স্বরযন্ত্রের প্রদাহ
স্বরযন্ত্রের প্রদাহ (ইংরেজি: Laryngitis) বিভিন্ন কারণে হতে পারে।[1] এর কারণে কণ্ঠ কর্কশ হয়ে যায়। এর সাথে জ্বর, কাশি, গলার সামনের দিকে ব্যথা এবং ঢোক গিলতে কষ্ট হতে পারে।[1][2] স্বরযন্ত্রের আস্তরণ ফুলে যায় এবং শ্লেষ্মা নিঃসরণ করে। উপসর্গগুলি সাধারণত দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় না।[1] স্বরযন্ত্রের প্রদাহ তিন সপ্তাহের কম স্থায়ী হলে একে স্বরযন্ত্রের বিষম বা সরল প্রদাহ এবং তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে একে স্বরযন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহে শ্রেণীভুক্ত করা হয়।[1]
স্বরযন্ত্রের প্রদাহ | |
---|---|
অম্ল ঢেকুরের কারণে লালবর্ণ ধারণ করা স্বরযন্ত্রের অন্তর্বীক্ষণীয় চিত্র | |
উচ্চারণ |
|
বিশেষত্ব | নাক-কান-গলাবিদ্যা |
লক্ষণ | কর্কশ কণ্ঠ, জ্বর, ব্যথা[1][2] |
স্থিতিকাল | সাধারণত দুই সপ্তাহের কম[1] |
কারণ | ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, আঘাত[1] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | উপসর্গের উপর ভিত্তি করে, দরকার হলে স্বরযন্ত্রবীক্ষণের মাধ্যমে পরীক্ষা করে[1] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | আলজিহ্বার প্রদাহ, স্বরযন্ত্রীয় কর্কটরোগ বা ক্যান্সার, গ্রুপ (গলাফোলা কাশি)[1] |
চিকিৎসা | স্বরযন্ত্রকে বিশ্রাম দেওয়া, তরল খাওয়া[1] |
সংঘটনের হার | সাধারণ[1] |
স্বরযন্ত্রের বিষম প্রদাহ বা সরল প্রদাহ সাধারণত সর্দিকাশির জীবাণু সংক্রমণের সাথে একই সময়ে ঘটে। এগুলি সাধারণত ঊর্ধ্ব শ্বাসনালীর ভাইরাসঘটিত সংক্রমণের একটি অংশ হিসেবে ঘটে।[1] অনেক সময় অস্বস্তিকর পদার্থ শ্বাসের সাথে টেনে নিলেও স্বরযন্ত্রের প্রদাহ হয়। অনবরত কাশির ফলে সৃষ্ট আঘাত থেকেও স্বরযন্ত্রের প্রদাহ হয়।[1]
মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান,যক্ষ্মা, অতিসংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি, অম্ল ঢেকুর, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, সার্কয়ডোসিস, স্বরতন্ত্রীর অতিরিক্ত ব্যবহার, ইত্যাদি কারণে স্বরযন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হতে পারে।[1][3] এসময় স্বরযন্ত্র শুষ্ক হয়ে যায় এবং এতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কলা বা পলিপ হতে পারে। ডিপথেরিয়া নামক রোগটি কণ্ঠনালীর উপরের অংশ থেকে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়লে, যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া ফুসফুস থেকে ছড়িয়ে পড়লে এবং গুরুতর সিফিলিস রোগের সময় স্বরযন্ত্রের প্রদাহ হয়। সিফিলিস হলে স্বরযন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং কণ্ঠ অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্কশ হয়ে যেতে পারে।[3]
উদ্বেগজনক লক্ষণ যেমন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শনশন শব্দ হলে, ঘাড়ে বিকিরণ চিকিৎসার ইতিহাস থাকলে, ঢোক গিলতে কষ্ট হলে, তিন সপ্তাহের বেশি প্রদাহ থাকলে এবং ধূমপানের ইতিহাস থাকলে অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।[1] উদ্বেগজনক লক্ষণ উপস্থিত থাকলে স্বরতন্ত্রীকে স্বরযন্ত্রবীক্ষণ প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ করতে হতে পারে।[1] অন্যান্য যেসব রোগের কারণে একই ধরনের উপসর্গ দেখা যেতে পারে তাদের মধ্যে আলজিহ্বার প্রদাহ, ক্রুপ কাশি, বহিরাগত বস্তু শ্বাসের সাথে গ্রহণ এবং স্বরযন্ত্রীয় কর্কটরোগ বা ক্যান্সার উল্লেখযোগ্য[1][4]
স্বরযন্ত্রের বিষম প্রদাহ সাধারণত বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই নিজে নিজেই সেরে যায়[1] স্বরযন্ত্রকে বিশ্রাম দিলে, কথা না বললে এবং যথেষ্ট পরিমাণে তরল পান করলে প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে[1] বিষম প্রদাহের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ানাশক ওষুধ তেমন উপকারী নয়।[5] বিষম প্রদাহ বেশ সাধারণ, কিন্তু স্বরযন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বিরল।[1] স্বরযন্ত্র প্রদাহের দীর্ঘস্থায়ী রূপটি সাধারণত মধ্য বয়সে হয়ে থাকে এবং নারীদের চেয়ে পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।[6]
তথ্যসূত্র
- Wood, John M.; Athanasiadis, Theodore; Allen, Jacqui (৯ অক্টোবর ২০১৪)। "Laryngitis"। BMJ। The BMJ। 349: g5827। আইএসএসএন 1756-1833। ডিওআই:10.1136/bmj.g5827। পিএমআইডি 25300640। ১৩ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৬।
- "Laryngitis - National Library of Medicine"। PubMed Health। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১৬।
- Dworkin, James Paul (এপ্রিল ২০০৮)। "Laryngitis: Types, Causes, and Treatments"। Otolaryngologic Clinics of North America। 41 (2): 419–436। ডিওআই:10.1016/j.otc.2007.11.011। পিএমআইডি 18328379।
- Ferri, Fred F. (২০১৬)। Ferri's Clinical Advisor 2017: 5 Books in 1 (ইংরেজি ভাষায়)। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 709। আইএসবিএন 9780323448383। ২০১৬-১১-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- Reveiz, L; Cardona, AF (২৩ মে ২০১৫)। "Antibiotics for acute laryngitis in adults"। Cochrane Database of Systematic Reviews। 5 (5): CD004783। ডিওআই:10.1002/14651858.CD004783.pub5। পিএমআইডি 26002823।
- Dhingra, P. L.; Dhingra, Shruti (২০১৪)। Diseases of Ear, Nose and Throat (ইংরেজি ভাষায়) (6 সংস্করণ)। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 292। আইএসবিএন 9788131236932। ২০১৬-১১-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।