হিদেকি শিরাকাওয়া
হিদেকি শিরাকাওয়া (ইংরেজি: Hideki Shirakawa; জাপানি: 白川 英樹, শিরাকাওয়া হিদেকি; জন্ম: ২০ আগস্ট ১৯৩৬) একজন জাপানি রসায়নবিদ, প্রকৌশলী এবং জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ঝিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন এমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি পরিবাহী পলিমার আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে সুপরিচিত। ২০০০ সালে অ্যালান ম্যাকডিয়ারমিড ও অ্যালান হিগার এর সাথে যৌথভাবে তিনি রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
হিদেকি শিরাকাওয়া | |
---|---|
![]() হিদেকি শিরাকাওয়া | |
জন্ম | |
জাতীয়তা | জাপানি |
মাতৃশিক্ষায়তন | টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি |
পরিচিতির কারণ | পরিবাহী পলিমার |
পুরস্কার | রসায়নে নোবেল পুরস্কার (২০০০) পার্সন অফ কালচারাল মেরিট (বুন্কা কোরোসা) (২০০০) অর্ডার অফ মেরিট (বুন্কা কুন্সো) (২০০০) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | রসায়ন |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | পেনসিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় |
যাদের দ্বারা প্রভাবান্বিত | অ্যালান ম্যাকডিয়ারমিড |
বাল্যজীবন এবং শিক্ষা
![](../I/Hideki_Shirakawa_and_Yoshiro_Mori_20001018.jpg.webp)
হিদেকি শিরাকাওয়া’র জন্ম জাপানের টোকিও শহরে, এক সামরিক চিকিৎসকের পরিবারে। তিনি মাঞ্চুকুও এবং তাইওয়ানে শৈশব কাটিয়েছেন। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়, তিনি তার মায়ের নিজ শহর তাকায়ামা, গিফু তে স্থানান্তরিত হন।
১৯৬১ সালে, শিরাকাওয়া টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (টোকিও টেক) থেকে কেমিকৌশলে স্নাতক উপাধি, এবং ১৯৬৬ সালে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন। এরপর তিনি টোকিও টেক এর রাসায়নিক সম্পদ গবেষণাগারে সহকারী’র পদে নিযুক্ত হন।
পেশাগত জীবন
![](../I/Emperor_Akihito_Yoshiro_Mori_and_Hideki_Shirakawa_20001103.jpg.webp)
টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে কর্মরত অবস্থায় তিনি পলিঅ্যাসিটিলিন (; polyacetylene; ইউপ্যাক নাম: পলিইথাইন) তৈরি করেন, যা দেখতে ধাতুর মত ছিল। ১৯৭৫ সালে অ্যালান ম্যাকডিয়ারমিড যখন টোকিও টেক পরিদর্শনে যান, তখন শিরাকাওয়ার এই আবিষ্কার ম্যাকডিয়ারমিডের মধ্যে আগ্রহ সঞ্চার করে।
১৯৭৬ সালে, পেনসিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যালান ম্যাকডিয়ারমিডের গবেষণাগারে পোস্ট–ডক্টোরাল ফেলো হিসেবে কাজ করার জন্য তিনি আমন্ত্রিত হন। তারা দুজন এবং আমেরিকান পদার্থবিদ অ্যালান হিগার মিলে একত্রে পলিঅ্যাসিটিলিনের তড়িৎ পরিবাহিতার বিকাশ ঘটান।[1][2]
১৯৭৭ সালে তারা আবিষ্কার করেন যে, আয়োডিন বাষ্প দ্বারা ডোপায়নের মাধ্যমে পলিঅ্যাসিটিলিনের পরিবাহকত্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব। এই আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ, ২০০০ সালে এই তিন বিজ্ঞানী রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এই তড়িৎ পরিবহনের ক্রিয়াকৌশল হিসেবে, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, সলিটন রূপে অরৈখিক উত্তেজনা (nonlinear excitations) একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
১৯৭৯ সালে, শিরাকাওয়া সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় এ সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন; তিন বছর পর তিনি সেখানে পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৯১ সালে তিনি সুকুবা’র স্নাতকোত্তর বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে (মার্চ, ১৯৯৩ পর্যন্ত), এবং সুকুবা’র ক্যাটাগরি#৩ গ্রুপের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (মার্চ, ১৯৯৭ পর্যন্ত)।
নোবেল পুরস্কার
২০০০ সালে, “পরিবাহী পলিমার আবিষ্কার এবং এর বিকাশ সাধনের জন্য”, রসায়নশাস্ত্রে শিরাকাওয়া নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন, পেনসিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অ্যালান জি ম্যাকডিয়ারমিড এবং পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালান জে হিগার এর সাথে যৌথভাবে। জাপানি নোবেল বিজেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম জাতীয় সাত বিশ্ববিদ্যালয় এর বাইরে থেকে স্নাতক লাভ করেছিলেন, এবং রসায়নে নোবেল জয়ী দ্বিতীয় জাপানি ব্যক্তি তিনি।
বিভিন্ন সময়ে শিরাকাওয়া উল্লেখ করেন যে, তার নোবেল পুরস্কার নিয়ে গণমাধ্যমের (বিশেষ করে জাপানি গণমাধ্যমের) বিশেষ আতিশয্য তিনি পছন্দ করেন না। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, নোবেল পুরস্কারের বিভাগগুলোর বাইরে থাকা শাস্ত্রসমূহের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো আরও ব্যাপক পরিসরে পরিচিতি পাবে।[3]
স্বীকৃতি
(i) ১৯৮৩ – দ্য অ্যাওয়ার্ড অফ দ্য সোসাইটি অফ পলিমার সায়েন্স, জাপান
(ii) ২০০০ – এসপিএসজে অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট ইন পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
(iii) ২০০০ – রসায়নে নোবেল পুরস্কার
(iv) ২০০০ – অর্ডার অফ কালচার এবং পার্সন অফ কালচারাল মেরিট হিসেবে নির্বাচিত
(v) ২০০০ – এমেরিটাস অধ্যাপক, সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়
(vi) ২০০১ – বিশেষ পুরস্কার, কেমিক্যাল সোসাইটি অফ জাপান
(vii) ২০০১ – সদস্য, জাপান অ্যাকাডেমি[4]
(vii) ২০০৬ – এমেরিটাস অধ্যাপক, ঝিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়[5]
আত্মীয়
তার এক আত্মীয়, হিতোমি ইয়োশিজাওয়া, সঙ্গীতগোষ্ঠী মর্নিং মুসুমে (ইংরেজি:মর্নিং গার্লস) এর একজন সদস্য। ২০০০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস এ নারীদের ম্যারাথনে স্বর্ণপদক জয়ী, নাওকো তাকাহাশি– ও তার আত্মীয়।
গণসমস্যায় ভূমিকা
৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে, জাপানে হাউজ অফ কাউন্সিলরস এ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন অনুমোদন করা হয়। শিরাকাওয়া এবং পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী তোশিহিদে মাস্কাওয়া একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন, যেখানে বলা হয় এই আইন:[6]
“সংবিধান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শান্তিবাদী নীতি এবং মৌলিক মানবাধিকারের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান করা উচিত…(বর্জিত)…এমনকি কঠিন সময়েও গণমাধ্যম, চিন্তা ও মতপ্রকাশ, এবং শাস্ত্রীয় গবেষণার স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।”
— হিদেকি শিরাকাওয়া এবং তোশিহিদে মাস্কাওয়া
আরও দেখুন
- জাপানি নোবেল বিজয়ীদের তালিকা
- রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের তালিকা
টীকা
- Shirakawa, Hideki; Louis, Edwin J.; MacDiarmid, Alan G.; Chiang, Chwan K.; Heeger, Alan J. (১৯৭৭)। "Synthesis of electrically conducting organic polymers: Halogen derivatives of polyacetylene, (CH) x"। Journal of the Chemical Society, Chemical Communications (16): 578। ডিওআই:10.1039/C39770000578। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০২০।
- "The Nobel Prize in Chemistry 2000: Alan Heeger, Alan G. MacDiarmid, Hideki Shirakawa"।
- Shirakawa unhappy with way Japanese media reports Nobel issues | The Japan Times
- 会員個人情報 | 日本学士院
- http://www.zju.edu.cn/englishold/2006/1020/c11993a531485/pagem.psp
- Updated: Over Scientists' Objections, Japan Adopts State Secrets Law | Science | AAAS
তথ্যসূত্র
- Biographical snapshots: Hideki Shirakawa ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে, Journal of Chemical Education web site.
- Shirakawa, Hideki (২০০১)। "The discovery of polyacetylene film"। Synthetic Metals। 125: 3–10। ডিওআই:10.1016/S0379-6779(01)00507-0।
- Shirakawa, H. (২০০১)। "Nobel Lecture: The discovery of polyacetylene film-the dawning of an era of conducting polymers" (পিডিএফ)। Reviews of Modern Physics। 73 (3): 713–718। ডিওআই:10.1103/RevModPhys.73.713। বিবকোড:2001RvMP...73..713S।
বহিঃসংযোগ
- Nobelprize.org-এ হিদেকি শিরাকাওয়া (ইংরেজি)
Nobel Lecture on 8 December 2000 The Discovery of Polyacetylene Film: The Dawning of an Era of Conducting Polymers