হেলেন কেলার

হেলেন কেলার বা হেলেন অ্যাডামস কেলার (ইংরেজি: Helen Adams Keller) (২৭শে জুন, ১৮৮০ - ১লা জুন, ১৯৬৮) বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকারের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। একই সাথে তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী।

হেলেন কেলার
হেলেন অ্যাডামস কেলার ১৯০৮ সালে
জন্ম(১৮৮০-০৬-২৭)২৭ জুন ১৮৮০
মৃত্যু১ জুন ১৯৬৮(1968-06-01) (বয়স ৮৭)
জাতীয়তাআমেরিকান
পেশালেখক, রাজনৈতিক কর্মী, মানবতাবাদী
স্বাক্ষর

জীবনী

শৈশব

জুলাই ১৮৮৮ সালে হেলেন অ্যানা সেলভেন সাথে কেপ কাডেতে

হেলেন কেলার ১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আর্থার কেলার[1] এবং মায়ের নাম কেইট আডামস[2]। বয়স যখন মাত্র ১৯ মাস তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা-মা প্রাণের প্রিয় কন্যার জীবনের আশা-ভরসা ছেড়ে দিলেও ভেঙে পড়েননি; চিকিৎসা করা শুরু করেন। বহু চিকিৎসার পর হেলেনের জীবন রক্ষা পায়। কিন্তু তার কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়।

শিশুকাল থেকেই হেলেন কেলার একাধারে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিত্বের শিকার হয়ে বহুমুখী প্রতিবন্ধিত্ব নিয়েই বড় হতে থাকেন। তার বয়স যখন মাত্র ছয় বছর তখন বাবা-মা তাকে ওয়াশিংটনের প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী[3], টেলিফোন আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে পরামর্শ গ্রহণের জন্য নিয়ে যান। তিনি হেলেন কেলারকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, হেলেন আর কোনো দিন চোখে দেখতে পাবে না এবং কানেও শুনতে পাবে না। তবে গ্রাহাম বেল হেলেন কেলারের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা দেখে অনুধাবন করেন পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে স্বাভাবিক জীবনের কাছাকাছি একটি সুন্দর জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব।

শিক্ষাজীবন

হেলেন এবং অ্যানা সেলভেন ১৮৯৮ সালে

আট বছর বয়সে এনি সুলিভান নামের এক গৃহশিক্ষিকা তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। এখান থেকেই তাদের ৪৯ বছরের সম্পর্কের শুরু। এনি নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি ছিলেন। এনি প্রথমে আঙুল দিয়ে হেলেনের হাতে বিভিন্ন চিহ্ন এঁকে এবং এরপর বর্ণমালা কার্ড দিয়ে বর্ণমালা শেখান। তারপর ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেন। ১০ বছর বয়সে নরওয়েতে উদ্ভাবিত এক পদ্ধতি অনুসরণ করে কথা বলা শেখেন হেলেন। ১৯০০ সালে রেডক্লিফ কলেজে ভর্তি হন যেখানে বিশ্ববিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। ১৯০৪ সালে হেলেন প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ডিগ্রি অর্জনের আগেই তার আত্মজীবনী দ্যা স্টোরি অব মাই লাইফ প্রকাশিত হয়।

সমাজসেবা

সমাজের বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও গণমানুষের সহায়তা অর্জনে হেলেন প্রচেষ্টা চালান। এতে তিনি ব্যাপক সফলতাও লাভ করেন। তার জীবদ্দশায় যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রেসিডেন্টের এবং আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল, মার্ক টোয়েন, চার্লি চ্যাপলিনের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের সহায়তা পান।

হেলেন ১৯১৫ সালে জর্জ কেসলারকে সাথে নিয়ে হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি এখনও বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে হেলেন কেলার বিভিন্ন হাসপাতালে যুদ্ধাহত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈনিকদের দেখতে যেতেন এবং শান্তি ও আশার বাণী শোনাতেন। যুদ্ধ শেষ হলে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশ্বব্যাপী এক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়াস পান।

রাজনীতি

হেলেন রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও লেখালেখি করেছেন। হেলেন ছিলেন American Socialist Party-র   সমর্থক। তিনি সেখানে ১৯০৯ সালে যোগদান করেন। তিনি আয়ের সুষম বণ্টন দেখতে চাইতেন। ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অসমতার শেষ দেখাই ছিল তার ইচ্ছা। তার বই ‘Out of The Dark’-এ এই বিষয়ে আলাদা আলাদা রচনা লিখেছেন। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি Eugene V Debs এর সমর্থন পেয়েছেন।  ১৯১২ সালে তিনি Industrial Workers of the World (IWW)- যোগদান করেন। হেলেন ছিলেন একজন Pacifist এবং তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার জড়িত থাকার বিরুদ্ধে ছিলেন।

সাহিত্যকর্ম

তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ১২ টি। প্রধান বই হচ্ছে দি স্টোরি অফ মাই লাইফ (১৯০৩), লেট আস হ্যাভ ফেইথ, দি ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন (১৯০৮)[4], ওপেন ডোর ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিশপ্ত বিড়ম্বনা জীবনের বিষাদের ওপর একটি চলচ্চিত্র (Deliverance-1919) নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রে তার নিজের ভূমিকায় তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন।

হেলেনর লেখা একটি কবিতা

"আমার দৃষ্টিদ্বয় তারা সরিয়ে নিল 

যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল 

কিন্তু আমি স্মরণ করি মিল্টনের স্বর্গখনি,

আমার শ্রবণদ্বয় তারা সরিয়ে নিল 

যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল 

বীথোভেন এসে মুছালো আমার চোখের পানি। 

আমার জিহবা তারা সরিয়ে নিল 

যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল 

যখন আমি ছোট ছিলাম 

ঈশ্বরের সাথে কত কথা,

সম্পূর্ণ পোষণ করি 

তিনি তাদের অনুমতি দিবেন না 

সরিয়ে নিতে আমার আত্মা।"

পরলোকগমন

১৯৬৮ সালের ১লা জুন হেলেন কেলার পরোলোকগমন করেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য এবং তার অসামান্য কৃতিত্বের জন্য ১৯৭৭ সালে ‘আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দি ওভারসীজ ব্লাইন্ড’ যার বর্তমান নাম হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল গঠন করা হয়েছে।

পাদটীকা

  • Keller, Helen with Anne Sullivan and John A. Macy (1903) The Story of My Life. New York, NY: Doubleday, Page & Co.
  • Lash, Joseph P. (1980) Helen and Teacher: The Story of Helen Keller and Anne Sullivan Macy . New York, NY: Delacorte Press. আইএসবিএন ০-৪৪০-০৩৬৫৪-২
  • Herrmann, Dorothy (1998) Helen Keller: A Life. New York, NY: Knopf. আইএসবিএন ০-৬৭৯-৪৪৩৫৪-১

তথ্যসূত্র

  1. "Arthur H. Keller"। Encyclopedia of Alabama। ২০১১-০৭-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০৭
  2. "Kate Adams Keller"। American Foundation for the Blind। ২০১০-০৪-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০৭
  3. "The Story of My Life, by Helen Keller - page 11 discusses Martha Washington"। Project Gutenberg। ২০১৫-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০৭
  4. Keller, Helen (২০০৪) [1908]। The World I Live In (NYRB Classics 2004 সংস্করণ)। New York: NYRB Classics। আইএসবিএন 978-1590170670।

বহিসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.