স্টিফেন ফ্লেমিং

স্টিফেন পল ফ্লেমিং, ওএনজেডএম (ইংরেজি: Stephen Fleming; জন্ম: ১ এপ্রিল, ১৯৭৩) ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী নিউজিল্যান্ডের সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ নামে পরিচিত নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন স্টিফেন ফ্লেমিং

স্টিফেন ফ্লেমিং
২০০৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে স্টিফেন ফ্লেমিং
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামস্টিফেন পল ফ্লেমিং
জন্ম (1973-04-01) ১ এপ্রিল ১৯৭৩
ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি ব্যাটসম্যান
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাঅধিনায়ক, উচ্চ মধ্যসারির ব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৮৮)
১৯ মার্চ ১৯৯৪ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট২২ মার্চ ২০০৮ বনাম ইংল্যান্ড
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৮৮)
২৫ মার্চ ১৯৯৪ বনাম ভারত
শেষ ওডিআই২৪ এপ্রিল ২০০৭ বনাম শ্রীলঙ্কা
ওডিআই শার্ট নং
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০০০ - ২০০৯ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডস
২০০৫ - ২০০৭নটিংহ্যামশায়ার
২০০৩ইয়র্কশায়ার
২০০১মিডলসেক্স
১৯৯১ - ২০০০ক্যান্টারবারি উইজার্ডস
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ১১১ ২৮০ ২৪৭ ৪৬১
রানের সংখ্যা ৭,১৭২ ৮,০৩৭ ১৬,৪০৯ ১৪,০৩৭
ব্যাটিং গড় ৪০.০৬ ৩২.৪০ ৪৩.৮৭ ৩৫.০৯
১০০/৫০ ৯/৪৬ ৮/৪৯ ৩৫/৯৩ ২২/৮৬
সর্বোচ্চ রান ২৭৪* ১৩৪* ২৭৪* ১৩৯*
বল করেছে ২৯ ১০২ ৩৫
উইকেট
বোলিং গড় ২৮.০০ ১৫.৫০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ১/৮ ০/০ ১/৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৭১/– ১৩৩/– ৩৪০/– ২২৬/–
উৎস: ক্রিকেটআর্কাইভ, ১ অক্টোবর ২০১৪

১১১টি টেস্ট খেলে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক টেস্ট খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভ করেন।[1][2] পাশাপাশি সবচেয়ে অধিক সময় খেলেন ও দলের নেতৃত্বে থেকে ভারত, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৮ টেস্ট জয়ের মাধ্যমে সর্বাধিক সফলতা লাভ করেন।

খেলোয়াড়ী জীবন

বামহাতি ব্যাটসম্যান ফ্লেমিং মার্চ, ১৯৯৪ সালে টেস্টে অভিষিক্ত হন। ভারতের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে ৯২ রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন তিনি। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে তিনি তার প্রথম সেঞ্চুরি করেন। ঐ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে লি জার্মনের কাছ থেকে অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন মাত্র ২৩ বছর ৩২১ দিন বয়সে। এরফলে তিনি নিউজিল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করেন।

শততম টেস্ট

২০০৬ সালে শততম টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐ খেলায় তিনি ০ ও ৬ রান তুলেন। ১২৮ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয় তার দল। ঐ একই খেলায় জ্যাক ক্যালিসশন পোলক নিজেদের শততম টেস্টে জয়ের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করেন।

মূল্যায়ন

মূলতঃ তিনি তার অধিনায়কত্বের জন্য স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। শেন ওয়ার্নের ন্যায় ক্রিকেটারগণ তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে সেরা অধিনায়কদের একজনরূপে অভিহিত করেছেন।[3] সাম্প্রতিককালে গ্রেম সোয়ান তার দেখা সত্যিকারের দুইজন অধিনায়কদের মধ্যে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের সাথে তাকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[4]

তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন অধিনায়ক হিসেবে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের সুনাম ছিল। এছাড়াও, ধ্রুপদী ঘরানার বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। ১১১টি টেস্টে অংশগ্রহণ করে নিউজিল্যান্ডীয়দের মাঝে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে আরোহণ করেছেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সাত সহস্রাধিক রান তুলতে পেরেছেন। মার্টিন ক্রো’র অবসর গ্রহণের পর একদল তরুণ খেলোয়াড়কে সাথে নিয়ে দল পরিচালনায় অগ্রসর হন। এ সময়ে তিনবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার সৌভাগ্য হয় তার। কিন্তু কোনবারই সফলতা পাননি। তবে, স্বর্ণালী মুহূর্ত আসে ২০০০ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। তার দল প্রথমবারের মতো আইসিসির কোন শিরোপা লাভে সক্ষম হয়।

বিতর্কিত ভূমিকা

১৯৯৫ সালের এক সফরে দলীয় সঙ্গী ম্যাথু হার্ট, শেন থমসনডিওন ন্যাশের সাথে একটি হোটেল মারিজুয়ানা সেবনকালে ধরা পড়লেও এ বিতর্ক থেকে রক্ষা পান।[5] তবে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এ ঘটনায় সর্বমোট ৬জন খেলোয়াড়কে জরিমানা করা হয়েছিল।[6]

অবসর

নটিংহ্যামশায়ারের ফিল্ডিং সাজাতে ব্যস্ত ফ্লেমিং

২৬ মার্চ,২০০৮ তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।[2]

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে চেন্নাই সুপার কিংস দলে $৩৫০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হন। পরবর্তীতে ২০০৯ সাল থেকে দলীয় কোচের দায়িত্বভার পালন করছেন।[7] ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সালে বিগ ব্যাশ লীগে মেলবোর্ন স্টার্সের কোচ হিসেবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।[8]

ব্যক্তিগত জীবন

৯ মে, ২০০৭ তারিখে দীর্ঘদিনের বান্ধবী কেলি পেইনের সাথে ওয়েলিংটনে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির কন্যা টেলা ২০০৬ সালে জন্মগ্রহণ করে।[9] ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের সেমি-ফাইনালের পূর্বে দ্বিতীয় সন্তান কুপারের জন্মগ্রহণের কারণে নিউজিল্যান্ডে ফিরে আসেন। তার বাবা সাউথ ক্রাইস্টচার্চ ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। ২০১১ সালে রাণীর জন্মদিনের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্রিকেটে সবিশেষ ভূমিকা রাখায় তাকে নিউজিল্যান্ড অর্ডার অব মেরিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়।[10]

রেকর্ডসমূহ

আন্তর্জাতিক রেকর্ড

  • ২৪ এপ্রিল, ২০০৭ তারিখ পর্যন্ত সর্বাধিকসংখ্যক একদিনের আন্তর্জাতিকে অধিনায়কত্ব করেন।[11]
  • ১৯৯৭ সালে ফিল্ডার হিসেবে এক মৌসুমে সর্বাধিক ২৮ ক্যাচ নেন।[12]

জাতীয় রেকর্ড

  • নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে সর্বাধিক ৭১৭২ রান ও ১১১ টেস্টে অংশগ্রহণ।
  • নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে সর্বাধিক ৮০০৭ রান ও ২৭৯টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ।
  • নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে বিদেশে (কলম্বো) সর্বাধিক অপরাজিত ২৭৪ রান সংগ্রহ।
  • নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বাধিকসংখ্যক ১৭১ ও ১৩২ ক্যাচ ধরা।
  • নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক ৮০ টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন।
  • নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক ২১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন।

টেস্ট শতক

নিচের ছকে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের টেস্ট শতকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো:-

স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের টেস্ট সেঞ্চুরিসমূহ[13]
#রানখেলাপ্রতিপক্ষশহর/দেশমাঠসালফলাফল
[১]১২৯২৩ ইংল্যান্ডঅকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডইডেন পার্ক১৯৯৭ড্র
[২]১৭৪*৩৫ শ্রীলঙ্কাকলম্বো, শ্রীলঙ্কারানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম১৯৯৮জয়
[৩]১০৫৬৩ অস্ট্রেলিয়াপার্থ, অস্ট্রেলিয়াওয়াকা গ্রাউন্ড২০০১ড্র
[৪]১৩০৭০ ওয়েস্ট ইন্ডিজব্রিজটাউন, বার্বাডোসকেনসিংটন ওভাল২০০২জয়
[৫]২৭৪*৭৪ শ্রীলঙ্কাকলম্বো, শ্রীলঙ্কাপি সারা ওভাল২০০৩ড্র
[৬]১৯২৭৮ পাকিস্তানহ্যামিল্টন, নিউজিল্যান্ডসেডন পার্ক২০০৩ড্র
[৭]১১৭৮৫ ইংল্যান্ডনটিংহাম, ইংল্যান্ডট্রেন্ট ব্রিজ২০০৪পরাজয়
[৮]২০২৮৭ বাংলাদেশচট্টগ্রাম, বাংলাদেশএমএ আজিজ স্টেডিয়াম২০০৪জয়
[৯]২৬২১০১ দক্ষিণ আফ্রিকাকেপ টাউন, দক্ষিণ আফ্রিকানিউল্যান্ডস২০০৬ড্র

একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় শতক

স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের ওডিআই সেঞ্চুরিসমূহ[14]
#রানখেলাপ্রতিপক্ষশহর/দেশমাঠসালফলাফল
[১]১০৬*৪৫ ওয়েস্ট ইন্ডিজপোর্ট অব স্পেন, ত্রিনিদাদকুইন্স পার্ক ওভাল১৯৯৬জয়
[২]১১৬*৭৬ অস্ট্রেলিয়ামেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়ামেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড১৯৯৮জয়
[৩]১১১*৮১ অস্ট্রেলিয়ানেপিয়ার, নিউজিল্যান্ডম্যাকলিন পার্ক১৯৯৮জয়
[৪]১৩৪*১৯২ দক্ষিণ আফ্রিকাজোহেন্সবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকাদি ওয়ান্ডেরার্স স্টেডিয়াম২০০৩জয়
[৫]১১৫*২১০ পাকিস্তানক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ডএএমআই স্টেডিয়াম২০০৪জয়
[৬]১০৮২১৪ দক্ষিণ আফ্রিকাক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ডএএমআই স্টেডিয়াম২০০৪জয়
[৭]১০৬২৬৭ ইংল্যান্ডব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়াব্রিসবেন ক্রিকেট গ্রাউন্ড২০০৭পরাজয়
[৮]১০২*২৭৫ বাংলাদেশনর্থ সাউন্ড, এন্টিগুয়াস্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম২০০৭জয়

তথ্যসূত্র

  1. "Top 10 Most Successful Cricket Captains of All Time"। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩। ১১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  2. "Fleming to end New Zealand career"BBC Sport। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১১
  3. James, Steve (৮ এপ্রিল ২০০৭)। "Spotlight on Stephen Fleming: Boss approved"The Daily Telegraph। London।
  4. Newman, Paul (৯ ডিসেম্বর ২০১১)। "The level of understanding was minimal. Even the intelligent members of the England team, both of them, didn't get it"Daily Mail। London।
  5. "Fleming caught out for a smoke"The New Zealand Herald। ৬ নভেম্বর ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-২৫
  6. Manthorp, Neil (১১ মে ২০০১)। "Six South Africans fined for dope-smoking party"Telegraph.co.ukNew Zealanders Stephen Fleming, Dion Nash and Shane Thomson were suspended for smoking dope in South Africa in 1994.
  7. Article regarding New Zealand Cricketers in the IPL auction Cricinfo, retrieved 25 March 2008
  8. "Stephen Fleming named Melbourne Stars coach"3 News। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৫
  9. Fleming goes all out to wed in secret
  10. "The Queen's Birthday Honours 2011"Department of the Prime Minister and Cabinet। ৬ জুন ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১১
  11. Most matches as captain – ODI
  12. "Fielders Taking 15 Catches in a Calendar Year"। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৪
  13. Statsguru: Stephen Fleming, Cricinfo, 14 March 2010.
  14. Statsguru: Stephen Fleming, Cricinfo, 14 March 2010.

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

পূর্বসূরী
লি জার্মন
নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৯৬-২০০৭
উত্তরসূরী
ড্যানিয়েল ভেট্টোরি
পূর্বসূরী
কেপলার ওয়েসেলস
চেন্নাই সুপার কিংসের কোচ
২০০৯–
উত্তরসূরী
নির্ধারিত হয়নি
পূর্বসূরী
গ্রেগ শেফার্ড
মেলবোর্ন স্টার্সের কোচ
২০১৫–
উত্তরসূরী
নির্ধারিত হয়নি
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.