স্পিকার (রাজনীতি)

সভাধ্যক্ষ বা স্পিকার (ইংরেজি: Speaker) একটি রাজনৈতিক পরিভাষা ও পদবি বিশেষ। প্রায়শঃই তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে আইনসভায় তিনি সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করে যথোচিত সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিতর্কের মধ্যস্থতা, সিদ্ধান্ত প্রদান, ভোটের ফলাফলসহ প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সম্পাদন করেন। সভায় কে কথা বলতে পারবেন তা তিনি নির্ধারণ করেন এবং নিয়ম-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি ব্যক্তি হিসেবে সভায় প্রতিনিধিত্ব করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য পরিস্থিতিতে প্রধান মুখপত্র হিসেবে কাজ করেন। ১৩৭৭ সালে সর্বপ্রথম এ পদবি ধারণের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইংল্যান্ডের কমন্স সভায় স্যার থমাস ডি হাঙ্গারফোর্ড স্পিকার হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।[1][2] সাধারণতঃ সংসদে তিনি মিস্টার স্পিকার এবং নারী হিসেবে ম্যাডাম স্পিকার নামে তাঁকে সম্বোধন করা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সংস্কৃতিতে ইংরেজি ভাষার সমান্তরালে চেয়ারম্যান কিংবা প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত হন। কানাডার ফরাসীভাষী কমন্স সভা কিংবা আইনসভায় তাকে প্রেসিডেন্টরূপে সম্ভাষণ করা হয়।

স্পিকার সম্পর্কে একটি বই

অনেক আইনসভায় প্রো টেম্পোর বা ডেপুটি স্পিকারের পদ রয়েছে। তিনি মূলতঃ স্পিকারের অনুপস্থিতিজনিত কারণে শূন্যস্থান পূরণ করে সভার কার্যাবলী পরিচালনা করে থাকেন।

বৈশ্বিক ব্যবহার

যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতিতে চেম্বারে স্পিকারের ভোট প্রদানের কোন ক্ষমতা নেই। যদি উভয়পক্ষের মধ্যেকার ফলাফল সমান হয়, তখন তিনি ভোট প্রদান করে থাকেন। আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের রাজনীতি থেকে নিরপেক্ষতা রাখার স্বার্থে একজন স্পিকার নিজ দল থেকে পদত্যাগ করে থাকেন। তবে সরকারের পতন থেকে রক্ষার স্বার্থে ভোট প্রয়োগ করেন। আইনসভার সদস্যদের মধ্য থেকে তিনি নির্বাচিত হন। তবে হুইপগণকে এভাবে মনোনীত করা হয় না। যুক্তরাজ্যে একজন স্পিকার সাধারণতঃ দু’টি প্রধান বৃহৎ দলের একটি থেকে মনোনীত হন।

কানাডায় বৃহৎ দলগুলো স্পিকার পদের জন্য প্রার্থী মনোনীত করে ও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে। তবে, ১৯৬৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর দলগুলো মতৈক্যের মাধ্যমে প্রার্থী দাঁড় করায়নি। অস্ট্রেলিয়ায় স্পিকারত্ব একটি দলীয় পদ এবং যুক্তরাজ্যে তা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ পদ হিসেবে বিবেচিত।

ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষে সংসদ লর্ডস সভার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলী সম্পন্ন করেন। দপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাকে স্পিকার নামে আখ্যায়িত করা হয়। তবে ২০০৬ সাল থেকে কমন্স সভায় ভিন্ন পদবিতেও বিবৃত করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিনেটে তিনি প্রেসিডেন্ট নামে পরিচিতি পান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভা, রাজ্য সভা এবং স্থানীয় সরকার পরিষদে স্পিকার সাধারণতঃ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যদের মাঝখান থেকে নির্বাচিত হন এবং দলের প্রধান হিসেবে কার্যাবলী সম্পাদন করেন। তাসত্ত্বেও তিনি স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় দেন, নিজ দলের কার্যসূচীতে বাঁধাও দিতে পারেন। আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকার সম্পূর্ণ কক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন; কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তিনি দলীয় শক্তিমত্তার অধিকারী।

প্রতিনিধি সভার স্পিকার প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির মর্যাদা পেতে পারেন। কোন কারণে মার্কিন রাষ্ট্রপতি কিংবা উপ-রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী অবশ্য উত্তরাধিকার নির্বাচনের এ পদ্ধতিকে অসাংবিধানিকরূপে আখ্যায়িত করেছেন।[3] মার্কিন সংবিধানে স্পিকার পদের জন্য কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্য হতে হবে এমন কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সদস্যবিহীন কোন ব্যক্তি স্পিকাররূপে মনোনীত হননি।

বর্তমান স্পিকার

দেশ আইনসভা পদবি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
 ভারতলোকসভাঅধ্যক্ষওম বিড়লা
 আলবেনিয়াসংসদচেয়ারপারসনজোজেফিনা তোপাল্লি
 আর্মেনিয়াজাতীয় পরিষদস্পিকারহভিক আব্রাহামিয়ান
 অস্ট্রেলিয়াপ্রতিনিধি পরিষদস্পিকারআন্না বার্কে
 বাংলাদেশবাংলাদেশ জাতীয় সংসদসভাধ্যক্ষশিরীন শারমিন চৌধুরী[4]
 বতসোয়ানাজাতীয় পরিষদস্পিকারমার্গারেট নাশা
 বুলগেরিয়াজাতীয় পরিষদচেয়ারপারসনসেতস্কা সাকাচেভা
 কানাডাকমন্স সভাস্পিকার (Président)এন্ড্রু শির
 চীনন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসস্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানঝ্যাং দিজিয়েং
 ক্রোয়েশিয়াক্রোয়েশিয়ার সংসদ (সাবোর)প্রেসডেন্টজসিপ লেকো
 ডেনমার্কসংসদ (ফোকেটিনগেট)স্পিকারমজেনস লিকেতোফত
 মিশরগণপরিষদস্পিকারসাদ এল-কাতাতনি
 এস্তোনিয়ারিগিকগুস্পিকারএনি আর্গমা
 ফিনল্যান্ডসংসদ (এডাসকান্টা/রিকসডাগেন)স্পিকারইরো হেইনালোমা
 ফ্রান্সজাতীয় পরিষদ (আসেম্বলি ন্যাশিওনালে)প্রেসিডেন্টক্লদ বার্তোলোন
 ঘানাসংসদস্পিকারমিসেস জাস্টিস জয়েস এডেলিন বেমফোর্ড-এডো
 জার্মানিবুন্দেসতাগপ্রেসিডেন্টনরবার্ট ল্যামার্ট
 গ্রীসভোলিস্পিকারফিলিপোস পেটসালনিকোস
 হাঙ্গেরিজাতীয় পরিষদ (মাগিয়ার কোজতারসাগ ওরসজাগিওলেসে)স্পিকারলাজলো কভার
 আইসল্যান্ডআইসল্যান্ডের পরিষদস্পিকারআস্তা রাগহেইদুর জোহানেসদোতির
 ইন্দোনেশিয়াজনপ্রতিনিধ পরিষদ (দিওয়ান পাওয়াকিলান রাকিয়াত)স্পিকারমারজুকি আলি
 আয়ারল্যান্ডদেল আইরিয়েনসিয়েন কমহেয়ার্লিসিন ব্যারেট
 ইরানমজলিসস্পিকার/চেয়ারম্যান [رئیس]আলি লারিজানি
 ইসরায়েলনেসেটস্পিকারইউলি-ওয়েল এডেলস্টেইন
 ইতালিডেপুটিদের চেম্বারপ্রেসিডেন্টলরা বলদ্রিনি
 কেনিয়াসংসদস্পিকারকেনেথ মারেন্দে
 কসোভোকসোভোর পরিষদচেয়ারম্যানজাকুপ ক্রাসনিকি
 লাটভিয়াসেইমাস্পিকারসলভিতা আবোলতিনা
 লেবাননসংসদস্পিকারনাবিহ বেরি
 লিশটেনস্টাইনলিশটেনস্টাইনের ল্যান্ডট্যাগস্পিকারআর্থার ব্রানহার্ট
 লিথুয়ানিয়াসেইমাসস্পিকারইরিনা দেগুতিয়েন
 লিবিয়াসাধারণ জাতীয় কংগ্রেসস্পিকারমোহাম্মদ ইউসুফ এল-মাগারিয়াফ
 মেসিডোনিয়াপরিষদস্পিকারত্রাজকো ভেলকানোভস্কি
 মালয়েশিয়াপ্রতিনিধি সভা (দিওয়ান রাকিয়াত)স্পিকারতন শ্রী পন্ডিকার আমিন মুলিয়া
 মাল্টাপ্রতিনিধি সভাস্পিকারমাইকেল ফ্রেন্দো
 মেক্সিকোডেপুটিদের চেম্বার (কামারা ডি ডিপুটাডোস)প্রেসিডেন্টরুথ জাভালেতা সালগাদো
 মলদোভাসংসদপ্রেসিডেন্টমারিয়ান লুপু
টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত মন্টেনিগ্রোপরিষদপ্রেসিডেন্টর‌্যাঙ্কো ক্রিভোকাপিক
 নেদারল্যান্ডপ্রতিনিধি পরিষদPresidentআনুচকা ভ্যান মিলটেনবার্গ
 নিউজিল্যান্ডপ্রতিনিধি পরিষদস্পিকারডেভিড কার্টার
 নাইজেরিয়াজাতীয় পরিষদস্পিকারআমিনু তাম্বুয়াল
 উত্তর কোরিয়াসুপ্রিম পিপল’স অ্যাসেম্বলিপ্রেসিডিয়ামের চেয়ারম্যানকিম ইয়ং-ন্যাম
 পাকিস্তানজাতীয় পরিষদস্পিকারড. ফাহমিদা মির্জা
 ফিলিপাইনপ্রতিনিধি পরিষদস্পিকারফেলিসিয়ানো বেলমন্তে
 পোল্যান্ডসেম অব দ্য রিপাবলিক অব পোল্যান্ডমার্শালইউয়া কোপাজ
 পর্তুগালপ্রজাতন্ত্র পরিষদপ্রেসিডেন্টমারিয়া দা আসুনসাও এস্তেভিস
 রোমানিয়াডেপুটিদের চেম্বারপ্রেসিডেন্টরবার্তা আনাস্তাসে
 রাশিয়াস্টেট দুমাচেয়ারম্যানবরিস গ্রাইজলভ
 সার্বিয়াজাতীয় পরিষদপ্রেসিডেন্টস্লেভিকা ডুকিচ ডেজানোভিক
 সিঙ্গাপুরসংসদস্পিকারহালিমা ইয়াকব
 স্লোভাকিয়াজাতীয় পরিষদস্পিকারপেভল পসকা
 সলোমন দ্বীপপুঞ্জজাতীয় সংসদস্পিকারস্যার পিটার কেনিলোরা
 দক্ষিণ আফ্রিকাজাতীয় পরিষদস্পিকারম্যাক্স সিসুলু
 দক্ষিণ কোরিয়াজাতীয় পরিষদস্পিকারক্যাং চ্যাং হি
 দক্ষিণ সুদানজাতীয় পরিষদস্পিকারজেমস ওয়ানি ইগা
 স্পেনডেপুটিদের কংগ্রেস (কংগ্রেসিও ডি লস ডিপুটাডোস)Presidentজিসাস পসাদা মোরেনো
 শ্রীলঙ্কাশ্রীলঙ্কার সংসদস্পিকারচমল রাজাপক্ষ
 সুরিনামসুরিনামের জাতীয় পরিষদ (ডি ন্যাশিওনালে অ্যাসেম্বলি)চেয়ারম্যানজেনিফার সিমন্স
 সুইডেনসুইডেনের সংসদ (রিকসডাগ)স্পিকারপার ওয়েস্টারবার্গ
 তাইওয়ানলেজিসল্যাটিভ ইউয়ানপ্রেসিডেন্টওয়েং জিন-পিং
 থাইল্যান্ডপ্রতিনিধি পরিষদপ্রেসিডেন্টসমসাক কিয়াতসারানন্ট
 ইউক্রেনভারখোভনা রাদাচেয়ারম্যানভলোদিমির লিতভিন
 যুক্তরাজ্যকমন্স সভাস্পিকারজন বারকাউ
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রতিনিধি সভাস্পিকারজন বোয়েনার
 উরুগুয়েডেপুটিদের চেম্বারপ্রেসিডেন্টআইবন পাসাদা
 ভানুয়াতুভানুয়াতুর সংসদস্পিকারজর্জ আন্দ্রে ওয়েলস[5]
 ভিয়েতনামজাতীয় পরিষদচেয়ারম্যাননগুয়েন সিন হাং
 জিম্বাবুয়েসংসদ সভাস্পিকারলাভমোর ময়ো

তথ্যসূত্র

  1. Journal of the House of Commons: January 1559
  2. Lee Vol 28, pp. 257,258.
  3. See Akhil Reed Amar & Vikram Amar, Is The Presidential Succession Law Constitutional?, 48 Stan. L. Rev. 113 (1995).
  4. "Shirin to become first woman Speaker"। bdnews24.com। ২৯ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৩
  5. "01 September confirmed as date for Vanuatu Presidential Election"Islands Business। ২০০৯-০৯-০২। ২০১২-০২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-২০

পাদটীকা

আরও দেখুন

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.