হলুদ সাংবাদিকতা

হলুদ সাংবাদিকতা বলতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনকে বোঝায়। এ ধরনের সাংবাদিকতায় ভালমত গবেষণা বা খোঁজ-খবর না করেই দৃষ্টিগ্রাহী ও নজরকাড়া শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। হলুদ সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য হল সাংবাদিকতার রীতিনীতি না মেনে[1] যেভাবেই হোক পত্রিকার কাটতি বাড়ানো[2] বা টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা বাড়ানো। অর্থাৎ হলুদ সাংবাদিকতা মানেই ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন, দৃষ্টি আকৰ্ষণকারী শিরোনাম ব্যবহার করা, সাধারণ ঘটনাকে একটি সাংঘাতিক ঘটনা বলে প্ৰতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা, কেলেংকারির খবর গুরুত্ব সহকারে প্ৰচার করা, অহেতুক চমক সৃষ্টি ইত্যাদি।

হু প্রেস থেকে ছাপাখানার ভূতেরা বেরিয়ে আসছে, ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত একটি পত্রিকার কার্টুন

ফ্র্যাঙ্ক লুথার মট হলুদ সাংবাদিকতার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন:[3]

  • সাধারণ ঘটনাকে কয়েকটি কলাম জুড়ে বড় আকারের ভয়ানক একটি শিরোনাম করা।
  • ছবি আর কাল্পনিক নক্সার অপরিমিত ব্যবহার।
  • ভুয়া সাক্ষাৎকার, ভুল ধারণার জন্ম দিতে পারে এমন শিরোনাম, ভুয়া বিজ্ঞানমূলক রচনা আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কর্তৃক ভুল শিক্ষামূলক রচনার ব্যবহার।
  • সম্পূৰ্ণ রঙিন রবিবাসরীয় সাময়িকী প্রকাশ, যার সাথে সাধারণত কমিক্স সংযুক্ত করা হয়।
  • স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানো পরাজিত নায়কদের প্ৰতি নাটকীয় সহানুভূতি।

হলুদ সাংবাদিকতার জন্ম: পুলিৎজার-হার্স্ট দ্বন্দ্ব

"হলুদ সংবাদিকতা" বিষয়ক কার্টুন; স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জোসেফ পুলিৎজার আর উইলিয়াম রুডলফ হার্স্টের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে উঠে

হলুদ সাংবাদিকতার জন্ম হয়েছিল সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম দুই ব্যক্তিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের জোসেফ পুলিৎজার আর উইলিয়াম রুডলফ হার্স্টের মধ্যে পেশাগত প্রতিযোগিতার ফল হিসেবে। এই দুই সম্পাদক তাদের নিজ নিজ পত্রিকার ব্যবসায়িক স্বার্থে একে অপরের অপেক্ষাকৃত যোগ্য সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কর্মচারীদের অধিক বেতনে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন। এক পর্যায়ে ব্যক্তিগত কেলেংকারির চাঞ্চল্যকর খবর ছেপে তারা পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। পুলিৎজারের নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড ও হার্স্টের নিউ ইয়র্ক জার্নালের মধ্যে পরস্পর প্রতিযোগিতা এমন এক অরুচিকর পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতার পরিবর্তে পত্রিকার বাহ্যিক চাকচিক্য আর পাঠকদের উত্তেজনা দানই তাদের নিকট মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।

তথ্যসূত্র

  1. Shirley Biagi, Media Impact: An Introduction to Mass Media (2011) p 56
  2. "Sensationalism"। TheFreeDictionary.com। সংগ্রহের তারিখ June 2011 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. Mott, Frank Luther (১৯৪১)। American Journalism। পৃষ্ঠা 539।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.