হাকোবো আরবেঞ্জ

হুয়ান হাকোবো আরবেঞ্জ গুসমান (স্পেনীয়: Juan Jacobo Árbenz Guzmán; আ-ধ্ব-ব: [ xuan xaˈkoβo ˈaɾβenz ɣuzˈman]; ১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯১৩ - ২৭শে জানুয়ারি, ১৯৭১) একজন গুয়াতেমালীয় সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ ছিলেন যিনি গুয়াতেমালার ২৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং ১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ২য় রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি দশ বছর মেয়াদী গুয়াতেমালার বিপ্লবের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যার সুবাদে গুয়াতেমালার ইতিহাসে কয়েক বছর প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বহাল ছিল। আরবেঞ্জ রাষ্ট্রপতি হিসেবে যে ঐতিহাসিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচির বাস্তবায়ন করেন, তা সমগ্র লাতিন আমেরিকাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।[1]

হাকোবো আরবেঞ্জ
Jacobo Árbenz
২৫তম গুয়াতেমালার রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
১৫ই মার্চ, ১৯৫১  ২৭শে জুলাই, ১৯৫৪
পূর্বসূরীহুয়ান হোসে আরেবালো
উত্তরসূরীকার্লোস এনরিকে দিয়াস দে লেওন
গুয়াতেমালার ১ম প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৫ই মার্চ, ১৯৪৫  ১৫ই মার্চ, ১৯৫১
রাষ্ট্রপতিহুয়ান হোসে আরেবালো
প্রধানফ্রান্সিসকো হাবিয়ের আরানা
কার্লোস পাস তেহাদা
পূর্বসূরীপদ প্রতিষ্ঠিত
ফ্রান্সিসকো হাবিয়ের আরানা
(প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে)
উত্তরসূরীহোসে আনহেল সানচেস
গুয়াতেমালার রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান
কাজের মেয়াদ
২০শে অক্টোবর, ১৯৪৪  ১৫ই মার্চ, ১৯৪৫
সাথে ছিলেন ফ্রান্সিসকো হাবিয়ের আরানা এবং হোর্হে তোরিয়েইয়ো
পূর্বসূরীফেদেরিকো পোনসে বাইদেস
উত্তরসূরীহুয়ান হোসে আরেবালো
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মহাকোবো আরবেঞ্জ গুসমান
(১৯১৩-০৯-১৪)১৪ সেপ্টেম্বর ১৯১৩
কেতসালতেনাংগো, গুয়াতেমালা
মৃত্যু২৭ জানুয়ারি ১৯৭১(1971-01-27) (বয়স ৫৭)
মেক্সিকো নগরী, মেক্সিকো
সমাধিস্থলগুয়াতেমালা নগরী সাধারণ সমাধিস্থল
রাজনৈতিক দলবিপ্লবী কর্মকাণ্ড দল
দাম্পত্য সঙ্গীমারিয়া ক্রিস্তিনা বিলানোবা (বি. ১৯৩৯)
সন্তান৩, আরাবেইয়াসহ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীপোলিতেকনিক বিদ্যালয়
জীবিকাসেনা
স্বাক্ষর
ওয়েবসাইটওয়েবসাইট (সম্মানসূচক)
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য Guatemala
শাখাগুয়াতেমালার সেনাবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৩২–১৯৫৪
পদকর্নেল
ইউনিটগুয়ারদিয়া দে ওনোর
যুদ্ধগুয়াতেমালার বিপ্লব
১৯৫৪-এর গুয়াতেমালার সামরিক অভ্যুত্থান

আরবেঞ্জ ১৯১৩ সালে একটি ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাব ছিলেন সুইজারল্যান্ডীয়-জার্মান বংশোদ্ভূত, আর তার মা ছিলেন গুয়াতেমালীয়। তিনি ১৯৩৫ সালে একটি সামরিক প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি থেকে উচ্চ সম্মানসহ স্নাতক হন এবং ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত গুয়াতেমালার সেনাবাহিনীতে সেবা দান করেন। এসময় সামরিক পদমর্যাদাক্রমে তার দ্রুত উত্থান ঘটে। জীবনের এই পর্বে তিনি মার্কিন মদদপুষ্ট একনায়ক হোর্হে উবিকো-র শাসনামলে কৃষি শ্রমিকদের সহিংস নিপীড়ন প্রত্যক্ষ করেন। তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে শেকলবাঁধা বন্দীদেরকে সাথে করে কারাগারে নিয়ে যেতে হত। এই অভিজ্ঞতা তার উদারপন্থী চিন্তাধারা গঠনে সাহায্য করে। ১৯৩৮ সালে তিনি মারিয়া ক্রিস্তিনা বিলানোবা-র সাথে সাক্ষাৎ ও একই বছর তার সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মারিয়া ও হোসে মানুয়েল ফোর্তুনি নামক একজন গুয়াতেমালীয় সাম্যবাদী তার উপরে বিশাল আদর্শবাদী প্রভাব বিস্তার করেন। ১৯৪৪ সালের অক্টোবর মাসে বহুসংখ্যক বেসামরিক দল ও গুয়াতেমালার সেনাবাহিনীর কিছু প্রগতিবাদী অংশ আরবেঞ্জ ও ফ্রান্সিসকো আরান-র নেতৃত্বে উবিকো-র নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এর পরবর্তীতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে হুয়ান হোসে আরেবালো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং খুবই জনপ্রিয় একটি সামাজিক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেন। আরবেঞ্জ নতুন রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান এবং ১৯৪৯ সালে আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।[2][3][4][5]

আরানার মৃত্যুর পরে ১৯৫০ সালে আরবেঞ্জ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান এবং তেমন কোনও বিরোধিতা ছাড়াই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিগেল ইদিগোরাস ফুয়েন্তেসকে ৫০%-এরও বেশি ব্যবধানে পরাজিত করে জয়লাভ করেন। ১৯৫১ সালের ১৫ই মার্চ তিনি গুয়াতেমালার ২য় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং তার পূর্বসুরীর সামাজিক সংস্কারমূলক নীতিগুলি অব্যাহত রাখেন। এই সংস্কারগুলিতে ভোটাধিকার সম্প্রসারণ করা হয়, শ্রমিকদের সংগঠিত হবার ক্ষমতা প্রদান করা হয়, রাজনৈতিক দলগুলিকে বৈধ করা হয় এবং জনবিতর্কের অনুমোদন দেওয়া হয়। [6] আরবেঞ্জের নীতির কেন্দ্রে ছিল একটি কৃষি সংস্কার আইন যা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিশাল বিশাল দখলি জমি সরকার কিনে নেয় এবং সেগুলিকে দারিদ্র্য-পীড়িত কৃষকদের কাছে পুনর্বিতরণ করা হয়। এই অধ্যাদেশের সুবাদে প্রায় ৫ লক্ষ দরিদ্র কৃষক লাভবান, যাদের সিংহভাগই ছিল গুয়াতেমালার আদিবাসী জাতিসমূহের লোক এবং স্পেনের গুয়াতেমালা বিজয়ের সময় যাদের পূর্বসুরীদের ভূমি দখল করে নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু আরবেঞ্জের এইসব নীতি ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি নামক মার্কিন বিনিয়োগপ্রাপ্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে রুষ্ট করে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আরবেঞ্জকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চাপ প্রয়োগ করে। অধিকন্তু মার্কিন সরকার গুয়াতেমালার সরকারে সাম্যবাদীদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। এরই সূত্র ধরে মার্কিন সরকারের বৈদেশিক মন্ত্রণালয় ও মার্কিন কেন্দ্রীয় গুপ্তচর সংস্থার (সিআইএ) কৌশলকৃত ১৯৫৪ সালের গুয়াতেমালার সামরিক অভ্যুত্থানে আরবেঞ্জকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। কর্নেল কার্লোস কাস্তিইয়ো আর্মাস তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিস্থাপন করেন। আরবেঞ্জ বেশ কিছু রাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবন যাপন করেন এবং এ সময় ধীরে ধীরে তার পরিবার ভেঙে পড়ে। তার কন্যা আত্মহত্যা করে এবং আরবেঞ্জ নিজেও মদ্যাসক্ত হয়ে পড়েন ও শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালে মেক্সিকোতে মৃত্যুবরণ করেন। আরবেঞ্জের মৃত্যুর ৪০ বছর পরে ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে গুয়াতেমালার সরকার তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।

তথ্যসূত্র

  1. Gleijeses 1992, পৃ. 3।
  2. Martínez Peláez 1990, পৃ. 842।
  3. LaFeber 1993, পৃ. 77–79।
  4. Forster 2001, পৃ. 81–82।
  5. Friedman 2003, পৃ. 82–83।
  6. Hunt 2004, পৃ. 255।

উৎসপঞ্জি

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.