হিদেতোশি নাকাতা
হিদেতোশি নাকাতা (জাপানি ভাষায়ঃ 中田 英寿, জন্মঃ ২২ জানুয়ারি, ১৯৭৭) জাপানের অবসরপ্রাপ্ত ফুটবল খেলোয়াড়। তার সময়কালে তিনি এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন। ১৯৯৫ সালে তিনি পেশাদারী পর্যায়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। পরপর দু'বার এশিয়ান ফুটবল সংস্থা তাকে এশিয়ার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করে। জাপান জাতীয় ফুটবল দলের পক্ষ হয়ে তিনবার ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে তিনি ইতালির অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মাননা নাইট পদবী হিসেবে অর্ডার অব দ্য স্টার অব ইতালীয় লাভ করেন।[1] এছাড়াও, নাকাতা ফ্যাশন জগতের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি নিয়মিতভাবে পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাপড় পরিধান করে ফ্যাশন শোতে অংশ নিয়ে থাকেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | |||
---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | হিদেতোশি নাকাতা | ||
জন্ম স্থান | কফু, ইয়ামানাশি, জাপান | ||
উচ্চতা | ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) | ||
মাঠে অবস্থান | মধ্যমাঠের খেলোয়াড় | ||
যুব পর্যায় | |||
১৯৮৬-১৯৮৯ | হোকুশিন বয়েজ সকার ক্লাব | ||
১৯৮৯-১৯৯২ | কফু কিতা জুনিয়র এইচ.এস | ||
১৯৯২-১৯৯৫ | নিরাসাকি এইচ.এস | ||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | |||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) |
১৯৯৫-১৯৯৮ | বেলমেয়ার হিরাতসুকা | ৮৫ | (১৬) |
১৯৯৮-২০০০ | পেরুজা | ৪৮ | (১২) |
২০০০-২০০১ | রোমা | ৩০ | (৫) |
২০০১-২০০৪ | পারমা | ৬৭ | (৫) |
২০০৪ | → বোলোগনা | ১৭ | (২) |
২০০৪-২০০৭ | ফিওরেন্টিনা | ২০ | (০) |
২০০৫-২০০৬ | → বোল্টন ওয়ান্ডেরার্স | ২১ | (১) |
২০০৭-২০০৯ | টোকিও ভার্দি | ||
২০০৮ | → থাই পোর্ট এফ.সি | ||
২০০৯-২০১১ | আলবিরেক্স নিগাতা | ||
মোট | ২৮৯ | (৪১) | |
জাতীয় দল | |||
১৯৯১-১৯৯৩ | জাপান অনূর্ধ্ব-১৭ | ৬ | (২) |
১৯৯৪-১৯৯৫ | জাপান অনূর্ধ্ব-২০ | ১২ | (৬) |
১৯৯৫-২০০০ | জাপান অনূর্ধ্ব-২৩ | ১২ | (৩) |
১৯৯৭-২০০৬ | জাপান | ৭৭ | (১১) |
* শুধুমাত্র ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে |
২৯ বছর বয়সে ৩ জুলাই, ২০০৬ সালে নাকাতা আনুষ্ঠানিকভাবে তার অবসরের কথা ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে তিনি দশ বছরের খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি টানেন। তন্মধ্যে, ইতালির সিরি এ এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সাত বছর খেলেন। মার্চ, ২০০৪ সালে পেলে বর্তমানে জীবিত বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকা ফিফা ১০০-তে নাকাতা'র নাম ঘোষণা করেন।
খেলোয়াড়ী জীবন
- ক্লাব পর্যায়ে
১৯৯৫ সালে আঠারো বছর বয়সে জে. লিগে বেলমেয়ার হিরাতসুকা (বর্তমানে শোন্যান বেলমেয়ার) দলে যোগদানের মাধ্যমে পেশাদারী ফুটবলে অভিষেক ঘটান নাকাতা। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের পর তিনি চার মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে ইতালির সিরি এ দল এ.সি. পেরুজাতে যোগ দেন।[2] এরফলে তিনি কাজু মিউরা'র চার বছর পর দ্বিতীয় জাপানী খেলোয়াড় হিসেবে ইতালির সর্বোচ্চ আসরে জেনোয়া'র পক্ষে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম মৌসুমেই ১০টি গোল করেন যা অবস্থানকালীন সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জানুয়ারি, ২০০০ সালে দেড় বছর পেরুজাতে কাটানোর পর তিনি রোমা'য় ৪২ বিলিয়ন লিরা বা ২৯ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে স্থানান্তরিত হন। [3] তার নৈপুণ্যে স্কুদেতো বা ইতালীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ জয় করে দলটি। ৬ মে, ২০০১ সালে সিরি এ ম্যাচে স্ট্যাডিও ডেলা আল্পিতে জুভেন্টাসে সেরা নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন তিনি।
২০০১ সালের গ্রীষ্ম মৌসুমে নাকাতা পারমায় আড়াই বছর অবস্থান করেন। ২০০৩-০৪ মৌসুমে ফিওরেন্টিনায় অবস্থান করে জানুয়ারি, ২০০৪ সালে বোলোগনায় খেলেন। আগস্ট, ২০০৫ সালে এফএ প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডেরার্সে খেলেন। সেখানে তার পেশাদার খেলোয়াড়ী জীবনে লিগের শেষ খেলায় ওয়েস্ট ব্রোমিচ অ্যালবিয়নের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ী হয় ও একটি গোল করেছিলেন।[4]
- আন্তর্জাতিক পর্যায়ে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ অলিম্পিকের ফুটবল আসরে অংশ নেন এবং ব্রাজিলকে পরাভূত করেছিল তার দল।[5] এছাড়াও, ২০০০ অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৮ ফিফা বিশ্বকাপে তিনি জাপানের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় ছিলেন। বাছাই পর্বে তিনি ৫টি গোল করেন। প্লে-অফ ম্যাচে ইরানের বিরুদ্ধে ৩ গোলের সবগুলোই তিনি করেন। ২০০১ সালে ২০০১ কনফেডারেশন কাপে জাপানকে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। কিন্তু রোমা'র সাথে চূড়ান্ত খেলায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি কনফেডারেশন কাপ ফাইনাল খেলায় অংশগ্রহণ করেননি।[6] দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্বকাপে চারটি খেলায় অংশ নেন এবং প্রথম রাউন্ডে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ী হয় তার দল।
২০০৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে জাপানের পক্ষ হয়ে তিনটি খেলায় অংশ নিলেও অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে পরাজিত হয়েছিল তার দল। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছিল জাপান। ক্রোয়শিয়া দলের বিরুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার লাভ করেন নাকাতা।[7] বিশ্বকাপের পর ৩ জুলাই, ২০০৬ সালে পেশাদারী পর্যায়সহ জাপান জাতীয় দল থেকে তার অবসরের কথা ঘোষণা করেন। ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে লিখেছিলেন যে,[8][9]
এখন থেকে আর কোন পেশাদারী খেলোয়াড় হিসেবে আমি মাঠে নামবো না। কিন্তু আমি কখনো ফুটবলকে ভুলব না।
সম্মাননা
- বালোঁ দ’অরের জন্য মনোনয়নঃ ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০১।
- ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনয়নঃ ১৯৯৮,[10] ১৯৯৯,[11] ২০০১ এবং ২০০২।[12]
তথ্যসূত্র
- "Arise, Sir Nak!"। This Is Lancashire। অক্টোবর ১৪, ২০০৫। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩, ২০০৬।
- Source: http://www.guardian.co.uk/football/2001/jul/24/newsstory.sport1
- "BILANCIO D'ESERCIZIO E CONSOLIDATO DI GRUPPO AL 30 GIUGNO 2000" (পিডিএফ)। AS Roma (Italian ভাষায়)। Borsa Italiana Archive। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-০২।
- "Bolton 2-0 West Brom"। BBC। ২৩ অক্টোবর ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
- "Japan in need of miracle"। 2006 FIFA World Cup। জুন ২১, ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩, ২০০৬।
- "Just making the final was a triumph for cup co-host"। Sports Illustrated। Associated Press। জুন ১১, ২০০১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩, ২০০৬।
- "Japan 0-0 Croatia"। BBC News। জুন ১৮, ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৭, ২০০৮।
- "Japan and Bolton midfielder Nakata to retire"। Reuters। জুলাই ৩, ২০০৬। ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩, ২০০৬।
- "To live is to journey, and to journey is to live."। Hidetoshi Nakata। জুলাই ৩, ২০০৬। ১৭ মে ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২২, ২০০৭।
- "Calcio News 1998-1999 (data of 2/1)" (Japanese ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৫, ২০১১।
- "Calcio News 1999-2000 (data of 1/26)" (Japanese ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৫, ২০১১।
- "FIFA World player 2002"। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৫, ২০১১।
বহিঃসংযোগ
- Nakata.net Official website
- Career profile and stats at FootballDatabase
- Player profile at official 2006 FIFA World Cup site
- Hidetoshi Nakata Revealed, on CNN.com
পূর্বসূরী মাসাশী ওজাকি |
জাপান পেশাদারী খেলার গ্র্যান্ড প্রাইজ বিজয়ী ১৯৯৭ |
উত্তরসূরী কাজুহিরো সাসাকি |