হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ

হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (জন্ম ২৯ অক্টোবর ১৯৩৯) হলেন একজন বাংলাদেশী সামরিক ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ ফুটবল দলের একজন সদস্য, সাবেক জাতীয় সংসদের সদস্য, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1] তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মেজর (অব.)

হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ
চিত্র:হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ.jpg
পানি সম্পদমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২২ মে ২০০৩  ২৯ অক্টোবর ২০০৬
ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৮৬  ২০০৬
উত্তরসূরীজসিম উদ্দিন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম২৯ অক্টোবর ১৯৩৯
লালমোহন, ভোলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান বাংলাদেশ)
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
দাম্পত্য সঙ্গীদিলারা হাফিজ
সন্তানএক মেয়ে, দুই ছেলে
পিতামাতাআজহার উদ্দিন আহম্মদ (পিতা)
করিমুন্নেছা (মাতা)
পুরস্কারবীর বিক্রম
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য বাংলাদেশ
শাখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
পদ মেজর

জন্ম ও ব্যক্তিগত

হাফিজ উদ্দিন আহম্মদের জন্ম ২৯ অক্টোবর ১৯৩৯ সালে পৈতৃক বাড়ি ভোলার লালমোহনে। তার বাবার নাম আজহার উদ্দিন আহম্মদ এবং মায়ের নাম করিমুন্নেছা। তার স্ত্রীর নাম দিলারা হাফিজ। তাদের এক মেয়ে, দুই ছেলে।

রাজনৈতিক ও কর্মজীবন

হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ পড়াশোনা শেষ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৬৮ সালে কমিশন পান এবং প্রথম কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ফুটবলের প্রতি ছিল তার যথেষ্ট আগ্রহ ছিলো। ১৯৭১ সালের মার্চে হাফিজ উদ্দিন তার ইউনিটের সঙ্গে যশোরের প্রত্যন্ত এলাকা জগদীশপুরে শীতকালীন প্রশিক্ষণে ছিলেন। ২৫ মার্চের পর তাদের ডেকে পাঠানো হয় এবং ২৯ মার্চ তারা সেনানিবাসে ফেরেন। পরে যোগ দেন যুদ্ধে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষ করে ভারতে যান। তিনি কামালপুর, ধলই বিওপি, কানাইঘাট ও সিলেটের এমসি কলেজের যুদ্ধে বেশ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেই কর্মরত ছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়নে ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসন থেক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[2][3] এর পর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ, জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[4][5][6][7] খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।[8]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ দলনেতা হিসেবে বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি যুদ্ধ হচ্ছে জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কামালপুরের যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই কামালপুরে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। কামালপুর বিওপিতে ভোর সাড়ে তিনটার সময় বি ও ডি দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আক্রমণ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। দুটি কোম্পানির মধ্যে বি কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন তিনি। ডি কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন সালাহউদ্দিন মমতাজ (বীর উত্তম)। সে সময়ে মাহবুবুর রহমানের (বীর উত্তম) নেতৃত্বে ‘এ’ কোম্পানিকে পাঠানো হয় উঠানিপাড়ায় কাটঅফ পার্টিতে যোগ দিতে। তবে বি ও ডি কোম্পানি এফইউপিতে পৌঁছানোর আগেই আর্টিলারির গোলাবর্ষণ শুরু হয়ে যায় যা এ দুটি কোম্পানি এফইউপিতে পৌঁছার পর শুরু হওয়ার কথা ছিল। এতে মুক্তিযোদ্ধারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন আর তখনই পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর্টিলারি ও ভারী মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর। পরবর্তীতে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও সালাহউদ্দিন আমাদের দলের মুক্তিযোদ্ধাদের একত্র করে শত্রুদের আক্রমণ শুরু করেন। তুমুল আক্রমণে শত্রুরা পেছনে হটে যায়। তখনও শত্রুরা পেছনে অবস্থান নিয়ে আর্টিলারি ও মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। শত্রুর গোলাগুলিতে সালাহউদ্দিন মমতাজ শহীদ হন। একটু পর মর্টারের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ। এতে করে দুই কোম্পানীই নেতৃত্বশূণ্য হয়ে পড়ে। [9]

পুরস্কার ও সম্মাননা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধীতে ভূষিত করেছে।

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০২-১১-২০১২"। ২০১৮-০৬-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩
  2. "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
  3. "৪র্থ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
  4. "৫ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
  5. "৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
  6. "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
  7. "৮ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
  8. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
  9. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.