হুমায়ূন ফরীদি

হুমায়ূন ফরীদি (২৯ মে ১৯৫২ - ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী অভিনেতা। তিনি মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে আগমন করেন। তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়।[2] তিনি মাতৃত্ব চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

হুমায়ূন ফরীদি
হুমায়ূন ফরীদি
জন্ম(১৯৫২-০৫-২৯)২৯ মে ১৯৫২
চুয়ারিয়া, তুমুলিয়া, কালীগঞ্জ, গাজীপুর, বাংলাদেশ
মৃত্যু১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২(2012-02-13) (বয়স ৫৯)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
শিক্ষাঅর্থনীতি
মাতৃশিক্ষায়তনজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঅভিনেতা
কর্মজীবন১৯৮১২০১২
দাম্পত্য সঙ্গীমিনু (বি. ১৯৮০; বিচ্ছেদ. ১৯৮৪)
সুবর্ণা মুস্তাফা (বি. ১৯৮৪; বিচ্ছেদ. ২০০৮)[1]
সন্তানশারারাত ইসলাম দেবযানী (মেয়ে)
পিতা-মাতাএ টি এম নূরুল ইসলাম
বেগম ফরিদা ইসলাম
পুরস্কারজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

হুমায়ূন ফরীদি ১৯৫২ সালের ২৯ মে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি ১৯৬৫ সালে পিতার চাকুরীর সুবাদে মাদারীপুরের ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ সময় মাদারীপুর থেকেই নাট্য জগতে প্রবেশ করেন। তার নাট্যঙ্গনের গুরু বাশার মাহমুদ। তখন নাট্যকার বাশার মাহমুদের শিল্পী নাট্যগোষ্ঠী নামের একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে কল্যাণ মিত্রের 'ত্রিরত্ন' নাটকে 'রত্ন' চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি সর্বপ্রথম দর্শকদের সামনে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর এই সংগঠনের সদস্য হয়ে 'টাকা আনা পাই', 'দায়ী কে', 'সমাপ্তি', 'অবিচার'সহ ৬টি মঞ্চ নাটকে অংশ নেন।

অবশেষে ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণের পর পিতার চাকুরীর সুবাদে চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেন।[3] উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব-রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। যদিও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় এবং শিক্ষা অসমাপ্ত রেখেই মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের পর ফিরে এসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি আল-বেরুনী হলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

কর্মজীবন

১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নাট্য উৎসবে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মূলতঃ এ উৎসবের মাধ্যমেই তিনি নাট্যাঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ লাভ করেন।[4]

ফরীদি ১৯৮৪ সালে তানভীর মোকাম্মেলের হুলিয়া স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[5] পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে শেখ নিয়ামত আলীর দহন (১৯৮৫) চলচ্চিত্র দিয়ে। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।[6] তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত সংশপ্তক নাটকে 'কানকাটা রমজান' চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন।

২০০৪ সালে ফরীদি দুটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হল হুমায়ূন আহমেদের শ্যামল ছায়াতৌকীর আহমেদের জয়যাত্রা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই বছর তিনি মাতৃত্ব চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[7]

ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু

হুমায়ূন ফরীদির কবরের ফলক

ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ূন ফরীদি দুবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০'র দশকে। শারারাত ইসলাম দেবযানী নামের তার এক মেয়ে রয়েছে এ সংসারে।[4] পরবর্তীতে অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে বিয়ে করলেও ২০০৮ সালে তাদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।

তিনি ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডিতে তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। এর পূর্বে তার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় তাকে ঢাকার মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসার পর তিনি ১৩ ফেব্রুয়ারি বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। এই আঘাতেই তার মৃত্যু হয়।[8]

চলচ্চিত্রের তালিকা

চলচ্চিত্র

টেলিভিশন

  • নিখোঁজ সংবাদ
  • হঠাৎ একদিন
  • পাথর সময়
  • সংশপ্তক
  • সমূদ্রে গাংচিল
  • কাছের মানুষ
  • মোহনা
  • নীল নকশাল সন্ধানে (১৯৮২)
  • দূরবীন দিয়ে দেখুন (১৯৮২)
  • ভাঙ্গনের শব্দ শুনি (১৯৮৩)
  • কোথাও কেউ নেই
  • তবুও প্রতীক্ষা (পরিচালক)
  • নৈবচ নৈবচ
  • সাত আসমানের সিঁড়ি
  • সেতু কাহিনী (১৯৯০)
  • ভবের হাট (২০০৭)
  • শৃঙ্খল (২০১০)
  • জহুরা
  • আবহাওয়ার পূর্বাভাস
  • প্রতিধ্বনি
  • গুপ্তধন
  • সেই চোখ
  • অক্টোপাস
  • বকুলপুর কত দূর
  • মানিক চোর
  • "আমাদের নুরুল হুদা" ৬০ তম পর্ব থেকে।
  • চন্দ্রগ্রস্থ (পরিচালক)

মঞ্চ

  • ত্রিরত্ন (প্রথম অভিনয়)
  • কিত্তনখোলা
  • মুন্তাসির ফ্যান্টাসি
  • কিরামত মঙ্গল (১৯৯০)
  • ধূর্ত উই

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

তথ্যসূত্র

  1. "2012 In The Rear-view Mirror"। The Daily Star। ২০১২-১২-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-৩০
  2. হুমায়ুন ফরীদি ০৩-১৫-২০১০।
  3. হুমায়ুন ফরীদি: তিন দশক অভিনয়ে ছড়িয়েছেন আলো ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে, বিডিনিউজ২৪.কম - সংগ্রহকাল: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ খ্রিস্টাব্দ
  4. "দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন, সংগ্রহ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ খ্রি."। ২০১৫-০৬-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩
  5. "হুমায়ুন ফরিদী: যার রক্তে মিশে ছিলো অভিনয়"চ্যানেল আই অনলাইন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২০
  6. জোয়াদ, আবদুল্লাহ (২০১০)। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র: পাঁচ দশকের ইতিহাস। ঢাকা: জ্যোতিপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 984-70194-0045-9।
  7. সারওয়াত, নাদিয়া (২৫ অক্টোবর ২০০৮)। "National Film Awards generate enthusiasm"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২০
  8. "হুমায়ুন ফরীদি আর নেই"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২০
  9. "একুশে পদক পেলেন ২১ বিশিষ্ট নাগরিক"। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.