদা বর্ণের এবং এর বহিরাংশে নীল বর্ণের ক্যালিগ্রাফি বা লিপিচিত্রের কারূকাজ রয়েছে। একটি উঁচু মঞ্চের ওপর ভবনটি নির্মিত। মসজিদের অভ্যন্তরেও সুদৃশ্য নকশা বিদ্যমান।

২০১১’র সংস্কার

ইরান সরকারের উদ্যাগে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে হোসেনী দালানের ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয়। ইরান সরকার এতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে। ইরানের স্থপতিবিদ ও শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। ফলে ইরানের ধর্মীয় স্থাপনার বাহ্যিক রূপ ও নান্দনিকতা এ সংস্কার কাজে প্রতিফলিত হয়েছে। মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সংস্কারের আগে ভেতরে রং-বেরঙের নকশা করা কাচের মাধ্যমে যে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল, তা পরিবর্তন করে বিভিন্ন আয়াত ও মুদ্রা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। একইভাবে এর পূর্বদিকের ফটকে এবং উত্তর দিকের চৌকোনা থামগুলোয় আয়াত ও সুরা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। টাইলসগুলো ইরান থেকে আমদানি করা এবং এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইরানের ধর্মীয় শিল্পকলা ক্যালিগ্রাফি। ইরানের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনায় এ ধরনের টাইলস রয়েছে বলে জানা যায়।[2]

বোমা হামলা

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৪ অক্টোবর রাত দুইটার দিকে আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসেনী দালান এলাকায় বোমা হামলা হয়।[3][4][5] এতে ১ জন নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।[4] এটি বাংলাদেশে তাজিয়া মিছিলে উপর হওয়া প্রথম হামলা।[6]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.