হুদাইবিয়ার সন্ধি
হুদাইবিয়ার সন্ধি (আরবি: صلح الحديبية), ষষ্ঠ হিজরীর জ্বিলকদ মাসে (মার্চের ৬২৮ খ্রীষ্টাব্দে) মদিনা শহরবাসী এবং কুরাইশ গোত্রের মধ্যে সম্পাদিত একটি ঐতিহাসিক সন্ধিচুক্তি। এই সন্ধিচুক্তিটি একটি দশ বছর শান্তি প্রতিষ্ঠিত করে এবং মুহাম্মাদকে পরের বছর হজ্জের সময় মক্কার দিকে আসতে অনুমোদন করে।[1][2][3]
হুদাইবিয়ার শান্তি সম্মতিপত্র | |
---|---|
ধরণ | শান্তিচুক্তি |
খসড়া | আনু ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ |
স্বাক্ষর | আনু ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | হুদাইবিয়া |
কার্যকর | আনু ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ |
আলোচনাকারী | |
অংশগ্রহণকারী | |
ভাষা | আরবি |
উইকিসংকলনে হুদাইবিয়ার সন্ধি |
পটভূমিকা
হিজরি ৬ষ্ঠ সনের জ্বিলকদ মাসে হুদাইবিয়ার অভিযান সংঘটিত হয়। এই সনে মুহাম্মাদ একদা স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মদীনা থেকে মক্কায় গমন করেন এবং সেখানে উমরাহ পালন করলেন। নবীর স্বপ্ন নিছক একটি স্বপ্ন নয়, বরং সেটিও একধরনের ওহী। সুতরাং এরপর তিনি চৌদ্দশত সাহাবীসহ উমরাহ পালন করার জন্য মক্কা রওনা হলেন। কিন্তু জ়েদ্দা থেকে মক্কাগামী পথের পাশে হুদাইবিয়া নামক স্থানে মক্কার গুপ্তচদের দ্বারা তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন। ফলে, মক্কায় পৌঁছে উমরাহ পালন করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়।[4] পথিমধ্যে হুদাইবিয়া নামক স্থানে উনি তীব্র বাধার সম্মুখীন হন। এই স্থানের সানিয়াতুল মিরার নামক স্থানে উনার উটনী বসে যায়। অপরদিকে কুরাইশদের পক্ষ থেকে সামরিক অভিযানের হুমকি আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কুরাইশদের পক্ষ থেকে সুহায়ল ইবনে আমরকে দূত হিসাবে পাঠানো হয়। সেখানে নিম্নবর্ণিত লিখিত সমঝোতাগুলোই হুদাইবিয়ার সন্ধি হিসাবে পরিচিত।[5] মুহাম্মাদ উমরাহের জন্য নিয়ে আসা পশুগুলো সেখানে কোরবানী করে মদীনায় ফিরে যান। অতঃপর পবিত্র কোরআনে সুরা ফাতেহতে ইহাকে প্রকাশ্য বিজয় হিসাবে অ্যাখ্যায়িত করা হয়।
সন্ধিপত্রের কয়েকটি শর্ত
- মুসলিমগণ এ বছর উমরাহ না করেই মদীনায় ফিরে যাবে।
- আগামী বছর উমরাহের জন্য এসে তারা ৩দিন মক্কায় অবস্থান করতে পারবে এবং তাদের প্রস্থানকালে কুরাইশরা মক্কা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাবে।
- কুরাইশদের এবং মুসলিমদের মধ্যে আগামী ১০বছর যুদ্ধ বন্ধ থাকবে।
- কুরাইশদের কেউ মদীনায় আশ্রয় নিলে তাকে ফেরত দেওয়া যাবে। কিন্তু মদীনার কোন মুসলিম মক্কায় আশ্রয় নিলে, তাকে ফেরত দেয়া যাবেনা।
- আরবের যেকোন গোত্রের লোক মুসলিমদের বা কুরাইশদের সাথে সন্ধিচুক্তিসূত্রে বন্ধনাবদ্ধ হয়ে যাবে।
- মক্কায় ব্যবসায়ীরা নিরাপদে মদীনার পথানুসরণ সিরিয়া, মিশর ইত্যাদি দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে।
- মক্কায় বাসিন্দা মুসলিমদের জানমালের কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া যাবে।
- সন্ধিচুক্তিতে স্বাক্ষরদাতার পক্ষদ্বয় একে অপরের ধনসম্পদকে সম্মান ও রক্ষা করবে।
- মক্কায় প্রবেশকালে মুসলিমরা বর্শা বা ফলা আনা যাবেনা। আত্মরক্ষার জন্য কোষবদ্ধ তলোয়ার বা তরবারি আনা যাবে।
- সন্ধির শর্তাবলি উভয় পক্ষকে পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে।
উমরের বিরোধীতা
সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পরে, বেশিরভাগ হজ্জ যাত্রীরা মুহাম্মাদকে কুরাইশদের বেশি সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়, আল্লাহর নাম ব্যবহার করে এবং নিজেকে আল্লাহর রসূল বলে অভিহিত করে। এর ফলে উমর মুহাম্মাদের সংকল্প সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন।[6][7][8] এমনকি সহিহ মুসলিমেও এটি লিপিবদ্ধ রয়েছে।[9]
তথ্যসূত্র
- Tafsir ibn Kathir [https://web.archive.org/web/20040825002347/http://tafsir.com/default.asp?sid=48&tid=49600%5D
- Armstrong, Karen (২০০৭)। Muhammad : a prophet for our time (পেপারব্যাক সংস্করণ)। New York: HarperOne। পৃষ্ঠা ১৭৫–১৮১। আইএসবিএন 978-0-06-115577-2। ওসিএলসি 174312462।
- Armstrong, Karen, 1944- (২০০০)। Islam : a short history (Modern Library সংস্করণ)। New York: Modern Library। পৃষ্ঠা ২৩। আইএসবিএন 0-679-64040-1। ওসিএলসি 43552741।
- মাসিক মদীনা। প্রকাশিত হয়েছে মে, ২০০৪
- সীরাতে ইবনে হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
- Bodley, R. V. C. (Ronald Victor Courtenay) (১৯৪৬)। The messenger; the life of Mohammed। Internet Archive। Garden City, N. Y., Doubleday & Company, inc.।
- Muhammad Al-Tijani Al-Samawi (২০১৪-০১-০৪)। Then I Was Guided।
- "The Treaty of Hudaybiyah » Questions on Islam"। Questions on Islam (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০১।
- Muslim। Sahih, Volume 3। পৃষ্ঠা 1412।