হীরক
হীরক বা হীরা বা হীরে হল সর্বাপেক্ষা মূল্যবান একটি রত্ন যা গহনা তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়। বর্ণহীন এ রত্নটি একটি মাত্র বিশুদ্ধ উপাদান কার্বন থেকে সৃষ্ট। অন্য ভাষায় হীরক কার্বনের একটি বিশেষ রূপ মাত্র। পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ২৬০০০ কে.জি. খনিজ হীরা উত্তোলিত হয় যার মূল্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। কথিত আছে, হীরক সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে মূল্যবান হিসেবে খনি থেকে উত্তোলন ও ব্যবহার করা শুরু হয়। হীরা ভারতবর্ষের মানুষের কাছে কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ হাজার বছর ধরে পরিচিত বলে অনুমান করা হয়। মানুষের জানা সকল প্রাকৃতিক পদার্থ থেকে হীরা অনেক বেশি শক্ত এবং এটি দিয়ে উচ্চতম তাপমাত্রা পর্যন্ত কাজ সম্ভব। হীরাকে আদর্শ ধরে তৈরি করা খনিজের কাঠিন্য পরিমাপ করার মোহ স্কেলের ১-১০এ অনুযায়ী হীরার কাঠিন্য ১০। ভূ-অভ্যন্তরে প্রায় ১৪০ থেকে ১৯০ কি.মি. নিচে পৃথিবীর কেন্দ্র ও পৃথিবীর আবরণের মাঝে প্রচণ্ড তাপ ও চাপের কারণে হীরা গঠিত হতে প্রায় ১ থেকে ৩.৩ বিলিয়ন বছর সময় লাগে বলে বৈজ্ঞানিকদের ধারণা। গবেষকদের মতে, সকল হীরাই পৃথিবীতে তৈরি হয়েছে এমন নয়; পৃথিবীতে এমন অনেক হীরা পাওয়া গেছে যেগুলো পৃথিবীর বাইরে তৈরী।
হীরক | |
---|---|
সাধারণ তথ্য | |
শ্রেণী | বিশুদ্ধরূপে প্রাপ্ত |
রাসায়নিক সূত্র | C |
সনাক্তকরণ | |
পেষক ভর | ১২.০১ গ্রাম/মোল |
বর্ণ | সাধারণত আদর্শ হীরা হলুদ, বাদামী এবং ধূসর থেকে বর্ণহীন হয়ে থাকে। তবে নীল, সবুজ, কালো, অর্ধ-স্বচ্ছ সাদা, গোলাপী, বেগুনী, কমলা, রক্তাভ এবং লাল বর্ণের হীরাও পাওয়া যায়। |
স্ফটিক রীতি | অষ্টতলাকার |
স্ফটিক পদ্ধতি | পৃষ্ঠতল কেন্দ্রিক ঘনক |
বিদারণ | ১১১ (চতুর্দিকেই যথার্থভাবে) |
কাঠিন্য মাত্রা | ১০ (প্রকৃতিতে প্রাপ্ত পদার্থের মধ্যে সবচেয়ে বেশি) |
ডোরা বা বর্ণচ্ছটা | বর্ণহীন |
আপেক্ষিক গুরুত্ব | ৩.৫– ০.০১/+০.০১ |
ঘনত্ব | ৩.৫ - ৩.৫৩ গ্রাম/ঘন সে.মি. |
আলোকিক বৈশিষ্ট্য | এক প্রতিসরী |
প্রতিসরাঙ্ক | ২.৪১৮ (৫০০ ন্যানো-মিটারে) |
বিচ্ছুরণ | ০.০৪৪ |
মূল্যমান নিরূপণ
হীরার মূল্য কেমন হবে তা নির্ভর করে চারটি বিষয়ের উপর। যথা – রং কিরূপ, কীভাবে কাটা হয়েছে, কতটা স্বচ্ছ প্রকৃতির এবং কত ক্যারেট ওজনের। ক্যারেট স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার একক। মানে যে কোন স্বর্ণের ২৪ ভাগের কত ভাগ স্বর্ণ তা বোঝাতেই ক্যারেট ব্যবহৃত হয়। ২৪ ক্যারেট বলতে বোঝায় ২৪ ভাগের ২৪ ভাগই স্বর্ণ অর্থাৎ ৯৯.৯ শতাংশ খাঁটি স্বর্ণ (যা ব্যবহারের অনুপযোগী)। আর রত্নপাথরের ক্ষেত্রে ক্যারেট হচ্ছে ভরের একক। এক্ষেত্রে ১ ক্যারেট = ০.২ গ্রাম বা ২০০ মিলিগ্রাম। খনিজ হীরক এবং অলঙ্কারের জন্য প্রস্তুত কাটা হীরার মাঝে মূল্য পার্থক্য ব্যাপক।
রক্ত হীরক
আফ্রিকায় হীরার প্রচুর খনি আছে। এ সব হীরা থেকে প্রাপ্ত অর্থ যুদ্ধ, হানাহানি, সন্ত্রাস ইত্যাদির অর্থায়নে ব্যবহৃত হয়। এজন্যে এরূপ হীরাকে রক্ত হীরক নামে অভিহিত করা হয়। বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকায় হীরক তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির প্রধান কারণ ।
হীরার খনি
খনির নাম | দেশের নাম | মহাদেশের নাম |
ক্যাটোকা হীরক খনি | এঙ্গোলা | আফ্রিকা |
ফুকাউমা হীরক খনি | ||
লুয়ারিকা হীরক খনি | ||
বাকেন হীরক খনি | দক্ষিণ আফ্রিকা | |
কালিনান হীরক খনি (সাবেক প্রিমিয়ার খনি) | ||
ফিন্স্চ হীরক খনি | ||
কিংবার্লি, নর্দান কেপ | ||
কফিফন্টেন খনি | ||
ভেনেটিয়া হীরক খনি | ||
মুরোয়া হীরক খনি | জিম্বাবুয়ে | |
উইলিয়ামসন হীরক খনি | তাঞ্জানিয়া | |
লেতসেং হীরক খনি | লেসোথো | |
মির খনি | রাশিয়া | এশিয়া |
উদাচনি পাইপ | ||
গোলকোন্দা | ভারত | |
কোল্লুর খনি | ||
পান্না | ||
বুন্দার প্রকল্প | ||
ডায়াভিক হীরক খনি, নর্থওয়েস্ট টেরিটরি | কানাডা | উত্তর আমেরিকা |
ইকাটি হীরক খনি, নর্থওয়েস্ট টেরিটরি | ||
জেরিকো হীরক খনি, নুনাভাট | ||
স্ন্যাপ লেক হীরক খনি, নর্থওয়েস্ট টেরিটরি | ||
ভিক্টর হীরক খনি, অন্টারিও | ||
গ্যাহচো কুই হীরক খনি প্রকল্প, নর্থওয়েস্ট টেরিটরি | ||
ক্রেটার অব ডায়মণ্ডস্ স্ট্যাট পার্ক, আরকানসাস | যুক্তরাষ্ট্র | |
কেলসে লেক হীরক খনি, কলোরাডো | ||
আর্গাইল হীরক খনি | অস্ট্রেলিয়া | ওশেনিয়া |
এলেনডেল হীরক খনি | ||
মার্লিন হীরক খনি |
বাংলাদেশে হীরক
বাংলাদেশে হীরার কোনো খনি নেই। তবে হীরকখচিত গহনার ব্যবহার প্রচলিত। পাশ্চাত্য রীতি অনুযায়ী হীরকখচিত অঙ্গুরীয় ব্যবহার বিংশ শতকের শেষার্ধে বৃদ্ধি লাভ করে। ১৯৯০ দশকের শেষভাগে বাংলাদেশে প্রথম হীরক কাটার কারখানা স্থাপিত হয়। আমদানীকৃত খনিজ হীরা (Rought diamond) ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে হীরক উৎপাদন শুরু হয় ২০০০-এর গোড়ার দিকে। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম কাটা হীরা ইউরোপে রপ্তানী হয়। কাটা হীরার এই চালানটি বেলজিয়ামের এন্টওয়ার্প ডায়মণ্ড মার্কেটে বিক্রয় হয়।