হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বাংলাদেশের চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয়। এটি কলেজ রোডে অবস্থিত এবং কোতোয়ালী থানার অন্তর্গত। দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিনের দানকৃত অর্থে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়।[1] বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে দুইটি (প্রাতঃ ও দিবা) শিফটে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় | |
---|---|
![]() | |
![]() প্রধান ফটক | |
অবস্থান | |
![]() | |
, | |
স্থানাঙ্ক | ২২.৩৫০৩৭২৮° উত্তর ৯১.৮৩৪৭৪৯৯° পূর্ব |
তথ্য | |
ধরন | সরকারি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডাবলশিফট স্কুল |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৭৪ |
প্রতিষ্ঠাতা | ব্রিটিশ রাজ, মহসিন ফান্ড |
অবস্থা | সক্রিয় |
বিদ্যালয় জেলা | চট্টগ্রাম জেলা |
ইআইআইএন | ১০৪৪৮৮ |
প্রধান শিক্ষক | মুহাম্মদ নুরুল আমিন |
অনুষদ | |
শিক্ষকমণ্ডলী | ২৩ |
কর্মচারী | ৬ |
শ্রেণী | ৫ম- ১০ম |
লিঙ্গ | বালক |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | আনু. ১০০০ |
শিক্ষা ব্যবস্থা | জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড |
শিক্ষায়তন | ১ একর |
ক্যাম্পাসের ধরন | পাহাড়ি ও শহুরে |
রং | আকাশী নীল সাদা নেভি ব্লু |
ক্রীড়া | ফুটবল, ক্রিকেট |
মাস্কট | বই ও দুটি জ্বলন্ত মোমবাতি |
ডাকনাম | মহসিন হাই, মহসিন স্কুল |
অন্তর্ভুক্তি | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম |
ওয়েবসাইট | hmmghs |
ইতিহাস
১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে উপমহাদেশে শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন তার সম্পদ থেকে মহসিন ফান্ড বা মহসিন তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেন। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মহসিন ফান্ড থেকে মোহসিনীয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মোহসিনীয়া মাদ্রাসার বিলুপ্তি ঘটিয়ে মহসিন গভ. হাই স্কুল এবং গভ. মহসিন কলেজ স্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি কলেজ ক্যাম্পাস হতে আলাদা হয়ে যায় এবং মহসিন গভ. হাই স্কুল নামটি পরিবর্তন করে রাখা হয় হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বা তৎকালীন চট্টগ্রাম ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজের সর্বপ্রথম ক্যাম্পাস ছিলো মহসিন কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা পর্তুগিজ ভবন।[2] প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো ভবনটি ছিলো পর্তুগিজদের নির্মিত এবং চট্টগ্রামের প্রথম আদালত,যাকে দারুল আদালত ভবন বলা হতো। ভবনটি বর্তমানে পরিত্যক্ত এবং এটিতে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। দীর্ঘকাল রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটি বর্তমানে জীর্ণ ও ভঙ্গুর। ভবনটি বর্তমানে মহসিন কলেজ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে আছে।
অবস্থান
বিদ্যালয়টির একমাত্র ক্যাম্পাসটি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায় কলেজ রোডে গণি বেকারী মোড়ে অবস্থিত। জায়গাটিকে জামালখান এলাকার প্রান্তিক অংশ বিবেচনা করা হয়। বিদ্যালয়টি কোতোয়ালী থানা বা চট্টগ্রাম সদর থানার অন্তর্গত এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডের অন্তর্গত।
ক্যাম্পাস
বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি কলেজ রোডের পাশে কিছু একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দুইটি একাডেমিক ভবন ও একটি শহীদ মিনার রয়েছে। ভবন দুটি পাহাড়ের উপর একই উচ্চতায় সমতল ভূমিতে অবস্থিত। প্রবেশদ্বার থেকে মূল ভবন পর্যন্ত সিঁড়িপথ রয়েছে। শহীদ মিনার এবং অভিভাবক ছাউনি মূল ভবন সমূহের তুলনায় উচ্চতায় নিচে অবস্থিত। ক্যাম্পাসটির চারপাশ নানা প্রকার গাছপালায় পরিপূর্ণ। যা বিদ্যালয়টিকে এক অনন্য দৃষ্টিনন্দন রূপ দিয়েছে। বিদ্যালয় প্রচীরে হাজী মুহাম্মদ মহসিন-সহ চট্টগ্রামের ৩১ জন বরেণ্য গুণীজনের ম্যুরাল রয়েছে। তবে বিদ্যালয়টির বড় কোনো খেলার মাঠ নেই। মূল ভবনের সামনের উঠানে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার আয়োজন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের মাঠে করা হয়ে থাকে। জায়গা সল্পতা বিদ্যালয়টির জন্য একটি বড় সমস্যা। ২০১৯ সালে বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষিক ইতি কণা চৌধুরী আজাদীকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন,বিদ্যালয়ের প্রাপ্য ৭ একর জমি সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের দখলে আছে। বর্তমানে,বিদ্যালয়ের দখলে আছে মাত্র ০.৮৯ একর জমি। [3]
ব্যবস্থাপনা
বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হলেন প্রধান শিক্ষক, যিনি একজন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। প্রাতঃ ও দিবা শাখার জন্য দুই জন সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকেন। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণ দিবা ও প্রাতঃ শাখায় বিভক্ত থাকেন এবং বিষয়শিক্ষক ও শ্রেণীশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যালয়ের অন্যান্য কাজের জন্য অফিস সহকারী ও কর্মচারীগণ নিযুক্ত থাকেন।
শিক্ষা কার্যক্রম
বিদ্যালয়টি মূলত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে শুধুমাত্র ছাত্রদের অধ্যায়নের সুযোগ থাকে। বিদ্যালয়টির প্রাথমিক অংশে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এবং মাধ্যমিক অংশে ৬ষ্ঠ,৭ম,৮ম,৯ম ও ১০ম শিক্ষার্থীরা অধ্যায়ন করে। ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা কোতোয়ালী সদর থানার অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেয়।
উল্লেখ্য,বিদ্যালয়টিতে বিজ্ঞান ও ব্যবসায়িক শিক্ষা বিভাগ রয়েছে। মানবিক ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ নেই। তাই অধ্যায়নরত ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা উক্ত বিভাগসমূহ নির্বাচন করতে পারে না কিংবা উক্ত বিভাগসমূহে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে না।
বিদ্যালয়টির শিক্ষক সল্পতার ইতিহাস রয়েছে। ২০১২ সালে দুইটি শিফ্টে ১,১০০ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৯ জন শিক্ষক ছিলেন। ডাবলশিফ্ট বিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার পর শিক্ষকদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি না করার ফলে এটি ঘটেছিলো।[4]
ভর্তি
পূর্বে,২০১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রতি বছর নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতো। ৫ম শ্রেণীতে ১৬০জন ও প্রয়োজ্য শ্রেণীসমূহে এবং ৯ম শ্রেণীতে বিজ্ঞান ও ব্যবসায়িক শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। ডিসেম্বর মাসে উক্ত বিদ্যালয় সহ চট্টগ্রামের আরো ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য ১ম ও ২য় মেধাতালিকায় এবং ১ম ও ২য় অপেক্ষমান তালিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হতো। তালিকায় বিজোড় ক্রমিক ও জোড় ক্রমিক স্থান অধিকারীরা যথাক্রমে প্রাতঃ ও দিবা শাখায় ভর্তি হতে পারতো।
২০২১ ও ২০২২ শিক্ষাবর্ষে করোনা ভাইরাসের অতিমারির কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন ও ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক পরবর্তীতে ভর্তি জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে না। তাছাড়া মিচ্যুয়াল ট্রান্সফার ইন-এ শিক্ষার্থী ভর্তি করানো সম্ভব।
সহশিক্ষা কার্যক্রম
বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের একটি দাবা ক্লাব রয়েছে। বিজ্ঞান মেলা,গনিত উৎসব,নানা অলিম্পিয়াডসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে এবং প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কুচকাওয়াজে তারা অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ স্কাউটস, বি.এন.সি.সি ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য।
চিত্রমালা
- একাডেমিক ভবন-০১
- প্রধান ফটক
- বিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম ক্যাম্পাস ছিল প্রায় ৩৫০ বছর পুরনো পর্তুগিজদের নির্মিত এই ভবনটি।
আরও দেখুন
- বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজী মুহাম্মদ মহসিন
- মোহসিনীয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম
- বাংলাদেশের বিদ্যালয়ের তালিকা
- গভ. মুসলিম হাই স্কুল, চট্টগ্রাম
- চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল
- ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
তথ্যসূত্র
- "হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়"। hmmghs.edu.bd।
- "সুড়ঙ্গপথে লুটের মালামাল এনে রাখতো পর্তুগিজ জলদস্যুরা"। banglanews24.com।
- "দৈনিক আজাদী,২৯ই জুন ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ"। www.edainikazadi.net। Archived from the original on ২০২১-১১-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-৩০।
- "Teachers' Shortage at Mohsin School.Future of students uncertain"। www.thedailystar.net (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২৫।