হাভানা
হাভানা (স্পেনীয়: La Habana, [la aˈβana] (শুনুন)) কিউবার রাজধানী, বিভাগীয় এবং প্রধান বাণিজ্যিক শহর ও সমুদ্র বন্দর। [2] এই শহরের বাসিন্দাসহ এর মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ [1][2] এবং এর আয়তন ৭২৮.২৬ বর্গ কিলোমিটার বা ২৮১.১৮ বর্গ মাইল;যা তাকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহরে পরিণত করেছে। এর পূর্বাংশ ও দক্ষিণাংশের বেশির ভাগ স্থানই সমুদ্রতট।
ষোড়শ শতকে স্পেনের রাজার অধীনস্থ স্প্যানিশবাহিনী সর্বপ্রথম হাভানা শহরটির গোড়াপত্তন করে। আমেরিকার মূল অধিবাসী তাইনোদের সংগে রাজসমর্থিত স্প্যানিশ ঔপনিবেশিকদের যুদ্ধের সময় শহরটির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় কারণ স্পেন অভিমুখী স্প্যানিশ যুদ্ধজাহাজগুলি এখানে বিশ্রামের জন্য কিছুসময় কাটিয় যেত।স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ 1607 সালে হাভানাকে রাজধানী উপাধি দেন। শহর রক্ষার জন্য প্রাচীর ও দুর্গ নির্মাণ করা হয়েছিল।
বর্তমানে এখানে কিউবান সরকারের কেন্দ্রীয় সংসদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বহু ব্যবসার সদর দপ্তর এবং ১০০টিরও বেশি কূটনৈতিক অফিস রয়েছে। এর গভর্নর হলেন কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিসি) এর রেনাল্ডো গার্সিয়া জাপাতা।[10][11] আয়ের পরিমাপ অনুসারে ২০০৯ সালে, শহর/প্রদেশটি দেশের তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল।
বর্তমান হাভানা মূলত তিনটি শহরের সমষ্টি। পুরাতন হাভানা, পরবর্তী পর্যায়ে নির্মিত ভেদাদো বা বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং নতুন শহরতলি অঞ্চল।শহরটি প্রধানত পশ্চিম ও দক্ষিণে উপসাগরের দিকে প্রসারিত হয়েছে। উপসাগর একটি সরু খাঁড়ির মাধ্যমে শহরে প্রবেশ করেছে এবং তিনটি প্রধান বন্দরে বিভক্ত হয়েছে: মারিমেলেনা, গুয়ানাবাকোয়া এবং আন্তারেস। আলমেন্ডারেস নদী শহরটিকে দক্ষিণ থেকে উত্তরে অতিক্রম করে, উপসাগরের কয়েক মাইল পশ্চিমে ফ্লোরিডা প্রণালীতে প্রবেশ করেছে।
হাভানা একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। গড়ে বছরে দশ লক্ষেরও বেশি পর্যটক এখানে ভ্রমণ করতে আসে।; সরকারী আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১০ সালে শহরটির আন্তর্জাতিক পর্যটক সংখ্যা ছিল ১১,৭৬,৬২৭ [14] যা ২০০৫ সালের তুলনায় ২০% বেশি। ওল্ড হাভানাকে 1982 সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করেছে। [15] শহরটি তার ইতিহাস, সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং স্মৃতিসৌধের জন্যও বিখ্যাত।
হাভানা | |
---|---|
শহর | |
La Habana | |
পতাকা প্রতীক | |
ডাকনাম: City of Columns | |
হাভানা | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°০৮′ উত্তর ০৮২°২৩′ পশ্চিম | |
দেশ | কিউবা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দ |
শহরের মর্যাদা প্রদান | ১৫৯২ |
সরকার | |
• মেয়র | মারটা হারনান্নাদেজ রোমেরো (পিসিসি) |
• প্রেসিডেন্ট | মিগুয়েল দিয়াস-কানেল |
আয়তন | |
• মহানগর | ৭২৮.২৬ বর্গকিমি (২৮১.১৮ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৫৯ মিটার (১৯৪ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১২)[1] | |
• শহর | ২১,০৬,১৪৬ |
• জনঘনত্ব | ২,৮৯২/বর্গকিমি (৭,৪৯০/বর্গমাইল) |
• | Habanero/a |
পোস্ট কোড | ১০xxx–১৯xxx |
এলাকা কোড | (+৫৩) ০৭ |
নামের ব্যুৎপত্তি
শহরটির স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নাম ছিল হাবানা। ১৫১৪ সালে, কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান দিয়েগো ভেলাজকুয়েজ সন্ত শহীদ সেন্ট ক্রিস্টোফারের নামানুসরণে শহরটির নামকরণ করেন, ‘সান ক্রিস্টোবাল দে লা হাবানা’ যার অর্থ "হাবানার সেন্ট ক্রিস্টোফার"। শহরটি পরে কিউবার রাজধানী হিসাবেও স্বীকৃতি লাভ করে। হাবানা নামটি কোথা থেকে এসেছে তা স্পষ্ট নয়, সম্ভবত তাইনো গোষ্ঠীর প্রধান হাবাগুয়ানেক্সের নাম থেকে এর উদ্ভব। তবে এর বেশি বিশেষ কিছু জানা যায় না।ছোট লেখা<small>ছোট লেখা
পরবর্তী কালে উচ্চারণ বিভ্রান্তিতে স্প্যানিশ ‘হাবানা’ ইংরাজিতে ‘হাভানা’তে রূপান্তরিত হয়। স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের সময় সাহিত্যে হাভানা শব্দের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায় এবং সমনামে এক ধরনের চুরুট, একটি রঙ এবং একজাতীয় খরগোশ থাকার ফলে শহরের ‘হাভানা’ নামটিই বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
রাষ্ট্রের প্রতীকচিহ্ন
প্রতীকচিহ্ন একটি বর্ম বা ঢালের আকারে গঠিত। বর্মের উপরিভাগে তিনটি দুর্গের প্রতিকৃতি যা শহরটিকে রক্ষাকারী তিনটি দুর্গের প্রতিনিধি,: ফুয়ের্জা দুর্গ, মররো দুর্গ এবং পুন্টা দুর্গ। দুর্গের নীচে একটি চাবির প্রতিকৃতি যা বোঝাতে চায় হাভানা হল নতুন বিশ্বের প্রবেশদ্বার। বর্মের একদিকে একটি ওক শাখা এবং অন্য দিকে একটি লরেল পুষ্পস্তবক জাতির শক্তি, সম্মান এবং গৌরবের প্রতীক। এই প্রতীকগুলো মানুষের অধিকারের প্রতিনিধিত্ব করে।
'হাভানার ইতিহাস'
ষোড়শ শতাব্দী
স্প্যানিশ বিজয়ী দিয়েগো ভেলাজকুয়েজ দে কুয়েলার ১৫১৫ সালে দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে প্রথম হাবানা শহরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।স্থানটি ছিল সম্ভবত বর্তমান বাটাবানো শহরের কাছে এবং মায়াবেক নদীর তীরে। তবে অস্বাস্থ্যকর জলবায়ু এবং মশার উপদ্রবে কর্তৃপক্ষ অচিরেই স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।
১৫১৪ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যে স্প্যানিশরা কিউবার উত্তর উপকূলে দুটি বসতি স্থাপন করেছিল, তাদের মধ্যে একটি ছিল লা চোরেরাতে, এখন যেখানে লা চোরেরার বিখ্যাত মিনার তারই আশেপাশে। এখানেই পরবর্তী কালে গড়ে ওঠে ভেদাদো এবং মিরামারের জনবহুল বসতি-আলমেন্ডারেস নদীর মোহনার কাছে। হাভানার প্রাচীন নাম ছিল পুয়ের্তো ডি ক্যারেনা যার আক্ষরিক অর্থ ক্যারেনার বন্দর। দ্বীপের এই অঞ্চলে উপসাগরের কিছু প্রাকৃতিক গুণমান স্থানটিকে বন্দর নির্মাণের পক্ষে আদর্শ করে তোলে।
প্যানফিলো ডি নারভেজ হাভানা সম্বন্ধে বলেছেন এটি কিউবায় স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠিত ষষ্ঠ শহর । সন্ত সান ক্রিস্টোবালের স্মরণে এর নাম রাখা হয় সান ক্রিস্টোবাল দে লা হাবানা। সেই সময় প্রতিষ্ঠিত কিউবার শহরগুলি বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক ও সামরিক কারণে যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করেছিল।
হাভানার বন্দর জলদস্যু, দস্যু অভিযাত্রী এবং ফ্রান্সের রাজশক্তি সমর্থিত বিশেষ নৌবাহিনী ফরাসি কর্শেয়ার দ্বারা প্রায়ই আক্রান্ত হত। ১৫৫৫ সালে ফরাসি কর্শেয়ার বাহিনী শহরটিকে জ্বালিয়ে দে়য়। ফলস্বরূপ স্পেনের রাজা শহরটির সুরক্ষার প্রয়োজনে দুর্গনির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং এভাবেই হাভানার প্রথম দুর্গ গঠিত হয়। দুর্গনির্মাণের উদ্দেশ্য কেবল দস্যু আক্রমণ প্রতিহত করাই ছিল না, ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপগুলির সংগে বাণিজ্যের উপর স্পেনের একাধিপত্য বিস্তারকরা এবং তৎসহ চোরাকারবারিদের –যা কিনা সম্প্রতি সামুদ্রিক বাণিজ্যের উপর স্পেনসম্রাটের নানা বিধিনিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ব্যাপক ভাবে বেড়ে গিয়েছিল-দমন করাও এর উদ্দেশ্য ছিল।
নবাবিষ্কৃত আমেরিকার দেশগুলি থেকে জাহাজগুলি প্রথমে হাভানায় পণ্য বহন করে জড়ো হত এবং সেখান থেকে স্পেনের দিকে পাড়ি জমাত। যাত্রার আগে সমুদ্র অতিক্রম করার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, জল এবং অন্যান্য পণ্য হাভানা থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যেত। এর ফলে হাভানার কৃষি ও উৎপাদন শিল্প বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়।
১৫৯২ সালের ২০শে ডিসেম্বর, স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ হাভানাকে ‘নগর’ উপাধি প্রদান করেন। পরে, এই শহরটিই স্প্যানিশ রাজের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নতুন পৃথিবীর প্রবেশদ্বার’ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ইতিমধ্যে, শহরের প্রতিরক্ষামূলক পরিকাঠামো নির্মাণের প্রচেষ্টাও অব্যাহত ছিল।
সপ্তদশ শতাব্দী
সপ্তদশ শতকে হাভানা শহর বিশেষভাবে বিস্তার লাভ করে। অনেক নতুন গৃহ-অট্টালিকা নির্মিত হয়। দ্বীপে অপর্যাপ্ত কাঠ পাওয়া যেত, গৃহনির্মানের কাজে সেগুলি ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন স্পেনের আইবেরিয়ান স্থাপত্য শৈলীর সংগে স্থানীয় ক্যানারিয়ান স্থাপত্যশৈলীর বৈশিষ্ট্যগুলির সমন্বয়ে গৃহগুলি গঠিত হয়েছিল। কিছু নাগরিক স্মৃতিস্তম্ভ এবং ধর্মীয় ভবনও তৈরি হয়েছিল। সেন্ট অগাস্টিনের কনভেন্ট, এল মররো ক্যাসেল, হুমিল্লাদেরোর চ্যাপেল, লা চোরেরাতে ডোরোটা দে লা লুনার ফোয়ারা, পবিত্র দেবদূতের গির্জা, হাসপাতাল দে সান লাজারো, সান্তা তেরেসার মঠ এবং সান কনভেন্ট ফেলিপ নেরি এই সময়ে নির্মিত হয়।
১৬৪৯ সালে হাভানায় কলম্বিয়া থেকে আগত এক মারাত্মক মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটে যাতে দেশের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ আক্রান্ত হয়। ১৬৬৫ সালের ৩০শে নভেম্বর, অস্ট্রিয়ার রানী মারিয়ানা, স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপের বিধবা স্ত্রী, কিউবার রাষ্ট্রীয় প্রতীকটির অনুমোদন করেন। প্রতীকে হাভানার প্রথম তিনটি দুর্গ- রিয়েল ফুয়ের্জা, ট্রেস সান্তোস রেয়েস ম্যাগোস দেল মরো এবং সান সালভাদর দে লা পুন্তা- স্থান পেয়েছে।১৬৭৪ সালে, হাভানার প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু হয়, ১৭৭০ সালে যার পরিসমাপ্তি ঘটে।
'অষ্টাদশ শতাব্দী
অষ্টাদশ শতাব্দীতে হাভানা স্প্যানিশ বন্দরগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কারণ এখানে জাহাজগুলির মেরামতি, সারাই ও পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা ছিল। ১৭৪০ সালে এটি ছিল স্পেনের অধীনস্থ বন্দরগুলির মধ্যে বৃহত্তম এবং সবচেয়ে সক্রিয় শিপইয়ার্ড এবং আমেরিকা সংলগ্ন অঞ্চলের একমাত্র বন্দর যেখানে ড্রাইডকের সুবিধা আছে।
ইউরোপে বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে ১৭৫৬ সাল থেকে ১৭৬৩ সাল অবধি সাত বর্ষব্যাপী যে যুদ্ধ চলে, ইতিহাসে যা সেভেন ইয়ার্স ওয়ার নামে প্রসিদ্ধ, সেই যুদ্ধ চলাকালীন ১৭৬২ সালে হাভানা সাময়িকভাবে ইংরেজদের দখলে আসে এবং তারা এখান থেকে উত্তর আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান কলোনীর রাজ্যগুলির সংগে ব্যবসা শুরু করে।পরে প্যারিসের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলে হাভানা পুনরায় স্পেনের অধিকারে আসে, বিনিময়ে ইংরেজরা পায় ফ্লোরিডা।
হাভানা পুনরুদ্ধারের পরেই স্প্যানিশরা নগরের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে দৃঢ় করবার কাজে মনোযোগ দেয় এবং হাভানাকে আমেরিকার সবচেয়ে সুরক্ষিত শহরে পরিণত করে। আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম দুর্গ সান কার্লোস দে লা কাবানার দুর্গের নির্মান কার্য এই সময় শুরু হয়, স্পেন অঘিকৃত পুয়ের্তো রিকোর সান জুয়ানে ক্যাস্টিলো সান ক্রিস্টোবাল (সবচেয়ে বড়) এবং কাস্টিলো সান ফিলিপে দেল মররোর পরেই যার স্থান।
ঊনবিংশ শতাব্দী
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ক্যারিবিয়ান ও উত্তর আমেরিকার রাজ্যগুলির মধ্যে বাণিজ্যের প্রসারের সংগে সংগে হাভানার সমৃদ্ধিও উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। হাভানা হয়ে উঠেছিল এক অতিআধুনিক অভিজাত নগর, ইউরোপের প্যারিসের সমতুল্য। হাভানার নাট্যমঞ্চে অভিনয় করতেন সে যুগের বিশিষ্ট অভিনেতা অভিনেত্রীরা।মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দ্রুত বর্ধমান বৈভবের সাক্ষ্য দিতে থাকে হালফ্যাশানের প্রাসাদোপম বাড়িগুলি।
১৮৩৭ সালে হাভানায় প্রথম রেললাইন বসে। ৫১কিমির এই লাইনটি বেজুকালের সংগে হাভানাকে সংযুক্ত করে যার মূল উদ্দেশ্য ছিল গিনিস উপত্যকা থেকে রপ্তানির চিনি হাভানা বন্দরে নিয়ে আসা। এর ফলে কিউবা হল পৃথিবীর পঞ্চম রাষ্ট্র যারা রেললাইন বসিয়েছে। প্রযুক্তির সংগে সংস্কৃতি জগতেরও উন্নয়ন অব্যাহত থাকে এবং বহু নূতন নূতন সাংস্কৃতিক উদ্যোগ রূপ পায়। ১৮৩৮ সালে তৈরি হয় বিখ্যাত ট্যাকন থিয়েটার।
১৮৬৫ সালে আমেরিকায় ক্রীতদাস প্রথা আইনত নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কিউবায় প্রথাটি বলবৎ ছিল ১৮৮৬ সাল অবধি। এই সময় দক্ষিণ আমেরিকার বহু জোতদার তাদের ক্রীতদাসদের নিয়ে হাভানায় চলে আসে আবাদী কাজের জন্য। একই সময়ে আমেরিকায় জন্ম হয় গুপ্ত সংগঠন ‘নাইটস অব গোল্ডেন সার্কেল’-এর যার লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র গড়ে তোলা যেখানে ক্রীতদাস প্রথা কায়েম থাকবে এবং সেই রাষ্ট্রের কেন্দ্র হবে হাভানা।
ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কিউবার ভূমিপুত্রদের মধ্যে কলোনিয়াল স্প্যানিশ সরকারের বিভেদ নীতি ও দমন নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ পূণ্জীভূত হতে থাকে যার ফলশ্রুতি পরপর তিনটি অভ্যুত্থান। প্রথমটি অর্থাৎ ‘টেন ইয়ারস ওয়ার’ হয়েছিল ১৮৬৮ সালের ১০ই অক্টোবর স্থানীয় চিনিকল মালিক কার্লোস ম্যানুয়েলের নেতৃ্ত্বে।দ্বিতীয় অভ্যুত্থান বা লিটল ওয়ার ঘটে ২৬শে আগস্ট ১৮৭৯ সালে, ক্যালিসকো গার্সিয়ার নেতৃত্বে এবং অচিরেই পর্যুদস্ত হয়। সর্বশেষটি ছিল কিউবান ওয়ার অব ইন্ডিপেন্ডেন্স, ১৮৯৫ থেকে ১৮৯৮ সাল ব্য়াপী।যুদ্ধে স্প্যানিশ শক্তির তুলনায় বিদ্রোহীদের সামরিক শক্তি ছিল নগণ্য়। গেরিলা আক্রমণের মাধ্য়মে তারা যুদ্ধ চালায় এবং একাধিক নেতার মৃত্য়ু হয়। যুদ্ধের শেষভাগে আমেরিকা হস্তক্ষেপ করে। স্পেন এবং আমেরিকার পারস্পরিক সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। ১৮৯৮ সালে হাভানা বন্দরের কাছে আমেরিকার নৌবাহিনীর জাহাজডুবির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়।যুদ্ধের পরিণতিতে স্পেন পরাজয় স্বীকার করে এবং কিউবা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষিত হয়।তবে বাস্তবে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রেই আমেরিকা তার প্রাধান্য় বজায় রাখে।
১৯০২-১৯৫৯ (প্রজাতান্ত্রিক শাসনকাল)
>
আমেরিকা তার সৈন্য়বাহিনী সরিয়ে নিলে ২০শে মে ১৯০২ তারিখে কিউবা “কিউবা প্রজাতন্ত্র” হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯০২ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত দেশে প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্য়বস্থা চালুু ছিল। কিউবার নতুন সংবিধান অনুসারে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কিউবার বিবিধ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার এবং তার অর্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের তদারকি করার অধিকার ধরে রাখে। এছাড়া প্ল্যাট সংশোধনী অনুযায়ী, আমেরিকা কিউবার থেকে গুয়ানতানামো নৌ ঘাঁটি ইজারা নেয়।
১৯০২ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে টমাস এস্ট্রা়ডা পালমা রাষ্ট্রের প্রেসি়ডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ১৯০৬ সাল পর্যন্ত এই পদে আসীন থাকেন। ইতিপূর্বে তিনি টেন ইয়ার্স ওয়ার চলাকালীন বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পালমা একজন সুদক্ষ শাসক ছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের অর্থনীতি, পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য় প্রভৃতির সংস্কার কার্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তবে তাঁর অত্য়ধিক আমেরিকা প্রীতি ও কার্যতঃ আমেরিকার বশ্য়তা স্বীকার করে নেওয়ার জন্য় তাঁকে স্বদেশবাসী ও বিরোধীপক্ষের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এই প্রসঙ্গে কিউবায় আমেরিকার প্ল্যাট সংশোধনী নীতি কার্যকর করার পিছনে পালমার বিতর্কিত ভূমিকা উল্লেখযোগ্য়। পালমা প্ল্যাট সংশোধনী নীতি রূপায়িত করতে বিশেষ তৎপর হন। এর ফলে কিউবার স্বাধীনতা বহুলাংশে ক্ষুণ্ণ হয়েছিল বটে কিন্তু তিনি মনে করেছিলেন যে কিউবার ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতিকে তুলে ধরবার জন্য় মার্কিন সহায়তার প্রয়োজন আরও বেশি। দুর্নীতির অভিযোগে ১৯০৬ সালে প্রেসি়ডেন্ট পালমা পদত্য়াগ করতে বাধ্য়.হন। ১৯০৯ সালে পুনর্নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিউবায় আমেরিকা মনোনীত অস্থায়ী সরকার কার্যভার গ্রহণ করে।
১৯০৯ সালে মিগুয়েল গোমেজ কিউবার দ্বিতীয় প্রেসি়ডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৩৩ সালে আভ্য়ন্তরীণ বিদ্রোহের ফলে ক্ষমতাসীন
জেরার্ডো মাচাদো সরকারের পতন হয়। জেরার্ডো মাচাদো কিউবার পঞ্চম নির্বাচিত প্রেসি়ডেন্ট(১৯২৪ -১৯৩৩)। তাঁর সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে. বিভিন্ন শিল্পের, বিশেষত পর্যটন শিল্পের ও আনুষঙ্গিক ব্য়বস্থার, প্রধানত মার্কিন বিনিয়োগের ফলে, প্রসার ঘটে, যদিও চিনিশিল্পের প্রাধান্য় অক্ষুণ্ণ থাকে। কিন্তু ১৯২৮ সালে তাঁর পুনর্নিবাচন ও তৎপরবর্তীকালে বিশ্বব্য়াপী মন্দা, চিনির মূল্য়ের অধোগতি, ক্রমাগত ছাত্রবিক্ষোভ, মাচাদোর স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ও সংবিধান সংশোধনের মাধ্য়মে ক্ষমতায় কায়েম থাকার চেষ্টা প্রভৃতি কারণে দেশের মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে ও বিরোধী শক্তি জোরদার হতে থাকে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত সামার ওয়েলসের মধ্য়স্থতার পরে মাচাদো অপসৃত হন।
১৯৪০ সালে ফুলজেনসিও বাতিস্তা দেশের নবম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে তিনি একটি সামরিক অভ্য়ুত্থানের মধ্য় দিয়ে ক্ষমতার পুনর্দখল করেন। তাঁর সরকার আমেরিকার সমর্থন লাভ করে।
বাতিস্তার সময় কিউবা লাটিন আমেরিকার উন্নত প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে অন্যতম বলে পরিগণিত হত। ১৯৫০এর পরিসংখ্যান অনুসারে দেশের জিডিপি ছিল ইটালির সমতুল্য। স্বাস্থ্য পরিবহন ইত্যাদি পরিষেবার সামগ্রিক মান উন্নত ছিল। কিন্তু জাতীয় সম্পদের বণ্টন বেদনাদায়কভাবে অসম ছিল। উদাহরণ স্বরূপ জনসংখ্যার অনুপাতে কিউবার হাসপাতাল শয্যার সংখ্যা ছিল লাটিন আমেরিকার মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্ত তার ৮০ % ই ছিল হাভানা শহরে, গ্রামের হাসপাতালে সাকুল্যে দশটি শয্যাও থাকত না। বিশ্বব্যাংকের ১৯৫১্রর তথ্য অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের ৮০%-৯০% শিশুরা আন্ত্রিক অথবা কোন সংক্রামক রোগের শিকার ছিল। ১৯৫৯ সালের আর একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে দেশের তিন চতুর্থাংশ কৃষকের ভাগ্যে সুষম পুষ্টিকর আহার্য জুটত না। দেশের ৭৫% জমি ছিল ৮% উচ্চবিত্ত জমিদারদের দখলে, দেশের এক পঞ্চমাংশ দরিদ্র জনসাধারণের অধিকার ছিল জাতীয় আয়ের মাত্র দুই শতাংশে।
কিউবার অর্থনীতিে আমেরিকার প্রভাব ছিল প্রবল। দেশের ৮০% বাণিজ্য ছিল আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে- ৪০% আখের খেত, প্রায় সমস্ত পশু খামার, ৯০% খনিজ সম্পদ এবং ৮০% পরিষেবা ছিল আমেরিকান ব্যবসায়ীদের দখলে। বাতিস্তার স্বৈরাচারী দমন নীতি ও সরকারী আধিকারিকদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশবাসীর ক্ষোভ ক্রমশঃ বেড়ে উঠছিল। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবান কমিউনিস্ট পার্টি বাতিস্তাকে ক্ষমাচ্যূত করে ও দেশের সরকার অধিগ্রহণ করে।
== কিউবার বিপ্লব ও কমিউনিস্ট শাসনকাল ==
কিউবান বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া দেশীয় এবং আন্তর্জাতীয় উভয় স্তরেই দেখা যায়। এই বিপ্লবের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংগে কিউবার সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটে। কিউবার অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল ছিল। বিপ্লবের পরে আমেরিকা কিউবার সংগে সমস্ত কূটনৈতিক ও বাণিজ্য়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে। কিউবা থেকে চিনি (এবং যেকোনো বাণিজ্য়িক পণ্য়) রপ্তানি বন্ধ করা হয় আমেরিকা থেকে কিউবা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয। এর ফলে কিউবার চিনি শিল্প ও পর্যটন শিল্প- কিউবার অর্থনীতির দুটি প্রধান স্তম্ভ- বিরাট ধাক্বা খায়। এ সময় overthrow অনুদান নবগঠিত কমিউনিস্ট সরকারকে বাঁচিয়ে রাখতে অনেকখানি সাহায্য় করে।
ক্ষমতায় এসে কাস্ত্রোর সরকার প্রথমেই সমস্ত সংস্থার জাতীয়করণ ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের দিকে মনোযোগ দেন। প্রেস ও মিডিয়া সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সোভিয়েত রাশিয়া কিউবা থেকে চিনি কিনছিল, বদলে সরবরাহ করছিল জ্বালানী তেল। দেশের আমেরিকান মালিকানার তৈল সংশোধনাগারগুলি রাশিয়ান তৈল সংশোধন করতে অস্বীকার করলে সরকার সেগুলি অধিগ্রহণ করে। এভাবে অধিকাংশ আমেরিকান বা বিদেশি সংস্থা দেশ থেকে ব্য়বসা গুটাতে বাধ্য় হয়। ১৯৬৬ - ১৯৬৮ সালের মধ্য়ে কিউবার সমস্ত বৃহৎ শিল্প সরকারের অধীনে চলে যায় এবং কিছু ক্ষুদ্র শিল্প ছাড়া স্বাধীন ব্য়বসায়ীদের এক্তিয়ারে কিছুই থাকে না।
একই সংগে কাস্ত্রো সামাজিক পরিষেবা- সাধারণ ও অত্য়াবশ্য়ক- যেমন স্বাস্থ্য়, আবাসন ইত্য়াদি দেশের গ্রামাঞ্চলে, প্রত্য়ন্ত প্রদেশে পৌঁছে দেবার যত্ন নেন। সরকারী ভবন গুলির উন্নতি সাধন করেন। এর ফলে গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীরা উপকৃত হলেও ধনী ও বিলাসবহুল নগর হিসাবে হাভানার মহিমা অনেকখানি ক্ষুণ্ণ হয়। কিউবার অর্থনীতি সংকুচিত হয়, জিডিপির পতন হয়।
কাস্ত্রোর অন্য়তম কীর্তি হল আফ্রিকা ও লাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলির সংগে মৈত্রী সম্পর্ক গড়ে তোলা ও প্রয়োজনে সহায়তা করা। এই নীতিরই অন্তর্ভুক্ত "কিউবান মে়ডিকাল ইন্টারন্য়াশনািজম" প্রকল্প যাতে কিউবার ডাক্তাররা বিভিন্ন অনুন্নত দেশে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য় দায়বদ্ধ থাকে (যদিও ব্য়বস্থাটি বাধ্য়তামূলক হওয়ায় অনেক ডাক্তারের পছন্দ ছিল না) এবং ঐ সব দেশ থেকে মেডিকাল শিক্ষার্থী ও রুগীরা শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য় কিউবায় আসত। সেখানকার বৈপ্লবিক অভ্য়ুত্থানেও কিউবাকে হস্তক্ষেপ করতে দেখা গেছে।
কিউবায় কমিউনিস্ট শাসনের বিরোধীরা, বাতিস্তার সমর্থক, অনেকে আমেরিকা চলে আসে। এরা আমেরিকান সরকারের সহায়তায় একটি গুপ্ত সংগঠন সৃষ্টি করে এবং কাস্ত্রো সরকারের পতনের প্রচেষ্টা করে। কিন্তু ১৯৬১ সালে কিউবার উপকূলে বে অব পিগস অঞ্চলে তাদের সেই অভিযান ব্য়র্থ হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরবর্তী পর্যায়ে কিউবায় চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় যাকে স্পেশাল পিরিয়ড নামে চিহ্ণিত করা হয়। প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার সহায়তায় ও রাশিয়ায় পুতিন ক্ষমতায় এলে অবস্থা সহজ হয়।
সম্প্রতি কিউবা অর্থনৈতিক সংস্কারের একাধিক ব্য়বস্থা নিয়েছে, পর্যটন শিল্পের উন্নতির উদ্দেশ্য়ে বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে, আমেরিকার সংগেও সম্পর্ক অনেকাংশে স্বাভাবিক হয়েছে।
প্রশাসন
হাভানা একাধারে কিউবার রাজধানী শহর এবং একটি প্রদেশ। নাগরিক পরিষদ শহরের শাসনব্য়বস্থা পরিচালনা করে, পরিষদের প্রধান একজন গভর্নর। পরিষদের স্বাধীন ক্ষমতা খুবই সামান্য। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বিশেষ ভাবে নির্ভরশীল, করে, এর বাজেট অথবা রাজনৈতিক নীতি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নির্ধারিত।
কেন্দ্রীয় সরকারের সদর দপ্তর হাভানায় যার ফলে নাগরিক জীবনে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা অত্য়ন্ত সুস্পষ্ট। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বপূর্ণ উপস্থিতি নাগরিক পরিষদের দায়িত্বকে অনেকখানি সীমিত করে রেখেছে।তবে এখনও অনেক প্রয়োজনীয় পরিষেবা যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শহরের গণপরিবহন, আবর্জনা সংগ্রহ, ছোট শিল্প, কৃষি, ইত্যাদি নাগরিক পরিষদ প্রদান করে।
ভোটাররা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচনে পৌরসভার প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং পৌরসভাগুলি বরো প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে, যা অন্যান্য প্রদেশের মেয়র এবং ভাইস মেয়রদের সমতুল্য। বর্তমানে কিউবায় শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল রয়েছে,কমিউনিস্ট পার্টি অব কিউবা,। তবে নির্বাচন প্রার্থীদের যে বাধ্য়তামূলক ভাবে দলের সদস্য হতে হবে তা নয়।। প্রতিটি নির্বাচনী জেলার মধ্যে খোলা সভায় তারা সরাসরি নাগরিকদের দ্বারা মনোনীত হয়।বরোগুলির মধ্যে পৌরসভার প্রতিনিধিরা থাকেন যারা নাগরিক পরিষদের সদস্যদের নির্বাচিত করেন।
কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য়দের একাংশ সরাসরি নির্বাচিত হন এবং বাকী অংশ মনোনীত হন। পিপলস কাউন্সিল (Consejos Populares) স্থানীয় শহরের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত যারা সংস্থাটির সভাপতিত্ব করার জন্য একজন পূর্ণ-সময়ের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। এই কাউন্সিলগুলি শহরের পাড়া এবং ওয়ার্ডগুলির কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। এছাড়াও, "গণসংগঠন" এবং স্থানীয় সরকার তথা বিভিন্ন শিল্পের প্রতিনিধিরাও সমাজের গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। হাভানার ১০৫টি পিপলস কাউন্সিলের প্রতিটির আওতায় গড়ে ২০,০০০জন নাগরিক থাকেন।
হাভানায় ১৫টি মিউনিসিপালিটি বা বরো রয়েছে যা ১০৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। বরোগুলির নাম-প্লায়া, প্লাজা ডি লা রিভলিউশন, সেন্ট্রো হাভানা, লা হাবানা ভিয়েজা, রেগলা, লা হাবানা দেল এস্তে,গুয়ানাবাকোয়া, সান মিগুয়েল দেল প্যাড্রোন, সান মিগুয়েল দেল প্যাড্রোন, দিয়েজ দে অক্টোবর, সেরো, মারিয়ানো, লা লিসা, বোয়েরোস, আরিয়ো নারানজো, কোটোরো।
ভৌগোলিক প্রকৃতি
হাভানা কিউবার উত্তর উপকূলে ফ্লোরিডা প্রণালী বরাবর অবস্থিত, যেখানে মেক্সিকো উপসাগর আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। শহরটি উপসাগর থেকে পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে প্রসারিত, উপসাগর একটি সরু খাঁড়ি দিয়ে প্রবেশ করেছে এবং তিনটি প্রধান বন্দরে বিভক্ত: মারিমেলেনা, গুয়ানাবাকোয়া এবং আতারেস। আলমেন্ডারেস নদী শহরটিকে দক্ষিণ থেকে উত্তরে অতিক্রম করে, উপসাগরের কয়েক মাইল পশ্চিমে ফ্লোরিডার প্রণালীতে প্রবেশ করে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের অল্প উপরে চুনাপাথর সমৃদ্ধ মালভূমির উপরে শহরটি অবস্থিত। সর্বাধিক উচ্চতা ২00ফুট(60মিটার) পাহাড় এখানে পূর্ব থেকে ঢালু হয়ে লা কাবানা এবং এল মরোর সীমায়, যেখানে পূর্ব উপসাগরকে সামনে রেখে স্প্যানিশ দুর্গ বানানো হয়েছে, সেখানে শেষ হয়েছে। পশ্চিমের পাহাড়ের উপর রয়েছে হাভানা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কাস্টিলো দেল প্রিন্সিপে।
== জলবায়ু ==
অবস্থান অনুযায়ী হাভানা গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুর অন্তর্গত। তার সংগে মৌসুমী বায়ু ও সমুদ্রের উষ্ণ স্রোতেরও প্রভাব রয়েছে। গড় তাপমাত্রা জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে ২২ °C (৭২ °F) থেকে আগস্টে ২৮ °C (৮২ °F) পর্যন্ত থাকে। তাপমাত্রা খুব কমই ১০ °C (৫০ °F) এর নিচে নেমে যায়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখা যায় সান্তিয়াগো দে লাস ভেগাস, বয়েরোস, ১ °C (৩৪ °F)। কিউবায় সর্বনিম্ন রেকর্ড করা তাপমাত্রা ছিল বাইনোয়া, মায়াবেক প্রদেশে,২০১১ সালের আগে যা ছিল হাভানা প্রদেশের পূর্ব অংশ। জুন এবং অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সবচেয়ে কম হয়, বার্ষিক গড় ১২০০ মিমি (৪৭ ইঞ্চি)। হারিকেন মাঝে মাঝে দ্বীপে আঘাত হানে, কিন্তু তারা সাধারণত দক্ষিণ উপকূলে সীমাবদ্ধ থাকে।
হাভানায় ক্ষতি সচরাচর দেশের অন্য জায়গার তুলনায় কম। টর্নেডো কিউবায় কিছুটা বিরল, তবে ২৮শে জানুয়ারী, ২০১৯ এর সন্ধ্যায়, একটি শক্তিশালী টর্নেডো হাভানার পূর্ব দিকে আঘাত করেছিল। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, কমপক্ষে 90টি বাড়ি ধ্বংস ও বহু লোকের মৃত্য়ু হয়।
হাভানার স্থাপত্য়
হাভানার স্থাপত্য বৈচিত্রপূর্ণ। ষোড়শ শতকে নির্মিত দুর্গ থেকে শুরু করে আধুনিক গগনচুম্বী অট্টালিকা – সবই এখানে দেখতে পাওয়া যায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক কাঠামোর বর্তমান অবস্থার অবনতি হয়েছে। প্লাজা ডেল ভেপার, ১৮৩৫ সালে নির্মিত একটি অত্যাধুনিক বিপণন কেন্দ্র, যাকে পরবর্তী কালে জনস্বাস্থ্য মন্ত্রক অস্বাস্থ্যকর বলে ঘোষণা করে, এর বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করে, এবং ১৯৫৯ সালে নতুন, বিপ্লবী সরকার ক্ষমতায় এলে ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় ।[a][b]
<big>== প্রাচীন স্প্য়ানিশ স্থাপত্য় ==
<বিদেশী শত্রুর আক্রমণের প্রতিরোধ ও সুরক্ষার জন্য হাভানায় অনেক দুর্গ নির্মিত হয়। এই সামরিক দুর্গগুলি হাভানার প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন। লা ফোর্তালেজা দে সান কার্লোস দে লা কাবানা (নির্মাণকাল ১৫৫৮-১৫৭৭) অথবা কাস্টিলো দেল মররো (নির্মাণকাল১৫৮৯-১৬৩০) এদের মধ্য়ে অন্য়তম।br>
দুর্গ ছাড়াও প্রতিরক্ষার কারণে পুরাতন হাভানার চারদিকে একটি প্রাচীর তৈরির কাজ ১৬৭৪ সালে শুরু হয় কিন্তু ১৭৬৭ সালে এটি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই হাভানা তার পূর্বতন সীমানা অতিক্রম করে, প্রাচীরটির বর্তমান অবস্থান সেন্ট্রো হাবানা অঞ্চলের কাছাকাছি।
== ইগলেসিয়া ডেল এসপিরিটু সান্তো ==
ইগলেসিয়া ডেল এসপিরিটু সান্তো বা পবিত্র আত্মার গীর্জা ১৬৩৫ সালে নির্মিত, কিউবা এবং আকোস্তা সরণির প্রান্তে অবস্থিত। ১৬৩৮ সালে মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গরা এটিকে পবিত্র আত্মার উদ্দেশ্য়ে উৎবসর্গ করে। এটি হাভানার প্রাচীন উপাসনাগৃৃহগুলির একটি। অনেক প্রসিদ্ধ ব্য়ক্তি এখানে ব্য়াপটাইজ্ড হয়েছেন অথবা সমাধিস্থ হয়েছেন।
১৬৪৮ সালে গীর্জাটিকে পুনর্নির্মিত ও প্রসারিত করা হয় এবং এটিকে প্য়ারিশের মর্য্য়াদা দেওয়া হয়।১৭৭২ লালে পাপাল বুল এবং ১৭৭৩ সালে স্প্য়ানিশ রাজার শংসাপত্র এটিকে "Única Iglesia inmune en esta ciudad" ঘোষণা করে যার অর্থ প্রাশাসন অথবা বিচারব্য়বস্থার বিরুদ্ধে গিয়ে এটি নির্যাতিত ব্য়ক্তিকে আশ্রয় দিতে সক্ষম।
গীর্জাটিতে কিছু আকর্ষণীয় চিত্র এবং একটি ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্র রয়েছে। কিউবান শিল্পী জোসে নিকোলাস ডে লা এসকালেরা ও আরস্টাইড ফার্নান্ডেজের ওরিজিনাল চিত্র এখানে দেখা যায়। তার মধ্য়ে যীশুখৃষ্টের সমাধির একটি বিশাল তৈলচিত্র রয়েছে। স্থাপত্য়শৈলীর দৃষ্টিকোণ থেকে গীর্জাটির প্রধান বৈশিষ্টট্য় হল এর প্রবাল পাথর নির্মাণের সরল গঠনকৌশল এবং কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অলংকরণের অনুপস্থিতি। ১৮৫৩ সালে এখানে কিছু অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চিহ্ণ আবিষ্কৃত হয়।
== '
== 'কিউবান ইউনি নেভ ==
সপ্তদশ শতাব্দীর এই ধর্মীয় ভবনটি কিউবান শৈলীর অনুকরণে একটি জাহাজের আকৃতিতে গঠিত। 'ইউনি' শব্দটি থেকে মনে হয় প্রথমে একটি জাহাজই ছিল যদিও পরে অষ্টাদশ সতাব্দীতে আর একটি জাহাজের সংযোজন হয়। ১৭২০ সালে এর বেল টাওয়ারটির এবং ১৭৬০ সালে প্রেসবিটরি অব ভল্টের নির্মাণ হয়। উচ্চতায়এটি ৬০মি এবং হাভানার সুউচ্চ ভবনগুলির একটি।
== ইগ্লেসিয়া ডি সান ফ্রান্সিসকো ডি পাওলা (সান ফ্রান্সিসকো ডি পাওলার গীর্জা) ==
ইগ্লেসিয়া দে সান ফ্রান্সিসকো ডি পাওলা কিউবান বারোক স্থাপত্য়ের একটি উদাহরণ। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ভবনটি ও তৎসংলগ্ন হাভানার প্রথম মহিলা হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ১৭৩১ সালে প্রবল ঝড়ে দুটি ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয। ১৭৪৫ সালে বর্তমান বারোক স্থাপত্য়ের শৈলীতে এটির পুনর্নির্মাণ ও প্রসারণ করা হয়। গীর্জার সামনে দিয়ে চলে গেছে পাথরে বাঁধানো, পপলার বৃক্ষ শোভিত আলামাডা ডি পলা বা পলা মল, যা হাভানার অন্য়তম বিনোদন কেন্দ্র। গির্জার যে অংশটি এখনও বিদ্যমান, গম্বুজের অষ্টভুজাকার ভিত্তি, সম্মুখভাগ এবং দাগযুক্ত কাচের জানালা, ১৭৪৫ সালের মূল ভবনের সমস্ত অংশ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
' '
== নিওক্লাসিকাল স্থাপত্য় (অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর গ্রীক ও রোমান ভাবধারায় অনুপ্রাণিত স্থাপত্য়) ==
১৮৪০ সাল নাগাদ হাভানায় নিওক্লাসিকাল শৈলীর অনুপ্রবেশ ঘটে। ১৮৪৫ সালে নির্মিত হয় আলাডামা ভবন। ১৮৫৯ সালে বর্তমানের বর্ধিষ্ণু অঞ্চল ভেডাডোর নির্মাণকার্য শুরু হয় যার স্থাপত্য় এই শৈলীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ১৯২৫ সালে ফরাসি স্থপতি জিন ক্লড নিকোলাস ফরেস্টিয়ার এদেশে আসেন শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংগে সামঞ্জস্য় ঘটিয়ে এখানকার স্থাপত্য় নির্মাণ করতে যদিও ১৯২৯ এর বিশ্বব্য়াপী মন্দায় তাঁর পরিকল্পনা কিছুটা ব্য়াহত হয়। এই স্থাপত্য়ের কিছু নমুনা নীচে দেওয়া হল-
১. প্য়ালেশিও দ্য় লা মার্কুইসা দ্য় লা ভিল্লালবা (মার্কুইসা দে ভিল্লালবার প্রাসাদ)
প্রাসাদটি ১৮৭৫ সালে নির্মিত হয়, নির্মাণ করেন স্থপতি ইউজেনিও রায়নেরি ই সোরেন্টিনো। সমসময়ে নির্মিত হাভানার টাকোন বাজারও ইনিই নির্মাণ করেন। রেপার্টো দে লাস মুরাল্লাসে অবস্থিত প্রাসাদটিতে ১৮৮০ সালে একটি তামাক কারখানা ছিল জানা যায়। কিন্তু পরে এটি একটি পুরোপুরি আবাসনকেন্দ্র হয়ে ওঠে। স্প্য়ানিশ এবং ইজরায়েলি দূতাবাস এখানে রয়েছে। পরবর্তীকালে এর ভিতরের কিছু অংশে ও নীচের তলার উন্মুক্ত অংশে ব্য়াপক পরিবর্তন সাধিত হলেও সম্মুখভাগের অর্ধবৃত্তাকার তোরণগুলি সৌধের পূর্ব পরিচয় বহন করে। এর অর্ধবৃত্তাকার বা ত্রিভূজজাকার অলংকরণে ইটালিয়ান রেনেশাঁসের প্রভাব লক্ষিত হয়।
২. প্য়ালেশিও দ্য় আলডামা (আলডামা প্রাসাদ)
প্লাজা ডেল ভেপারের কোণাকুণি বিপরীতে এবং পূর্বের ক্যাম্পো দে মার্তে বা বর্তমানের ফ্রেটারনিটি পার্কের সম্মুখে আলডামা প্রাসাদ অবস্থিত। এর সম্মুখভাগের স্তম্ভগুলি রেইনা ও এস্ট্রেলা পথের অন্তর্বর্তী অ্যামিস্টা়ড পথ বরাবর রয়েছে। ১৮৬৯ সালে আলডামা প্রাসাদ স্প্য়ানিশ ভলান্টিয়ার্সদের হামলার শিকার হয়। প্রাসাদের অত্য়ন্ত ধনী ও ক্ষমতাশালী কিউবান মালিক ডন মিগুয়েল দ্য় আলডামার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ এই হামলা চলে। এ সময়ে প্রাসাদে ব্য়াপক লুঠতরাজ চলে, বহু মূল্য়বান সংগ্রহ অপহৃত হয় ও দুর্বৃত্তরা প্রাসাদের আসবাবপত্র ধ্বংস করে, বহুস্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
৩. রয়্য়াল পাম হোটেল
সান রাফায়েল শিল্পকেন্দ্রের এক পাশে অবস্থিত হোটেলটি ছিল আদতে ছিল কিউবার এক সুগার ম্যাগনেটের মালিকানায়। হস্তান্তরের পর এর কানাডিয়ান মালিক এটিকে হোটেলে রূপান্তরিত করেন। সে সময় হোটেলটির প্রধান বৈশিষ্ট্য় ছিল এর প্রতি ঘরের সংগে সংলগ্ন বাথরুম ও গরম জলের ব্য়বস্থা যা সেসময় অভিনব ধারণা ছিল। ১৯৬০ সালে বিপ্লবের পর এটিকে একটি আবাসনকেন্দ্রে পরিবর্তিত করা হয় যদিও এর নীচের তলা এখনও ব্য়বসায়িক কাজে ব্য়বহৃত হয়, প্রধানত এর লোভনীয় অবস্থানের জন্য়।
৪. বাকার্ডি বিল্ডিং
বাকার্ডি বিল্ডিং হল হাভানার বিশেষ চিহ্ণ স্বরূপ, যার পরিকল্পনা করেন স্থপতি এস্তেবান রদ্রিগেজ-ক্যাস্টেলস এবং রাফায়েল ফার্নান্দেজ রুয়েনেস এটিকে ১৯৩০ সালে সম্পূর্ণ করেন। মনসেরেট এবং সান জুয়ান ডি ডিওস সড়কের উপর এটি অবস্থিত। এটি প্রথমে মদ্য়ব্য়বসায়ী বাকার্ডি রাম কোম্পানির হেডকোয়ার্টার ছিল। এটি নির্মাণের সময় মালিক স্থপতিদের মধ্য়ে একটি প্রতিযোগীতার আহ্বান করেন এবং বিজয়ী প্রতিযোগীর পরিকল্পনাটি বিল্ডিং প্ল্য়ান হিসাবে গৃহীত হয়। ১৯৬০ সালে এটির জাতীয়করণ হয়। ২০০১ সালে একটি ইটালিয়ান ফার্ম এটির সংস্কারকার্য করে।
৫. লোপেজ সেরানো বিল্ডিং
স্থপতি রিকার্ডো মিরা ১৮২৯ সালে এটির পরিকল্পনা করেন। ১৯৫৬ সালে এফওসিএসএ বিল্ডিং না হওয়া অবধি এটিই ছিল কিউবার সর্বোচ্চ বিল্ডিং।
== আধুনিক স্থাপত্য়
==
১৯৫৮ সালের হাভানা হিলটন হোটেল, ১৯৫৬ সালের স্থপতি মার্টিন ডোমিঙ্গুয়েজ এস্তেবানের FOCSA বিল্ডিং ১৯৫৫ সালের রেডিওসেন্ট্রো CMQ বিল্ডিং এবং আন্তোনিও কুইন্টানা সিমোনেত্তির এডিফিসিও দেল সেগুরো মেডিকো বিল্ডিং হাভানার আধুনিক স্থাপত্য়ের উদাহরণ।
হাবানা হিলটন ১৯৫৮ সালে ২৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এবং প্রেসিডেন্ট ফুলজেনসিও বাতিস্তার ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতায় হাবানা হিলটন হোটেল নির্মিত হয়েছিল। ভেদাদোতে অবস্থিত হাবানা হিলটন লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ এবং বৃহত্তম হোটেল। এখানে আছে ৪২টি স্যুট সহ ৬৩০টি গেস্ট রুম, একটি বিলাসবহুল ক্যাসিনো; একটি রুফটপ বার সহ ছয়টি রেস্টুরেন্ট এবং বার; একটি বিশাল নৈশ ক্লাব; কনফারেন্স হল; একটি বিপণি কেন্দ্র; সুইমিং পুল; এবং দুটি ভূগর্ভস্থ গ্যারেজ যেখানে ৫০০ গাড়ি ধরে । হোটেলটিতে তৎকালীন কিউবান শিল্পীদের শিল্পকর্মও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মূল প্রবেশপথের উপরে অ্যামেলিয়া পেলেজের একটি বিশাল মোজাইক ম্যুরাল এবং দ্বিতীয় তলায় অ্যান্টিলেস বারে পুল টেরেসের দিকে মুখ ফেরানো রেনে পোর্টোকারেরোর একটি টাইলযুক্ত ওয়াল ম্যুরাল।
.'রেডিওসেন্ট্রো সিএমকিউ বিল্ডিং রেডিওসেন্ট্রো সিএমকিউ বিল্ডিং কমপ্লেক্স হল হাভানার প্রাক্তন রেডিও এবং টেলিভিশন কেন্দ্র। অফিস ভবনটি এল ভেদাডোর এল এবং লা রাম্পা পথের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এটি রেমন্ড হুডের ১৯৩৩ সালের নিউ ইয়র্ক সিটির রকফেলার সেন্টারের মডেলে গঠিত। ১৬৫০টি আসন সহ এই থিয়েটারটি সর্বপ্রথম ২৩ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে টেট্রো ওয়ার্নার রেডিওসেন্ট্রো নামে খোলা হয়েছিল, তখন এটির মালিক ছিলেন ভাই গোয়ার এবং অ্যাবেল মেস্ত্রে। বর্তমানে ভবনটি কিউবান ইনস্টিটিউট অফ রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন (ICRT)-এর সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে।
এফওসিএসএ বিল্ডিং এফওসিএসএ বিল্ডিং হাভানার ভেদাদো অঞ্চলের একটি বহুতল অট্টালিকা। এটি নির্মাণের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি Fomento de Obras y Construcciones, Sociedad Anónima র নামের অনুসারে এর নামকরণ হয়। ভবনটির উচ্চতা ৪০২ ফুট এবং ১৭ নং ও ১৯ নং সড়কের উপরে অবস্থিত। ৩৫তল বিশিষ্ট কমপ্লেক্সটি স্থপতি কর্বুসিয়ারের "একটি শহরের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শহরের" ধারণার উপর ভিত্তি করে স্থাপিত হয়েছিল। এতে ৪00টি অ্যাপার্টমেন্ট, গ্যারেজ, একটি স্কুল, একটি সুপারমার্কেট এবং উপরের তলায় একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। কোন ইস্পাতের ব্যবহার না করে কেবলমাত্র মজবুত কংক্রিটে তৈরি ভবনটি ছিল সেই সময়ের বিশ্বের অনুরূপ ভবনগুলির মধ্য়ে সর্বোচ্চ এবং বিলাসিতা এবং বাহুল্য়ের চূড়ান্ত প্রতীক।
এডিফিসিও দেল সেগুরো মেডিকো(মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স ভবন) এডিফিসিও দেল সেগুরো মেডিকো হল এল ভেদাডো, হাভানার একটি বাণিজ্যিক ভবন। ১৯৫৫ এবং ১৯৫৮ সালের মধ্যে নির্মিত ভবনটি ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সদর দফতরের অফিস এবং আবাসন উভয় উদ্দেশ্য়ে ব্যবহারের জন্য় বানানো হয়েছিল। বর্তমানে ভবনটিতে কিউবার জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ল্যাটিন প্রেস এজেন্সি রয়েছে।
== জনসংখ্যা ==' '
২০১২ সালের সরকারী আদমশুমারির অনুসারেে, কিউবার জনসংখ্যার ১৯.১% হাভানায় বাস করে মোট জনসংখ্যা ২,১০৬,১৪৬ । শহরের নাগরিকদের গড় আয়ু ৭৬.৮১ বছর। ২০০৯ সালে, শহরের ১৯২৪ জন অধিবাসী এইচআইভি/এইডস-রোগে আক্রান্ত হন, এর মধ্যে ৭৮.৯% পুরুষ এবং ২১.১% মহিলা।
২০১২ সালের সরকারি আদমশুমারি অনুসারে শহরের
• শ্বেতাঙ্গ: ৫৮.৪%, ( অধিকাংশই স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত )
• মেস্টিজো বা মুলাট্টো (মিশ্র জাতি): ২৬.৪%
• কৃষ্ণাঙ্গ ১৫.২ %
• এশিয়ান: 0.২%
হাভানার আদিম অধিবাসী তাইনোরা কার্যতঃ অবলুপ্ত হওয়ায় এদের বংশধরদের সন্ধান কোবল মুলাট্টোদের মধ্য়ে পাওয়া যায়।
বিংশ শতকের প্রথমার্ধে হাভানার জনসমষ্টি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৪৩ সালের আদমশুমারিতে জনসংখ্য়া ১০ লক্ষে দাঁড়ায়। ১৯৮০ এর দশক থেকে শুরু করে, সুষম উন্নয়ন নীতি, কম জন্মহার, বিদেশে অভিবাসনের তুলনামূলক উচ্চ হার এবং নিয়ন্ত্রিত অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ফলে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। শহর ও দেশের কম জন্মহার এবং উচ্চ আয়ু থাকার কারণে, এর নাগরিকদের বয়সের অনুপাত একটি উন্নত দেশের মতোই, হাভানায় পুরো দেশের তুলনায় বয়স্কদের সংখ্যাও বেশি। কিউবান সরকার হাভানায় মানুষের আসা-যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে এই ভিত্তিতে যে হাভানা মেট্রোপলিটন এলাকার (দেশের প্রায় ২0% জনসংখ্যার বাসভূমি) জমি ব্যবহার, জল, বিদ্যুৎ, পরিবহন এবং শহুরে পরিকাঠামোর অন্যান্য উপকরণ প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত।
শহরের সংখ্যালঘুদের মধ্য়ে চীনা অভিবাসীরা উল্লেখযোগ্য, যাদের বেশিরভাগই ক্যান্টোনিজ পূর্বপুরুষ, ১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে স্পেনীয় ঔপনিবেশিকরা ফিলিপাইনের মাধ্যমে এদের ৮ বছরের কাজের চুক্তিতে নিয়ে আসে এবং চুক্তি সম্পন্ন করার পর অনেকেই হাভানায় স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ২০১৮এর সাম্প্রতিকতম আদমশুমারি এবং ১৯৫৩ সালের অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি আদমশুমারির মধ্যে, হাভানার জনসংখ্যা আনুমানিক ৮৭শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা লাতিন আমেরিকার বেশিরভাগ শহরগুলির সাধারণ বৃদ্ধির হার।
== ধর্ম ==
রোমান ক্যাথলিকরা হাভানার বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী। এদের পৃষ্ঠপোষক সাধু হলেন সান ক্রিস্টোবাল (সেন্ট ক্রিস্টোফার), যার কাছে ক্যাথেড্রালটি উৎসর্গীকৃত। এটিতে একটি ছোট বেসিলিকাও রয়েছে। বিপ্লবের পর তিনবার সর্বোচ্চ পোপেরা হাভানা সফর করেছেন : পোপ জন পল II (জানুয়ারি ১৯৮৮), পোপ বেনেডিক্ট (মার্চ ২০১২) এবং পোপ ফ্রান্সিস (সেপ্টেম্বর ২০১৫)।
== 'অর্থনীতি' ==
শহরের অর্থনীতি প্রথমে তার অবস্থানের ভিত্তিতে বিকশিত হয়েছিল, যা এটিকে নতুন বিশ্বের বাণিজ্য কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছিল। চিনি এবং একটি সমৃদ্ধ দাস ব্যবসা প্রথমে শহরে সমৃদ্ধি এনেছিল এবং পরে, স্বাধীনতার পরে, এটি একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। ফিদেল কাস্ত্রোর সরকারের কিউবার শিল্প কার্যক্রমকে দ্বীপের সব অংশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, হাভানা রয়ে গেছে দেশের বেশিরভাগ শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু।
ঐতিহ্যবাহী চিনি শিল্প, যার উপর দ্বীপের অর্থনীতি তিন শতাব্দী ধরে নির্ভরশীল, দ্বীপের অন্যত্র কেন্দ্রীভূত এবং রপ্তানি অর্থনীতির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু লঘু উৎপাদন যথা, মাংস-প্যাকিং প্ল্যান্ট এবং রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানাগুলি হাভানায় কেন্দ্রীভূত। এছাড়া জাহাজ নির্মাণ, যানবাহন উৎপাদন, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় (বিশেষ করে রাম), টেক্সটাইল এবং তামাকজাত দ্রব্য, বিবিধ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং বিশেষ করে বিশ্ব-বিখ্যাত হাভানা চুরুটেরর উৎপাদনশিল্প যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শিয়েনফিউগোস এবং মাতান্জা এর মত বন্দরের কার্যভার বিপ্লবী সরকারের অধীনে বৃদ্ধি পেয়েছে, হাভানা এখনো কিউবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর রয়ে গেছে; কিউবার আমদানি ও রপ্তানির ৫0% হাভানার মধ্য দিয়ে যায়। বন্দরটি একটি উল্লেখযোগ্য মৎস্য় শিল্পেরও কেন্দ্র।
২000 সালে, শহরের সরকারীভাবে নথিভুক্ত কর্মক্ষম লোকের প্রায় ৮৯% সরকার-চালিত সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোগে নিযুক্ত ছিল । হাভানার গড় আয় এবং মানব উন্নয়ন সূচক দেশের মধ্য়ে সর্বোচ্চ । সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, কিউবা পর্যটনকে একটি প্রধান শিল্প হিসাবে গড়ে তুলতে জোর দেয় এবং এর পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দেয়।। পর্যটন এখন হাভানা এবং কিউবার প্রধান অর্থনৈতিক উৎস।
== বাণিজ্য ও মূলধন
==বিপ্লবের পর, কিউবার সনাতনী পুঁজিবাদী মুক্ত-উদ্যোগ ব্যবস্থা একটি সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। হাভানায়, কিউবান মালিকানাধীন ব্যবসা এবং ইউএস-মালিকানাধীন ব্যবসাগুলিকে জাতীয়করণ করা হয় এবং আজ অবধি বেশিরভাগ ব্যবসায়গুলি সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণইে রয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকিংও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অফ কিউবা, যার সদর দপ্তর হাভানায়, কিউবার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।পুরাতন হাভানা এবং ভেদাদো জুড়ে বেশ কয়েকটি ছোট ব্যক্তিগত ব্যবসা রয়েছে, যেমন জুতা মেরামতের দোকান বা পোশাক তৈরির দোকান।
আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত ভেদাডো অঞ্চল ১৯৩০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছিল, যখন হাভানা মার্কিন পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে গড়ে উঠেছিল। সুউচ্চ হোটেল, ক্যাসিনো, রেস্তোরাঁ এবং উচ্চতর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সবই এখানে দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে হাভানার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা হিসাবে ভেদাডোর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বর্তমানে ভেদাদো হাভানার অর্থনীতির কেন্দ্র, প্রধান ব্যাঙ্ক, এয়ারলাইন কোম্পানির অফিস, দোকান, বেশিরভাগ ব্যবসার সদর দফতর, বহু সুউচ্চ অ্যাপার্টমেন্ট এবং হোটেল, এই এলাকায় অবস্থিত। হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ও ভেদাদোতে অবস্থিত
== পর্যটন ==
শহরটি দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য়স্থান। ১৯১৫ এবং ১৯৩০ সালের মধ্যে, হাভানায় ক্যারিবিয়ানের অন্য যেকোনো স্থানের তুলনায় বেশি পর্যটকদের আগমন হয়। কিউবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৈকট্য ছিল এর অন্য়তম কারণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালকোহল এবং অন্যান্য বিনোদনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল । পক্ষান্তরে দ্বীপের কর্তৃপক্ষের এসব ব্য়াপারেে শিথিল মনোভাব পর্যটকদের পর্যটনের আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলেছিল।
কিউবা-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি এবং ১৯৬১ সালে আমেরিকার কিউবার উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের সাথে, হাভানার পর্যটন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তা প্রাক-বিপ্লব স্তরের কাছাকাছি কখনোই ফিরে আসেনি।
সাধারণভাবে বিপ্লবী সরকার, এবং বিশেষতঃ ফিদেল কাস্ত্রো, পর্যটনের বিকাশের বিরোধী ছিলেন। ১৯৮২ সালে, কিউবান সরকার একটি বিদেশী বিনিয়োগ কোড পাস করে যা বিদেশী পুঁজির জন্য বেশ কয়েকটি দরজা খুলে দেয়। এর ফলে আরব্ধ বিদেশি বিনিয়োগ কিউবা হোটেল উন্নয়নের জন্য পুঁজি আকৃষ্ট করতে শুরু করে, পর্যটকদের সংখ্যা ১৩০০০০ (১৯৮০ সালে) থেকে ৩২৬০০০ (সেই দশকের শেষ নাগাদ) বৃদ্ধি পায়।
হাভানা ২0 বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি জনপ্রিয় স্বাস্থ্য পর্যটন কেন্দ্র।বিদেশী রোগীরা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার্থে হাভানায় আসেন, যার মধ্যে রয়েছে চক্ষু-সার্জারি, স্নায়বিক ব্যাধি যেমন মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস এবং পারকিনসন রোগ এবং অর্থোপেডিকস সমস্য়া জনিত রোগ। অধিকাংশ রোগীই লাতিন আমেরিকার, যদিও রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসার চিকিৎসা করাতে, যা প্রায়ই রাতকানা হিসাবে পরিচিত, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অনেক রোগী আসেন।
হাভানায় বছরে লক্ষাধিক পর্যটকের পদার্পণ ঘটে।, হাভানার অফিসিয়াল সেন্সাস রিপোর্ট দাবী করে যে ২০১০ সালে শহরটি ১১৭৬৬২৭ জন আন্তর্জাতিক পর্যটক পরিদর্শন করেছিলেন, যা ২০০৫ থেকে ২0% বেশি।
== পরিবহন ==
বিমানবন্দর
জোসে মার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হাভানার প্রধান বিমানবন্দর । বিমানবন্দরটি শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার (৭ মাইল) দক্ষিণে, বোয়েরোস পৌরসভায় অবস্থিত। বিমানবন্দরটি কিউবার আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ প্রবেশদ্বার, এটি হাভানাকে বাকি ক্যারিবিয়ান, উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ এবং আফ্রিকার সাথে সংযুক্ত করেছে। এছাড়া প্লেয়া বারাকোয়া বিমানবন্দর শহরের পশ্চিমে একটি ছোট বিমানবন্দর যা কিছু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য ব্যবহৃত হয়।
রেলপথ
হাভানায় শহরতলির, আন্তঃনগর এবং দূর-দূরত্বের রেললাইনের নেটওয়ার্ক রয়েছে। রেলওয়ে জাতীয়করণের পরে করা হয় এবং এফএফসিসি (ফেরোকারিলেস ডি কিউবা - কিউবা রেলওয়ে) রেলওয়েজের সর্বম. কর্তা। এফএফসিসি হাভানাকে কিউবার সমস্ত প্রদেশের সাথে সংযুক্ত করে এবং হাভানা শহরতলির রেলওয়ে শহরটিকে পরিষেবা দেয়। প্রধান রেলওয়ে স্টেশনগুলি হল: সেন্ট্রাল রেল স্টেশন, লা কোব্রে রেল স্টেশন, কাসাব্লাঙ্কা স্টেশন এবং এস্তাসিওন দে তুলিপান।
২০০৪ সালে বার্ষিক যাত্রীর সংখ্য়া ছিল প্রায় 11 মিলিয়ন,[149] কিন্তু চাহিদা এই পরিমাণের অন্ততঃ আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি। সবচেয়ে ব্যস্ত রুটটি হাভানা এবং সান্তিয়াগো ডি কিউবার মধ্যে, প্রায় 836 কিলোমিটার (519 মাইল) রেলপথের ব্য়বধানে অবস্থিত। ২০০০ সালে ইউনিয়ন ডি ফেরোকারিলেস ডি কিউবা ফরাসী প্রথম শ্রেণীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ কেনে। ২০১০ এর দশকে দূরবর্তী ট্রেনগুলির জন্য নতুন চীনা তৈরি এবং রাশিয়ান তৈরি কোচ আমদানি করা হয়। এদের কয়েকটি এখন শহরতলির পরিষেবা প্রদান করে৷।
১৯৮০-এর দশকে মস্কোর অনুকরণেো হাভানায় একটি মেট্রো ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল, প্রতিটি মাইল (১.৬ কিমি) ট্র্যাকের মূল্য ছিল এক মিলিয়ন ডলার, কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে প্রকল্পটি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
হার্শে ইলেকট্রিক রেলওয়ে নামে পরিচিত একটি আন্তঃনগর লাইন ১৯১৭ সালে নির্মাণ করা হয়, যা কাসাব্লাঙ্কা (ওল্ড হাভানা. হাভানা বন্দর) থেকে হার্শে এবং মাতানজাস পর্যন্ত চলে।
ট্রামওয়ে
১৯৫২ সাল পর্যন্ত হাভানায় ট্রাম ব্যবস্থা চালু ছিল। ১৮৫৮ সালে "ফেরো কারিল উরবানো দে লা হাবানা" (হাভানা পৌর রেলপথ) কোম্পানির ব্য়ানারে ঘোড়ায় টানা ট্রাম দিয়ে এই পরিবহন ব্য়বস্থা চালু হয়। ১৮৬৩ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি এমপ্রেসা দেল ফেরো-ক্যারিল আরবানো ওয়াই অমনিবাস দে লা হাবানা (হাভানার পৌর রেলপথ এবং বাস কোম্পানি) এটিকে অধিগ্রহণ করে। ১৯০০ সালে নতুন বিদেশী মালিকদের অধীনে বিদ্য়ুৎচালিত ট্রাম পরিবহন শুরু হয় হাভানা ইলেকট্রিক রেলওয়ে কোম্পানি নামে। যাত্রীসংখ্য়া হ্রাসের ফলে ১৯৫০ সালে কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যায়। অটোবাস মডার্নাস কোম্পানি এটিকে কিনে নেয় এবং পুরাতন কোম্পানির বাসের অংশটুকু রেখে ট্রামের ব্য়বসায় পরিত্যাগ করে। অবশিষ্ট গাড়িগুলি ১৯৫২ সালে মাতানজাসের কাছে বিক্রি হয়।
সড়ক পরিবহন
শহরে ব্য়াপক সড়ক সংযোগ ব্য়বস্থা রয়েছে। প্রশস্ত সরণী, প্রধান রাস্তা এবং মোটরযোগ্য় প্রবেশ পথ শহরের বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত করেছে। অটোপিস্তা ন্যাশিওনাল ,ক্যারেরা সেন্ট্রাল এবং ভায়া ব্লাঙ্কা এদের মধ্য়ে উল্লেখযোগ্য়। সড়ক নির্মাণ স্প্য়ানিশ আমল থেকেই শুরু হয়েছিল কিন্তু উপযুুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাস্তা গুলির অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।
== শিক্ষাব্য়বস্থা
জাতীয় সরকার শিক্ষার জন্য সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং কিউবায় পর্যাপ্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ স্কুল রয়েছে। বিদ্যালয়গুলি বিভিন্ন মানের, উচ্চ শিক্ষা ব্যতীত সকল স্তরে শিক্ষা বাধ্যতামূলক, এবং উচ্চ শিক্ষা সহ সকল স্তরের শিক্ষার সমস্ত ব্য়য়ভার সরকার বহন করে।
হাভানার ভেদাডোয় অবস্থিত হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৭২৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তৎকালীন পশ্চিমী দুনিয়ায় এটি উচ্চ শিক্ষার একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচিত হত। বিপ্লবের পরে বিশ্ববিদ্যালয় তথা অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ করা হয়। তারপর থেকে আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে, যেমন উচ্চ শিক্ষার জন্য় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট জোসে আন্তোনিও এচেভেরিয়া যেখানে বহু কিউবানদের প্রযুক্তি বিদ্য়ার পাঠ দেওয়া হয়।
কিউবান ন্যাশনাল ব্যালে স্কুল, যেখানে ৪৩৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম ব্যালে স্কুলগুলির মধ্যে একটি এবং কিউবার সবচেয়ে অভিজাত ব্যালে স্কুল।
== দ্রষ্টব্য় স্থান ==<
চিত্রসম্ভার
তথ্যসূত্র
- "২০১২এর আদমশুমারি" (পিডিএফ)। ২৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৩।
- "CIA World Fact Book"। CIA World factbook। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১১।