সোল্স
সোল্স (ইংরেজি: Souls) বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পপ মিউজিক ব্যান্ড। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং পরে ঢাকায় চলে আসেন । গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যান্ডটি বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছে বাংলা ভাষার শ্রোতাদের।
সোল্স | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
আরও যে নামে পরিচিত | সুরেলা (১৯৭২–১৯৭৪) |
উদ্ভব | চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ |
ধরন | রক |
কার্যকাল | ১৯৭০– বর্তমান |
সদস্যবৃন্দ |
|
ওয়েবসাইট | soulsbd |
পথচলা
স্বাধীনতার ঠিক পরের বছর, ১৯৭২ সাল। দেশ তখন সবদিক দিয়েই অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, শিল্প-সাহিত্য-সংগীতেও অচলাবস্থা। সেসময় চট্টগ্রামের কয়েকজন গানপাগল তরুণ সাজিদ, জিলু, নেওয়াজ, রনি বড়ুয়া ও তাজুল মিলে গানের দল গঠন করে যাবতীয় অচলাবস্থাকে পাশ কাটাতে চাইলেন। তখনকার সনাতনীয় প্রথাগত মিউজিকের বাইরে গিয়ে বিদেশী ব্যান্ডগুলোর অনুপ্রেরণায় ‘ওয়েস্টার্ন রক’ চর্চার এবং রক-এর সাথে দেশের তরুণদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার তাগিদ থেকেই তারা অগ্রসর হচ্ছিলেন।
স্বাভাবিকভাবে তাদের এই কাজে অগ্রসর হওয়া সহজসাধ্য ছিলো না। বাংলা গান তখন সীমাবদ্ধ ছিলো শাস্ত্রীয়-ফোক, রবীন্দ্র-নজরুল, বাউল-লোকগান-আধুনিক মেলোডিয়াস গানের মধ্যে। শুধুমাত্র মনোবলকে পুঁজি করে নতুন কিছু করার স্পৃহা থেকেই চট্টগ্রামে ১৯৭২ সালে প্রাথমিকভাবে ‘সুরেলা’ নামে তারা ব্যান্ডযাত্রা শুরু করেন। তখনকার দিনে বড় বড় ক্লাব-হোটেলে ছাড়া কোথাও গানবাজনা হতো না। আর সেইসব জায়গাতে শুধুমাত্র ইংরেজি গানের কাভার করা হতো, বাংলা গান ছিলো ব্রাত্য। তাই ব্যান্ডগুলোর নামও ইংরেজিতে রাখার চল শুরু হয়েছিলো। এসবকে বিবেচনায় নিয়ে ১৯৭৩ সালে ব্যান্ডের নাম পাল্টে ‘সোলস’ রাখা হলো, বাংলার যার অর্থ হয় ‘আত্মার সমন্বয়ে’।
১৯৭২ সালের শেষদিকে লুলু ব্যান্ড ত্যাগ করায় নকীব খান ব্যান্ডে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর নকীবের ছোটো ভাই পিলু খানও ব্যান্ডে যোগ দেন। কিছুদিন পর তপন চৌধুরী সোলসে নাম লেখান। তখনও সোলসের তৎপরতা শুধুমাত্র চট্টগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। প্রথম প্রথম শুধু ইংরেজি গান কাভার করলেও তারা একটা সময় নিজেদের গান করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম গানটি কম্পোজ করেছিলেন নকীব খান।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে পপ মিউজিকের একটি প্রতিযোগিতায় নাম লেখায় ‘সোলস’, জিতেও নিয়েছিলো সেরার পুরস্কার। মূলত সেই থেকেই শুরু হয়েছিলো সোলসের জয়যাত্রা। ১৯৭৭ সালে ব্যান্ড যোগ দিলেন নাসিম আলী খান। কুমার বিশ্বজিৎ এবং গিটারম্যান আইয়ুব বাচ্চু সেসময় ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে ছিলেন। ১৯৮২ সালে সোলসে যোগ দেয় এবি। আইয়ুব বাচ্চুকে ব্যান্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন পিলু খান। এবি শুরুতে ছিলেন একাধারে গিটারিস্ট-ভোকালিস্ট-লিরিসিস্ট-কম্পোজার। আশির দশককে সোলসের স্বর্ণযুগ বলা হয় কারণ সেসময়ে তাদের ব্যান্ড লাইনআপ ছিলো দুর্দান্ত।
নকীব খান, পিলু খান, তপন চৌধুরী, নাসিম আলী খান, আইয়ুব বাচ্চু ,রনি বড়ুয়া, নেওয়াজ, সাজেদ।
নামগুলো পড়লেই তাদের সেসময়ের লাইনআপ সম্পর্কে বুঝতে পারার কথা। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বেইজিস্ট তানিমও কিছুকাল সোলসে বাজিয়েছেন।
বর্তমান সদস্যতালিকা
সোল্স-এর বর্তমান লাইন-আপ হলোঃ[1]
- নাসিম আলী খান (কন্ঠ)
- পার্থ বড়ুয়া (লিড গিটার ও কন্ঠ)
- আহাসানুর রহমান আশিক (ড্রামস্)
- মীর শাহরিয়ার হোসেন মাসুম (কিবোর্ড)
- মারুফ হাসান তালুকদার রিয়েল (বেজ গিটার)
ডিস্কোগ্রাফি
১৯৮০ সালে বের হয় সোলসের ১ম অ্যালবাম ‘সুপার সোলস’। এটিই ছিলো বাংলাদেশের কোনো ব্যান্ডের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম, প্রথম রক অ্যালবাম। সেই অ্যালবামের ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘এই মুখরিত জীবন’ গানগুলো অল-টাইম হিটস।
সোলসের ২য় এ্যালবাম ‘কলেজের করিডোরে’ বের হয় ১৯৮২ সালে। এ্যালবামের ‘কলেজের করিডোরে’, ‘ফরেস্ট হিলের এক দুপুরে’, ‘ফুটবল ফুটবল’ গানগুলো তখন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো বলে জানা যায়। এই এ্যালবাম করার পরেই নকীব খান ও পিলু খান ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে পরবর্তীতে ‘রেনেসাঁ’ গঠন করেন।
১৯৮৭ সালে ‘মানুষ মাটির কাছাকাছি’ নামে ব্যান্ডের ৩য় এ্যালবাম বের হয়। এই এ্যালবামেই আইয়ুব বাচ্চু প্রথম কোনো গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। গানের শিরোনাম ছিলো ‘হারানো বিকেলের গল্প বলি’।
‘ইষ্ট এন্ড ওয়েস্ট’ নামে সোলস তাদের ৪র্থ এ্যালবাম বের করে ১৯৮৮ সালে। ৬ টি বাংলা গানের পাশাপাশি ৬ টি ইংরেজি গানও ছিলো এই এ্যালবামে। সেই বছরেই আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরে সোলসে আগমন ঘটে পার্থ বড়ুয়ার, যিনি এখনো সোলসের ভোকালিস্ট হিসেবে আছেন। সোলসে আসার আগে পার্থ বড়ুয়া ছিলেন ‘ম্যাসেজ’ ব্যান্ডের কিবোর্ডিস্ট। পার্থ গিটার শিখেছেন এবির কাছেই। ১৯৮৯ সালে আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ড ত্যাগ করে আরেকটা নতুন ব্যান্ড ‘এলআরবি’ গঠন করেন।
কিছুদিন বিরতির পর ১৯৯২ সালে ব্যান্ডের ২০ বছর পূর্তিতে বের হয় তাদের ৫ম স্টুডিও এ্যালবাম ‘এ এমন পরিচয়’। বিগত কয়েক বছর ধরে তপন চৌধুরী একক গান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তারা খানিকটা অনিয়মত হয়ে পড়েছিলো। এটা ছিলো তপন চৌধুরীর সাথে সোলসের শেষ এ্যালবাম। এরপর তপন চৌধুরী পুরোপুরিভাবে সলো ক্যারিয়ারের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
১৯৯৫ সালে সোলস বের করে তাদের ৬ষ্ঠ এ্যালবাম ‘আজ দিন কাটুক গানে’। এই এ্যালবামের ‘কেন এই নিঃসঙ্গতা’ গানটি সোলসের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান বলা যায়। এই এ্যালবাম দিয়ে পার্থ শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছিলো।
১৯৯৭ সালে সোলসের ৭ম এ্যালবাম ‘অসময়ের গান’ রিলিজ হয়েছিলো। এ্যালবামের ‘আইওনা আইওনা’ গানটি সেসময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো।
একুস্টিক ভার্শনে তাদের আগের কিছু গান, কিছু নতুন গান আর জনপ্রিয় কয়েকটা গানের কাভার মিলে ২০০০ সালে বের হয় সোলসের ৮ম এ্যালবাম ‘মুখরিত জীবন’। এ্যালবামের টাইটেল গানটা এখনও বেশ জনপ্রিয়। টিভি লাইভে এই গানটার অনুরোধ তাদেরকে সবচেয়ে বেশি করতে হয়।
২০০২ সালে বের হয় তাদের নবম এ্যালবাম ‘তারার উঠোনে’।
দশম এ্যালবাম ‘টু-লেট’ রিলিজ হয় ২০০৫ সালে। তাদের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মবিন-এর মৃত্যুর পূর্বের শেষ কাজ এই এ্যালবামটি।
২০০৬ সালে বের হয় তাদের ১১তম এ্যালবাম ‘ঝুট ঝামেলা’।
সোলসের ১২তম এবং সর্বশেষ এ্যালবাম ‘জ্যাম’ বের হয় ২০১২ সালে । এখানে নির্মলেন্দু গুণ নামে একটা গান জনপ্রিয় হয়। তাছাড়া জ্যাম টাইটেল ট্র্যাকটি বাস্তব ইস্যু হওয়াতে খুব আলোচিত হয়।
ডিসকোগ্রাফি
- সুপার সোল্স (১৯৮০)
- কলেজের করিডোরে (১৯৮২)
- মানুষ মাটির কাছাকাছি (১৯৮৭)
- ইস্ট & ওয়েস্ট (১৯৮৮)
- এ এমন পরিচয় (১৯৯৩)
- আজ দিন কাটুক গানে (১৯৯৫)
- অসময়ের গান (১৯৯৭)
- মুখরিত জীবন – আনপ্লাগড (২০০০)
- তারার উঠোনে (২০০৩)
- To-Let (২০০৪)
- ঝুট ঝামেলা (২০০৬)
- কিংবদন্তি (২০০৮)
- জ্যাম (২০১১)
- বন্ধু (২০১৭)