হেমায়েত উদ্দিন

হেমায়েত উদ্দিন (৩ ডিসেম্বর ১৯৪১ - ২২ অক্টোবর ২০১৬) ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার নেতৃত্বে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হেমায়েত বাহিনী পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে অংশ নেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

হেমায়েত উদ্দিন
জন্ম৩ ডিসেম্বর, ১৯৪১
মৃত্যু২২ অক্টোবর ২০১৬
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণমুক্তিযোদ্ধা, বীর বিক্রম

প্রারম্ভিক জীবন

হেমায়েত উদ্দিন ১৯৪১ সালের ৩ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ আবদুল করিম এবং মা সখিনা বেগম।

কর্মজীবন

হেমায়েত উদ্দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের মার্চের মাঝামাঝি থেকে ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি বিভিন্ন বাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজনকে নিয়ে একটি ছোট দল গঠন করেন। তাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ করেন। [2]

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাতের পর ২৯শে মার্চ তারিখে ঢাকার জয়দেবপুর সেনানিবাসে অবস্থানরত পাঞ্জাবি সৈন্যদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সৈন্য এবং কর্মকর্তাগণ মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পরেন। বিদ্রোহী সৈন্যদের অন্যতম ব্যান্ডপার্টির হাবিলদার হেমায়েত উদ্দিন কয়েকজন সৈন্যকে নিয়ে ফরিদপুরে আসেন। এ সময় ফরিদপুরের স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় তিনি পাকিস্তান সৈন্যদের প্রতিহত করলে বেশ কিছুদিন ফরিদপুর পাক সৈন্য মুক্ত থাকে। কিন্তু ঢাকা থেকে আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রসহ পাকিস্তান সৈন্য ফরিদপুর গেলে হেমায়েত উদ্দিন সঙ্গীদের নিয়ে ২৮ শে এপ্রিল নিজ গ্রাম কোটালিপাড়ার টুপুরিয়ায় সরে আসেন। এ সময় স্থানীয় রাজাকারেরা তাকে আত্মসমর্পণ না করলে তার ছেলে এবং স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুকমী প্রদান করে। হুমকীর খবর শুনে হেমায়েতের স্ত্রী আত্মহত্যা করেন।[3] হেমায়েত সেখান থেকে সরে গিয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি এবং তার সঙ্গীরা কোটালিপাড়া থানা আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্র নিজেদের দখলে নেয়।

হেমায়েত বাহিনী

কিছুদিনের মধ্যেই হেমায়েতের মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি একটি বিরাট বাহিনীতে রূপ নেয়। এ বাহিনীতে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৪,৫০০ জন।[3] এ বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্র বরিশালের উত্তরাঞ্চল, খুলনা-বাগেরহাট ও যশোরের কালিয়া সহ গোপালগঞ্জ এবং মাদারীপুরের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। হেমায়েত বাহিনী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ বাহিনী ৪২টি দলে বিভক্ত ছিল।[3] প্রতিটি দলে কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় ভাবে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালিত হত। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে কোটালিপাড়ার জহরেরকান্দি হাই স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। হেমায়েত বাহিনীর মধ্যে বিচার বিভাগও ছিল। নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ২ জন গ্রুপ কমান্ডার সহ মোট ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল।[3]

তার নেতৃত্বে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে হেমায়েত বাহিনী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রায় ৫০০ পাকিস্তানি সেনাকে পরাস্ত করে এই এলাকা শত্রুমুক্ত করে। ২ ডিসেম্বর রাতে ২৪ জন সাব কমান্ডার নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন চূড়ান্ত আক্রমণের।

মৃত্যু

২২শে অক্টোবর ২০১৬ শনিবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে তিনি ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কোটালীপাড়ার টুপুরিয়া নামক গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হেমায়েত বাহিনী জাদুঘর প্রঙ্গণে ২৪শে অক্টোবর তাকে সমাহিত করা হয়।[4]

সম্মাননা

বাংলাদেশ গেজেটের ১৫৯ নম্বর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৬-১২-২০১২"। ২০১৪-০৮-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-০১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৪৮। আইএসবিএন 9789849025375।
  3. নজরুল, আরিফ (নভেম্বর ২০০৯)। বাংলাদেশের শত মনীষী। ঢাকা: সাহিত্য ইন্সটিটিউট। পৃষ্ঠা পৃ ২৩২। আইএসবিএন 9789848452363। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);
  4. হেমায়েত বাহিনীর হেমায়েত উদ্দিন আর নেই

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%B0_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AE

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.