হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন, যেটি ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংগঠনটি বাংলাদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে।[2][3][4]
![]() হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লোগো | |
ধরন | ইসলামী আন্দোলন |
---|---|
উদ্দেশ্য | ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা |
সদরদপ্তর | আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর[1] |
অবস্থান |
|
যে অঞ্চলে কাজ করে | বাংলাদেশ |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা ভাষা |
আমির | মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী |
মহাসচিব | সাজিদুর রহমান |
মূল ব্যক্তিত্ব | শাহ আহমদ শফী |
ইতিহাস
১৯ জানুয়ারি ২০১০ সালে এই সংগঠনটি চট্টগ্রামের প্রায় একশত কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হয়। হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা।[3][5] এটি ২০১০ সালে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১১ সালে তারা বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন নীতি (২০০৯) এর কয়েকটি ধারাকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক দাবি করে এর তীব্র বিরোধিতা করে।
২০২০ সালে শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর এই সংগঠনের আমির হন জুনায়েদ বাবুনগরী। জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী আমীর নিযুক্ত হন।
কর্মকাণ্ড
১৩ দফা দাবি
২০১১ সালে এই সংগঠনটি, সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত নারী উন্নয়ন নীতির তীব্র বিরোধিতা করে।[6][7] ২০১৩ সালে তারা ইসলাম ও রাসুলকে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি দাবি করে ব্যাপক আন্দোলন ও সমাবেশ শুরু করে। এ প্রেক্ষিতে তারা ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে।[5][8][9] হেফাজতর ইসলামের এই দাবির কয়েকটি দফা সমালোচিত হলে পরবর্তীতে তারা সংবাদ সম্মেলনে ১৩ দফার ব্যাখ্যা প্রদান করে।[10]
হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের দাবিসমূহ হলো:
- সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরান-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।
- আল্লাহ্, রাসুল ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
- শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক এবং রাসুল এর নামে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
- ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
- ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
- সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
- মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
- জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
- রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
- পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
- রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র রাসুলপ্রেমিক জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
- সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
- অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও রাসুলপ্রেমিক জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান।[5][11]
লং মার্চ এবং সমাবেশ
৫ মে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ করে এবং ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্ত্বরে তাদের প্রথম সমাবেশ করে। এই সমাবেশে প্রচুর লোকের সমাগম হয়।[12] এসময় বিভিন্ন বাধার কারণে অনেক কর্মী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে তারা চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে সমাবেশ করে। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের কর্মীদের সাথে আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর সংঘর্ষ হয় এবং কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে।[13][14][15][16]
ঢাকা অবরোধ
৫ মে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি এবং ঢাকার মতিঝিলে তাদের দ্বিতীয় সমাবেশের আয়োজন করে। ৫ ও ৬ মে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে এই সংগঠনের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে বহু হেফাজতে ইসলামের কর্মী, পুলিশ, বিজিবি সদস্যসহ মোট ৪৭ জন নিহত হয় এবং সাংবাদিকসহ আরও অনেকে আহত হয়।[17][18] তাদের উপর ফুটপাতের দোকান ও অন্যান্য বইয়ের সাথে কোরান শরিফ পোড়ানোরও অভিযোগ আনা হয়।[19] এদিন ধর্মীয় বইয়ের প্রায় ৮২টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়।[20] তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা দেবাশীষের নেতৃত্বে কুরআন শরিফ পোড়ানো হয়।[21] পল্টন মোড় ও সিপিবির কার্যালয়ের সামনে পুরোনো ৩৫টি বইয়ের দোকানের মধ্যে ৩টি বাদে সবগুলোই পুড়িয়ে দেওয়া হয়।[22]
হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা মতিঝিল, পল্টন, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলার মোড় ও আশেপাশের এলাকায় বহু প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।[20] এক প্রাথমিক হিসাবে বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও তার আশেপাশে প্রায় ৩০০টি দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং তাতে প্রায় ১৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।[23][24] এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)-এর ১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ও একই ইমারতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।[22] ক্ষতিগ্রস্ত হয় সোনালী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিটি সেন্টার, কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরবর্তীতে তথ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানান, ওই দিন শিল্প ব্যাংকের পাশে সরকারের পরিবহন পুলে রাখা ৪০টি বাসসহ বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।[22] এছাড়া অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন সেদিনকার ধ্বংসযজ্ঞে। হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা এদিন অবরোধ সৃষ্টির জন্য পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭০টি গাছ এবং পল্টন মোড় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গাছ কেটে ফেলে।[25] ঢাকা সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তার মতে ৫ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) র ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।[22][25]
৬ মে সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে, ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়।[26] এর আগে ৫ মে শাপলা চত্ত্বরে গভীর রাতে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে[27] হেফাজতের কর্মীদের বাণিজ্যিক এলাকা থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আক্রমণ পরিচালনা করে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করে।[28] এছাড়া এই অভিযান পরিচালনার পূর্বেই সরকার বিরোধী স্যাটেলাইট টেলিভিশন - দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়।[29] বিরোধী দল বিএনপি এবং হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ৫ মে শাপলা চত্বরে গভীর রাতে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার কর্মীকে হত্যা করে এবং তাদের লাশ গুম করে।[30] এশীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে বলা করা হয়, বিভিন্ন ইন্টারনেট রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে তারা ২৫০০ বা তারও বেশি হেফাজত কর্মী ওই হামলায় নিহত হতে পারে বলে ধারণা করছে এবং এজন্য তার তাদের রিপোর্টে একে গণহত্যা বলে অভিহিত করে।[31] অন্যান্য তথ্য থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, এই অভিযানে কমপক্ষে ৫০ জন হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছে।[27][32] এর প্রেক্ষিতে ঢাকা পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয় এবং হেফাজতে ইসলামের হাজার লোক গুমের এই দাবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করা হয়। কমিশনার হেফাজতের নেতৃবৃন্দের কাছে নিহতদের তালিকা আহবান করেন এবং বলেন যে সমাবেশস্থলে অসংখ্য সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এই ধরনের লাশ গুমের ঘটনা অসম্ভব।[33]
ফ্রান্সভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয় ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবিতে ঢাকায় জড়ো হওয়া মানুষদের হটিয়ে দিতে পুলিশ স্টান্ট গ্রেনেড, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এই সহিংসতার কারণে মতিঝিল এলাকার ব্যাংক, বিমা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের শত শত কর্মী রোববার নিজ নিজ অফিসে রাত কাটাতে বাধ্য হন। যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ব্লাসফেমি আইনের দাবিতে আন্দোলনরত কট্টরপন্থী মুসলমানদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ঢাকায় কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ঐদিন বিক্ষোভকারীদের কর্মকাণ্ড ছিল ব্যাপক ধ্বংসাত্মক। শক্তি প্রয়োগ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর আর কিছু করার ছিল না। সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ লিখেছে, ঢাকায় ইসলামী মৌলবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন।[34]
সমালোচনা
নাম
অনেকেই অভিযোগ করেন, এই সংগঠনের নামটি আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামক একটি সংগঠন থেকে নেওয়া হয়েছে এবং একারণে তারা বিভ্রান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।[35] ২০১৩ সালে এই সংগঠনের নেতা সন্দেহে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি শেখ নূরে আলমকে গ্রেফতার করা হয়।[36] তবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা বলেন, উক্ত সংগঠনটির নামের আগে আঞ্জুমান রয়েছে। শব্দের এই পার্থক্যের কারণে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।[35]
নারী বিদ্বেষ
হেফাজতে ইসলামের নারী নীতি বাতিলের দাবির বিরোধিতা করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজিত হয়। এতে নারী আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, হেফাজতে ইসলাম তাদের এই দাবির মধ্য দিয়ে নারীদের ঘরের বাইরে কাজের সুযোগ বন্ধ করার চেষ্টা করছে।[37] এছাড়া ৬ এপ্রিল ২০১৩ সালে নারী হয়ে পুরুষদের সমাবেশে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসার কারণে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা এক নারী সাংবাদিককে প্রহার করে যা দেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে।[38][39]
জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
অভিযোগ রয়েছে যে এই সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মদদপুস্ট[40] এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের মানবতাবিরোধীদের বিচার বানচালের উদ্দ্যশেই তারা সকল আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এছাড়া তারা জামায়াতের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পায় বলেও অভিযোগ আছে।[12] তবে দলটি এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
তালিবান সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
৬ মার্চের ঢাকা অভিমুখী লং মার্চের সময়ে এই সংগঠনের একজন সংগঠকের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে এক বুলেটিনে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অভিযোগ করা হয় যে, ১৯৮৮ সালের আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় তিনি আফগানিস্তান ভ্রমণ করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হারকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামি এবং তালিবান সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ করা হয়।[41] ২০০৪ সালের একটি সাক্ষাতকারে তিনি প্রকাশ করেন যে, তার সাথে ওসামা বিন লাদেন ও হারকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামির সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি সেই সাক্ষাতকারে বলেন,
“ হারকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামির আমন্ত্রনের কারণেই আমার আফগানিস্তান ভ্রমণ সম্ভব হয়েছে। .........আমরা যারা আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্র ভ্রমণ করছি তারা হলেন, শাইখুল হাদিস, আতাউর রহমান খান, সুলতান যাউক, আবদুল মান্নান, হাবিবুল্লাহ, আমি নিজে এবং আরও তিনজন।” [41]
বাঙালি সত্ত্বা ও বাংলা নববর্ষের বিরোধিতা
বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখকে বিজাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রচার করে এর বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় বক্ততা, গণমাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে বিভেদমূলক, বিদ্বেষমূলক ও ভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও প্রচার করে থাকে।[42] এখানে উল্লেখ্য, বাংলা নববর্ষ বাঙালিদের কাছে বাংলা বছরের প্রথম দিন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
আরও দেখুন
- দেওবন্দি সংগঠনের তালিকা
- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতা
- অপারেশন সিকিউর শাপলা
তথ্যসূত্র
উদ্ধৃতি
- "হাটহাজারীর আস্তানা ছেড়ে ফটিকছড়ি"। SAMAKAL। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২১।
- "হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট"। ২০১৪-১২-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৯।
- Unknown Islamist group flexes its muscles in Ctg
- "চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ - প্রথম আলো"। ২০১৪-০৩-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২।
- All detainees set free in Ctg
- "Bangladesh: 1 dead in clash over women's rights – AP Online | HighBeam Research"। ১১ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৩।
- "New Age | Newspaper"। ২০১৩-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-১২।
- "BanglaSongbad24.com"। ২০১৩-০৪-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-০৭।
- Govt must accede to our demands: Hifazat – bdnews24.com
- "হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট"। ২০১৩-০৭-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৯।
- "হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি"। দৈনিক প্রথম আলো। ৫ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৯।
- Behind the rise of Bangladesh's Hifazat – Features – Al Jazeera English
- Awami leader killed by Hifazat
- Hifazat attacks strikers in Dhaka
- "হেফাজতের সহিংসতায় জাবি প্রো-ভিসি আহত"। ২৮ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৩।
- "'নাস্তিকদের শায়েস্তা করি, এরপর মিডিয়া'"। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৩।
- 27 more killed | Hefajat runs amok in N'ganj, Ctg; 4 law enforcers among dead; overnight death toll 13
- "At least 20 dead in Islamist protests in Bangladesh – Yahoo! News"। ২৯ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৩।
- "'কুরআন শরীফের কথা বলেও রক্ষা পাইনি'"। ১০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৩।
- আহমেদ রাজু (৬ মে ২০১৩)। "কোরান-হাদিসের ৮২ দোকান ছাই"। ঢাকা। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২৫ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩।
- "এম কে আনোয়ারের দুই সপ্তাহের জামিন"। ৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩।
- আবুল হাসনাত, শুভংকর কর্মকার (৭ মে ২০১৩)। "হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞে নিঃস্ব অনেক ব্যবসায়ী"। ঢাকা। দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৩-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩।
- "৫ই মের সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি ১৮ কোটি টাকা"। দৈনিক মানবজমিন। ১১ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩।
- "৫ই মের সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি ১৮ কোটি টাকা"। সংবাদ ২১.কম। ২১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩।
- দুলাল হোসেন মৃধা, এম এইচ রবিন (৭ মে ২০১৩)। "হেফাজতের পরিবেশ বিধ্বংসী নাশকতা"। ঢাকা। দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩।
- Hefajat amir Shafi sent back to Hathazari, Zunayed arrested
- Political violence in Bangladesh: In hot blood
- Bangladesh clashes rage over blasphemy law
- "দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ"। ১ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩।
- www.bbc.co.uk
- Political violence in Bangladesh : In hot blood
- "36 killed in Dhaka as Islamic militants clash with police"। The telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৩।
- লাশ গুমের অভিযোগে ভিত্তি নেই : পুলিশ কমিশনার bbc.co.uk
- "রাজধানীতে ৮ ঘণ্টার ধ্বংসযজ্ঞ"। দৈনিক প্রথম আলো। ৬ মে ২০১৩। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩।
- "আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম নেতার মুক্তি চায়"। ডেইলি স্টার। ১৬ মার্চ ২০১৩।
- হেফাজতের ১৩দফার প্রতিবাদে ঢাকায় নারী সমাবেশ, bbc.co.uk
- "'নাস্তিকদের শায়েস্তা করি, এরপর মিডিয়া'"। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৩।
- "নারী সাংবাদিককে বেধড়ক পেটালো হেফাজতের লোকজন"। ১২ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৩।
- ‘Hifazat chief implementing Jamaat agenda’
- Target Taliban rule | The Daily Star
- http://www.kalerkantho.com/print-edition/news/2017/04/09/484656
গ্রন্থপঞ্জি
- হাসনাত, রাকিব (১ মে ২০২১)। "হেফাজতে ইসলাম আসলে কারা? এর উৎস কোথায়? কেমন বাংলাদেশ চেয়েছে তারা?"। বিবিসি বাংলা।
- আধুনিক যুগে ইসলামকে রক্ষা করা:হেফাজতে ইসলাম - গবেষণা জার্নাল
- "কিছু কওমি কিছু হেফাজত ও চেতনার আস্তিন - রশীদ জামীল"। www.rokomari.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৫।