হিড়িম্বা

হিড়িম্বা মহাভারত মহাকাব্যের একটি চরিত্র। ইনি মধ্যম পান্ডব ভীমের সহধর্মিনী ছিলেন। ইনি ছিলেন একজন রাক্ষসী । তার পুত্রের নাম ছিল ঘটৎকচ।

যুধিষ্ঠির হিড়িম্বাকে বিবাহের শর্ত বলছেন
হিড়িম্বা
রাজা রবি বর্মার অঙ্কিত ভীম এবং হিডিম্বার চিত্রকর্ম।
অন্তর্ভুক্তিরাক্ষস, দেবী
আবাসকাম্যক বন
গ্রন্থসমূহমহাভারত
ব্যক্তিগত তথ্য
সহোদরহিড়িম্ব
সঙ্গীভীম
সন্তানঘটোৎকচ

পাণ্ডব সকাশে হিড়িম্বা

দুর্যোধন পাণ্ডবদের হত্যা করার জন্য বারণাবত নগরীতে তার মন্ত্রী পুরোচনকে দিয়ে এক মনোরম প্রাসাদ নির্মাণ করিয়েছিলেন যা লাক্ষা অর্থাৎ জতু দ্বারা তৈরী হয়েছিল। এছাড়া সহজ দাহ্য পদার্থ যেমন বাঁশ, মোম, ঘি, শণ ইত্যাদিও ছিল। তার ইচ্ছা ছিল পাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারা। কিন্তু বিদুর এর সাহায্যে তারা এই গুপ্তহত্যা ফাঁকি দেন। তারা যে বনের মধ্যে দিয়ে পালাচ্ছিলেন সেই বনে হিড়িম্ব নামক এক রাক্ষস ও তার ভগিনী হিড়িম্বা বাস করত। মানুষের আগমন বুঝতে পেরে হিড়িম্ব তার বোনকে বলে মানুষ গুলোকে তার কাছে নিয়ে আসতে। কিন্তু হিড়িম্বা সেখানে উপস্থিত হয়ে ভীমের অপূর্ব রূপ আর তেজ দেখে তার প্রেমে পড়ে যায়। তিনি এক সুন্দরী নারীর বেশে ভীমের কাছে এসে বলেন তার ভ্রাতা একজন রাক্ষস এবং ওই বনের রাজা, হিড়িম্বা আরও বলেন তিনি ভীমকে ভালবেসে ফেলেছেন এবং তাকে নিয়ে অন্যত্র যেতে চান। এসময় অন্যান্য পাণ্ডব ও কুন্তী পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ভীম তাদের ছেড়ে যেতে রাজি হলেন না। হিড়িম্বা সকলের মঙ্গলের জন্যে সবাইকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় ভীমকে। এদিকে বোনের বিলম্ব দেখে হিড়িম্ব সেখানে উপস্থিত হল এবং হিড়িম্বাকে মানুষের বেশে ভীমের সাথে প্রেম আলাপে রত দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে প্রথমে নিজের বোনকেই মারতে গেলেন। ভীম এসময় হিড়িম্বাকে সরিয়ে নিজেই হিড়িম্বের সাথে দ্বন্দযুদ্ধে রত হলেন। তিনি হিড়িম্বকে তুলে ঘুরিয়ে মাটিতে ফেলে বধ করলেন।

ভীমের সাথে বিবাহ

বাহুযুদ্ধের শব্দে কুন্তী ও অন্য পাণ্ডবরা জাগ্রত হয়ে পাশে হিড়িম্বাকে দেখলেন। হিড়িম্বা কুন্তীর পায়ে প্রণাম করলে কুন্তি তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। হিড়িম্বা বলেন তিনি একজন রাক্ষসী এবং তার পুত্র ভীমকে বিবাহ করতে চান। ভীম এতে সম্মত হন না তিনি ভাবছিলেন হয়ত হিড়িম্বা তার ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নিবেন। এজন্য তিনি হিড়িম্বাকে হত্যা করতে যান। কিন্তু যুধিষ্ঠির তাকে স্ত্রীহত্যা করতে নিষেধ করেন। হিড়িম্বা কুন্তীর কাছে গিয়ে বলেন তিনি ভীমকে না পেলে আত্মহত্যা করবেন। তখন কুন্তীর আদেশে ভীম হিড়িম্বাকে বিবাহ করেন। যুধিষ্ঠির এই শর্ত দেন যে ভীম স্নান আহ্নিক শেষে হিড়িম্বার সাথে মিলিত হবেন এবং সন্ধ্যায় পুনরায় ভ্রাতাদের কাছে ফিরে আসবেন। সন্তান না হওয়া পর্যন্ত ভীম হিড়িম্বার সাথে বাস করতে রাজি হন। তাদের যে পুত্র হয় তার নাম ঘটোৎকচ। ঘটোৎকচ একজন ধার্মিক, বিদ্বান ও বীর যোদ্ধা ছিলেন।

তথ্যসূত্র

    • মহাভারত - রাজশেখর বসু
    • পৌরাণিক অভিধান - সুধীরচন্দ্র সরকার
    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.