হাঁড়ি
হাঁড়ি হল ভারতীয় উপমহাদেশে উদ্ভূত তামা বা মাটি (পাত্র) থেকে তৈরি একটি রান্নার পাত্র। এটি মূলত ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশী রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এই পাত্রটি গভীর হয় এবং এর একটি প্রশস্ত মুখ রয়েছে। যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে হাঁড়ি ব্যবহার করে বিবিধ রকমের রান্নার পদ প্রস্তুত করা হয় তাই তাদের নামকরনেও হাঁড়ি বা হাঁড়ি শব্দ যুক্ত হয়- যেমন চিকেন হাঁড়ি, হাঁড়ি পনির, বা হাঁড়ি কোমডি।
ভারতীয় উপমহাদেশের অঞ্চলভেদে হাঁড়ির বিভিন্ন নামকরন হয়েছে, যেমন তসলা, তসলি, কড়াহি বা কড়াই, দেগচি বা ডেকচি এবং অহুনা। হাঁড়ির সাথে আমেরিকান শিমের পট, মেক্সিকান ও স্প্যানিশ ওলা এবং ফ্রেঞ্চ স্যুপিয়ারের অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়। প্রতিবছর ভারতে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্ম উপলক্ষে দহি হাঁড়ি উতসব উদযাপন করা হয় যার মূল উপাদান হল এই হাঁড়ি।
হাঁড়ির ব্যবহার
হাঁড়ি প্রধানত রান্নার উদ্দেশ্যে বিশেষ করে ঢিমে আঁচে ধীরে ধীরে রান্না করার জন্য ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ যখন যে কোন পদহাঁড়ি রান্না করা হয় তখন তার মুখে ঢাকনার চারপাচে ময়দার প্রলেপ লাগিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে পাত্র থেকে বাষ্প বেরিয়ে না যায় ও খাবারের পুষ্টিগুণ সংরক্ষিত হয়। এর ফলে রান্না করা পদের স্বাদ বহুগুন বেড়ে ওঠে।
প্রতিবছর ভারতবর্ষে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিবস জন্মাষ্টমী উপলক্ষে যে দহি হাঁড়ি উতসব উদযাপন করা হয় তার মূল উপাদান হল এই হাঁড়ি ও তাতে রক্ষিত মাখন। এই উত্সব প্রতি বছর আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়।[1][2][3] কথিত আছে ভগবান কৃষ্ণ বাল্যকালে গ্রামের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এবং আশেপাশের গ্রাম থেকেও তাদের বাড়িতে রক্ষিত মাখন চুরি করতেন এই কার্যকলাপগুলির কারণে, কৃষ্ণ মাখন চোর আখ্যা পেয়েছিলেন।[1][2] তার পালক মা যশোদা তার চুরির বন্ধ করতে তিনি গ্রামের মহিলাদেরকে তাদের দুগ্ধজাত পণ্য একটি হাঁড়িতে বেঁধে কোন উঁচু জায়গায় তুলে রাখতে বলেছিলেন যাতে বালক কৃষ্ণ তার নাগাল না পায়। যাইহোক, কৃষ্ণ তার বুদ্ধি ব্যবহার করে তার বন্ধুদের এবং অন্যান্য শিশুদেরকে জড়ো করে একটি মানব পিরামিড তৈরি করেন ও সহজেই উচুতে রাখা হাঁড়ি ভেঙে মাখন সংগ্রহ করেন। শ্রী কৃষ্ণের এই লীলা কে উদযাপন করতেই প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে দহি হাঁড়ি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় যেখানে উচুতে একটি হাঁড়ির মধ্যে দুধ ও মাখন রাখা হয় ও একদল মানুষ উঁচু মানব পিরামিড তৈরী করে তার নাগাল পেতে ও ভেঙে ফেলতে চেষ্টা করে।[1][2][3]
তথ্যসূত্র
- Significance of Dahi Handi on Krishna Krishna Janmashtami | The Times of India. (2020). Retrieved 4 September 2020
- Melton, J. (2011). In Religious Celebrations: An Encyclopedia of Holidays, Festivals, Solemn Observances, and Spiritual Commemorations (1st ed., p. 459). ABC-CLIO.
- Roy, C. (2005). In Traditional festivals : A Multicultural Encyclopedia (1st ed., pp. 213–215). Santa Barbara, California: ABC-CLIO.