হোটেল

হোটেল বা বাণিজ্যিক রাত্রিনিবাস বলতে সাধারণত একটি বহুতল ভবনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যেখানে আগন্তুক অতিথিদেরকে অর্থের বিনিময়ে কোনও শয়নকক্ষে স্বল্পকালীন আবাসনের (সাধারণত এক বা একাধিক রাত্রি যাপনের) সেবা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত রেস্তোরাঁয় বা সাধারণ্য ভোজনকক্ষে এক বা একাধিক বেলায় খাদ্যগ্রহণের সুবিধা প্রদান করা হয়।[1][2] অতিথিরা হোটেলে এসে শয়নকক্ষ ভাড়া করতে পারেন কিংবা শয়নকক্ষ অগ্রিম সংরক্ষণ (রিজার্ভ বা বুকিং) করে রাখতে পারেন। এছাড়া হোটেলে অতিথিদের জন্য পানশালা, সম্মেলন কক্ষ, ইন্টারনেট সুবিধাবিশিষ্ট কম্পিউটার কক্ষ ও কাজ করার টেবিল, প্রেক্ষাগৃহ, মিলনায়তন, সাঁতারের চৌবাচ্চা, টেনিস বা বাস্কেটবল খেলার কোর্ট, শরীরচর্চা কেন্দ্র, সাধারণের ব্যবহার্য রান্নাঘর, স্নানাগারশৌচালয়, মালপত্রের সংরক্ষণস্থল, ইত্যাদি বিভিন্ন অতিরিক্ত সুবিধা থাকতে পারে। এছাড়া ব্যক্তিগত শয়নকক্ষেও ব্যক্তিগত ব্যবহার্য লাগোয়া স্নানঘর বা গোসলখানা, টেলিভিশন, টেলিফোন (দূরালাপনি), শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, লেখার চেয়ার-টেবিল, ইন্টারনেট সংযোগ, ছোট হিমায়ক বা ফ্রিজ, আলমারি, রান্নার ব্যবস্থা, ইত্যাদি থাকতে পারে।

একটি সাধারণ হোটেল শয়নকক্ষ যাতে বিছানার পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, লেখার টেবিল ও টেলিভিশনের ব্যবস্থা আছে

প্রাচীন যুগে বড় বড় মহাসড়কগুলিতে সরাইখানার প্রচলন ছিল, যেখানে ভ্রমণরত ব্যবসায়ী ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ভ্রমণকারীদের শোবার ও খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মধ্যযুগে ইউরোপের খ্রিস্টান মঠগুলিকে ভ্রমণকারীরা বিপদসংকুল অঞ্চলে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করত। ১৮শ শতকে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন হলে এবং শিল্প বিপ্লবের পরে মহাসড়কের পাশে সরাইখানার সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। আধুনিক যুগে এসে রেলপথ নির্মাণের সুবাদে অবসর বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে ভ্রমণ জনপ্রিয় হতে শুরু করলে আধুনিক বাণিজ্যিক রাত্রিযাপন কেন্দ্র তথা হোটেলের প্রচলন হয়। মহাসড়কে ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমে গিয়ে সেখানকার সরাইখানাগুলির সংখ্যা কমতে থাকে। রেলস্টেশনগুলির পাশেই অনেক বড় বড় হোটেল ভবন নির্মিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিমানবন্দরের কাছে হোটেল নির্মাণের চল শুরু হয়। এরপরে হোটেল-শৃঙখলের আবির্ভাব ঘটে, যেখানে একই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় বিভিন্ন স্থানে হোটেল স্থাপন করা হয়, যে হোটেলগুলি একই ধরনের ও নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করে এবং শয়নকক্ষ অগ্রিম সংরক্ষণ করে রাখা, ভাড়া পরিশোধ করা, ইত্যাদি ব্যাপারগুলি সহজ হতে থাকে। বিভিন্ন বড় বড় নগরীতে বিলাসবহুল হোটেলের আবির্ভাব ঘটে।

হোটেল ক্ষণকালীন আবাসন হতে পারে, যেখানে বেশিরভাগ (তিন-চতুর্থাংশের বেশি) ভাড়াটে পর্যটক দীর্ঘ সময়ের জন্য অবস্থান করে না। বিলাসবহুল অবকাশযাপন কেন্দ্র হোটেল বা রিজর্ট হোটেল মূলত গ্রীষ্মকালীন বা শীতকালীন ছুটি কাটানো অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখে নির্মাণ করা হয়। অন্যদিকে আবাসিক হোটেলগুলিতে শয়নকক্ষ বা সমগ্র অ্যাপার্টমেন্ট (স্বতন্ত্র আবাসন) দীর্ঘকালীন ভাড়া দেবার সাথে সাথে খাদ্য ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা প্রদান করা হয়। ২০শ শতকের শেষে এসে গ্রীষ্মকালে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা ক্রমবর্ধমান সংখ্যার পর্যটকদের রাত্রিযাপনের সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে সাগরের তীরে অনেক সুউচ্চ অট্টালিকাসম হোটেল নির্মাণের প্রচলন শুরু হয়েছে।

তথ্যসূত্র

  1. Allan Beaver (২০০৫), A Dictionary of Travel and Tourism Terminology, CABI, পৃষ্ঠা 184-185
  2. Katy McAdam; Heather Bateman (২০০৫), Dictionary of Leisure, Travel and Tourism, A&C Black, পৃষ্ঠা 152
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.